Breaking News

ভালোবাসার পরী | পর্ব -১৭

রাতে নীর নিজের রুমে পায়চারী করছে। শুধু দুপুরে ঘটে যাওয়া ঘটনা ওর মাথায় ঘুরছে। কল্পনা করছে অনিসা’কে থাপ্পড় মেরেছে। যতোবার মনে পরছে ততোবার নীরের রাগ উঠছে নিজের উপর। কিভাবে পারলো নিজের ভালোবাসার মানুষ টাকে এভাবে থাপ্পড় মারতে। নীর ভাবতেই দেয়ালে জোরে এক ঘুশি দিলো রেগে।তখনি রাইসা ঢুকলো নীরের রুমে।
রাইসাঃ দেয়ালে ঘুশি মারলে রাগ কমে যাবে ?
নীরঃ প্লিজ আর আমাকে কিছু বলিস না।
রাইসাঃ আচ্ছা আমি কিছু বলছি না।
নীরঃ কিছু বলবি ?
রাইসাঃ ভেবেছিস কিভাবে কন্টাক্ট করবি অনিসার সাথে ?
নীরঃ নাহ্ !
.
রাইসাঃ অনিসার ফোন নাম্বার ?
নীরঃ নেই আমার কাছে।
রাইসাঃ আকাশের বোন আই মিন ! আরণির ফ্রেন্ড তো অনিসা তাই না ?
নীরঃ আরণি আমার উপর খুব রেগে আছে। এখন আরণি’কে ফোন দিলে ! আমার উপর আগুনের গোলা ছুড়বে ও।
রাইসাঃ তুই না ভালোবাসিস অনিসা’কে ? খুব ভালোবাসিস !
নীরঃ কোনো সন্দেহ্ আছে তোর ?
রাইসাঃ নিজের ভালোবাসার জন্য মানুষ জীবনও দিয়ে দেয়। আর তুই সামান্য বকা খেতে পারবি না ? তাও তোর ছোটো বোন আরণির কাছে ?
নীরঃ বকা খেতে আমার কোনো প্রবলেম নেই। কিন্তু আমি আরণি’কে চিনি। তুইও তো ভালো করেই জানিস। আরণি কিছুতেই অনিসার নাম্বার আমাকে দিবে না।
রাইসাঃ চেষ্টা করে দেখ একবার।যদি তোকে না দেয় নাম্বার।তারপর নাহয় আমি চেষ্টা করবো।আমি সিয়র আরণি আমাকে দিবেই নাম্বার।কিন্তু আমি চাই তুই নিজে প্রথমে চেষ্টা কর। নিজের ভালোবাসার জন্য।
নীরঃ ঠিক আছে। আমি ফোন করছি আরণি’কে।
রাইসা নীরের বেডের এক কোণায় বসে প্যাজেল মেলানোর চেষ্টা করছে। প্যাজেল নিয়ে খেলা করতে লাগলো। নীর নিজের ফোনে আরণির নাম্বার বের করে ডায়াল করলো। রিং হতে লাগলো। ৩-৪ বার রিং হতেই আরণি ফোন রিসিভ করলো।
.
আরণিঃ হ্যালো !
নীরঃ তোর সাথে একটু কথা ছিলো।
আরণিঃ বলে ফেলো।
নীরঃ আমার উপর এখনো রেগে আছিস তুই ?
আরণিঃ তোমার জন্য অনিসা আমার ফোন’টা পর্যন্ত রিসিভ করছে না।
নীরঃ ওহ্ !
আরণিঃ কিছু বলতে চেয়েছিলে বোধয় ?
নীরঃ বলছি যে…!
আরণিঃ কি ?
নীরঃ না মানে !
আরণিঃ মুখে পোঁকা পরেছে ? কথা বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে ?
নীরঃ অনিসার নাম্বার’টা একটু দিবি আমাকে ?
আরণিঃ ক্যান আমার বান্ধুবী’কে থাপ্পড় মেরে শান্তি হয়’নি ? এখনো অপমান করতে ইচ্ছে করছে ?
নীরঃ ভুল বুঝছিস আমাকে তুই।
আরণিঃ একদম ঠিক বুঝেছি তোমাকে। এখন কি ফোনের মধ্যে ঢুকে আরোও একটা থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করছে তোমার ?
নীরঃ এত বেশি বুঝিস ক্যান তুই ? আমি অনিসা’কে স্যরি বলবো। তাই ওর নাম্বার’টা চেয়েছি তোর কাছে।
আরণিঃ জুতো মেরে গরু দান করার কোনো প্রয়োজন নেই।
নীরঃ তুই তোর ভাই’কে চিনিস না আরণি ?
