গল্প: ভালোবাসব যে তোকে | পর্ব - ১৮
“আজব তো।
এখানে আসলেও সমস্যা!!আমার শ্বশুরবাড়ি আমি আসছি।
তোর কি সমস্যা??”
“যেটা তোমার শ্বশুর বাড়ী সেটা আমার বাবার বাড়ী।
আর এতোই যখন শ্বশুর বাড়ী আসতে ইচ্ছা করেছিলো সবার সামনে দিয়েই আসতে।
এভাবে আসার কোনো দরকার ছিলো!!!”
“অবশ্যই দরকার ছিলো। সবার সামনে দিয়ে আসলে তোর সাথে আর দেখা করা হতো না।”
“আর সে তো ২দিন পরেই দেখা করা যায়।
আর প্রতিদিন কি তোমার ভুতে আসতো নাকি আমাকে দেখতে??”
আরিয়ান কিছু না বলে মৌ কে পাশের দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।
তার এমন হুটহাট কাজে মৌ আবারো একটু ভয় পেয়ে গেলো।
“কখন থেকে তুই বকবক করেই যাচ্ছিস!! একটু চুপ থাকতে পারিস না???”
মৌ দুষ্টমি করে বললো,
“মোটেও না।আমার চুপ থাকতে ইচ্ছা করছে না।আমি বকবক করবো,
আমি কথা বলবো,আমি চিৎকার করবো।”
মৌ এর কথা শুনে আরিয়ান হুট করে মৌ এর গলায় মুখ গুঁজলো।
মৌ তো এমন করায় একদম ফ্রিজড হয়ে গেলো।
তার মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না।
এদিকে আরিয়ানকে ঠেলে সরাতেও পারছে না। কারন হাতে মেহেদি দেওয়া।
যারা রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প পরেন বা গল্প পড়তে ভালবাসেন
এমন কেউ যদি থেকে থাকেন তাহলে রিকুয়েস্ট দিন। আমি তাদের কে আমার
ফ্রেন্ড লিস্টে রাখতে চাই আরিয়ানের নিঃশ্বাস মৌ এর গলায় পরায় সে বারবার
কেঁপে উঠছে। এদিকে কিছু বলতেও পারছে না।
আবার আরিয়ানকেও সরাতে পারছে না। কি এক অবস্থায় সে পরে গেলো।
কিছুক্ষণ পর আরিয়ান মৌ এর গলা থেকে মাথা উঠালো।সে দেখলো মৌ চোখ বুজে আছে।
সে আলতো করে মৌ এর চোখে চুমু দিলো। আরিয়ান সরে গেলে মৌ তার চোখ খুলে।
“কি হলো এখন?? এবার কথা বল।”
মৌ আরিয়ানের কথার কোনো জবাব দিলে না। লজ্জায় সে তার মাথা নিচু করে আছে।
আরিয়ান মৌ এর এমন অবস্থা থেকে মুচকি হাসলো।
তারপর মৌ এর থুতনি ধরে তার মাথাটা উচু করলো।
” এখনই এমন লজ্জা!!বাসর রাতে কি করবি তাহলে??”
আরিয়ানের এ কথাটা মৌ এর লজ্জার পরিমান আরো কয়েকগুন বাড়িয়ে দিলো।
সে আর কোনো উপায় না পেয়ে আরিয়ানের বুকে মাথা রাখলো।
আর আরিয়ান শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরলো।এভাবে বেশ কিছুক্ষণ দুজন এমনই ছিলো।
ধীরে ধীরে মৌ তার মাথাটা উঠালো।
আরিয়ানও তাকে ছেড়ে দিলো। দুজনে এখনও চুপচাপ বসে আছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর আরিয়ান মুখ খুললো,
“আমি কখনো ভাবতেও পারি নি যে কাউকে এতোটাই ভালোবেসে ফেলবো আমি।”
“আমি নিজেও কখনো এমন চিন্তা করেনি।”
“জানিস, তোকে ছাড়া এ কয়টা দিন কেমন কেটেছে আমার??
নিজেকে খুবই একা লাগতো। কেমন যেনো অসহায়।
তোকে ছাড়া একটা মূহুর্ত কল্পনা করাও দায় আমার জন্য।”
এর জবাবে মৌ কিছু বলেনি। সে শুধু আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরেছিলো।
এর মধ্য হঠাৎ করে ছাদের। দরজায় কে যেনো নক করে।
এতে তারা দুজনেই চমকে উঠে।মৌ তাড়াতাড়ি নিজেকে আরিয়ানের থেকে
ছাড়িয়ে নিয়ে ভয়ে ভয়ে বলে, “হায় আল্লাহ।।।এখন ছাদে কে আসলে!
