Breaking News

মেঘকন্যার রাজ্যে । পর্ব -০২

আমরা দুইদলে ভাগ হয়ে যাবো। একদল আগে বেরিয়ে যাবো আর আরেকদল প্রায় একঘন্টা পর। এতে রাস্তা হারানোর ভয় থাকবে না।”(ইকরা)
ভোর ভোর প্ল্যানিং করতে বসেছে সবাই। তিথি বলল,
“ওখানে তো জিপিএস ঠিকমতো কাজ করবে না, তখন কি করবো?”
“ঠিকমতো দূরে থাক, এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে মোটেও নেটওয়ার্ক থাকবে না।”(মিথিলা)
“আমি একটা কথা বলি?”(অনিয়া)
“হুম, বল।”(মিথিলা)
“আমরা গুগল ম্যাপ থেকে অফলাইন ম্যাপ নিয়ে নিতে পারি। এতে পুরোপুরি না হলেও একটুআধটু হেল্প পাওয়া যাবে।”(অনিয়া)
সবাই একটু ভাবতে থাকে। ইরা বলল,
“তা নাহয় করলাম। কিন্তু কোন দলে কে থাকবে?”
“আচ্ছা, তবে এখন দল ভাগাভাগি শুরু হোক।”(সাবা)
দুইদলে ভাগ হয়ে গেল ওরা। প্রথম দলে সুহানা, ইকরা, মিথিলা, অনিয়া আর তিথি। দ্বিতীয় দলে ইরা, সারাহ্, সাবা, মিম ও তন্বী।
প্রথমদল বেরিয়ে গেল বান্দরবনের উদ্দেশ্যে আর বাকিরা হোটেলে গেল নাস্তা করতে। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানি মাংস আর চিটা পিঠা দিয়ে নাস্তা সেরে নিলো ওরা। সকাল ৯ টায় ওরাও বান্দরবনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
বদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে পূবালী বাসে উঠে ওরা। কিছুক্ষণ পর মিমের ফোনে কল দেয় অনিয়া। রিসিভ হলেই বলল,
“আমরা সাকুরা রিসোর্টে দেখা করবো।”
“তোরা এখন কোথায় আছিস?”
“বান্দরবন পৌঁছে গেছি।”
“ওহ, আমরাও গাড়িতে উঠেছি।”
“আচ্ছা, রাখছি।”
মিম ফোন রেখে বাকিদের বলে,
“ওরা বান্দরবন পৌঁছে গেছে।”
“পৌঁছাবেই, ওরা অনেক আগে বেরিয়েছে।”(ইরা)
আকাশ কালো করে এসেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মেঘের গুড়ুম গুড়ুম শুরু হয়ে যায়, সাথে ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়া। শীতশীত আবহাওয়ায় বাধ্য হয়ে জানলা বন্ধ করে দিলো ওরা।
বান্দরবন থানার কাছাকাছি গাড়ি থেকে নেমে অটোরিকশা দিয়ে সাকুরা রিসোর্ট পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ঠিক করতে চাচ্ছে ওরা। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ এবং ওদিকের রাস্তা ভালো না হওয়ায় কেউই যেতে রাজি হচ্ছে না।
মিথিলা বাকিদের উদ্দেশ্যে বলল,
“এসেছি এডভেঞ্চারের মজা নিয়ে, তবে এসব টেক্সি-অটোরিকশা কেন নিচ্ছি?”
বাকি একজন আরেকজনের দিকে তাকায়। তিথি লাফিয়ে উঠে বলল,
“একদম ঠিক, আমরা পায়ে হাটা শুরু করি।”
“রাস্তা চিনিস?”(ইকরা)
“এটাই তো এডভেঞ্চার। চিনি না, চিনে যাবো।”(তিথি)
সুহানাও ওদের কথায় তাল মিলিয়ে বলল,
“চল যাই। শুরু তো করি, ঠিক পৌঁছে যাবো।”
সবাই একমত হওয়ায় যাত্রা শুরু করে ওরা। খারাপ আবহাওয়া, বৃষ্টি তারসাথে দমকা হাওয়া। এমন অবস্থায়ই হেসেখেলে এগিয়ে যাচ্ছে ওরা।
২ ঘন্টা পর,
বিভিন্ন জায়গায় যাত্রা বিরতি ও খুব ধীর গতিতে গাড়ি চালিয়ে বান্দরবন থানায় এসে পৌঁছেছে বাকিরা। বৃষ্টির প্রকোপ কিছুটা কমলেও বাতাসের বেগ এখনো কমেনি। থানার কাছে নেমে শুনশান রাস্তা দেখা কিছুটা সামনে এগিয়ে যায় ওরা।
সারাহ্ একটু সকলের পিছনে পড়ে গেছে। তন্বী ফিরে এসে বলল,
“কি হলো?”
