ভালোবাসার পরী | পর্ব -১৬
অনিসা চলে যেতেই সবাই নীরের কাছে এলো। এসেই সবাই একসাথে ঘাসের উপর আসন পেতে বসে পরলো মাথায় হাত রেখে। নীর সবার মাঝখানে একা দাঁড়িয়ে আছে। নীর ওর চারপাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই আসন পেতে মাথায় হাত রেখে বসে আছে।
নীরঃ তোরা এভাবে মাথায় হাত রেখে ঘাসের উপর বসে পরলি ক্যান সবাই ?
ঈশাঃ প্রথম দিন দেখা করে ! কেউ থাপ্পড় মারে কোনো মেয়েকে ?
সুমাইয়াঃ পুরো প্ল্যানে পানি ঢেলে দিলে তুমি।
নাফিসাঃ এই “মাথা মোটার” মাথায় কিচ্ছু ঢুকবে না। আস্ত “বেল বুদ্ধি” একটা। [নীর’কে উদ্দেশ্য করে]
আরণি মাথা থেকে হাত নামিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তারপর নীরের মাথায় জোরে একটা টোকা দিলো রেগে। নীর অসহায় দৃষ্টিতে আরণির দিকে তাকালো।
আরণিঃ তুমি আমার বেস্টু’কে মারলে ক্যান ? [রেগে]
নীরঃ তো কি করবো আদর ?
আরণিঃ অনিসা’কে মারলে তো ? আমি আর এক ফোঁটাও হেল্প করবো না তোমাকে।
নীরঃ ঘুসও পাবি না।
.
আরণিঃ লাগবে না ঘুস। কারন অনিসা’কে আর পাচ্ছো না তুমি।
নীরঃ মানে ? [কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে]
সুমাইয়াঃ অনিসা’কে চিনো না তুমি। খুব বাঁকা মেয়ে ও। তোমার সাথে আর কথাই বলবে না।
নীরঃ আমিও খুব বেশি ঘাড় ত্যাড়া ছেলে। ওর পিছু আমি ছাড়বো না। দেখি কতদিন কথা না বলে থাকে।
আরণিঃ অনিসার রাগ সম্পর্কে কোনো আইডিয়া নেই তোমার।
নীরঃ আর আমার রাগ সম্পর্কেও কোনো ধারনা নেই তোর বান্ধুবীর।
আকাশ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। নীরের পাঁয়ে ল্যাং মারলো। তাতে নীর পাঁয়ে ব্যাথা অনুভব করলো। আকাশ বললো !
আকাশঃ শালা ! এত কষ্ট করলাম তোর জন্য। সকলের ঘুম পর্যন্ত বিসর্জন দিলাম। আর তুই ?
নীহালঃ তোরে কানের নিচে দুটো মারা উচিৎ।
নীরঃ আমার কি দোষ ? তোরা আমাকে কেনো বকছিস ?
রাহাতঃ তুই থাপ্পড় মারলি ক্যান মেয়েটাকে ?
নীরঃ থাপ্পড় মারার মতো কাজ করলে কি করবো আদর ?
সিহাদঃ কি বলেছিলো তোকে ?
.
নীরঃ ও আমার সামনে বললো ক্যান যে-ও সুন্দর না ?
আকাশঃ একটু ইমোশোনাল হয়ে বলে ফেলেছে। তাই বলে তুই থাপ্পড় মারবি অনিসা’কে ?
নীহালঃ বিয়ের পর বউ পেটাবি না’কি তুই ?