আমাদের একসাথে দেখে নিলে তো মান সম্মান কিছুই থাকবে না।
এককাজ করো। তুমি এক সাইডে লুকিয়ে পরো।আমি দরজা খুলে সাথে সাথে
বের হয়ে যে এসেছে তাকে নিয়ে নিচে চলে যাবো।”
আরিয়ান মৌ এর এসব কথা শুনে বলে,
“আরে আরে এতো হাইপার হচ্ছিস কেনো??আমরা কি অপরিচিত কেউ নাকি।
আমরা স্বামী স্ত্রী। সো এভাবে দেখা করাই যায়।কেউ কিছুই বলবে না।”
“না না।তাও কিছু বলা যায়না। আমাকে নিয়ে এরা মজা করুক আমি তা চাই না।
তুমি জলদি লুকিয়ে পরো তো এক জায়গায়।”
“আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি।তুই রিল্যাক্স হ।”
তারপর আরিয়ান গিয়ে ছাদের এক কোনায় দাঁড়ীয়ে থাকে।
আর মৌ গিয়ে দরজা খুলে।
দরজা খুলে সে দেখে তার চাচি দাঁড়ীয়ে আছে।
উনাকে দেখে মৌ কিছুটা ঘাবড়ে যায়।
চাচি মৌ কে ছাদে দেখে বলে যে,
“কি ব্যাপার এখন একা একা ছাদে কি করিস??”
“তেমন কিছু না। ঐ একটু খোলা জায়গায় এসেছিলাম।
ঐখানে অনেক মানুষজনের ভিতর কেমন যেনো অস্বস্তি লাগছিলো তাই আরকি।”
“ওও। তো কাউকে তো বলে যেতে হয়। তোর এভাবে আসায় সবাই তোকে খুজছিলো।”
“আচ্ছা এখন তো পেয়ে গিয়েছো। চলো, নিচে যাওয়া যাক।”
“হুম চল।”
ছাদের থেকে চলে আসার পর মৌ যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
কারন আরিয়ানকে চাচি দেখেনি।ঐদিকে আরিয়ান সুযোগ বুঝে
তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে নেমে চলে যায়।
চাচি আর মৌ রুমে এসে সবার মাঝে দাঁড়ায়। মৌ এর চাচি আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“দেখো ভাবি।তোমার মেয়ে ছাদে গিয়েছিলো। হাওয়া বাতাস খেতে।”
এদিকে মাহি তার আম্মুর মুখে এ কথা শুনে বলে,
“আরে আম্মু মৌ আপু ছাদে একটা ভাইয়ার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো।”
মাহির এ কথা শুনে মৌ চোখ বড় করে ফেললো,সে ইশারা করে
মাহিকে বলছে চুপ হয়ে যেতে কিন্তু সে নিজের মতো বলেই যাচ্ছে।
.
“আম্মু জানো??ঐ ভাইয়াটা না আমাকে চকলেট দিয়ে বলেছিলো যে মৌ
আপুকে ছাদে ডেকে নিয়ে যেতে।”
চাচি তো মাহির এ কথা শুনে ভ্রু কুঁচকিয়ে একবার মাহির দিকে তাকায় আবার
মৌ এর দিকে তাকায়। মৌ তো লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।মনে মনে সে বলছে,
“যেটার ভয়ে ছিলাম সেটাই হলো।এবার সবাই আমার ইজ্জতের ফালুদা বানায় ছাড়বে।
মাহির বাচ্চা মাহি তোকে তো আমার মন চাচ্ছে মেহেদির মধ্যে ছেড়ে দেই।উফ।”
চাচি বললো,
.
“কি রে মৌ মাহি কি বলছে??কে দেখা করতে এসেছিলে??”
“কই কেউ না তো চাচি। কে দেখা করতে আসবে।”
এর মধ্য আবার মৌ এর মামাতো বোন সীমা এসে বললো,
“মিথ্যা বলছিস কেনো??আরে চাচি আমি বলি, আরিয়ান ভাইয়া দেখা করতে এসেছিলো।”
এ কথা শুনে সব একসাথে বলে উঠলো,
“ওওওওওওও,এই কথা।”
চাচি বললো,
.
“আমাদের জামাই তো দেখছি বড়ই অধৈর্যবান মানুষ। পরশুই তো মন ভরে দেখতে পেতো।”
সাথে আবার মামি যোগ দিলো,
“আরে অধৈর্যবান কেনো বলছেন??জামাই তে আমাদেট হেব্বি রোম্যান্টিক মানুষ দেখছি।”
সীমা আবার তালে তাল মিলালো,
“আমাদের দুলাভাই মৌ কে কতো ভালোবাসে দেখেছো??
এতোদিন কাছেই ছিলো।শুধু এ কয়দিন আলাদা আছে।
তাই ই দেখা করতে চলে এসেছে!!!”
এদের সব কথায় মৌ এতো লজ্জা পেলো যে তার সেখানে দাঁড়ীয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।
তাই সে দৌড়ীয়ে নিজের রুমে এসে দরজা আটকিয়ে দিলো।
.
