Breaking News

গল্প: ভালোবাসব যে তোকে | পর্ব - ১৭


 

 “চাইলে অনেক কিছুই সম্ভব। তুই আর কোনো কথা না বলে তোর রুমের বারান্দায় আয়। ”

আরিয়ানের এ কথা শুনে মৌ কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলো যে আসলে আরিয়ান এখন কোথায়।
সে বারান্দায় গিয়ে তাই দেখলো যা সে আন্দাজ করেছিলো। আরিয়ান নিচে দাঁড়ীয়ে আছে।
মৌ রা ভাড়া বাসায় থাকে। যে বাড়ীটায় তারা থাকে তা ৩তলা। আর তারা টপ ফ্লোরেই মানে ৩তলাতেই থাকে।
আরিয়ান তাদের বাসার সামনে যে খালি জায়গা আছে সেখানে দাঁড়ীয়ে মৌ এর জন্য ওয়েট করছিলো।মৌ বারান্দায় যাওয়ার পর আরিয়ান যেনো তার প্রাণ ফিরে পেলো মৌ কে দেখে।মৌ এরও খুব ভালো লাগছে আরিয়ানকে দেখে। দুজন দুজনাকে দেখে দেখেই প্রায় ৫ মিনিট পার করলো।
“মনে হচ্ছে তোকে কতো দিন দেখি না।”
মৌ এর জবাবে কিছু বলেনি শুধু মুচকি হাসি দিয়েছে।রাস্তার বড় বড় সোডিয়াম বাতিতে মৌ এর চেহারা মনে হচ্ছে আরো সুন্দর দেখাচ্ছে আরিয়ানের কাছে।
মৌ দের বাসা রাস্তার সাথে হওয়ায়,তাদের রুমগুলোতে ওসব আলো পরে। ফলস্বরুপ মৌ যে রুমে থাকে সে রুমেও আবছা আলো এসে পরেছে।
এখনও দুজন চুপ হয়ে আছে। তাদের এ চুপচাপ মূহুর্তটার সাক্ষী হচ্ছে রাতের আকাশ,আশেপাশের জোনাকিপোকা গুলো। ঝিঝি পোকাগুলোর শব্দে এ মূহুর্তটা সম্পূর্ণ নিরব হয়নি।তারা তাদের মতো ডেকেই চলছে। আর নিস্তব্ধ এ রাতটাকে তারা নিজেদের আওয়াজে মাতিয়ে রাখছে।
কিছুক্ষণ পর মৌ হেসে বললো,
“আমার নিজেকে কোনো উপন্যাসের চরিত্র মনে হচ্ছে। মানে নিজেকে একজন প্রেমিকা মনে হচ্ছে।”
মৌ এর এ কথা শুনে আরিয়ানও হেসে উঠলো,
“তো আমাকে কি কোনো উপন্যাসের বর্ণনা করা প্রেমিক থেকে কম মনে হচ্ছে নাকি??”
“তা অবশ্য ঠিক।”
“জানিস আমার কাছে এমন লুকোচুরি দেখা করাতে আলাদা একটা ফিলিংস আসছে। মনে হচ্ছে আমাদের পরিবার আমাদের এক হতে দিবে না, দেখা করতে দিবে না।তাই আমরা এমনভাবে দেখা করছি।”
আরিয়ানের এ কথা শুনে মৌ খিলখিল করে হেসে দিলো।আর আরিয়ান মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেই হাসি শুনছে।
এভাবে প্রায় রাত ২টা পর্যন্ত গল্প করে।
পরেরদিন বিকালে মাহতাব অফিস থেকে আসার সময় একটি পার্সেল নিয়ে আসে।সে বাসায় ঢুকেই আগে মৌ কে ডাক দেয়।
“মৌ এদিকে তাড়াতাড়ি আয়াতো।”
“কি হয়েছে ভাইয়া??এতে ডাকছো কেনো??”
“তোর জন্য কে যেনো কিছু একটা পাঠিয়েছে।দারোয়ান আংকেলকে আবার সে বলেও দিয়েছে তুই ছাড়া অন্য কেউ যেনো পার্সেল টা না খুলে।”
“আমার জন্য কে কি পাঠাবে??”
