ভালোবাসার পরী | পর্ব -১৫
অনিসা কলেজ ড্রেসে , দু বেনী দু পাশে ঝুলিয়ে , ব্যাগের সাইড বেল্ট দুটো নাড়তে নাড়তে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হলো। ক্যান্টনমেন্টের পাশেই একটি আবাসিক এলাকা আছে। সবাই সেটাকে গার্ডেন বলে। বিকেলে অনেকেই সেখানে হাঁটা-হাঁটি করে , ব্যায়াম করে , আড্ডা দেয় ! সেখানেই আরণি আসতে বলেছে নীর’কে।
অনিসা গার্ডেনের ভেতরে ঢুকে এদিক-সেদিক তাকালো। কিন্তু কোথাও দেখতে পেলো না ছেলেটিকে। অনিসা ব্যাগের সাইড পকেট থেকে একটা সেন্টার-শক বের করে প্যাকেট খুলে চুইংগাম’টা গালে দিলো। আর যেই একটা চিবুনি দিলো। অমনি টক লাগলো অনিসার মুখে। অনিসা নিজের ভ্রুঁ দুটো কুঁচকে চোখ দুটো টিঁপে বন্ধ করে ফেললো মুখে টক লাগাতে।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চুইংগাম চিবুতে লাগলো অনিসা উল্টো দিকে ঘুরে।
নীর এসে পৌছলো। সবাই নীর’কে বেস্ট অফ লাক দিলো। নীর মুচকি হেসে অনিসার পিছনে এসে দাঁড়ালো। তখনি অনিসার গান শুনে চোখ দুটো নীরের “চমচম” এর মতো হয়ে গেলো।
অনিসাঃ “পাগলুউউউ থোরাসা কারলো রোমান্স। ঝিকি মিকি চাম চিকি”।
নীরঃ এহেম…এহেম !
.
অনিসার গান শুনে নীর হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না।হাসতে না পেরে নীর কেঁশে উঠলো। তখনি অনিসার মনে হলো ওর পিছে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। অনিসা নিজের কলেজের ব্যাগের বেল্ট’টা দু হাতে চেঁপে ধরে নীরের দিকে ফিরে ! চুইংগাম চিবিয়ে বড় একটা বাবল ফুঁলালো আর নীরের দিকে তাকিয়ে বাবল’টা ঠাস্ করে ফাঁটিয়ে দিলো। নীর আচমকা চমকে উঠে হচকিয়ে গেলো। পরক্ষনে নীর মৃদু হাসলো অনিসার এমন বাচ্চামো দেখে।
অনিসাঃ মিস্টার.ক্রা..!
নীরঃ স্যরি ?
অনিসাঃ মিস্টার.ক্রাচু !
নীরঃ হুয়াট ? “মিস্টার.ক্রাচু” কে !
অনিসাঃ [এখনি নিজের প্রেস্টিজ নিজে পাঞ্চার করছিলাম। অনিসা তোর কি লজ্জা নেই। মিস্টার.ক্রাশ বলতে যাচ্ছিলি]
.
নীরঃ কি হলো বলো ?
অনিসাঃ কেনো আপনি।
নীরঃ আমি মিস্টার.ক্রাচু ?
অনিসাঃ এখানে তো আপনি ছাড়া আর কেউ নেই তাই না।
নীরঃ মেই’বি !
