ভালোবাসার পরী | পর্ব -১২

দুপুর ১:৩০ বাজে। নীর বাসা থেকে বের হয়ে আকাশ’কে ফোন দিলো। আকাশ ফোন রিসিভ করলো।
নীরঃ কোথায় তুই ?
আকাশঃ আমাদের ফ্যামিলি অফিসে আছি।
নীরঃ যেতে পারবি না। তাই না‌?
আকাশঃ হুমম পসিবল না।
নীরঃ আচ্ছা আমি একাই চলে যাচ্ছি তাহলে।
আকাশঃ বিকেলে আমার বাসায় আসিস। মানে ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে সোজা আমার বাসায় এসে পরিস।
নীরঃ ঠিক আছে।
আকাশঃ ওকেহ্ !
আকাশ ফোন কেটে দিলো। নীর ফোন পকেটে ঢুকিয়ে বাইকে বসে হেলমেট পরে নিলো। তারপর বাইক স্টার্ট দিয়ে সোজা ক্যান্টনমেন্টের সামনে চলে গেলো। ওখানে গিয়ে বাইক থামিয়ে হেলমেট খুলে রাখলো। তারপর বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে গেঞ্জির হাতা ফোল্ড করে নিলো দু হাতের। ফোন’টা পকেট থেকে বের করে ফোনে কিছু ইম্পর্ট্যান্ট কাজ করতে লাগলো। দেখতে দেখতে ৩:০০টা বেজে গেলো। নীর ক্যান্টনমেন্টের ভেতরের দিকে তাকালো।
ক্যান্টনমেন্ট কলেজের অনেক মেয়েই বের হচ্ছে ঝাঁকে-ঝাঁকে। কিন্তু নীরের “সাদা পরী” এখনো বের হচ্ছে না। নীর ভালোভাবে তাকিয়ে আছে। অনেক মেয়ে বের হচ্ছে।কিন্তু যার অপেক্ষা নীর করছে। সেই মেয়েটাই বের হচ্ছে না।
নীর তাকিয়ে ছিলো। অবশেষে নীরের অপেক্ষার অবসান ঘটলো। মেয়েটি হাসতে-হাসতে দুটো মেয়ের সাথে বের হলো কলেজ থেকে।”সেই ভূবন ভোলানো হাসি মেয়েটির”। একদম হৃদয় ছুঁয়ে যায় মেয়েটি হাসলে। নীর এক ধ্যানে মেয়েটির দিকে নজর-কাঁড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো।
হঠাৎ নীরের চোখ গেলো তার সাদা থ্রি-পিসের পাশে যে দুটো মেয়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে একটি মেয়ের দিকে। নীরের চিনতে একদম ভুল হলো না। কারন সেই মেয়েটি হলো “আরণি মানে আকাশের ছোটো বোন”। নীর তো প্রায় আকাশ থেকে নিচে পরার মতো অবস্থা।নীর মনে মনে বললো !
নীরঃ [কোনোভাবে আরণি ! আমার সাদা পরীর ফ্রেন্ড নয়তো ?]
নীর কথাটা ভাবতেই মৃদু হাসলো। নীর খুশিতে পারছে না জোরে জোরে লাফাতে বাচ্চাদের মতো। নীরের এত খুশি লাগছে।নীর দেখলো ওর সাদা পরী রিকশায় উঠে চলে গেলো। সাথে পাশের মেয়েটিও চলে গেলো। আরণি একা খালি রিকশা খুঁজছিলো। তখনি নীর বাইক স্টার্ট দিয়ে আরণির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো মুচকি হেসে। আরণি তো খুশিতে নেচে উঠলো। অনেক দিন পর ! ওর নীর ভাইয়ার সাথে দেখা হয়েছে বলে কথা।
আরণিঃ নীর ভাইয়া তুমি ? [খুশি হয়ে]
নীরঃ বাসায় যাবি তো ?
আরণিঃ হ্যাঁ ! আমাকে বাইকে করে বাসায় পৌছে দাও তুমি।
নীরঃ তোকে নিয়ে যাবো বলেই এসেছি। বোস পেছনে চল।
আরণিঃ ওকেহ্ !
