গল্প: ভালোবাসব যে তোকে | পর্ব - ১৯
হলুদের অনুষ্টান প্রায় শেষের দিকে।পুরো অনুষ্টানটাই বেশ ভালোভাবে কাটলো।মৌ আর অহনা আজকে অনেক হ্যাপি ছিলো তা তাদের চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
.
সবাই এখন যে যার মতো গল্প করছে। মৌ অহনার সাথে গল্প করছিলো।হঠাৎ করে তার হাতটা একটু আঠা টাইপের লাগছিলো। প্রথমে এর কারন মনে না করতে পারলেও পরে ঠিকই কারনটা মনে আসলো। তার ছোটো একটা কাজিন তাকে মিষ্টি খাওয়াতে গিয়ে ভুলে তার হাতে ফেলে দিয়েছিলো।তখন টিস্যু দিয়ে হাত মুছেছিলো।কিন্তু এতে যে কোনো কাজ হয়নি তা এখন বুঝছে সে।তাই হাত ধোয়ার জন্য ওয়াশরুমের দিকে গেলো মৌ।
.
বেসিনে হাত ধুচ্ছে মৌ। কিন্তু হঠাৎ করেই ওয়াশরুমের লাইট অফ হয়ে গেলো।
সে ভাবলো যে হয়তো জেনারেটরে কোনো সমস্যা হয়েছে।
কিন্তু এটা যে কেউ ইচ্ছা করে করেছে তা তো আর সে জানে না।
কিছুক্ষণ সে দাঁড়ীয়ে রইলো ইলেক্ট্রিসিটি আসার অপেক্ষায়।
হঠাৎ মৌ এর মনে হলো কে যেনো তার পিছে দাঁড়ীয়ে আছে।মূহুর্তে সেই ব্যক্তিটা মৌ এর কাছে
এসে তাকে পিছনের থেকে জড়িয়ে ধরলো। মৌ তো এতে খুব ভয় পেয়ে যায়।
কিন্তু পরে ভাবে যে এটা আরিয়ান।তাই মৌ ঐভাবেই ঠায় দাঁড়ীয়ে রইলো।
কিন্তু কিছুক্ষণ পর সেই ব্যক্তিটি মৌ ঘাড়ে আলতো করে একটা চুমু দিলো।
এতে মৌ এর প্রচন্ড অস্বস্তি লাগছে।
সে ভাবতে লাগলো যে আরিয়ানের ছোঁয়া তো কোনোদিনও এমন অস্বস্তি লাগেনি,
তাহলে আজকে এমন কেনো লাগছে।সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সেই ব্যক্তিটি মৌ কে
ছেড়ে ওয়াশরুম থেকে চলে গেলো। ব্যক্তিটি চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই ওয়াশরুমের লাইট জ্বলে উঠলো।
মৌ যেনো স্বস্তি ফিরে পেলো। কিন্তু মাথার মধ্য তার একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে যে,
এই মানুষটা আরিয়ানই তো নাকি অন্যকেউ। এসব ভাবতে ভাবতে সে ওয়াশরুম থেকে
বের হয়ে অহনার কাছে গেলো। অহনার সাথে কথা বলতে বলতে তার নজর আরিয়ানের উপর পরলো।
কিন্তু আরিয়ানের উপর চোখ পরতেই তার মন ভয়ে কেঁপে উঠলো।কারন সে ওয়াশরুমে যাওয়ার আগে আরিয়ানকে যেভাবে দাঁড়ীয়ে থাকতে দেখে গিয়েছে এখনও সেই একইভাবে দাঁড়ীয়ে আছে সে।এ দেখে মৌ এর মনে এখন একটাই প্রশ্ন আসছে,
.
যারা রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প পরেন বা গল্প পড়তে ভালবাসেন এমন কেউ যদি থেকে থাকেন তাহলে রিকুয়েস্ট দিন। আমি তাদের কে আমার ফ্রেন্ড লিস্টে রাখতে চাই
“তাহলে কি আরিয়ান আসেনি সেখানে??অন্যকেউ এসেছিলো!!!