বলেই নীর আড় চোখে একটু দূরেই একটি গাছের পিছে তাকালো। সেখানে গাছের পিছন থেকে আকাশ উঁকি দিচ্ছে। আকাশের পিছন থেকে মাথা উঁচু করে উঁকি দিচ্ছে নীহাল। নীহালের পিছন থেকে বারবার লাফ মেরে উঁচু হয়ে উঁকি দিচ্ছে রাহাত। আকাশের কোমড়ের নিচে বসে উঁকি দিচ্ছে সিহাদ। সিহাদের ঘাড়ে ভর করে বসে আছে নাফিসা। নাফিসার ঘাড়ের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে আরণি। আর আরণির সাথে ওর কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে সুমাইয়া। সুমাইয়ার সাথে ঈশাও দাঁড়িয়ে আছে চোখগুলো গোল-গোল করে তাকিয়ে।ওদের সকলের নজর এখন “নীর আর অনিসার” দিকে। ওদের সবার মনে হচ্ছে ওরা লাইভ টাইম মুভি দেখছে লুকিয়ে।
নীর প্যান্টের দু পকেটে হাত রেখে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। কি বলবে সেটাই ভাবছে নীর। অনিসা পাঁ থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো নীর’কে। একদম চকলেট বয় ছেলেটা। এত্ত কিউট-সুন্দর-ফর্সা-হ্যান্ডসাম-ড্যাসিং-স্মার্ট একটা ছেলে কিভাবে হতে পারে ? সেটাই ভাবছে অনিসা। পরবর্তিতে অনিসার মনে হলো।
অনিসাঃ [এই ছেলে আমার প্রেমে পরতেই পারে না। নিশ্চিত আমার সাথে কিছুদিন মজা নিবে। তারপর বলবে ব্রেকাপ। তাব তো মেরা দিল টুট জায়েগি। নো-নো এত সহজে ছেলেটাকে বিশ্বাস করা যাবে না। কারন প্রতিটা সুন্দর ছেলেই দুষ্টু হয়।]
.
দু’জনেই চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলো। অবশেষে অনিসা এসব কথা মনে মনে বলার পর নিজেই সমস্ত নিরবতা ভেঙে নীরের সাথে হেসে কথা বললো !
অনিসাঃ এত নার্ভাস হচ্ছো কেনো হ্যাঁ ?
নীরঃ ভাবছি কি বলবো তোমাকে। [অনিসার দিকে তাকিয়ে]
অনিসাঃ এমন একটা ভাব করছো। যেনো ফার্স্ট টাইম কোনো মেয়ের সাথে কথা বলছো ?
নীরঃ হুমম ! এ্যাকচুয়্যলি তাই।
অনিসাঃ এই শোনো ! তোমাদের মতো সুন্দর-হ্যান্ডসাম-স্মার্ট ছেলেরা কখনো সিঙ্গেল থাকতেই পারে না। [নীরের দিকে এক আঙুল তুলে]
অনিসার এমন বাচ্চামো কথাবার্তা শুনে নীর না হেসে পারলো না। নীর অনিসার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। তাতে অনিসা সরু চোখে নীরের দিকে তাকালো।
অনিসাঃ এই তুমি হাসছো কেনো ? শোনো আমি সবাইকে তুমি করেই বলি। তাই তোমাকে আপনি করে বলতে পারবো না। মানে ! আমি অত ভালো মেয়ে না বুঝলে।
নীরঃ আমি তো তোমাকে বলিনি ! আমাকে আপনি বলতে।
অনিসাঃ বলো’নি তবুও বললাম আর কি।
নীরঃ নিঃশ্বাস নিয়ে কথা বলো একটু। এত কথা একসাথে ?
অনিসাঃ হুয়াট ডু ইউ মিন ? আমি বেশি কথা বলি ? [রেগে]
নীরঃ হ্যাঁ ! প্যাকপ্যাক শুরু করলে তো থামতেই চাও না।
অনিসাঃ হ্যাঁ আমি বেশি বকবক করি। সেটা তোমাকে বলতে হবে না। [বিরক্ত হয়ে]
নীরঃ আমি কিছু কথা বলি ?
.
অনিসাঃ তার আগে তুমি আমাকে বলো। তুমি আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছো কেনো ?
নীরঃ কেনো বুঝতে পারছো না ? [নরম গলায়]
অনিসাঃ ক…কক…কি বুঝবো ?
নীরঃ ওকে দ্যান আমিই বলছি। আমি তোমাকে পছন্দ করি। ইনফ্যাক্ট বানিজ্য মেলায় যেদিন প্রথম তোমাকে দেখেছিলাম। সেদিন’ই…!
অনিসাঃ সেদিন’ই আমার প্রেমে পরে গিয়েছো। এখন বলবে আমাকে তুমি ভালোবাসো। আর কিছুদিন রিলেশন করার পর ব্রেকাপ করে দিয়ে চলে যাবে তাই তো ?
নীরঃ আমাকে দেখে এরকম ছেলে বলে মনে হয় তোমার ?
অনিসাঃ আই ডোন্ট নো ! তুমি কেমন ছেলে। বাট বেশির ভাগ সুন্দর-স্মার্ট ছেলেরা এমনি হয়।
নীরঃ কিন্তু আমি তোমাকে সত্যিই পছন্দ করি।
অনিসাঃ আমি কত নাম্বর গার্লফ্রেন্ড হবো তোমার ?