আরণিঃ আগে চিনতাম।কিন্তু আজ থাপ্পড় মারার পর থেকে চিনতে পারছি না ! তোমাকে আমি নীর ভাইয়া।
নীরঃ অনিসার নাম্বার’টা একবার আমাকে দে।আমি স্যরি বলেই ফোন কেটে দিব।
আরণিঃ কোনো প্রয়োজন নেই। অনিসা’কে যে থাপ্পাড় মেরেছো। সেই থাপ্পড় ফিরিয়ে দিতে পারবে ? না’তো ! তাহলে ফোন করার দরকার নেই।
.
নীরঃ ওকে ফাইন ! অনেক রিকুয়েষ্ট করেছি তোকে। তবুও তুই অনিসার নাম্বার আমাকে দিলি না।নীর কখনো দোষ করলেও স্যরি ফিল করে না। কাউকে স্যরি বলা তো দূরের কথা। তবুও তোর বান্ধুবী’কে স্যরি বলতে চেয়েছি আমি।কিন্তু আফসোস ! তুই তোর বান্ধুবীর সম্মান ফিরিয়ে দিতে চাস না। আই হ্যাভ নো এনি প্রবলেম বায়।
নীর আরণির কথা গুলোতে প্রচন্ড হার্ট হয়েছে। এবং নীর প্রচন্ড রেগেও গেছে। রেগে গিয়ে নীর আরণি’কে বকে ফোন’টা কেটে বিছানায় ছুঁড়ে মারলো জোরে। ফোন’টা গিয়ে রাইসার পাঁয়ে লাগলো। তাতে রাইসা খুব ব্যাথা পেলো। নীর সেদিকে খেয়াল না করে রেগে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
রাইসাঃ আহ্ ! আমার পাঁ শেষ। এই ছেলে জীবনে মানুষ হবে না।”বাদরের হাড্ডি” কোথাকার।
রাইসা নিজের পাঁ একহাতে ডলতে-ডলতে অন্য হাতে নীরের ফোন’টা নিয়ে ! আবার আরণির নাম্বারে কল করলো।আরণি ফোন রিসিভ করলো।
রাইসাঃ আরণি ! আমি রাইসা আপু বলছি।
আরণিঃ রাইসা আপু তুমি ! কেমন আছো আপু ?
রাইসাঃ আলহামদুলিল্লাহ্ ! তুই কেমন আছিস ?
আরণিঃ দুপুর পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো ছিলাম। দুপুরের পর থেকে সবকিছু খারাপ হচ্ছে।
রাইসাঃ আমি সব জানি।
আরণিঃ নীর ভাইয়া ! লাস্ট মোমেন্টে এমন একটা কাজ করলো। কিছু বলার নেই আমার।
রাইসাঃ জানিস তো নীর রেগে গেলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না।
আরণিঃ রাইসা আপু ! আমিও চাই অনিসা আর নীর ভাইয়ার রিলেশন হোক। বিয়ে হোক।ওরা দু’জন হ্যাপি লাইফ লিড করুক।
.
রাইসাঃ ব্যস ! তাহলে নীরের ফোনে অনিসার ফোন নাম্বার’টা সেন্ড করে দে।
আরণিঃ অনিসা আর কোনো ভাবেই নীর ভাইয়া’কে এ্যাক্সসেপ্ট করবে না।
রাইসাঃ আমার বিশ্বাস ! নীর পারবে অনিসা’কে মানাতে।
আরণিঃ তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ্। আমি নীর ভাইয়ার ফোনে ! অনিসার ফোন নাম্বার ম্যাসেজ করে দিচ্ছি।
রাইসাঃ ওকে কিউটি গোলুমোলু।
আরণিঃ লাভ ইউ আপি। রাখছি তাহলে।
রাইসাঃ বাসায় আসিস আড্ডা দিব।
আরণিঃ ওকে বাসায় এসে জমিয়ে আড্ডা দিব।
রাইসাঃ বায়।
আরণিঃ ওকে বায়।
আরণি ফোন কেটে দিলো। তারপর অনিসার নাম্বার’টা কপি করে নীরের ফোনে ম্যাসেজ করে দিলো। নীরের ফোনে টুনটুন বাজতেই রাইসা ম্যাসেজ চেক করে দেখলো ! আরণি ম্যাসেজ করেছে অনিসার নাম্বার।রাইসা খুশি হয়ে দৌড়ে ছাঁদে গেলো। গিয়ে দেখলো নীর ছাঁদের কোণায় হেলান দিয়ে বসে সিগারেট টেনে কালো-ধোঁয়া আকাশের দিকে উড়িয়ে দিচ্ছে।
নীর খুব সহজে স্মকিং করে না। যখনি নীরের অনেক বেশি কষ্ট হয়। তখন নীর নিজের সঙ্গী হিসেবে সিগারেট কেই বেঁছে নেয়। আজ তো নীরের জীবনের সবচেয়ে বেশি কষ্টের দিন বলে মনে হচ্ছে নীরের। তাই সে নিজের কষ্ট’টা কালো-ধোঁয়ার সাথে আকাশে উড়িয়ে দিচ্ছে। আজ প্রায় দু বছর পর নীর সিগারেট ছুঁয়ে দেখলো। আর সেটা রাইসা নিজের চোখে দাঁড়িয়ে দেখছে। রাইসার বুঝতে বাকি রইলো না। “নীর অল্প নয়। অনেক বেশি ভালোবাসে অনিসা’কে।তার প্রমান এই সিগারেট”।
.
