Breaking News

তুই আমার অজানা অনুভূতি | পর্ব -০৭



তুহিন : — কেন তোর বাড়ি যাবো। ওখান থেকে নিয়ে এসে বুইড়া বেডার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো।
ছায়া :— হাহ আমি কি তোকে ছেড়ে দিবো নাকি। তোকেও আমি দাঁত পড়া বুড়ির সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো।
তুহিন :— কিহহ তুই আমাকে বিয়ে দিবি তাও আবার বুইড়া বেডির সাথে তোর এতো সাহস আছে নাকি ।
ছায়া :— জ্বী আছে মহাশয়। ভাবতেছি বুইড়া বেডিটার কপাল পুড়বো তোকে বিয়ে করে।
তুহিন :—কেন কেন?
ছায়া :— তোর মতো জল্লাদরে বিয়ে করে যে ওনার কি হবে আল্লাহ জানে। দুই দিনে তোকে ছেড়ে অন্য পোলার লগে পালাইবো বুড়ি দাদিটা।
তুহিন : আমি জল্লাদ
ছায়া :– হ তুই জল্লাদ।
তুহিন :—তোরে পেলে যে কি করবো আল্লাহ জানে।
ছায়া :—ওকে সেটা তখন দেখা যাবে বুইড়া বেডির জামাই এখন ঘুমান।
তুহিন : ?
ছায়া :— কি হলো?
তুহিন : কিছু না যা ভাগ…..
ছায়া :—হ যাইতাছি।
তুহিন এর মধ্যেই ভুলে গেছে সে কেন ছায়াকে মেসেজ দিয়েছিলো। আর ছায়া এটা ভেবে হাসছে আর মনেমনে বলছে,
____পাগলটা ভুলেই গেছে যে সে আমাকে কি নিয়ে বকা দিতে এসেছিলো।
এদিক তুহিন মনেমনে ছায়াকে হাজারটা বকা দিচ্ছে। ছায়া আবার গান ছেড়ে দিয়ে আকাশের দিয়ে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
___আজও তুই নিজের অজান্তেই আমার মন খারাপটা দূর করে দিলি । তুই সত্যি আমার খুব ভালো একজন বন্ধু।
হঠাৎ ছায়ার ফোনে আয়ুশের মেসেজ এলো। যেটা দেখে ছায়ার মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। ঠিক সেই সময় ছায়ার ফোনে ছায়ার খুব প্ৰিয় একটা গান চালু হয়ে গেল। আকাশের দিকে তাকিয়ে সে গানটা নিজের মনেমনে গাইতে লাগলো আর তার চোখ দিয়ে দুই ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো ,
আমি পারিনি তোমাকে _________
আপন করে রাখতে _______
আমি পারিনি তোমাকে _____
আবার আমার করে রাখতে ______
তুমি বোঝনি আমি বলিনি _____
তুমি স্বপ্নতে কেন আসনি _____
আমার অভিমান তোমাকে নিয়ে _____
সব গেয়েছি _____
গানে গানে সুরে সুরে _____
কতো কথা বলেছি তোমাকে _____
তুমি বুঝনি ______
বুঝনি _____
কখনো যদি আনমনে চেয়ে _____
আকাশের পানে আমাকে খোঁজ_____
কখনো যদি হঠাৎ এসে_____
জড়িয়ে ধরে বলো ভালোবাসো _____
আমি প্রতিরাত হ্যাঁ প্রতিক্ষন _____
খুব অজানায় কতো অভিনয় _____
করে বসি তোমায় ভেবে ______
আমার অযথা সব লেখা গান_____
সব শুনে মন করে উচাটন _____
তুমি বুঝনি_______
কেন আমাকে _______
তুমি বুঝনি আমি বলিনি _____
তুমি স্বপ্নতে কেন আসনি _____
আমার অভিমান তোমাকে নিয়ে _____
সব গেয়েছি ______
গানে গানে সুরে সুরে _____
কতো কথা বলেছি তোমাকে ______
তুমি বুঝনি ______