খাটে বসে সে আরিয়ানকে হাজারো গালি দিচ্ছে।সাথে মাহিকেও।
“উফ কি দরকার ছিলো এখানে আসার???২দিন না দেখলে কি এমন হয়ে যেতো!!!
এই জন্য এখন সবার সামনে যেতেও লজ্জা করছে আমার।।।
আবার এই মাহিটাও চুপ থাকলো না। এভাবে বলার কোনো দরকার ছিলো!!!”
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য সকাল থেকেই ৩বাড়ীতে সেইরকম
তোড়জোড় চলছে।একজন এই কাজ করছে আরেকজন সেই কাজ করছে।
১১টার দিকেই অহনা আর মৌ কে পার্লারে নেওয়া হলো। দুজনে একই
পার্লার থেকে সাজবে।দুজনের শাড়ীর রংও একই। শুধু সাজটা ভিন্ন হবে।
১টার দিকে সাজানো শেষ হলে তারা কমিউনিটি সেন্টারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
পুরো রাস্তা অহনা বেয়শ টেনশনে ছিলো। সে নিজেও জানে না তার
এতো টেনশন কেনো হচ্ছে।আজকেই যদি এতো টেনশন হয়,বিয়ের দিন কি যে হবে….
.
আর মৌ তে বেশ টেনশন ফ্রি ই ছিলো।
কমিউনিটি সেন্টারে আসার পর পরই তারা নেমে যায় গাড়ী থেকে।
তাদের কে নিয়ে সোজা স্টেজে বসিয়ে দেয় মৌ এর মামি।
আরিয়ান আর মৌ এর হলুদের স্টেজ একদম সামনাসামনি দিয়েছে।
ফাহাদ আর অহনারও তেমনই।এতে ৪ জন লাভ বার্ডস এর বেশ সুবিধাই হলো।
পুরোটা সময় তারা একে অপরকে দেখতে পারবে।
অহনা আর মৌ কে দেখতে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।
বাঙালি স্টাইলে শাড়ী পরানো হয়েছে তাদের।
আর আর্টিফিশিয়াল ফুলের গহনা পরানো হয়েছে।
.
আর আরিয়ান টিয়া রংয়ের একটা পান্ঞ্জাবী পরেছে।
সাথে হলদেটে রংয়ের একটা কটি পরেছে পান্ঞ্জাবীর উপরে।
(আমার জানামতে হয়তো এটাকে কটি ই বলে। নট শিওর)
আর ফাহাদ কাঁচা হলুদ রংয়ের পান্ঞ্জাবী পরেছে।
দুজনকে দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম লাগছে।
সামনাসামনি বসে আসে আরিয়ান, মৌ আর ফাহাদ অহনা।
একে একে সবাই এসে বর আর কনের মুখে হালকা হলুদ ছোঁয়া দিচ্ছে আর মিষ্টি খাইয়ে দিচ্ছে।
আরিয়ান এর বেশ ভালো লাগছে এসব। কিন্তু তার ভালো লাগার মূল কারন হলো,
সে মৌ কে দেখতে পাচ্ছে। আরিয়ান আজকে একটু সুযোগ পেলেই মৌ এর দিকে তাকাচ্ছে।।
আরিয়ান তো আজকে মৌ কে দেখে ক্রাশ খেয়েছে।অবশ্য এমন হওয়ারই কথা।
কারন মৌ কে আজ দেখাই যাচ্ছে এতো সুন্দর।
.
আরিয়ানের এমন চাহনি মৌ কে বেশ লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে।
কারন তার কয়েকজন কাজিন এসে তার কানে কানে আরিয়ানের এমন করে চেয়ে
থাকা নিয়ে মজা করে অনেক কথা বলছে।
এদিকে একটা ছেলে মৌ এর দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলো।
যদিও মৌ সেটা খেয়াল করেনি। কিন্তু আরিয়ান খেয়াল এটা করেছিলো।
এতে তার প্রচন্ড রাগ উঠে যায়।কিন্তু সে কষ্টে রাগটা দমিয়ে রেখেছে।
কারন একে তো অনুষ্টান চলছে। তার উপর সেই ছেলেটা আরিয়ানের ফ্রেন্ড ও।
ছেলেটার নাম ইমন।আমেরিকায় থাকে সে। আরিয়ানের
বিয়ে উপলক্ষে সে দেশে এসেছে। এখন সে আরিয়ানদের বাসাতেই রয়েছে।
ইমন কেমন নজরে মৌ কে দেখছে তা আরিয়ান ভালোভাবেই বুঝতে পারছে।
আরিয়ান যে কিভাবে নিজের রাগটা কন্ট্রোল করছে তা নিজেই জানে।
তার এখন মনে হচ্ছে মৌ কে কোথাও লুকিয়ে ফেললে ভালো হতো।
চলবে….
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com