তুই আমার অজানা অনুভূতি | পর্ব -০৬
হঠাৎ ছায়াকে কেউ ঘুমের মধ্যে জোরে ধাক্কা দেওয়াতে ছায়া ধরফরিয়ে উঠে বসে।
তারপর চোখ বন্ধ অবস্থায় বলতে থাকে,
__কে কে কোন কুত্তি কুত্তা আমার ঘুম ভাঙলো রে। আজকে তারে মেরে জেলে যাবো। (ছায়া )
ছায়ার এমন উৎভট কথা শুনে নাহার হাসতে হাসতে প্রায় গড়াগড়ি খাচ্ছে বিছানায় । ছায়া নাহারকে এভাবে হাসতে দেখে বললো,
__ওই বজ্জারের বউ এভাবে ছাগলের মতো হাসোস কেনো। ( ছায়া )
ছায়ার কথা শুনে নাহারের হাসি আপনা আপনি থেমে যায়। নাহার রেগে ছায়াকে বলে ,
__কি বললি শাকচুন্নি আমার জামাই ছাগল । আমার জামাই যদি ছাগল হয় তোর জামাই হলো পাগল প্রো মেক্স।
আর তুই হলি পাগলী প্রো মেক্স। ( নাহার )
নাহারের কথা শুনে ছায়া হাসবে নাকি রাগ দেখাবে বুঝে উঠতে পারছে না।
শেষে না পেরে বললো,
__বোইনলে আমি পাগল এটা সবাই জানে এটা নতুন করে কয়রা বলা লাগবো না।
যাই বল তোর দেয়া নামটা আমার পছন্দ হয়েছে।
আমার জামাই পাগল প্রো মেক্স ভাবা যায় বল ওফ আমি তোহ একটা এমনি পাগল জামাই চাইরে বইন
ও শুয়ামি ও শুয়ামি আন্নে কোথায়…….
.
দূর আর গান পারিনা যেখানেই থাকুন বাপু তাড়াতাড়ি চইলা আসেন । ( ছায়া )
ছায়ার এমন উৎভট আর পাগল পাগল কথা সাথে এমন আজব
একটা গানের লাইন শুনে নাহারের মনে হচ্ছে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ পাগলের সাথে সে এই মুহুর্ত বসে আছে।
নাহার আর কথা না বাড়িয়ে সোজা রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
নাহার জানে ছায়া পাগলির সামনে থাকলে কয়েক মিনিটে ও পাগল হয়ে যাবে।
ছায়া নাহারের যাওয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে ছায়া বাইরে আসতেই মোবাইলের দিকে চোখ গেলে আবার দুপুরের কথা মনে পড়ে যায়। ছায়া হাসতে থাকে তুহিনের কথা ভেবে।
ওইদিকে আমাদের তুহিন বেচারা কাম কা বোজ কা মারা থাক্কু পরেশানিকে বোজ মে মারা ।
তুহিন ওর ফ্রেন্ডস দের মেরেছিলো তার উপরে ফ্রেন্ডস দের দোড়ানি খাইছিলো।
যার ফলে সে এতোটাই ক্লান্ত যে সেই যে ঘুমিয়েছে এখনো তার কোনো খবর নেই।
তুহিন তো ঘুম নিয়ে ব্যাস্ত আর ওইদিকে ছায়া তার কাজ কর্ম নামাজ কালাম
সেরে নাহারের সাথে রাতের খাবার খেতে বসেছে।
হঠাৎ নাহারের তার মায়ের কথা মনে পড়ে যায়। নাহার মুখটা কালো করে ছায়াকে বলে,
___আজকে আম্মু থাকলে কতো মজার মজার রান্না করতো। আমাদের কতো খেয়াল রাখতো।
কিন্তু আজ কেউ নেই এই অচেনা শহরে আমরা একদম একা হয়ে আছি এখানে । (নাহার )
নাহারের কথা শুনে ছায়ারও মন খারাপ হয়ে গেলো।
কিন্তু ছায়া তার মন খারাপের বিষয়টা নাহারকে বুঝতে দিলোনা।
নাহারকে রাগানোর জন্য ছায়া বললো,
___উফফ আম্মু থাকলে আজ আমাকে তোর এই পচা স্বাদহীন রান্না আমায় খেতে হতো না।
ছি কি বিচ্ছিরি রান্না গো…..
তোর রান্না খেয়ে আমি যে কোনদিন আল্লাহর কাছে চলে যাব সেটা নিজেও জানিনা। (ছায়া )
নাহারকে আরো একটু রাগিয়ে দেবার জন্য ছায়া একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে আবার বলতে থাকে,
___আল্লাহ জানে কোন পোলার ভাগ্যে তুই আছোস।
আমার তো এখনই তার জন্য কষ্ট হচ্ছে বেচারা তোর হাতের রান্না
খেয়ে তার বোধয় হার্টফেল হয়ে যাবে কিডনি নষ্ট হয়ে যাবে ডায়রিয়া আর অম্বল হবে । (ছায়া )
ছায়ার এমন রাগিয়ে দেওয়া কথা শুনে নাহার তো রেগে পুরো বোম হয়ে গেছে ।
নাহার এতোটাই রেগে গেছে যে সে ভুলেই গেছে তার মন খারাপের কথা।
নাহার খুব রেগে ক্ষিপ্ত সরে ছায়াকে বললো,
__কি বললি তুই আমি খারাপ রান্না করি আমার রান্না খেতে তোর কষ্ট হয়।
আমার রান্না খেলে আমার জামাই হার্টফেল করবে ।
দাড়া তোকে দেখাচ্ছি কে হার্টফেল করে তোরে আজ আমি ধরে গরম তেলে ভাজবো।
আর সেই ভাজা ছায়া ফ্রাই তোর জামাইকে খাওয়াবো। ( নাহার )
.