নাহ নাহ অন্য কে আসবে। আরিয়ানই এসেছিলো।মানুষ তো একইভাবে আবার দাঁড়ীয়ে থাকতেই পারে।।আমিও না…অযথা উল্টাপাল্টা চিন্তা করছি।”
সন্ধার মধ্যেই সবাই সবার বাসায় চলে গেলো।
.
মৌ এর মাথায় এখনো সেই কথাই ঘুরছে।রাতে আরিয়ানের সাথে ফোনে কথা বলার সময় মৌ ভেবেছিলো যে তার এই সন্দেহটা সে দূর করবে।কিন্তু আরিয়ান তার আগেই ফোন রেখে দেয় এই বলে যে আজকে ভালোভাবে না ঘুমালে চোখের নিচে কালি পরে যাবে।তখন আবার সাজ ভালো হবে না।
পরেরদিন অহনার আর মৌ সকাল সকাল পার্লারে চলে গেলো। কারন ব্রাইডাল মেইকআপে অনেক সময় লাগে।তাদের সাথে মৌ এর চাচি গেলো।
.
দুপুর ১২টার দিকে পার্লার থেকে সোজা কমিউনিটি হলে চলে আসলো তারা। বরপক্ষ দু পরিবার আগে থেকেই চলে এসেছিলো।
.
মৌ কে বধু বেশে দেখে আরিয়ানের তো পুরাই ঘায়েল হয়ে গেলো। মৌ কে আজ অসম্ভব সুন্দর দেখা যাচ্ছে। মেরুন কালারের লেহেঙ্গায় তাকে কোনো অপ্সরীর থেকে কম লাগছে না।অহনাও লেহেঙ্গা পরেছে। তার লেহেঙ্গার কালার হলো লাল। দুই বান্ধবির খুব ইচ্ছা ছিলো যে বিয়েতে তারা লেহেঙ্গা পরবে।তাদের সে ইচ্ছা পূরন ও হলো।
.
অহনাকে দেখে ফাহাদ আরেক দফা ক্রাশ খেলো। তার নজর যেনো সরছেই না অহনার উপর থেকে।
ফাহাদ আর আরিয়ানকেও আজকে অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে।দুজনেই গোল্ডেন কালারের শেরওয়ানি পরেছে। মৌ আর অহনা যে যার বরকে এক নজর দেখে নিলো। কারন তারা তো আর এখন সবার সামনে এভাবে তাকিয়ে থাকতে পারবে না।
.
সময়মতো বিয়ে পরানো হয়ে গেলো তাদের। এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই চলছিলো।কিন্তু বিপত্তি বাধলো অহনার শ্বশুর বাড়ী রওনা হওয়ার সময়।কিছুতেই তার কান্না থামানো যাচ্ছে না।সে একাধারে কেঁদেই চলছে।মৌ আর আরিয়ান তাকে হাজার কথা বুঝাচ্ছে , কিন্তু এতেও লাভ হচ্ছে না। দাদি আর আম্মুও অহনার কান্না থামানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু তারাও বিফল হলো। শেষে আর কোনো উপায় না পেয়ে আরিয়ান আর আব্বু মিলে অহনাকে কান্নারত অবস্থাতেই গাড়ীতে বসালো।
অহনার কান্না দেখে দাদি আর আম্মুও কান্না করে দিলো পরে।তারা এতোক্ষন কান্না করছিলো না কারন অহনা দেখলে আরো খারাপ লাগতো তার।
.
এদিক দিয়ে মৌ এর ভালো হয়েছে।সে কোনো প্রকার কান্নাই করে নি। কারন সে তো আর নতুন করে শ্বশুরবাড়ী যাচ্ছে না।অবশ্য আব্বু, আম্মু আর ভাইয়াকে ছেড়ে আসার সময় তার একটু কষ্ট লেগেছিলো।
বাসর ঘরে একহাত ঘোমটা টেনে বসে আছে অহনা। গাড়ীতে উঠার কিছুক্ষণ পরই তার কান্নার গতি কমতে থাকে। গাড়ীতে থাকার সময়টুকু সে ফাহাদের সাথে একটুও কথা বলেনি।ফাহাদও কথা বলার ট্রাই করেনি। তখন কথা বলা সমীচীন মনে করেনি সে।
.