নীরঃ একদম’ই না। ওকে তো আমি সাজিয়ে রাখবো আমার রুমে বিয়ের পর।
রাহাতঃ হয়ে গেলো ! স্বপ্নই দেখ জেগে জেগে। ওই মেয়ে আর তোর ফাঁদে পাঁ দিবে না।
নীরঃ ওকে তো আমি মানিয়েই ছাড়বো।
সিহাদঃ নিজের পাঁয়ে নিজেই কুড়াল মেরেছিস।
নীরঃ তোরা প্লিজ ! আমাকে আর ভয় দিস না।
আরণিঃ আমি আর একটুও হেল্প করবো না তোমায়।
নীরঃ করিস না।
আকাশঃ আমাকে কিছু বললেই মাইর খাবি তুই নীর।
নীরঃ ভাই-বোন তোদের কারো হেল্প আমার চাই না।
নীহানঃ এত কিউট মেয়েটাকে থাপ্পড় কিভাবে মারতে পারলি তুই ?
নীরঃ রাগ উঠে গিয়েছিলো। কন্ট্রোল করতে পারিনি নিজেকে। দ্যাট’স ইট !
রাহাতঃ তোর দ্বারা কিচ্ছু হবে না।
নীরঃ দেখা যাবে।
ওরা আর কথা বাড়ালো না। সবাই গার্ডেন থেকে বাহিরে বের হয়ে গেলো। সবার পিছনে ছিলো সুমাইয়া আর নীহাল।ওরা দু’জন বের হতে নিলেই ধাক্কা লাগে একসাথে দু’জনের। অতঃপর দু’জনেই একসাথে “স্যরি” বলে উঠে।
নীহালঃ স্যরি !
সুমাইয়াঃ স্যরি স্যরি !
নীহালঃ ইট’স ওকে। [মুচকি হেসে]
আরণিঃ সুমাইয়া তুই বাসায় যাবি কিভাবে একা ? অনিসা তো তোকে রেখেই রেগে একা চলে গেছে।
সুমাইয়াঃ সমস্যা নেই। আমি একা চলে যেতে পারবো।
আরণিঃ তুই কলেজ থেকে প্রতিদিন অনিসার সাথে বাসায় যাস। তোকে একা ছাড়তে ভরসা পাচ্ছি না আমি।
সুমাইয়াঃ আমি পিচ্চি বাচ্চা না’কি যে একা বাসায় যেতে পারবো না ?
আরণিঃ তবুও।
.
নীহালঃ রিল্যাক্স গাইজ। ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড ! ক্যান আই ড্রপ ইউ ? [সুমাইয়া’কে উদ্দেশ্য করে]
আরণিঃ গুড আইডিয়া ! নীহাল ভাইয়া তুমি ওকে কাইন্ডলি যদি একটু কষ্ট করে বাসায় পৌছে দিতে। আমি টেনশন ফ্রি হতে পারতাম।
নীহালঃ ডোন্ট ওয়্যারি ! আই উইল।
সুমাইয়াঃ একটু বেশি টেনশন করছিস তুই আরণি।
আরণিঃ চুপচাপ নীহাল ভাইয়ার সাথে বাসায় যা।
সুমাইয়াঃ ওকে। অনিসা ফোন দিলে আমাকে জানাস।
আরণিঃ আমাকে না তোকে ফোন করতে পারে।
সুমাইয়াঃ আমি জানাবো ফোন করলে।
আরণি চলে গেলো সুমাইয়া’কে বায় দিয়ে। সুমাইয়ার খুব নার্ভাস লাগছে নীহালের সাথে। সেটা নীহাল বুঝতে পেরেছে সুমাইয়ার চেহারা দেখেই। নীহাল গাড়ির কাছে গিয়ে ডোর খুলে ইশারা করলো সুমাইয়া’কে ভেতরে বসতে। সুমাইয়া এক ঢোক গিলে ভেতরে বসলো। নীহাল ডোর অফ করে দিলো। তারপর নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি লক করে দিলো। সুমাইয়া চুপ করে বসে আছে। নীহাল গাড়ি স্টার্ট দিয়ে মুচকি হেসে বললো !
নীহালঃ মিস.সুমাইয়া রাইট ?