“মানুষ তো আছে পাঠানোর জন্য। সেই পাঠিয়েছে নিশ্চয়। ” এ বলে মাহতাব মুখ টিপে হাসে।
এদিকে মৌ লজ্জা পেয়ে যায়। সে কোনোরকমে পার্সেলটা নিয়ে রুমে এসে দরজা আটকিয়ে দেয়।
পার্সেলটা একদিকে সে খুলছে আর অন্যদিকে বুকের ধুকপুক বাড়ছে।
সে পার্সেলটা খুলে অবাক হয়ে যায়।সেখানে বকুল ফুলের শুকনো মালা আর হালকা লাল রংয়ের একটা শাড়ি দেওয়া।সে এমন কিছু আশা করেনি।
বকুল ফুলের মালা নিয়ে শুঁকছে সে। অসম্ভব সুন্দর ঘ্রাণ বের হয় বকুল ফুল থেকে। কিছুক্ষণ মধ্যেই ফুলের গন্ধে সারা ঘর মো মো করছে।
যারা রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প পরেন বা গল্প পড়তে ভালবাসেন এমন কেউ যদি থেকে থাকেন তাহলে রিকুয়েস্ট দিন। আমি তাদের কে আমার ফ্রেন্ড লিস্টে রাখতে চাই
মৌ একহাতে শাড়ী আর অন্যহাতে বকুল ফুলের মালা নিয়ে আরিয়ানের কথা ভাবছিলো।তখনই আচমকা আরিয়ানের ফোন আসে। এভাবে হুট করে ফোন বাজায় সে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।
সে গিয়ে ফোন রিসিভ করে।ওপাশ থেকে কোনো কথা আসছে না। হঠাৎ করে আরিয়ান গান ধরলো,
“বকুলের মালা শুকাবে
রেখে দেবো তার সুরভী
দিন গিয়ে রাতে লুকাবে
মুছো না গো আমারই ছবি
আমি মিনতি করে গেলাম..
তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কি বা দূরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম..
এই মন তোমাকে দিলাম……….”
গান শেষে আরিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলো। দুপাশেই নিরবতা কাজ করছে।
মৌ এতোক্ষন এক ধ্যানে গান শুনছিলো। আরিয়ানের কন্ঠে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তার কাছে এ গানটা। তার ফেবারেট গানের মধ্য একটা এই গান।
“কেমন লাগলো সব গিফট??”
“অনেক অনেক সুন্দর।সব কিছুই আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
আচ্ছা এই মালা কোথায় পেলে তুমি??”
“সেটা তোর না জানলেও চলবে।”
এভাবে প্রায় ১ ঘন্টা কথা বলে তারা।কিভাবে কিভাবে যে সময় চলে যায় বুঝতেই পারে না তারা।
আগে মৌ ভাবতো মানুষ এতো কথা বলে কিভাবে। এখন নিজে এ সিচুয়েশনে পরে বুঝছে যে মানুষ কিভাবে এতো কথা বলে।
এভাবে দেখতে দেখতে দিন চলে যেতে লাগলো। আরিয়ান আর মৌ প্রতিদিন রাতে ফোনে কথা বলে। আর আরিয়ান প্রতিদিন মৌ কে এটা সেটা নানাকিছু গিফট দেয়।
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসতে লাগলো। আরিয়ানদের বাসাতেও যেমন মেহমানে পূর্ণ। মৌ দের বাসাতেই এমন অবস্থা।মানুষে গিজগিজ করছে সব রুম।
এই কয়দিন মৌ আরিয়ানের সাথে যেমন কথা বলছে,বাড়ীতে এতো মেহমান থাকায় এখন তা সম্ভব হচ্ছে না।যখনই আরিয়ানের সাথে একটু কথা বলতে যাবে হয় বড়রা কোনো কারনে ডাক দেয় নাহয় ছোটোরা দুষ্টমি করে।