নীরঃ হুয়াট ? তুমি ভুল ভাবছো। আমি আগে কখনো রিলেশন করিনি।
অনিসাঃ বিশ্বাস হচ্ছে না। এত্ত কিউট ছেলে তুমি। আর কোনো মেয়েকে আগে পছন্দ করো’নি ?
নীরঃ উঁহু ! [আনমনে]
অনিসা এবার পিছন দিকে ঘুরে নিজের হাত দুটো বুকে বটে দাঁড়ালো। তারপর বললো !
অনিসাঃ দেখো ! আমি জানি আমি মোটেও সুন্দর মেয়ে না। ইনফ্যাক্ট তোমার মতো কিউট ছেলের গার্লফ্রেন্ড হওয়ার যোগ্য তো একদম’ই না আমি। কারন ফর্সা মেয়েদের মতো আমি ফর্সা বা সুন্দর নই। একদম’ই শ্যামলা-কালো মেয়ে আমি…!
.
অনিসা আর বকবক করতে পারলো না। তার আগেই নীর ! অনিসার এক হাতের বাহু শক্ত করে চেঁপে ধরে অনিসা’কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ঠাস্ করে অনিসার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। অনিসা নিজের গালে হাত রেখে শকড্ হয়ে নীরের দিকে তাকালো। নীর স্বাভাবিক ভাবেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অনিসার দিকে তাকিয়ে রইলো।
গাছের পিছনে সকলে ‘হা’ হয়ে তাকিয়ে রইলো নীরের কান্ডে। কেউ ভাবতেই পারে’নি নীর থাপ্পড় দিবে অনিসা’কে। আরণি তো নীরের উপর রেগে বম হয়ে গেলো মুহূর্তেই ! সুমাইয়া , ঈশা আর নাফিসাও খুব রেগে গেলো। প্রথম দেখায় কেউ এভাবে থাপ্পড় মারে ?
অনিসাঃ হাউ ডেয়ার ইউ ? তুমি আমাকে থাপ্পড় মারলে ? [কেঁদে দিয়ে]
নীরঃ হ্যাঁ থাপ্পড় মেরেছি। কারন তুমি থাপ্পড় মারার মতোই কাজ করেছো। [স্বাভাবিক ভাবে দু পকেটে হাত রেখে]
অনিসাঃ কি কারনে মারলে ? [প্রচন্ড রেগে]
নীরঃ তোমাকে আমি ! তোমার চেহারা , রঙ , সোন্দর্য দেখে ভালোবাসি’নি।তুমি আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারী। আমার চোখে তুমিই সবকিছু। “তাই তোমার কোনো অধিকার নেই। অন্তত আমার সামনে নিজেকে অসুন্দর বলার” নেক্সট টাইম বি কেয়ারফুল। [অনিসার দিকে তাকিয়ে]
অনিসাঃ নেক্সট টাইম মাই ফুট। আমার সাথে আর কখনো কথা বলার চেষ্টাও করবে না তুমি। আমাকে ফলোও করবে না। কোনোভাবে আমার সাথে কন্টাক্টও করবে না। [চিল্লিয়ে রেগে]
নীরঃ নিশ্চুপ….! [অনিসার দিকে তাকিয়ে থেকে]
অনিসাঃ গুড বায়।
অনিসা আর একটা কথাও বললো না। অনিসা ভাবতেও পারে’নি। নীর ওকে এভাবে থাপ্পড় মারবে। অনিসা তো শুধু মজা করে বলেছিলো কথাগুলো। নীরের রিয়্যাকশন দেখার জন্য। কিন্তু নীর এভাবে ওকে থাপ্পড় মারবে কল্পনাও করে’নি। খুব কষ্ট পেয়েছে অনিসা। নীরের উপর রাগে অনিসার চোখের পানি পরছে। অনিসা চোখের পানি মুছতে মুছতে চলে গেলো সেখান থেকে।
নীর এখনো স্বাভাবিক ভাবে সরু চোখে অনিসার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। অনিসা চলে গেলো। নীর ছোটো-ছোটো চোখে তাকিয়ে থেকে এক গভীর নিঃশ্বাস ছাড়লো।
চলবে…..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com