সুমাইয়াঃ ইয়েস ! [কানের পিছনে চুল গুজে]
নীহালঃ প্লিজ যদি আমাকে আপনার বাসার এ্যাড্রেস’টা একটু বলেন। না মানে ! তাহলে সুবিধা হয়। আমি তো আপনার বাসা চিনি না তাই আর কি।
সুমাইয়াঃ অনিসার বাসার একটু সামনেই আমার বাসা।
নীহালঃ ইউ মিন ! কল্যাণপুর তোমার বাসা ?
সুমাইয়াঃ হ্যাঁ !
.
নীহালঃ আমি তো জানি না। কল্যাণপুর কোথায় অনিসার বাসা।
সুমাইয়াঃ কল্যাণপুর চৌদ্দ নাম্বার রোডের ভেতরে অনিসার বাসা। আর চৌদ্দ নাম্বার রোড ক্রস্ করে একটু সামনেই আমার বাসা।
নীহালঃ ওকে দ্যান ! চৌদ্দ নাম্বার রোড ক্রস্ করার পর আমাকে বলে দিও। গাড়ি কোথায় থামাতে হবে।
সুমাইয়াঃ হুমম ওকে।
গাড়ি নিজ গতিতে চলছে। শ্যামলী পার হওয়ার পর নীহাল একবার সুমাইয়ার দিকে তাকালো। সুমাইয়া আনমনে বসে আছে গালে হাত দিয়ে।নীহাল ড্রাইভ করতে-করতে নিজেই নিরবতা ভেঙে বললো !
নীহালঃ অনিসা আর আরণি তোমার কেমন ফ্রেন্ড ?
সুমাইয়াঃ অনিসা আর আরণি আমার বেস্টফ্রেন্ড।
নীহালঃ ওহ্ আচ্ছা। তুমি কি সব’সময় চুপচাপ থাকো ? না’কি নার্ভাস হচ্ছো আমার সামনে ?
সুমাইয়াঃ না মানে ! তেমন কিছু না।
নীহালঃ নার্ভাস হতে হবে না। তোমার বড় ভাইয়ার মতো আমি। সো , ইজিলি কথা বলবে কেমন !
সুমাইয়াঃ [কোন জম্মের বড় ভাই তুই আমার ? বজ্জাতের হাড়ি]
নীহালঃ হুমম এখন বলো ! গাড়ি কোথায় ব্রেক করবো ?
সুমাইয়াঃ ওই যে ক্রিম কালার গেট ওয়ালা বাড়িটার সামনে।
নীহালঃ ওকে।
নীহাল ক্রিম কালার গেট ওয়ালা বাড়ির সামনে গাড়ি ব্রেক করালো। সুমাইয়া গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো।
সুমাইয়াঃ বায়।
নীহালঃ সেম টু ইউ। [মুচকি হেসে]
নীহাল মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ঘুরিয়ে চলে গেলো। সুমাইয়া ড্যাব-ড্যাব করে তাকিয়ে রইলো নীহালের যাওয়ার দিকে। নীহাল যেতেই সুমাইয়া নিজের বাসায় ঢুকে গেলো।
আকাশ আরণি’কে বাসায় পৌছে দিয়ে নীরের সাথে নীরের বাসায় এলো। এসেই রাইসার রুমে গিয়ে ধপ করে সোফায় বসে পরলো আকাশ রেগে। রাইসা খুব ভালো করেই জানে আজ ওই মেয়েটার সাথে দেখা করার কথা ছিলো। রাইসা খুশি হয়ে আকাশের সামনে চেয়ার ঘুরিয়ে বসলো।
রাইসাঃ অনিসার সাথে দেখা হয়েছিলো নীরের ?
আকাশঃ শুধু দেখা ? অনিসা’কে থাপ্পড় মেরেছে নীর। [রেগে]
রাইসাঃ হুয়াট ? [অবাক হয়ে]
আকাশঃ জ্বি হ্যাঁ !
রাইসাঃ কিন্তু কেনো ?