আর এদিকে অহনা আর ফাহাদ সুযোগ পেলেই ফোনে কথা বলে। এদের দুজনকে সারাদিন ফোনের সাথে বেধেঁ দিলে হয়তো এরা খুশি হতো। এ কয়দিনে অহনার মনে ফাহাদের জন্য ভালোবাসা জন্মে গিয়েছে। আর ফাহাদ তো দেখতে যাওয়ার দিন থেকেই অহনাকে একটু একটু করে ভালোবেসে ফেলে।যা এ কয়দিনে আরো বেড়েছে।
আজকে মৌ আর অহনার মেহেদি অনুষ্টান। তবে যার যার বাসায়। আবার হলুদের অনুষ্টান আর বিয়ে হবে একটা কমিউনিটি সেন্টারে। হলুদের অনুষ্টান ৩পরিবার একসাথে করবে।
বাসায় ২জন মেহেদি আর্টিস্ট এনে মৌ কে মেহেদি দেওয়া হচ্ছে।আজকে মৌ এর নিজেকে মনে হচ্ছে সে নতুন বউ।যদিও বিয়ে আগেই হয়ে আছে তার। কিন্তু এতো আয়োজন দেখে নিজেকে নতুন বউ মনে করা স্বাভাবিক। দু হাত ভর্তি মেহেদি হাতে বসে আছে সে। কোনো কাজই করতে পারছে না সে। একটু যে মজা করবে তারও উপায় নেই,যদি মেহেদি নষ্ট হয়ে যায়।…
এই মেহেদি নিলে নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে অসহায় মানুষদের মধ্য একজন লাগে। না নড়া যায় না নিজে কিছু করা যায়। শুধু বসে থাকা যায়।
আর এদিকে অহনার মনটা খারাপ বেশ। একদিকে একটু আনন্দও লাগছে আবার একদিকে খারাপ ও লাগছে।আনন্দ লাগছে এই জন্য যে সে তার ভালোবাসার মানুষকে পাবে। আর খারাপ লাগছে এই জন্য যে এই ফ্যামিলিকে তার ছেড়ে যেতে হবে।
কিছুদিন পরই সে এই বাড়ীর মেহমান হয়ে যাবে। এ কথা চিন্তা করতেই একধরনের চাপা কান্না অনুভব করে সে। মেহেদি নেওয়ার সময় চোখের কোনে একটু পানি চলে আসে।কেউ সে পানি না দেখলেও আরিয়ান ঠিকই তার বোনের চোখের পানি দেখে।
আরিয়ান গিয়ে অহনার মাথায় হাত রেখে বলে,
“আমার বোনটার কি হয়েছে?? মনটা অনেক খারাপ বুঝি??”
আরিয়ানের এ কথা শুনে অহনা আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না। আরিয়ানকে ধরে হু হু করে কেঁদে দিলো সবার সামনে।হঠাৎ কারোর এমন কান্নার আওয়াজে সবাই অহনার দিকে তাকায়।
আরিয়ান আবারো অহনার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় আর বলে,
“এভাবে কান্না করার কি আছে??”
“ভাইয়া আমি তোদেরকে ছেড়ে যাবো না।”
“এ কেমন কথা হলো??”
“আমার কাউকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করছে না। খুব কষ্ট লাগছে।”
“তো আমাদের মনে হয় কষ্ট লাগছে না??
একদিন না একদিন তো তোকে বিয়ে করে এ বাড়ী ছেড়ে যেতেই হবে তাইনা??”
“হুম।কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি না।” এ বলে অহনা আরেক দফা কেঁদে দিলো।
“আর কাঁদবি না তো।আমার কিন্তু ভালো লাগছে না।”
অহনা আরিয়ানের কোনো কথা না শুনে কান্না করেই যাচ্ছে।আশেপাশে দাদি,আব্বু, আম্মু নেই। থাকলে সে আরো কাঁদতো।
আরিয়ান অহনার কান্না থামানোর জন্য বললো,
“তুই বিয়ে না করলে আমি মামু হবে কিভাবে?? আমার খুব ইচ্ছা কেউ আমাকে কিউট কিউট ভয়েসে মামু ডাকবে।”
আরিয়ানের এ কথা শুনে অহনা চুপ হয়ে যায়। তার এ কথায় বেশ লজ্জা লাগছে।। আরিয়ান এ দেখে হেসে বললো,
“বাহ,আমার এই কথা তো ম্যাজিক এর মতো কাজ করলো!!!”