আরণি দাঁত কেলিয়ে হেসে দিলো। তারপর বাইকের পিছে নীর’কে ধরে বসলো। নীর বাইক স্টার্ট দিয়ে এক নাম্বার ক্রস্ করেই প্রিন্স বাজারের সামনে বাইক পার্ক করলো। আরণি বাইক থেকে নামলো। নীরও নামলো।
আরণিঃ এখানে আনলে ক্যান‌ নীর ভাইয়া ?
নীরঃ চল ভেতরে।
নীর আরণি’কে নিয়ে প্রিন্স বাজারের ভেতরে ঢুকলো। আরণির চোখ গেলো চকলেটের দিকে। নীর জানতো এমন টাই হবে। নীর এটাও জানে এই মেয়েকে ঘুস না দিলে ! পেটের কথা বের করবে না।
নীরঃ ওভাবে ছুঁচি বিল্লির মতো না তাকিয়ে যা খাবি সেটা নিয়ে নে।
আরণিঃ নীর ভাইয়া ! ভালো হচ্ছে না কিন্তু। আমি “ছুঁচি বিল্লি” ?
নীরঃ তা নয়তো কি ? যেভাবে চকলেটের দিকে তাকিয়ে আছিস। মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই গিলে খাবি।
আরণিঃ কিনবো না কিছু। বাসায় চলো।
নীরঃ ঘুস না দিলে তো ! তোর পেটের কথা বের করা যাবে না।
আরণিঃ আমি ঘুস কবে নিলাম তোমার কাছ থেকে ? [হাল্কা রেগে]
নীরঃ ঘুস কবে নিস’নি সেটা বল তো আমাকে।
আরণিঃ তুমি আমাকে বাসায় নিয়ে যাবা ? না’কি একাই চলে যাবো আমি ? [নাক-মুখ ফুঁলিয়ে]
নীরঃ চিপস্ , চকলেট , আইসক্রিম , সফ্ট ড্রিংক্স , স্ন্যাকস্ , চকলেট বিসকিট ! এনিথিং যা ইচ্ছে হয় খেতে সেটাই নে।
আরণিঃ সত্যি ? [জিভে লোল টেনে]
নীরঃ তাহলে কি দেখানোর জন্য নিয়ে আসছি তোকে ?
আরণির একটু সন্দেহ্ হলো নীরের উপর। কারন নীর তখনি অনেক বেশি পরিমাণে ঘুস দেয় আরণি’কে। যখন কোনো দরকার পরে আরণির। আরণি নীরের একদম কাছে গিয়ে হাল্কা নিজের পাঁ দুটো উঁচু করে ! নীরের কানে কানে বললো ফিসফিস করে !
আরণিঃ চক্কর কি হুমম ? এত ঘুস একসাথে দিচ্ছো যে ?
নীরঃ মিশন সাদা থ্রি-পিস। [আনমনে]
আরণিঃ কিহ্ ? [ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে]
নীরঃ আগে যা বলছি তাই কর না মেরি মা।
আরণিঃ আগে বলো চক্কর কি ? এত ঘুস দিচ্ছো। নিশ্চিত কোনো বড় চক্করে ফেঁসে গেছো। আমাকেও ফাঁসাতে চাইছো।
নীরঃ পরে বলবো।
আরণিঃ‌ এ্যাজ ইয়র উইশ।
নীর আর কোনো কথা না বলে ইশারা করলো চকলেটের দিকে। আরণি নিজের মনের মতো চকলেট কিনলো। “কিটক্যাট-ডেইরি মিল্ক সিল্ক-স্ট্রবেরি ললিপপ-এ্যাপিনলিবের জ্যার্স জেলি-এ্যালফাবেট কফি চকলেট”। অনেক গুলো করে কিনলো সবগুলো চকলেট। আইসক্রিম কিনলো “চকবার-কোণ-স্ট্রবেরি ফ্লেভার-অরেঞ্জ ফ্লেভার-লেমন ফ্লেভার” অনেক গুলো আইসক্রিম কিনলো। চিপস্ কিনলো “পটেটো ক্রেক্রাস-জিরো-মিস্টার টুইস্ট-লেজ্” অনেক গুলো কিনলো। সফ্ট ড্রিংক্স কিনলো “কোকাকোলা-পেপসি-মাউনটেন‌ ডিও” অনেক গুলো কিনলো। তারপর রিসিপশনে এলো। প্রায় তিন-হাজার টাকার জিনিস কিনে ওরা বের হলো।। নীর বাইকে বসে বাইক স্টার্ট দিলো। আরণি বাইকের পিছে বসে বললো !
