Breaking News

গল্পঃ মেয়ে । পর্ব - ০১

ডাক্তার মুচকি হাসি দিয়ে বললো-মেয়ে বাবু হবে।ডাক্তারের মুখে হাসি দেখলেও 
কিন্তু আমার স্বামীর মুখে হাসিটুকু নাই অনেকটা কষ্ট পেয়েছেন উনি এই কথা শুনে।
কি করে খুশি হবে সেই?উনি তো চেয়েছিলো এবার ছেলে হবে কিন্তু না
 দুটা মেয়ের পরে আবারো মেয়ে।ক্লিনিক থেকে বাহির হয়ে আমার স্বামী রাগী সুরে বলে-
_রিক্সা নিয়ে তুমি চলে যাও বাসায়!
_আমি একা যেতে পারবো না আমার ভয় লাগে তুমি চলো না আমার সাথে।
_না আমি এখন যাবো না,দোকানে যেতে হবে তুমি একা যেতে পারবে সমস্যা হবে না
 
 
এই কথা বলে সেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে কোনো কথা বলছে না।
আগে কোথাও বাহিরে গেলে সেই আমাকে আমার পছন্দের ফুচকা খাওয়াতো কিন্তু
 আজ কিছু বলছে না আজ আমার অনেক ইচ্ছা ছিলো একসাথে ফুচকা খাবো 
কিন্তু রিজিকে ছিলো না।কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে একটা রিক্সা আসলে সেই আমাকে 
উঠিয়ে দিয়ে চলে গেলো।একবার ও বললো না সাবধানে যাও।আচ্ছা আমার
 কি দোষ মহান অাল্লাহ্ যদি মেয়ে দেন আমার কি করার আছে?
কিন্তু আমি আলহামদুলিল্লাহ্ খুশি আমার দুই মেয়ে রাত্রি আর রিতু’কে নিয়ে।
অনেক সুন্দর আমার মেয়েরা।


একা একা বাড়িতে আসি,আমার স্বামী রাতে যখন বাড়িতে ফিরে 
খাবার টেবিলে খেতে বসলে তখন সেই আমাকে বলে-
_সকালে বাড়ি যাবো এখন থেকে তুমি গ্রামে থাকবে।
_কিসের জন্য?
_এখন তুমি প্যাগনেন্ট তোমাকে কেয়ার করার মতো কেউ নাই বাড়িতে 
সবাই আছে ওখানে ভালো হবে।
_আর তুমি একা থাকবে কি করে রান্না করবে কেমন করে?
_আমার চিন্তা করতে হবে না আমি হোটেলে খেয়ে নিবো।
_না এটা হবে না তুমি অসুস্থ হয়ে যাবে।
আমার স্বামী রাগী কণ্ঠে আমাকে বলে-
_আমি বলছি তুমি গ্রামে যাবে তো সকালে রেডি হয়ে থাকবা আর কিছু শুনতে চাই না।
আমার প্রথম মেয়ে দুনিয়াতে আসার সময় আমার স্বামী আমার অনেক 
কেয়ার করছে,দ্বিতীয় মেয়ে দুনিয়াতে আসার সময় তেমন কেয়ার না করলেও
 কিন্তু পাশে পাশে ছিলো কিন্তু এখন আমি এখন প্যাগনেন্ট এই সময়ে সে
 পাশে থাকা আমার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন কারণ সেই ভরসা দিলে 
আমার আর ভয় লাগে না,কিন্তু সে ভাগ্য আমার আর হলো না।
 
 
আমার স্বামী আমাকে গ্রামে পরিবারে কাছে রেখে চট্টগ্রাম চলে যায়,
চট্টগ্রাম চলে যাওয়ার পর থেকে সে কেমন জানি দিনদিন বদলে যাচ্ছে।
 যে কোনো কথায় রাগ করে কথা বলে তবে আমি হাসিমুখে মেনে নিই।
কারণ কেউ একজন বলেছে-
যে সম্পর্কে ভালেবাসা বেশি সে সম্পর্কে নাকি রাগ ঝগড়াও বেশি।
কিন্তু না আমার স্বামী প্রায় এমন করে আমার সাথে অবহেলা দিন যাচ্ছে আমার।
আমার পেটে ধীরেধীরে বড় হচ্ছে আমার মিষ্টি মেয়েটা।
আমার দুই মেয়ে অনেক খুশি তাদের আরেকটা বোন আসবে যোগ হবে 
আরেকটা খেলার সাথী।স্বামী খরচের টাকা পয়সা সব দিচ্ছে কিন্তু কিসের জন্য 
এমন ব্যবহার করে বুঝতে পারি না।কিছুদিন পরে জানতে পারি সেই নাকি 
আমার চাচাতো বোন আরশি’কে বিয়ে করে।
 
