আবু হুরায়রা (রাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী পর্ব -০২
রিসালাতের যমানায় : রাসূলুল্লাহ সা.-এর খেদমতে উপস্থিত হওয়ার পর থেকে শুরু করে তার
অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত (সপ্তম হিজরীর মুহাররম মাস থেকে একাদশ হিজরীর রবিউল আউয়াল পর্যন্ত) আবু হুরায়রা রা.-এর সারা জীবনের সঞ্চয়কাল । তিনি সে সময়ের তিন চতুর্থাংশ মানব জাতির মুক্তির দূত রাসূলুল্লাহ সা.- এর খেদমতে এবং সাহচর্যে ধন্য হয়েছেন। তার প্রকৃতিও ছিল আশ্চর্যজনক! সফরে হােক বা ঘরে, একাকি হােক বা সমবেত, রাত বা দিন, শান্ত বা যুদ্ধাবস্থা, সুস্থ কিংবা অসুস্থ, আনন্দের মুহূর্তে হােক কিংবা চিন্তাগ্রস্থ- সারাক্ষণ তিনি রাসূলুল্লাহ সা.-এর খেদমতে উপস্থিত থাকার জন্য বিভাের থাকতেন। এই সুবর্ণ সময়পুঞ্জিতে তাঁর জীবনের তিনটি মহৎ অর্জন পরিলক্ষিত হয়-
.
প্রথমতঃ রাসূলুল্লাহ সা.-এর সৌন্দর্য; যার দর্শনে নয়নযুগল আলােকিত হয়। এ ব্যাপাওে আবু হুরায়রা রা. নিজেই বলেন, “ইমামুল আম্বিয়া সা.- এর পবিত্র স্বত্ত্বার মােহনীয় সৌন্দর্য দর্শন আমি অন্তরের গভীর প্রশান্তি, তৃপ্তি এবং চক্ষু শীতলকারকরূপে পেয়েছি।”
.
দ্বিতীয়তঃ যতটুকু সম্ভব সর্বোচ্চ সময় রাসূলুল্লাহ সা.-এর খেদমতে থেকে ধন্য হওয়া।
.
তৃতীয়তঃ ইলম-মা’রিফাত তথা জ্ঞান-প্রজ্ঞার মূল কেন্দ্র নবী কারীম সা.-এর দরবারে থেকে পিপাসা নিবারণ এবং ফয়েজ হাসিল করা।” এসব মহৎ লক্ষ্য অর্জনের জন্য আবু হুরায়রা রা. রিসালাতের যমানায় দাম্পত্য জীবন বিসর্জন দিলেন। ছেড়েছেন জীবন যাপনের বৈষয়িক উপকরনের চিন্তাও। ‘আসহাবে সুফফা’র পবিত্র জামাতের সাথে একাত্ম হয়ে গেলেন। ক্ষুধা-পিপাসা, অভাব-অস্বচ্ছলতাতেই জীবন কাটাতে লাগলেন।
.
তিন বছরের কিছু বেশি সময় তিনি ইসলামের এই পুতপবিত্র
ও ঐতিহাসিক শিক্ষাঙ্গনের সুনির্বাচিত তালিবে ইলম্ হিসেবে
কাটিয়েছেন। এ সময়টাতে মসিবত আর পেরেশানীর শত পাহাড়
ডিঙ্গিয়ে, ক্ষুধা-পিপাসার ঘূর্ণিঝড় মাড়িয়ে, দুঃখ-দুর্দশার শত ঘাট
অতিক্রম করে ধৈর্যের অনুপম দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন।
.
শত ঝড়-ঝঞ্চায়ও তিনি এক কদম টলেননি। নবী কারীম সা. সান্নিধ্য ছাড়েননি কিছুতেই।
নিজেই তিনি বলেন, আমার অবস্থা এমন ছিল যে, যখন পেটে কিছু দানা-পানি জুটে যেতাে,
তৎক্ষণাত রাসূলুল্লাহ সা.-এর খেদমতে হাযির হয়ে যেতাম।
আমি কখনাে খামির করা রুটি খাইনি। উন্নত পােষাক পড়িনি। আমার কোনাে খাদেম ছিল না,
না ছিল কোন বাঁদি। এমনকি পরিধান করার জন্য আমার কাছে কাপড়ও থাকতাে না। ক্ষুধার যন্ত্রনায়
কখনাে কখনাে কোমর সােজা করতে না পেরে পেটে পাথর বেঁধে নিতাম। দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে আধাে আধাে দাঁড়িয়ে থাকতাম ।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com