গল্পঃ শুধু তুই । পর্ব -০৪
কলি : কবিতা আবৃত্তি করলে অসাধারণ কবির নাম কি।
সুমাইয়া: তো মনে পড়ে না। শুনেছি একবার কুহুল আপির কাছে।
তখন থেকেই গাঁথা হয়েছে মনের মানসপটে।
বলতে বলতে উঠে দাড়াতেই অজ্ঞান হয়ে গেল সুমাইয়া।
কলি চিল্লিয়ে পুরো বাড়ি এক করে ফেলল।
মুহুর্তের মধ্যেই পুরো বাড়ি এক হয়ে গেছে।
ইতোমধ্যে ডাক্তার ডেকেছে সুমাইয়ার শাশুড়ি। ফারহানকে ফোন দেওয়া হয়েছে।
ডাক্তার শুধু বলল মা আপনি চিন্তা করবেন না। ভাবী সুস্থ আছেন,
আর ফারহান আমার সাথে বাইরে আয় কথা আছে। ফারহান ডাক্তারের পিছু পিছু বেরিয়ে আসল।
ডাক্তার : আচ্ছা ফারহান আমি তো তোকে চিনতে পারছি না।
ফারহান : কেন কি হয়েছে, তুই হঠাৎ এমন করে বলছিস কেন।
ডাক্তার : শোন ফারহান যে চলে গেছে, তার আশা ছেড়ে দে।
যে আছে তাকে নিয়ে বাঁচতে চেষ্টা কর। আর তুই এত নির্দয় পাষাণ কেমনে হলি।
ফারহান : আমি তো আগাগোড়া কিছু বুঝতে পারছি না।
নিশ্চয়ই ও প্রেগন্যান্ট, অন্য কারো বাচ্চা আমার ঘাড়ে চাপাতে চায়।
ডাক্তার : তুই যা ভাবছিস তা নয়। পিছুটান বাদ দে,
আর নির্দয়ভাবে মারিস না মেয়েটাকে। বাচ্চা মেয়ে বুঝিয়ে বলিস, তাহলেই বুঝতে পারবে।
শেষে একটা কথাই বলবো পিছুটান ছেড়ে দে।
ফারহান নিশ্চুপ হয়ে গেল। ডাক্তার চলে গেল। ফারহান সুমাইয়ার কাছে গেল।
ফারহান ঘুমন্ত সুমাইয়ার মুখ পানে চেয়ে আছে।
কি নিষ্পাপ চেহারা, মায়াবী চোখ। ফারহান কেমন করে অমানুষের মত মারতে পারল।
ফারহান সুমাইয়ার পাশে শুয়ে পড়ল।
সুমাইয়া পাশ ফিরে জড়িয়ে ধরল।
ফারহান ও জড়িয়ে বাহুডোরে আবদ্ধ করল।
অবশেষে ফারহান ডুবে গেল অতীতের ছেঁড়া খাতায়।
পারিবারিক সম্মতিতে ফারহানের সাথে বিয়ে ঠিক হয় কুহুলের।
সম্পর্কে সে সুমাইয়ার চাচাতো বোন।
ফারহানখুব এক্সাইটেড বিয়ে নিয়ে। ছোট থেকে পছন্দ করত কুহুল কে।
এই বিষয়ে সুমাইয়া জানতো পুরোপুরি।
তবে কুহুল এই বিষয়ে কিছুই জানত না।
বিয়ে ঠিক করেছে, সেটাও জানতে পারে বিয়ের দুই দিন আগে।
ফারহানের সাথে কথা বলার জন্য সবার কাছে বলে।
কিন্তু ফারহামের সাথে কোন ভাবেই কথা বলতে পারে না।
ফারহান শপিং, গয়না, ফুল, ডেকোরেশন নিয়ে ব্যস্ত।
চারদিকে প্রচুর পরিমাণে কাজ একা ছেলে তাই সবদিক সামাল দিতে হয়।
তার উপর বাবা প্রেসারের রোগী।
আবার উত্তেজনা অনুভব করছে, ছোট্ট থেকে যাকে ভালবাসে।
তাকে খুব শ্রীঘ্রই আপন করে পাবে। তাই তো খুশি মনে কাজ করে চলেছে।
কিন্তু বিধাতার সৃষ্টির নির্মম পরিহাস অপেক্ষা করছিল।
ফারহানে জন্য যা ফারহান ঘুণাক্ষরেও টের পায় নি।
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এল। কাল বিয়ে, দুই বাড়িতেই চরম সাজসজ্জা।
চারদিকে আলোর রসনাই, লাল নীল হলুদ সবুজ ও কমলা বাতির ঝকঝকে আলো।
সকাল বেলা হলুদ হল দুই বাড়িতে। দুই বাড়িতে যেন আনন্দের বন্যা বইছে।
সন্ধ্যা বেলায় বরপক্ষ চলে এসেছে, ফারহান সবাই মিলে এসেছে।