 
অারশি বিবাহিত মেয়ে চট্টগ্রাম ভূমি অফিসে জব করে যদি তার স্বামীর সাথে
 ঝগড়া হয়ে ডিভোর্স হয়ে যায় তার।ডিভোর্স হওয়ার দুই মাস পরে সেই আমার 
স্বামীকে বিয়ে করে।আরশি আমার চাচাতো বোন হয়ে আমাকে কষ্ট দিয়েছে, 
হয়তো আমার স্বামী তাকে বিয়ে করছে ছেলে সন্তান দুনিয়াতে আসবে।কিন্তু
 ছেলে মেয়ে আল্লাহর দান যেটা আমার স্বামী বুঝলো না
আমার স্বামী অারশি’কে বিয়ে করার আগে প্রতি সপ্তাহে বাড়ি আসতো মেয়েদের
 দেখার জন্য যদি এখন প্রতি মাসে বাড়িতে আসে।আমার বড় মেয়ে রাত্রি 
তার বাবা দেরিতে আসে তাই আমাকে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলে-
_মা বাবা কি এখন আমাকে ভালোবাসে না?
_হ্যাঁ ভালোবাসে।
_মা বাবা কি তোমাকে এখন আগের মতো ভালোবাসে না?
_হ্যাঁ অনেক ভালোবাসে।
 
 
একমাস হয়ে গেছে অথচ সেই এখনো বাড়িতে আসে নাই আমি তার 
অপেক্ষায় সকাল সন্ধ্যায় বসে থাকি।আমার মিষ্টি মেয়েটা আর কিছুদিন পরে দুনিয়াতে
 আসবে অদৌ কি থাকে এক নজর দেখতে উনি গ্রামে আসবে.?
অামার স্বামী কেন মেয়ে বাবু পছন্দ করে না সেটা আমি বুঝতে পারি না।
মেয়ে বাবু পছন্দ করে না তা কিন্তু না উনি আমার বড় মেয়ে রাত্রি দুনিয়াতে আসার পরে 
অনেক খুশি ছিলেন কিন্তু পরপর দুইটা মেয়ে আরেকটা কিছুদিন পরে দুনিয়াতে আসবে 
হয়তো উনি আর আগের মতো খুশি হতে পারেন নাই।আমার ছোট মেয়েটার ভাগ্য মনে
 হয় খারাপ সেই দুনিয়াতে আসবে অথচ তারা বাবা তাকে দেখার জন্য আসবে না তার
 পাশে থাকবে না।আচ্ছা তিনটা মেয়ে হলে ক্ষতি কি!আমি বুঝি না,মেয়েরা’
তো তাদের রিজিক নিয়ে দুনিয়াতে আসবে।মহান অাল্লাহ্ তাদের রিজিক দিবে 
তাহলে এত ভয় কিসের!আমরা’তো পাঁচ বোন ছিলাম কই কখনো আমার বাবার
 মুখে হায় হতাশ শুনি নাই বাবা সবসময় ভাবতেন তার ঘরে পাঁচজন রাণী আছেন।
আসলেই পৃথিবীর সব পুরুষ এক তো আর হয় না।
এই দিকে ধীরেধীরে বড় হচ্ছে আমার ছোট মেয়ে।
রাত্রি মেয়েটা বাবা বাবা করে প্রায় সময় কান্নাকাটি করে যদিও সেই বাবার অাদর 
পেয়েছে তাই তার বাবাকে ভালোবাসে তাকে দেখার জন্য মন চটপট করে।আমার স্বামী 
তার মেয়েদের সাথে ফোনে কথা বললেও আমার সাথে তেমন একটা কথা বলতে
 চায় না।কেউ একজন বলেছিলো-
 