আরণিঃ নীর ভাইয়া তাড়াতাড়ি চলো। আমার আইসক্রিম গুলো গোলে যাবে।
নীরঃ ফ্রিজে রাখলে ঠান্ডাও হয়ে যাবে। রাক্ষসীর মতো এমন করছিস ক্যান ? মনে হয় এখনি খাবি সব।
আরণিঃ নীর ভাইয়া ! [নীরের পিঠে কীল বসিয়ে]
নীরঃ তোর ভাই আর তোর মধ্যে কোনো তফাত নেই।
আরণিঃ তুমি তো আমার ভালো ভাইয়া। এত্তগুলা চকলেট কিনে দিলে। [আস্ত পাম মেরে]
নীরঃ আমার কাজ টাও করে দিস ঠিক মতো।
আরণিঃ আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট।
নীরঃ হুমম !
নীর বাইক এসে থামালো আকাশের বাসার নিচে। আরণি বাইক থেকে নেমে দৌড়ে উপরে গেলো। গিয়ে বেল বাজাতেই ওর মা এসে গেট খুলে দিলো। আরণি ঢুকেই প্যাকেট থেকে আইসক্রিমের বড় একটা প্যাকেট বের করলো। তারপর একটা-একটা করে ফ্রিজে রাখতে লাগলো সাজিয়ে-সাজিয়ে আইসক্রিম গুলো। আরণির মা বললো !
— : কিরে এত চকলেট , আইসক্রিম , চিপস , সফ্ট ড্রিংক্স কে দিলো ?
আরণিঃ বলো তো কে দিতে পারে ?
— : নীর এসেছে নাকি ? নীর ছাড়া কারো কাছ থেকে জোর করে এমন ঘুস তুই নিতে পারবি না।
আরণিঃ কি করে বুঝলে নীর ভাইয়া এসেছে ?
— : তোর হাতে এত ঘুস দেখে।
আরণিঃ মা ! ভালো হচ্ছে না কিন্তু। [ঠোঁট উল্টে]
নীর আকাশ’দের বাসায় ঢুকে দেখলো ! আকাশের মা দাঁড়িয়ে আছে। নীর মুচকি হেসে বললো !
নীরঃ আসসালামু-আলাইকুম আন্টি।
— : ওয়ালাইকুমসালাম। এতদিন পর আন্টির কথা মনে পরলো ?
নীরঃ আসলে আন্টি পড়াশোনা নিয়ে একটু বিজি। সামনেই লাস্ট ইয়ারের ফাইনাল এক্সাম ! জানোই তো।
— : অনেক দিন পর এসেছো।বলো কি খাবে।
নীরঃ আন্টি তুমি তো জানো আমার পছন্দের খাবার কি ?
— : ঠিক আছে ! আমি এক্ষুনি বানিয়ে আনছি।তুমি বসো।
আকাশের মা হেসে কিচেনে চলে গেলো। আকাশের মা কখনো আকাশ আর নীর’কে আলাদা চোখে দেখে’নি। সব’সময় নীর’কে নিজের ছেলের মতো ভালোবেসে এসেছে।
আরণিঃ এখন তো বলো !
নীরঃ গিয়ে ফ্রেস হয়ে আয় তুই। আমি আকাশের রুমে যাচ্ছি। আকাশ এলে বলবো সব।
আরণিঃ ঠিঞ্চিলা আঞ্চিল ভাঞ্চু !
নীরঃ ফাজিল মেয়ে একটা। আমার কঁপালেই সব ফাজিল বোনগুলো জুটেছে।
আরণি নিজের রুমে এসে ! ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে তার নিচে দাঁড়িয়ে গান গাইতে লাগলো। ওদিকে নীর আকাশের রুমে বসে আকাশের ল্যাপটপে গেমস্ খেলায় ব্যস্ত হয়ে পরলো।
চলবে….
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url