অহনার মনে হাজারো চিন্তা উঁকি দিচ্ছে।খুব ভয় লাগছে তার।যদিও সে জানে ফাহাদ অনেক ভালো মানুষ,তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে ছুঁইবে না।তারপরও ভয় করছে।সে ভাবছে যে ফাহাদ যদি তার এমন না হয়?? সে যদি তার ইচ্ছা বিরুদ্ধে তাকে টাচ করে তখন!
.
এসব ভাবনাতেই বিভোর ছিলো অহনা।হঠাৎ দরজা খুলার আওয়াজে অহনা ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসে।ফাহাদ রুমে ঢুকে দরকা আটকিয়ে অহনার দিকে আগাতে থাকে। এ দেখে অহনার প্রাণপাখী যেনো উড়ে গেলো।ফাহাদের আগানো দেখে সে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো আর বললো,
“প্লিজ আমাকে টাচ করবেন না প্লিজ। দেখুন আজকে বিয়ে হয়েছে তার মানে এই না যে আজকে আমার উপর অধিকার দেখাবেন। প্লিজ প্লিজ আমাকে কিছু সময় দিন।”
অহনা এ বলে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করেই চুপ করে থাকে। কিছু সময় যাওয়ার পর সে অনুভব করে ফাহাদ তার হাত ধরেছে। এতে সে চোখ খুলে রেগে জোরে চিল্লানি দিতে যাবে,তার আগেই ফাহাদ তার মুখ চেপে ধরে।
ফাহাদ হাসতে হাসতে বলে,
.
“আরে আরে আমি এমনিই তোমার হাত ধরছিলাম।তাই বলে এভাবে চিল্লাবা তুমি!!!সবাই তো অন্য কিছু মনে করবে, এটুকুও বুঝো না??আমি হাত সরিয়ে দিচ্ছি,কিন্তু আর চিল্লানির ট্রাই করবা না ওকে??”
এরপর ফাহাদ অহনার মুখ থেকে হাত সরায়।
“এভাবে ভয় পাওয়ার কি আছে??আমাকে কি তোমার অনেক খারাপ মানুষ মনে হয়??”
“না আসলে তেমন কিছু না।”
“আমার কথা মন দিয়ে শুনো।
.
আমি তোমাকে তোমার মতের বিরুদ্ধে কখনোই স্পর্শ করবো না।এটার গ্যারান্টি আমি দিচ্ছি।তুমি যেদিন চাইবে সেইদিনই আমাদের সম্পর্ককে আগাবো।”
আবার ও বলছি যারা রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প পরেন বা গল্প পড়তে ভালবাসেন এমন কেউ যদি থেকে থাকেন তাহলে রিকুয়েস্ট দিন। আমি তাদের কে আমার ফ্রেন্ড লিস্টে রাখতে চাই
অহনা জবাবে শুধু হুম বলে।মনের মধ্য এখন বড়ই শান্তি লাগছে তার।
“তুমি ড্রেস চেন্জ করো নাও।”
“আচ্ছা।”
.
এদিকে মৌ রুমে এসে কিছুক্ষণ বসে ছিলো। কিন্তু আরিয়ান আসলো না দেখে সে বারান্দায় গিয়ে দাড়াঁলো। এই চিন্তা সেই চিন্তা ঘুরছে তার মাথায়। সবচেয়ে বেশি চিন্তা হচ্ছে অহনার জন্য।
“না জানি কি করছে এখন।যে কান্না করছিলো!!কখন চুপ হয়েছে আল্লাহ জানে।”
এ বলে মৌ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চাঁদের দিকে চেয়ে রইলো।কিছুক্ষণ পর সে খেয়াল করলো কেউ শাড়ীর নিচ দিয়ে তার পেটে হালকা করে হাত বুলাচ্ছে।সে বেশ বুঝতে পারলো এটা আরিয়ানের কাজ।
আরিয়ান মৌ কে পিছে থেকে জড়িয়ে ধরে মৌ এর কাঁধে থুতনি রেখে দাড়াঁলো।
“কি এতো চিন্তা করছিলি তুই??
.
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com