নীর রাইসার রুমে ঢুকে সোফায় আকাশের পাশে বসে বললো !
নীরঃ থাপ্পড় মারার মতো কাজ করেছে তাই।
রাইসাঃ আমাকে খুলে বলবি সব ?
নীর সবকিছু খুলে বললো। অনিসা কি-কি বলেছে নীর’কে। যখনি নীর বললো যে অনিসা’কে থাপ্পড় মেরেছে ? সাথে-সাথে রাইসাও ঠাস্ করে নীরের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। আকাশ জোরে জোরে হেসে উঠলো। রাইসা নীর’কে থাপ্পড় মারাতে। নীর বোকার মতো গালে হাত দিয়ে ! তাকিয়ে আছে রাইসার দিকে।
আকাশঃ একদম ঠিক কাজ করেছিস তুই রাইসা আপু।
নীরঃ আমাকে তুই থাপ্পড় মারলি আপু ! [ন্যাকা অভিনয় করে]
রাইসাঃ তুই থাপ্পড় মারার মতোই তো কাজ করেছিস।
নীরঃ আমার কি দোষ ?
.
রাইসাঃ ডাম্বো ছেলে কোথাকার। অনিসার কথায় বোঝা যাচ্ছে। অনিসা খুবই বাচ্চা প্রকৃতির মেয়ে। ইমোশোনাল হয়ে না বুঝে বলে ফেলেছে। কিন্তু তুই তো ইউজলেস্ ! ওর চেয়ে বড়। তুই ক্যান না বুঝে থাপ্পড় মারলি ওকে ?
আকাশঃ অনিসার সাথে তোর রিলেশন তো দূরেই থাক ! তোর কাছেও আসবে না দেখবি অনিসা।
নীরঃ আমি ওর বাসায় চলে যাবো।
আকাশঃ দেখ নীর ! সিরিয়াসলি তুই আজ ভুল করেছিস।
রাইসাঃ রাইট ! মেয়েটা হয়তো মনে মনে কষ্ট পেয়েছে।এটাই স্বাভাবিক।আমিও একটা মেয়ে। আমি বুঝি।
আকাশঃ আরণিও তোর উপর খুব রেগে আছে। কারন তুই অনিসা’কে না ওর বেস্টফ্রেন্ড’কে থাপ্পড় মেরেছিস।
নীরঃ আমি দোষ করেছি তো ? আমিই সবকিছু ঠিক করে দিব। তোরা ক্যান বুঝিস না ? আমি অনিসা’কে সত্যিই ভালোবাসি।খুব ভালোবাসি। তাই ওর মুখে এমন কথা শুনে আমার রাগ হয়েছিলো খুব।
আকাশঃ তুই অনিসা’কে থাপ্পড় মেরেছিস। আর ঈশা আমার সাথে ঝগড়া করে রাগ দেখিয়ে বাসায় চলে গেলো। ঈশা পুরোপুরি ভাবে অনিসা’কে সাপোর্ট করে। তাই আমার সাথে ঝগড়া করে চলে গেলো।
নীরঃ বাহ্ ! সবাই এখন অনিসার সাপোর্ট হয়েই কথা বলছে।
আকাশঃ তোর জন্য আমার বউ আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। তোর মতো বেস্টফ্রেন্ড যেনো কারো কঁপালে না জুটে। আর আমার মতো কঁপাল যেনো কারো না হয়। কতকিছু সহ্য করতে হচ্ছে তোর জন্য আমাকে।
রাইসাঃ এখন কিভাবে কন্টাক্ট করবি অনিসার সাথে ?
নীরঃ জানি না।
.
নীরের খুব খারাপ লাগছে এখন। নীর নিজের রুমে চলে গেলো মন খারাপ করে। রাইসা আর আকাশ ভালো করেই বুঝলো ! নীর এখন খুব কষ্ট পাচ্ছে অনিসার জন্য।তাই কোনো কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।
চলবে…..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com