তুই আমার অজানা অনুভূতি | পর্ব -০৮
___এখানে ওই জল্লাদটা আসবে না। এখানে আমি একদম সেফ আছি। যাই একটু গল্প পড়ি। (ছায়া )
এই বলে ছায়া একটা ভালো গল্পের বই খুঁজতে লাগলো।
এদিকে তুহিন রাগে গজগজ করতে করতে সারা ভার্সিটিতে ছায়াকে খুঁজতে লাগলো।
ছায়ার ক্লাস ক্যান্টিন সব জায়গায় দেখলো কিন্ত ছায়াকে পেলো না।
তুহিন হঠাৎ কিছু একটা ভেবে মনে মনে বললো,
___সব জায়গায় তো খুজলাম শুধু লাইব্রেরি বাদ পড়েছে।
আমার থেকে বাঁচার জন্য মেয়েটা নিশ্চয়ই ওখানেই লুকিয়ে আছে। (তুহিন )
.
এই বলে তুহিন লাইব্রেরির দিকে হাঁটা দিলো।
লাইব্রেরিতে পৌঁছে তুহিন দেখলো ছায়া একটা বই নেবার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।
তুহিনের মাথায় হঠাৎ দুষ্টু বুদ্ধি এলো। তুহিন সোজা গিয়ে ছায়ার টুলটাই একটু ধাক্কা দিলো।
হঠাৎ ই টুলটা নড়ে উঠায় ছায়া তাল সামলাতে না পেরে নাচে পড়ে গেলো।
নিচে পড়ে ছায়া খুবই ব্যাথা পেল আর কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো,
___ওমাগো রে কোমরটা মনে হয় গেলো রে। মনে হচ্ছে কোমরের সব হাড় গুড়গুড় হয়ে গেছে গো।
আহঃ। ওরে মনে হয় আমার আর বিয়ে হবেনা কোমর ভাঙা মেয়েকে কে বিয়ে করবো গো।
আমাকে মনে হয় আজীবন কুমারী থাকতে হবে গো। কুমারী থাকলেও সমস্যা নেই কিন্তু
আমি যে আর লাফালাফি করতে পারবো না গো। আর লাফালাফি ছাড়া আমি বাঁচবো কেমনে গো। (ছায়া )
এইসব বলে বলে ছায়া ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছিলো আর তুহিন তো
ছায়ার এমন উৎভট কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ ।
একটা মেয়ে যে এতটা পাগল হতে পারে তা তুহিন ছায়াকেই দেখে বুঝলো।
এর মধ্যে তুহিনের রাগ গলে জল হয়ে গেছে। সে এখন ছায়ার পাগলামী ইনজয় করতে ব্যস্ত ।
.
এদিকে ছায়া কেঁদেই যাচ্ছে আর উল্টা পাল্টা বকেই যাচ্ছে।
একটু পড়ে ছায়ার কান্না থামলো সে তুহিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো তুহিন মুচকি মুচকি হাসছে।
তুহিনের হাসি দেখে ছায়ার খুবই রাগ হলো। ছায়া মনে মনে বললো,
____বেটা খচ্চর পোলা আমাকে ফেলে দিয়ে হাসা হচ্ছে তোকে আমি মজা দেখিয়েই ছাড়বো।
এর শোধ যদি না তুলেছি আমার নামও ছায়া নয়। (ছায়া )
ছায়া মনেমনে কথা গুলো বলছিলো তখনি লাইব্রেরিতে তুহা এলো।
সে ছায়াকে কাঁদতে দেখে তার কাছে গেলো। আর উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
__কি হলো ছায়া তুই কাঁদছিস কেন? আমাকে বল কে তোকে
কি বলেছে আমি তার খবর নিচ্ছি বোন প্লিজ কাঁদিস না। (তুহা )
ছায়া নিজেকে সামলে উত্তর দিলো,
___আরেহ দোস্ত কিছুই হয়নি আমি জাস্ট দেখছিলাম আমার কিছু হলে
বা আমি কাঁদলে তোর রিয়েক্টশন কেমন হয়। এই আরকি তাই এক্টিং করছিলাম। (ছায়া )
[ছায়া তুহাকে মিথ্যে বললো কারণ ছায়া জানে তুহা ছায়ার জন্য অহেতুক দুশ্চিন্তা করবে।
তাই মিথ্যে বলে ব্যাথা পাওয়ার কথাটা লুকিয়ে গেলো ]
ছায়ার এমন মিথ্যে কথা শুনে তুহিন খুবই অবাক হলো।
তুহিন ভাবতে লাগলো ছায়া কেন তুহাকে সত্যিটা বললো না। তুহিন মনেমনে বললো,
____ছায়া মেয়েটা ভারী অদ্ভুত তো। নিজের ফ্রেন্ডকে সবটা খুলে কেন বললো না মেয়েটা।
তা যাই হোক তাতে আমার কি আমি তো আমার প্রতিশোধ নিয়ে নিয়েছি এবার যায় এখান থেকে। (তুহিন )
এই বলে তুহিন লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে গেলো।
ছায়া আর তুহাও বেরিয়ে ক্যান্টিনে চলে গেলো।
ছায়া আর তুহা মিলে ক্যান্টিনে একসাথে কিছুক্ষন গল্প করেই বেরিয়ে এলো।
তুহার একটা কাজ ছিল তাই সে বাকি ক্লাসগুলো না করেই চলে গেলো।
.