বুঝনি _____
[আপনাদের লেখিকার সব চেয়ে প্ৰিয় গানের মধ্যে এটা একটা যা শুধু মন খারাপের সময় শুনা হয় এমনিতে শুনিনা ]
আজ ছায়ার খুব করে আয়ুশের সাথে কাটানো দিন গুলো মনে পড়ছে। এতোগুলো বছর পর হঠাৎ আয়ুশের মেসেজ কেন এলো তার কাছে সে তো নিজেকে সামলে নিয়েছিল তবে কেন আবার সেই মানুষটাই আবার তার জীবনে ফিরে আস্তে চাইছে।
[বুঝতে পারছেন না তো আয়ুশ কে? আয়ুশ হলো ছায়ার ভালোবাসা যাকে সে ভালোবাসি কথাটা বলেনি বা বলতে চাইনি।
(আয়ুশের কাহিনীটা বুঝতে হলে গল্পটা সম্পূর্ণ পড়তে হবে আস্তে আস্তে সব জানতে পারবেন। ) ]
ছায়া আয়ুশের কল রিসিভ করে কাঁপাকাঁপা গলায় বললো,
__আসসালামু আলাইলকুম আয়ুশশশ….. (ছায়া)।
__ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছিস ছায়া? ( আয়ুশ )
__জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি? (ছায়া )
__আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তোহ হঠাৎ আপনি ডাকছিস আগে তো সবসময় তুইতুকারি করেই কথা বলতি। ( আয়ুশ )
__ওই আরকি অনেক বছর পরতো আচ্ছা বাদ্দে তোর খবর কি সময় কেমন কাটছে ভিনদেশে?? ( ছায়া )
__এইতো ভালোই কাটছে এমনিতে দেশে ফিরেছি কয়েকদিন হলো। তোদের বাড়ি গেলাম তোকে পেলাম না তাই তোর নাম্বার নিয়ে কল দিলাম। আচ্ছা তোর কি অবস্থা? আর তুই হঠাৎ এতো দূরে গেলি কেন সবাইকে ছেড়ে? তুই তোহ পরিবার আত্মীয় পরিজন নিয়ে থাকতে ভালবাসতি। ( আয়ুশ )
__হুম বাসতাম এখন একাই ভালো লাগে সবার মাঝে বিরক্ত লাগে। আমি এখানে অনেক ইনজয় করি চিল মারি আড্ডা দেই ঘোরাঘুরি করি । এখানে সবার থেকে দূরে থাকতে ভালোই লাগছে বলতে গেলে জোস্ লাগছে। ( ছায়া )
[ আজও ছায়া আয়ুষকে মিথ্যে বললো যেটা সে বুঝতেই পারলো না। ভাবলো ছায়া আর আগের মতো নেই সে এখন অনেক পাল্টে গেছে। ছায়ার অভিনয় আজও ওকে নিজেকে লুকাতে সাহায্য করেছে ]
___জানিস ছায়া তুই না অনেক পাল্টে গেছিস। আচ্ছা থাক যাইহোক তুই ভালো থাকলেই হলো। আচ্ছা এতো বছরে তোর কি আমার কথা একবারও মনে পড়েছে? ( আয়ুশ )
___ কি যে বলিস এতো ব্যস্ততায় আমার তোকে মনে করার সময়ই হয়ে উঠেনা। আচ্ছা বাদ্দে এইসব বাড়িতে আসছোস এতগুলো বছর পর ইনজয় কর সবার সাথে। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে ঘুমাবো। ( ছায়া )
___আচ্ছা তুই ঘুমিয়ে পড় পরে কথা হবে কেমন। ( আয়ুশ )
___হুম আল্লাহ হাফেজ। (ছায়া )
আয়ুশের ফোন কেটে দিয়ে ছায়া মনেমনে বললো,
____আজও তুমি আমাকে বুঝলে না আয়ুশ। প্রতিবারের মতো আমার মিথ্যেটাকেই সত্যি ভেবে নিলে। যাই হোক এইসব ভাবলে চলবে না। ছায়া মানেই পাগলামী আর পাগলামিতে এইসবের জায়গা নেই।
এই সব বলতে বলতে ছায়া আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে চাঁদকে বললো,