“আরে, কোনদিকে যাবো তাই তো বুঝতেছি না।”
সাবা, ইরা, মিম ফিরে আছে। আশেপাশে ওরা ছাড়া আর কোনো মানুষ থাক দূরে একটা কুকুরও নেই।
“এভাবে এগিয়ে যাওয়া যাবে না। থামতে হবে, আগে বুঝতে হবে সাকুরা রিসোর্ট কোনদিকে।”(ইরা)
“চলো, সামনে এগিয়ে যাই। কাউকে না কাউকে তো পেয়েই যাবো।”(সাবা)
ওরা কিছুক্ষণ এগিয়ে গিয়ে দেখে একটা চায়ের টং খোলা আছে তবে ছাউনিটা একটু নামানো। মিম একটু জোরে বলল,
“কেউ কি আছেন?”
“কে আসছে?”
বলেই ভেতর থেকে একজন বৃদ্ধ লোক বেরিয়ে আসে। অন্ধকারে হয়তো ওদেরকে ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছে না। চোখের সামনে হাত দিয়ে ওদেরকে ভালো করে দেখে বলল,
“রাস্তা হারিয়েছো?”
মিম মুচকি হেসে বলল,
“না, দাদু। আমরা আসলে সাকুরা রিসোর্টে যাবো, কিন্তু অন্ধকারে রাস্তা চেনাটাই দুস্কর হয়ে গেছে।”
বৃদ্ধ লোকটি একটা কাশি দিয়ে বলে,
“বসো এখানে, কাপভর্তি গরম চা লাগিয়ে দিই। একটু পরই সব ঠিক হয়ে যাবে।”
লোকটি দোকানে ঢুকে যায়। ওরা দোকানের সামনে থাকা টুলে বসে পড়ে। গরম দুধ চায়ে গুড় মিশিয়ে ওদেরকে দেয় বৃদ্ধ লোকটি।
সারাহ্ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,
“আহ, মনে হলো অমৃত খেলাম।”
সাবা চায়ে মুখে দিতে গিয়েই থেমে যায়। ঠোঁট উলটে সারাহ্-র দিকে তাকিয়ে বলল,
“চা খেয়ে নে তারপর তোকে পাহাড় থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো, যদি বেঁচে থাকিস তাহলে স্বীকার করবো ওটা অমৃত।”
সারাহ্ বেচারী করুণ চোখে সবার দিকে তাকায়। ওদিকে বাকি তিনজন হাসিতে ফেটে পড়েছে। বৃদ্ধ লোকটাও মুচকি মুচকি হাসছে।
অন্যদিকে,
পাহাড় আর জঙ্গলের মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে ইকরা, তিথি, অনিয়া, সুহানা ও মিথিলা। রাস্তা যে হারিয়ে বসেছে তা ভালোই ঠাহর করতে পারছে সবাই।
ইকরা একটা পাথরের উপর বসে পড়ে। এরকম অনিশ্চিত পথে হাঁটা অসম্ভব। তিথি ফোন হাতে নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে, কিন্তু নেটওয়ার্কের দেখা নেই।
সুহানা বড় একটা পাথরের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
“আমাদের শহরের দিকে যাওয়া উচিত ছিল, অতিরিক্ত উত্তেজনায় আমরা এদিকে চলে এসেছি।”
“এখন আফসোস করে লাভ নেই, এখান থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজতে হবে।”(অনিয়া)
ইকরা দাঁড়িয়ে বলল,
“কোনদিন দিয়ে বেরোবো? যেদিকে তাকাচ্ছি শুধু জঙ্গল আর জঙ্গল। তারপর বৃষ্টি ভেজা পিচ্ছিল রাস্তা আর অন্ধকার।”
“পানিও শেষ হয়ে আসছে আর সন্ধ্যাও ঘণিয়ে আসছে।”(মিথিলা)
“হতাশ হচ্ছিস কেন? সাহস রাখ, কোনো না কোনো উপায় নিশ্চয়ই পাবো।”(অনিয়া)
অনিয়া নিজে আশ্বাস দিলেও নিজে নিশ্চিন্ত হতে পারছে না। ভয়ে আর হতাশা ওর মনকেও ঘিরে ধরেছে।
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com