আরিয়ানের কথায় অহনা কিছু বললো না। চুপ হয়ে রইলো।
“আচ্ছা তুই মেহেদি লাগা। আমার কিছু কাজ আছে।আমি আসি।”
এ বলে আরিয়ান সেখান থেকে উঠে চলে যায়।
মৌ একা একা বসে আছে সেই কখন থেকে। কেউ তার পাশে বসার সময়টুকু পাচ্ছে না। তার কাজিন রাও না। সবাই এই সেই নানা কাজে ব্যস্ত। এভাবে বসে থাকতে থাকতে তার ঘুম লেগে যাচ্ছে।সে হালকা চো বুজেও ফেলেছিলো। কিন্তু কারোর ডাকে তার সেই আধো আধো ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলে সে দেখে তার চাচাতো বোন দাঁড়ীয়ে আছে। নাম তার মাহি। ৮ বছরের একটা মেয়ে সে। বেশ পটু।।কিন্তু থাকে বেশ চুপচাপ। অথচ একবার কথা বলা শুরু করলে তাকে থামানো দায় হয়ে যায়।
মৌ মাহিকে দেখে বললো,
“কি হয়েছে?? এখানে কেনো দাঁড়ীয়ে?? ”
“আপু শোনো,আমার সাথে একটু ছাদে চলোনা। ”
“এই সন্ধার সময় ছাদে কেনো??”
“একটা জিনিস দেখাবো তোমাকে।।”
“ছাদে আবার কি জিনিস??এখানে নিয়ে আসো যাও।”
“আরে না।।সেটা ছাদেই দেখতে হবে।এখানে আনা যাবে না।”
“এই হাত ভরা মেহেদি নিয়ে আমি এখন ছাদে যাবো!!!”
“হুম। তোমাকে যেতেউ হবে।”
“আচ্ছা চলো দেখি তোমার কি এতো জিনিস।”
এরপর মাহি আর মৌ ছাদে আসে। মাহি মৌ কে ছাদের দরজা থেকে কিছুটা দূরে দার করিয়ে তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে নেমে ছাদ থেকে চলে যায়।মৌ তো বুঝতে পারেনা এসবের কিছুই।
“এই মেয়েটা আমাকে ছাদে নিয়ে আসলো কিছু দেখানোর জন্য। আর নিজেই এখন চলে গেলো!!”
হঠাৎ কেউ ছাদের দরজা আটকিয়ে দেয়।মৌ তো খুব ভয় পেয়ে যায়।দে বিড়বিড় করে বলছে,
“এখন ছাদে কে আসবে!!!তারপর আবার দরজা আটকিয়ে দিলো কেনো!!”
আবার ও বলছি যারা রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প পরেন বা গল্প পড়তে ভালবাসেন এমন কেউ যদি থেকে থাকেন তাহলে রিকুয়েস্ট দিন। আমি তাদের কে আমার ফ্রেন্ড লিস্টে রাখতে চাই
মৌ এর তো ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে।সে দেখলো মানুষটি ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসছে। এবার ভয়ে সে জোরে চিৎকার দিতে যাবে কিন্তু সে মানুষটা তাড়াতাড়ি গিয়ে তার মুখ চেপে ধরে।এদিকে ভয়ে মৌ জড়োসড়ো হয়ে আছে। কিন্তু মানুষটা কাছে আসতেই সে বুঝতে পারলো এটা আর কেউ না বরং আরিয়ান। মৌ এর তো আরিয়ানকে দেখে খুব রাগ হলো। কারন এভাবে ভয় পাইয়ে ছাদে আসার কি দরকার ছিলো।
আরিয়ান মৌ এর মুখ ধরে রাখায় মৌ এর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো।সে আরিয়ানকে চোখের ইশারায় বললো মুখ থেকে হাত সরাতে।
আরিয়ান বুঝতে পেরে হাত সরায়।
“উফ এভাবে কেউ মুখ ধরে রাখে!!”
“সরি সরি। আসলে তুই চিৎকার করতে যাচ্ছিলি তো তাই মুখ চেপে ধরেছিলাম।”
“যাই হোক। এভাবে হঠাৎ করে আসলে তো এমন চিৎকার করবোই।
কিন্তু তুমি এখানে কেনো??”
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com