____”তুই আমার মতোই রে……..
_____একদম একা যাকে কেউ বুঝেনা…….
____তুই যেমন জোস্নার আলোর মাধ্যমে সবার কষ্ট দূর করে দিস সবাইর মন খারাপ ভালো করে দিস।
____আমিও ঠিক তোর মতো পাগলামী দিয়ে কষ্ট ভুলিয়ে হাসিয়ে দি।
_____তুই যেমন হাজারো তারার ভিড়ে একা…….
___আমিও হাজারো মানুষের ভিড়ে একা…….
___আচ্ছা আমাদের কে কি কেউই কোনোদিন বুঝবে না?
আনমনেই ছায়া নিজের প্রশ্নের নিজেই উত্তর দিয়ে বললো,
____হয়তো নাহ
এইসব বলতে বলতে ছায়া বেলকানিতেই ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে আজানের সরে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। তারপর ছায়া উঠে নামাজ পড়ে নাস্তা করে ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে যায়। রেডি হয়ে ছায়া সোজা ভার্সিটিতে চলে যায়।
ভার্সিটিতে পৌঁছেই ছায়া দেখতে পেল গেটে তুহিন দাঁড়িয়ে আছে। ছায়া তোহ ভয়ে শেষ আজ আবার কি করবে এই করলাটা। ছায়া গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে মনেমনে বলতে লাগলো,
____আল্লাহ বাঁচাও আমাকে এই জল্লাদটা থেকে। ছায়ারে আজ তুই শেষ কাল যেভাবে মেরেছিলি আজ তোরে নির্ঘাত মেরে শশানে থুক্কু কবরে পাঠাই দিবে। ( ছায়া )
ছায়া ভিতরে ঢুকতেই তুহিন তার রাস্তা আটকে দাঁড়ালো। আর খুব রেগে বলতে লাগলো,
___তোমার এতো সাহস তুমি কাল আমাকে থাপ্পড় মেরেই পালিয়ে গেছিলে। কি ভেবেছিলে আমার কাছ থেকে বেঁচে যাবে। ( তুহিন )
ছায়া মনেমনে বললো,
ছায়া রে ভয় পেলে হবেনা তোকে শক্ত থেকে এই জল্লাদের মোকাবেলা করতে হবে । (ছায়া )
তুহিনের দিকে তাকিয়ে ছায়া একটা ভয় লুকানো মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
___আমি আপনাকে ভয় পেতে যাবো কোন দুঃখে। আপনি কোন রাজ্যের রাজা শুনি। (ছায়া )
ছায়ার কথাটা শুনে হঠাৎ তুহিনের খুবই অবাক লাগলো কারণ ঠিক একইভাবে সাহারা ও তুহিনকে বলতো। তাও তুহিন ভাবলো হয়তো সবার মাঝে যেমন অনেক কিছু মিলে যায় তেমনি ছায়া আর সাহারার মাঝে এটা হয়তো মিলে গেছে।
তুহিন এইসব মনেমনে ভাবছিলো সেই সুযোগে ছায়া দিলো আরেক দৌড়। ছায়াকে আর পাই কে ও সোজা ভার্সিটির লাইব্রেরিতে চলে গেল।
এদিকে তুহিন তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা আবার তাকে বোকা বানিয়ে পালিয়েছে। তুহিনতো রেগে বোম হয়ে গেছে।ছায়াকে পেলে আজ কি যে শাস্তি দিবে তা সে নিজেও জানেনা ।
চলবে…..

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com