এদিকে ছায়া আর কি বা করবে তাই সে একা একাই ভাবলো একটু
ভার্সিটির ক্যাম্পাসটা একটু ঘুরে দেখবে। যেই ভাবনা সেই কাজ ছায়া
ভার্সিটির ক্যাম্পাসে ঘুরতে লাগলো আর চারপাশটা দেখে বিমোহিত হতে লাগলো।
হাঁটতে হাঁটতে কবে যে ছায়া ভার্সিটির পিছনের লেকের পাশে চলে এসেছে সে নিজেও
জানেনা। মনটা হাল্কা করার জন্য ছায়া লেকের পাশের পাড়ে ঘাসের উপর বসে পড়লো।
আর নিজেকে নিয়ে ভাবতে লাগলো। আর আনমনেই বললো,
___সবার কাছে আমি একটা পাগলী দুষ্টু মেয়ে কিন্তু আমার মাঝে যে আরেকটা
গুন আছে তা তারা কেন দেখতে পাইনা? (ছায়া )
ছায়া আনমনেই নিজের প্রশ্নের উত্তরে বলে,
___হয়তো কেউ আমার চোখের ভাষা পড়তে পারেনা। নয়তো আমার কোনো গুনই নেই।
যাইহোক ছায়া তোকে সবসময় স্ট্রং থাকতে হবে। কারোর জন্য ভেঙে পড়া যাবে না।
Take a deep breath Chaya. Don’t be so emotional. (ছায়া )
এই বলে ছায়া একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো। তারপর লেকের শান্ত জলের দিকে তাকিয়ে ছিল।
অন্যদিকে ঠিক সেই সময় তুহিন লেকের পাস দিয়ে যাচ্ছিল
আর ছায়াকে দেখে দাড়িয়ে গেলো। তুহিন ভাবলো সকালে একটু বেশি করে ফেলেছিলো সে।
তার উচিত ছায়ার কাছে ক্ষমা চাওয়া।
.
তুহিন এক পা একপা করে ছায়ার দিকে এগিয়ে যেতে থাকলো।
অন্যদিকে ছায়া লেকের জলে তুহিনের প্রতিবিম্ব দেখেই মনেমনে ভাবতে লাগলো,
___আপনি আমাকে সকালে উপর থেকে ফেলেছিলেন এখন তার শোধ নেবার
সময় এসে গেছে মিঃ শাহরিয়ার শেখ তুহিন। (ছায়া )
ছায়া একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে লেকের জলে তুহিনের তার কাছে আসা দেখছিলো।
ছায়া দেখলো তুহিন নিচে না তাকিয়েই হাটছে। এটা দেখেই ছায়া মনেমনে বললো,
___দাড়া বেটা তোকে দেখাচ্ছি মজা। আজ যদি এই লেকের জলে তোকে নাকানি চুবানী না
খাওয়ায়েছি না তাহলে আমিও পাগলী না থুক্কু ছায়া নাহ।
ছায়া তুহিনের চোখের অগুচড়ে একটা পাথর তুহিনের ঠিক যেখানে পা
পড়বে সেখানেই রেখে দেই। হঠাৎ ই তুহিনের পায়ের নিচে কিছু পড়ায় সে
তাল সামলাতে না পেরে নদীর জলে পড়ে যায়।।
এদিকে ছায়া তো হাসতে হাসতে শেষ আর তুহিন সে কিছু বুঝতেই পারলো না তার সাথে কি হলো।
ছায়া অনেক্ষন হাসতে হাসতে বললো,
আমাকে সকালে ফেলে দিছিলেন এটা তার শাস্তি।
এবার লেকের জলে মাছের সাথে খেলা করুন কেমন।
আর মাছের সাথে খেলা শেষ করে আমার কাছে প্রতিশোধ নিতে আসিয়েন ঠিক আছে।
এই বলে ছায়া হাসতে হাসতে ওখান থেকে চলে গেল।
এদিকে তুহিন রাগে ফুসফুস করছে। ছায়াকে মনে হয় হাতের কাছে পেলে জ্যান্ত কাঁচা চিবিয়ে খাবে ।
চলবে….
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com