 
_স্ত্রীকে কোনো কারণে শাস্তি দিতে চাইলে তাহলে তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে 
দাও তাহলে দেখবে এটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নিরব শাস্তি।
এই শাস্তি শরীরে কোনো দাগ বসে না তবে প্রায় সময় নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে 
চায় আমার তো তাই মনে হচ্ছে।আমার স্বামী আমাকে এই কষ্ট দিচ্ছে তাকে একটা 
ছেলে সন্তান দিতে পারি নাই তাই আমার এবারো মেয়ে সন্তান হবে।
রাত্রি তার বাবাকে অনেক রিকুয়েস্ট করাতে আমার স্বামী রাত্রিকে বলে-
_আচ্ছা মা কাল সকালে বাড়িতে আসবো।
_সত্যি বাবা?
_হ্যাঁ সত্যি।
সব মেয়ে তার বাবার মুখ থেকে মা ডাক হয়তো শুনে না যেমন আমার মেঝো মেয়ে
আর ছোট মেয়ে শুনবে না। 
অনেকগুলো মেয়ে বাবু হলে কিছু কিছু পরিবারে এমন হয় বাবার মুখে মা ডাক শুনে না।


সকাল হলে আমার স্বামী বাড়িতে আসে তাও দুই দিনের জন্য প্রতিবার আসার সময় 
উনি আমার পছন্দের খাবার ফুচকা নিয়ে আসতো তবে এবার নিয়ে আসে নাই
 তবে আমি খুশি আমার স্বামী আসছে তাতে।আমার স্বামী ফোন রেখে 
বাথরুমে গেলে তখন তার ফোনটা বেজে উঠে, স্ক্রিনে সুন্দর করে লিখা-My Heart Arshi
আরশির নামটা দেখে আমার নিশ্বাসপ্রশ্বাস কেমন জানি থমকে গেলো
ও আমার চাচাতো’বোন হয়ে আমার এতবড় ক্ষতি করেছে এই জন্য কাজিন’দের 
সাথে স্বামীকে বেশি মিশতে না দেওয়া ভালো।অারশির যখন আগের স্বামীর সাথে
 ডিভোর্স হয়ে গেছে তখন এই সুযোগে আমার স্বামীকে বিয়ে করে নেয়।
অারশি ইচ্ছা করলে অন্য ছেলেকে বিয়ে করতে পারতো কারণ সেই সুন্দর
শিক্ষিত, ভূমি অফিসে জব করে কিন্তু সেই আমার চাচাতো’বোন হয়ে আমার 
ক্ষতি করলো।তবে আমি মন থেকে দোয়া করি অারশি যেনো আমার স্বামীর
 মনের অাশাটুকু পূরণ করে অামার স্বামীর বংশের প্রদীপ যেনো একটা
 ছেলে বাবু দুনিয়াতে আসে।
দুইদিন শেষ হয়ে গেলে আমার স্বামী চট্টগ্রাম চলে যাওয়ার জন্য 
রেডি হচ্ছে আমি আমার স্বামীকে বলি-
 
 
_আর কিছুদিন থাকতে পারবেন না?
_না কাজ আছে দোকানে,কিন্তু কেন?
_আমি প্যাগনেন্ট কিছুদিন পরে আমার মেয়ে দুনিয়াতে অাসবে এই সময় আপনার 
ভরসা আমার অনেক দরকার।কারণ আপনি ভরসা দিলে আমার ভয় লাগে না।
আমার স্বামী মেয়ের কথা শুনে চোখেমুখ লাল হয়ে গেলো রাগে।
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভারী কণ্ঠে বলে-
_ আমাকে যেতে হবে,চট্টগ্রামে কাজ আছে পরে আসবো সমস্যা নাই।
_আচ্ছা ঠিক আছে।
কি জানি আমার স্বামী আমার ছোট মেয়েকে দেখার জন্য আসে কি না।রাত্রি 
তার বাবার ব্যাগ কাঁদে নিয়ে এগিয়ে দিতে গেছে ব্রিজ 
পর্যন্ত কিছুদূর গেলে রাত্রি দৌড়ে দৌড়ে এসে বলে-
_আম্মু আম্মু বাবা বলছে কাবিননামা দিতে।
আমার রাত্রি মেয়েটা’তো জানে না কি জিনিস এই কাবিননামা।আর তার বাবা 
এই কাবিননামা দিয়ে কি করবে সেটা যদি জানতো তাহলে জীবনেও আমার মেয়ে তার বাবার হাতে কাবিননামা দিবে না।


চলবে…

 

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com