Breaking News

সতীনের সংসার | ১ম পর্ব



রাত ১ টা বেজে ৪০ মিনিট । হঠাৎ একজন নার্স এসে অধরাকে বলল,
“সেই কখন থেকে দেখছি আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন। যান, কোনো এক জায়গায় গিয়ে বসে থাকুন।
এভাবে রোগীর রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবেন না।”
রাত ৩ টা বেজে ৬ মিনিট। হঠাৎ একটি মহিলা এসে অধরাকে বলল, “এই যে শুনছো মা? এই তৃতীয় তলায় অপারেশন থিয়েটার টা কোন দিকে একটু বলবে?
আমার মেয়েকে নিয়ে গেছে সেখানে। আমার নাতি-নাতনি হবে তো তাই।”
অধরা হাত দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে বলল, “ঐ দিকে।”
.
অধরার গলা শুকিয়ে পুরো কাঠ হয়ে গেছে। 
এটা যে কোনো মানুষের গলা তা বোঝার উপায় নেই। তাই মহিলাটি বলল, “
কি হয়েছে মা তোমার? তোমার গলা এমন লাগছে কেন? 
আর তুমি এই ভাবে কেবিনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছো কেন?…… 
(উত্তর না পেয়ে) আচ্ছা মা, তোমার সাথে পরে কথা হবে। আমি আগে একটু আমার মেয়েকে দেখে আসি। থাকো তুমি।”
মহিলাটি চলে গেল।
.
ভোর ৫ টা বেজে ২৩ মিনিট। একজন ক্লিনার এসে অধরাকে বলল, 
“দেখি, একটু সরে দাঁড়ান তো। জায়গাটা একটু ঝাট দিয়ে দিই।….. কি হলো সরুন?
অধরা টলতে টলতে সরে দাঁড়ালো। অধরা এমন ভাবে টলছে যেন মনে হচ্ছে সারা রাত নেশা করেছে। কিন্তু না। সে নেশা করেনি। 
বরং সারা রাত হসপিটালের ৩০৫ নং কেবিনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। হ্যাঁ, দরজার বাইরেই দাঁযড়িয়ে ছিল। কারন ভেতরে ঢোকা যে তার নিষেধ।
ক্লিনার কাজ করে ওখান থেকে চলে গেল।
কিছুক্ষন পর,,

৩০৫ নং কেবিনের দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন আরিফা বেগম। 
দরজা খুলেই দেখলেন অধরা দাড়িয়ে আছে দরজার সামনে। 
স্পষ্ট বুঝতে পারলেন মেয়েটা সারা রাত ঘুমাই নি। 
অপূর্ব সেই চোখ দুটির নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে। 
কিন্তু অধরাকে কিছু না বলে আরিফা বেগম সেখান থেকে চলে গেলেন। 
অধরা তার চলে যাওয়াটা দেখল। কিছুক্ষণ পরে সে রুমের দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকল। 
রুমের ভেতরে ঢুকে অনেক্ষণ দাড়িয়ে রইল দরজার কাছে। তারপর আস্তে আস্তে বেডের দিকে এগোলো। বেডে থাকা রোগীর হাতটা ধরে আস্তে আস্তে বলতে লাগল,
.
“আফ…নান? আফনান? ওঠো। আর কত নাটক করবা? অনেক হয়েছে, এবার বন্ধ করো 
তোমার এই নাটক। জানো? এই হসপিটালের ডাক্তাররা কি বলেছে? 
বলেছে, তুমি নাকি কোমায় চলে গেছো। তোমার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নাকি অনেক কম। 
আরে,,, পাগল হয়ে গেছে এই ডাক্তাররা। তারা জানে না যে তুমি নাটক করছো। 
আমার উপর রেগে আছো বলে তুমি এমনটা করছো। …… 
ওহ, কি করে ওনারা বুঝবেন বলো তো,,, রাগ মাপার যন্ত্রটা তো এখনো আবিষ্কারই হয়নি!
.
এই? তুমি কি আমায় শুনতে পাচ্ছ না? এই…. ওঠো। প্লিজ ওঠো। 
দেখো আমি এসেছি তোমার কাছে। আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে না? 
শোনো না? আমি আর কখনো তোমার থেকে দূরে যাব না। 
সবসময় তোমার সাথে থাকব। আর কখনো তোমায় রাগাবো না। ওঠো না?”
.
হঠাৎ অধরার চোখ পড়ল আফনানের পেছনের কাচের জানালার উপরে।
অধরা আবার বলল, “দেখো আফনান, আমার চোখের কাজল লেপ্টে গেছে। 
তুমি বকবে না এবার আমায়? কথা দিলাম, এবার থেকে তুমি যখনই আমাকে সাজতে বলবে 
আমি সাজব। আমি শুধু তোমার জন্য সাজব। যেখানে যেতে বলবে সেখানেই যাব।
 তুমি যেভাবে চা থেতে বলবে ঠিক সেভাবেই খাবো। কথা দিলাম তোমায়।”
হঠাৎ অনেক জোরে জোরে কাঁদতে লাগল অধরা।
.
“সব আমার দোষ। সব সব সব দোষ আমার। আমায় ক্ষমা করে দাও। 
আজ আমার জন্য তোমার এই অবস্থা। 
আমি যদি তোমার জীবনে না আসতাম তাহলে আজ তুমি দিশা 
আপুর সাথে সুখে সংসার করতে পারতে।…
এই শুনছো তুমি? প্লিজ ওঠো। আমার দিকে তাকাও। কথা বলো আমার সাথে।”
কথাগুলো অধরা আফনানকে বলছে। আফনান সেই মানুষ টা যাকে অধরা খুব ভালোবাসে। 
যার জন্য সারা রাত কেবিনের বাইরে দাঁদ,ড়িয়ে ছিল। কিন্তু আফনান এখন কোমায়। 
ডাক্তাররা বলতে পারছেন না তার কবে হুশ ফিরবে বা আদেও ফিরবে কি না।
.
চোখে লোনা পানি নিয়ে আফনানের বুকের উপরে নিজের মাথাটা রাখল অধরা। 
তারপর চোখ বুজে হারিয়ে গেল তার অতীত জীবনের ঘটনায়। 
ভাবতে থাকল কিভাবে তার পরিচয় হয় আফনানের সাথে। 
ভাবতে থাকল কেন আজ আফনানের এই দশা।

চলবে….

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com