রাইসাঃ তুই স্মকিং করছিস ? বাবা জানতে পারলে তোকে আস্ত রাখবে না নীর।
নীরঃ কি করবে বাবা ? বাড়ি থেকে বের করে দিবে নয়তো মেরে ফেলবে। তার চেয়ে বেশি কি করবে বাবা ?
রাইসাঃ ছিঃ নীর ! কি বলছিস এসব তুই ?
নীরঃ তো কি বলবো আমি ?
রাইসাঃ খুব কষ্ট হচ্ছে তোর ! অনিসার জন্য ?
নীরঃ নিশ্চুপ…………!
রাইসাঃ তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
নীরঃ আমার সাদা পরী’কে এনে দে। [আনমনে]
রাইসাঃ ওকেহ্ !
রাইসা হাল্কা হেসে নীরের চোখের সামনে নীরের ফোন’টা ধরলো। নীর সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখলো ! ম্যাসেজ ফোল্ডারে আরণির নাম্বার থেকে একটি নাম্বার ম্যাসেজে এসেছে। আরণি একটি নাম্বার সেন্ড করেছে।
নীরঃ কি দেখাচ্ছিস আমাকে ?
রাইসাঃ দেখতে পাচ্ছিস না ? একটা নাম্বার !
নীরঃ তো ?
.
রাইসাঃ ইডিয়ট ! এটা অনিসার নাম্বার।
নীরঃ হুয়াট ! [খুশি হয়ে]
রাইসাঃ হ্যাঁ ! আরণি’কে আমি ফোন করে বলতেই ! আরণি তোর ফোনে অনিসার নাম্বার ম্যাসেজ করে দিলো।
নীর প্রচন্ড খুশি হয়ে সিগারেটের পুরো প্যাকেট ধরে বাহিরে ফেলে দিলো। নীর খুশিতে কি করবে বুঝতেই পারছে না। উঠে দাঁড়িয়ে রাইসা’কে জরিয়ে ধরলো। তারপর রাইসা’কে ছেড়ে ফোন’টা নিয়ে অনিসার নাম্বারে একবার চোখ বুলালো নীর।
রাইসাঃ খুশি তো ?
নীরঃ খুব.খুব..খুব খুশি আমি। লাভ ইউ সো মাচ্। ইউ আর দ্যা বেস্ট আপু।
রাইসাঃ এখন অনিসার সাথে কথা বল তুই। দেখ অনিসা কি বলে।
নীরঃ হুমম।
রাইসাঃ আর হ্যাঁ ! একদম অনিসার উপর রাগ দেখাবি না কিন্তু।
নীরঃ ওকেহ্ প্রমিস ! অনিসার সাথে রোমান্টিক ভাবে কথা বলবো। [দুষ্টু হেসে]
রাইসাঃ ফাজিল ছেলে কোথাকার। আমি গেলাম। গুড নাইট।
নীরঃ গুড নাইট।উইথ সুইট ড্রিম’স।
রাইসা চলে গেলো। নীর ম্যাসেজ থেকে অনিসার নাম্বার কপি করে ডায়াল করলো। রিং বেজে-বেজে কেটে গেলো।কিন্তু অনিসা ফোন রিসিভ করলো না। নীর আবারো কল দিলো অনিসার নাম্বারে। রিং হতে লাগলো কিন্তু অনিসা এখনো ফোন রিসিভ করছে না। রিং বেজেই যাচ্ছে অনিসা রিসিভ করছে না ফোন।
চলবে….

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com