এই বলে নাহার ছায়াকে মারতে যায় কিন্ত ছায়া যা বিচ্ছু কখনো দৌড়ে এখানে যায় তো কখনো ওখানে। এভাবে অনেক্ষন দৌড়াদৌড়ি আর মারপিট করে দুইবোন একসাথে হাসতে থাকে ।
[ আমাদের ছায়া পাগলিটা তার পাগলামী দিয়ে সবার কষ্ট মুহূর্তেই ভুলিয়ে দিতে পারে। সবার মুখে হাসি ফুটাতে পারে। হয়তো তার এই গুণটা আল্লাহ প্রদত্ত ]
নাহার এখন একদমই ভুলে গেছে তার মন খারাপের কথা সে এখন ছায়ার সাথে হাসতে হাসতে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। হঠাৎ নাহারের একটা ফোন এলো নাহার ছায়াকে বললো,
__আচ্ছা অনেক মজা হয়েছে এবার রুমে যা। ( নাহার )
ছায়া টিটকারি মেরে নাহারকে বললো,
__কি হলো বাবু তোর বফ কল করেছে বুঝি। বেটা তো জানেনা তুই কেমন তোরে বিয়ে করলে তারে সারাজীবন পচা রান্না খেয়ে থাকতে হবে । (ছায়া )
ছায়ার কথা শুনে নাহার ছায়ার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়।
ছায়াকে আর পাই কে ছায়া এক ছুটে নিজের রুমের দরজার কাছে চলে যায় আবার পিছন ফিরে নাহারকে জ্বিব্বা দেখিয়ে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে হাসতে থাকে ।
হঠাৎ ছায়ার নাহারের বলা কথা মনে পড়ে। মুহূর্তেই তার চেহেরা বিসন্নতার কালো মেঘে ঢেকে যায়। আর আনমনে ছায়া হঠাৎ বলে উঠে,
__আমার পাগলামী সবাইকে হাসাতে সক্ষম সবার কষ্ট দূর করতে সক্ষম। কিন্তু আদও কি আমার পাগলামী আমাকে হাসাতে সক্ষম। আমার কষ্ট দূর করতে সক্ষম হয়তো নাহ।
ছায়া এইসব বলতে বলতে তার ফোন আর একটা চকোলেট নিয়ে বেলকানিতে চলে যায়। ফোনে একটা গান চালিয়ে শুনতে থাকে আর চকোলেট খেতে থাকে।
ছায়ার ফোনে বেজে চলেছে সফ্ট সেড সং। ছায়া লাউড মিউসিক পছন্দ করেনা তাই সে সফ্ট সেড সং ই শুনে।
গানের তালে তালে হঠাৎ ছায়াও গেয়ে উঠে ____
দূরে কোথাও আছি বসে ____
হাত দুটো দাও বাড়িয়ে ____
বিরহ ছুতে চাই মনের দুয়ার ____
দুচোখ নির্বাক আসোনা ছুটে _____
তুমি এলে রঙধনু ____
রঙ ঢেলে দেয় ___
তুমি এলে মেঘেরা _____
বৃষ্টি ঝরায় _____
এমনের অহলাদ _____
আসোনা ছুটে ____
[ গানটা আপনাদের লেখিকার খুবই প্রিয় গানের মধ্যে একটা । বাকিটা আপনারা শুনে নিবেন ভবিষ্যতে বর \ বউকে শুনাতে পারবেন ]
গানটা একমনে শুনে যাচ্ছিলো ছায়া। হঠাৎ ছায়ার মেসেঞ্জারে কারো মেসেজ এলো। ছায়া ফোনটা উঠিয়ে দেখলো তুহিন মেসেজ দিয়েছে । ছায়া তুহিনের মেসেজটা দেখে একটু ভয়ে ভয়ে বললো,
__ছায়ারে এখন না জানি তোরে কতো বকা দিবে। আল্লাহ যদি বেটা খচ্চর ফোনের ভিতরে ঢুকে আমাকে মারতে আসে। আসলে আসুক আমিও ওকে বেলকানি দিয়ে নিচে ফেলে দিবো হুঁহ আমিও ছায়া । (ছায়া)
ছায়া তার ফোনটা আবার হাতে নিয়ে মেসেঞ্জার এ ঢুকলো দেখলো লেখা আছে ____
তুহিন :— ওই কুত্তি শাকচুন্নি পেত্নী হারামি মাইয়া কই তুই এখুনি অনলাইনে আয়। অফলাইন থাকলে তুই আমার কাছ থেকে বাঁচতে পারবি না।
ছায়া :— আমি কোন দুঃখে অফলাইন থাকতে যাব আমি তোকে ভয় পাই নাকি। তুই কে হ্যাঁ?
তুহিন :—ওহহ আমাকে ভয় পাস না তাই না। তোকে একবার কাছে পাই তোকে আমি বুড়িগঙ্গা নদীতে চুবাবো।
ছায়া :—কিহ…..
তুহিন :–জ্বী। তোকে আমি বুইড়া বেডার সাথে বিয়ে দিয়ে দেবো তোরে একবার পায় দেখাবো মজা ।
ছায়া :— তুই আমাকে পাবি কই হিহিহিহি
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com