মোহর পড়ানো হবে ,তাই আগে রেজিষ্ট্রি করার জন্য সাইন আনতে গিয়ে দেখে।
কুহুল ঘরের কোথাও নেই। সুমাইয়া তো ফারহান আসার সাথে সাথেই বেরিয়ে এসেছে।
ঘরে ছিল কুহুল ও ওর মামাতো বোন। সেই নিয়ে চলে গেছে কুহুল কে লোক চক্ষুর আড়ালে।
এই খবর ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগলো না। সবাই যে যার মতো মন্তব্য করে চলে গেল।
ফারহান রাগের চোটে উঠে চলে গেল। তারপর হঠাৎ ফারহানে বাবা
অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সবাই সেখানে ছুটে যায়। সুমাইয়ার চাচির উদ্দেশ্যে বলে আপু রাজি ছিল না।
আমাকে বললে আমি ভাইয়া কে বারণ করে দিতাম।
তোমাদের জন্য দুই পরিবারের চুড়ান্ত অপমান হল। সুমাইয়ার বয়স সবে চৌদ্দ।
বাবা মায়ের সাথে সেও চলে গেল হাসপাতালে।
ফারহানে বাবা সেদিন সুমাইয়াকে কাছে ডেকে বলেছিল। মা ছেলের বিয়ে দেখে যেতে পারলাম না।
তবে তোর যেদিন আঠারো বছর পূর্তি হবে।
সেইদিন তুই আমার ফারহান কে বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করবে।
না হলে ফারহান যে জীবনে বিয়ে করবে না।
সুমাইয়া না ভেবে কথা দিয়ে দেয়। ফারহান কে ডেকে এমন ওয়াদা করে নেয়।
তার কিছুক্ষণ পরে তিনি মারা যান। তারপর থেকে ফারহান কেমন যেন হয়ে যায়।
সুমাইয়ার আঠারো বছর এক দিন সেদিন বিয়ে করে।
এজন্য বিয়ের প্রতি যে অবিশ্বাস ফারহানে।
সুমাইয়া। নড়াচড়া তে অতীত থেকে বের হয়ে গেল ফারহান।
ফারহান: কি হয়েছে ঘুমিয়ে পড় এখানে।
সুমাইয়া: রান্না বাকি আছে, ছেড়ে দেন আমি রান্না ঘরে যাব।
ফারহান : চুপ বেশি কথা বলা পছন্দ নয় আমার।
এই অসুস্থ শরীর নিয়ে নিচে যেতে হবে না।
কলি রান্না করে নেবে।
সুমাইয়া : না আমি করব রান্না।
ফারহান : চুপ নয়তো তুলে আছাড় মেরে দেব।
অসুস্থ শরীর নিয়ে বাইরে যেতে হবে না।
সুমাইয়া: ঠিক আছে, তাহলে আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমাব।
ফারহান : আচ্ছা ঠিক আছে, ঘুমাও।
সুমাইয়া ঘুমিয়ে পড়ল আবার ঔষধের রেশ কাটেনি। ফারহান ও ঘুমিয়ে পড়ল।
দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর ফারহানে মা দেখতে আসল সুমাইয়াকে।
এসে দেখে ছেলের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে সুমাইয়া।
ফারহান ঘুমিয়েছে তাই না ডেকে চলে গেল নিচে।
বারবার আঁচলে মুখ মুছছে ফারহানে মা। তা দেখে কলি বললো।
কলি : মা কি হয়েছে, কেন কান্না করছ।
মা : এটা দুঃখের কান্না নয় রে মা। এটা আমার সুখের কান্না।
তোর ভাই স্বাভাবিক ভাবে ফিরছে মা।
কলি : মা বাবা এটা বুঝতে পেরেই এমন ওয়াদা করিয়েছিল মনে হয়।
হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো। কলি দরজা খুলে দিল। একজন কে দেখে সালাম দিল ।
কলি এই লোকটিকে দেখে অবাক।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com