আবু হুরায়রা (রাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী পর্ব -০৬
আখলাক ও অভ্যাস :
সাইয়্যিদুনা আবু হুরায়রা রা. যে সাহচর্য ও সুসান্নিধ্যে ইমামুল আম্বিয়া সা.-এর সােহবত ও খিদমতের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি, চরিত্র গঠন, সুকীর্তি এবং ইলম্ ও আমলের বহমান আলােকরশ্মি প্রজ্জ্বলিত রেখেছেন, তার তুলনা শুধু তিনিই। তার ধারাবাহিক পরিশ্রমের আবশ্যিক ফলাফল তার উন্নত চরিত্র আর অনুপম আখলাকে পরিদৃষ্ট হয়েছে।
.
আবু হুরায়রা রা.-এর সুষমামন্ডিত চরিত্রের গুলবাগিচায় তাই জ্ঞানার্জন এবং ইলম প্রচারে তীক্ষ সচেতনতা, আল্লাহর ভয়, আখিরাতের ভয়, রাসূল সা.-এর মুহাব্বত, জিহাদী জবা, শহীদী তামান্না, সুন্নাতের অনুসরন, ইবাদতে মগ্নতা, দারিদ্রপ্রিয়, বিনয় ও নম্রতা, ইখলাস ও লেন-দেন, ধৈর্য, সদা হাস্যোজ্জ্বল ইত্যকার নানা রঙিন ফুল রয়েছে।
আমরা যদি তার আখলাক-চরিত্রের একটি উড়ন্ত ফলাফল নিতে যাই, তাে আমরা দেখবাে যে, আবু হুরায়রা রা, আল্লাহর ভয়ে সারাক্ষণ ভীত সন্ত্রস্ত থাকতেন। আর এই ভয় তার এতােই অধিক ছিল যে, তিনি মাঝে মাঝে অস্বাভাবিক হয়ে অবচেতন হয়ে পড়তেন। (যেমন শকি আল আশীর বর্ণনায় বিস্তারিত আসবে)। তাঁর এই অভ্যাস মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ইশকে রাসূলের নমুনা এমন ছিল যে, এক মুহূর্তের জন্য রাসূলুল্লাহ সা. বিরহ সহ্য করতে পারতেন না। প্রিয়নবী সা. যাকেই মুহাব্বত করতেন আবু হুরায়রা রা.-এর তাকে ভালােবাসতেন। একবার
এই ভালােবাসার কথা প্রকাশ করতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সা.-কে তিনি বললেন,
“ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার দর্শন আমার জীবনের এবং চক্ষুকে শীতলকারী।”
এই প্রকৃত ভালােবাসা তাকে এমন উদাহরণতুল্য বিশ্বাসী পুরুষ বানিয়ে দিয়েছে যে, প্রতিটি কাজে রাসূলুল্লাহ সা.-এর সুন্দর চরিত্র এবং পবিত্র জীবনের আলােয় উদ্ভাসিত করেছে। পাশাপাশি তিনি অন্যকেও সর্বদা সুন্নাতের তালকীন করতেন। এই সুন্নাতের অনুসরন ও রাসূলুল্লাহ সাঃ- এর আনুগত্যই তাঁকে উঁচু শ্রেণীর ইবাদতকারী ও আত্মোৎসর্গকারীরূপে গড়ে দিয়েছে।
তাঁর ইবাতে মগ্নতা ও একাগ্রতা এতাে উন্নত ছিল যে, তিনি জিকির,
ইবাদাতে অর্ধেক রাত কাটিয়ে দিতেন। ফরয রােজা ছাড়াও প্রতি মাসের
রােজার পাবন্দি করতেন। আবু উসমান নাহদী রহ. বর্ণনা করেন, আমি
সাত দিন আবু হুরায়রা রা.-এর মেহমান ছিলাম। আমি দেখেছি, তিনি
তাঁর পরিবার ও গােলামকে রাতের বেলা বারবার ডেকে ইবাদতের জন্য
জাগাতেন। প্রতিদিন ১২ হাজার তাসবীহ পাঠ করতেন। লৌকিকতা এবং
বিলাসিতা প্রচন্ডভাবে এড়িয়ে চলতেন। স্বচ্ছলতা এবং প্রশাসনিক
কর্মকর্তা থাকা অবস্থাতেও অভাব-অনটনের সময়কে লুকাতেন না।
বিভিন্ন সভা-মাহফিলে তিনি অকপটে বলতেন এবং স্বচ্ছলতার ব্যাপারে
শােকর করতেন।
সত্য কথা বলা এবং উচিৎ কথা বলা ছিল তার একটি বিশেষ গুণ। সে
সময়ের প্রশাসকের সামনেও সত্য কথা বলতে দ্বিধা ছিল না তার।
সামাজিক আচার-ব্যবহারে তিনি ছিলেন অতুলনীয়। অন্যদের সাথে উত্তম
ব্যবহার করতেন। ক্ষমা করে দেয়া, বিনয় ও নম্র ব্যবহার ছিল তার নিত্য
সঙ্গী। সবার সাথে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় মুখােমুখি হতেন। নিজের চেয়ে
ছােট বিশেষ করে শিশুদের প্রতি সীমাহীন দয়ালু ছিলেন। অত্যধিক
মেহমানদারী করতেন। মেহমানদের লম্বা সময়ের অবস্থানও তাঁকে
গােমড়ামুখী করতাে না। দান-দক্ষিণায় ছিলেন অতুলনীয়। দান-সদকা
করে অন্তরে তৃপ্তি ও শান্তি অনুভব করতেন।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com