Breaking News

সাইকো লাভার । পর্ব -০৬



আকাশ এখান থেকে বেরিয়ে যায়!
.
— সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পর ছেলের কোন খবর না আসায় আর আকাশের বাবা নিজে এসেছে থানায়। বন্ধুকে দেখে উঠে আসেন থানার রিয়াজ।
!
— কিছু পেলি তুই আমার(আকাশের বাবা)
!
— চেম্বারে আয় আমি বলতেছি,এই হিরো দুটো চা দিয়ে যাও তো আমার চেম্বারে( রিয়াজ)
!
রিয়াজ থানার এক কেরানি চা আনতে বলে। আকাশের বাবাকে নিয়ে নিজের চেম্বারে যায় বসতে বলেন।
!
— দেখ আমরা তো খোজা শুরু করেছি। যেদিন ও কিডন্যাপ হয় সেদিন ও কলেজে করিয়েছে, এবং ফেরার সময় ও সে প্রত্যেক দিনের মতো স্বাভাবিকভাবেই বেরিয়েছিল আর কলেজের সামনে থেকে ওকে কিডন্যাপ করা হয়নি। আমরা সিসিটিভি ফুটেজও চেক করেছি। (রিয়াজ)
!
–অসহায় আকাশের বাবা হাউ মাউ করে কেঁদে উঠেন, রিয়াজ তুই এখন আমার ভরসা কিছু কর ভাই, কিছু কর, বাড়িতে বৌমা রয়েছে ওই মেয়েটাও কষ্টে আছে রে। আমার সামনে হাসিমুখ আছে কিন্তু ওর মনের ভিতরে কি চলছে তা কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারি।(আকাশের বাবা)
!
— আমরা সব বুঝতে পারছি! এখন দুটো জিনিস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এক ওকে হয়তো কেউ বাস ধরার ফাঁকা জায়গা কিডন্যাপ করতে পারে, আর দ্বিতীয়….. (রিয়াজ )
!
–কিরে বল দ্বিতীয় কি? (আকাশের বাবা)
!
— হ্যাঁ রে আকাশ কি কোন আলাদা সম্পর্ক ছিল?( রিয়াজ)
!
— কি বলছিস” আমার ছেলের কোন আলাদা সম্পর্ক নেই( আকাশের বাবা)
!
–উত্তেজিত হোসনা আমি তোর মনের অবস্থা বুঝতে পারছি। তবে দেখ এটা তো হতেই পারে আকাশ অন্য কারো সাথে (রিয়াজ)
!
— রিয়াজ আর একটা কথা বলিস না আমার আকাশ কোনো খারাপ কাজ করতে পারে না! (আকাশের বাবা)
!
— স্যার চা”’।(কেরানি)
!
–হ্যা দাও।(রিয়াজ)
!
— কিছু খেয়েছি সকালে? দেখে তো মনে হয় না তোর মুখ দেখে। চা টা খা। (রিয়াজ)
!
— ট আমার কিছু ভালো লাগছেনা রে…. আজ এ বয়সে এসে যদি ছেলের কিডন্যাপম হয় কোন বাপের সহ্য হয়।তোরও তো ছেলে আছে, আল্লাহ না করুক তোর ছেলের কিছু একটা হয় তোর কেমন হবে বল ভাই( আকাশের বাবা)
!
— চা টা খেয়ে নে, আচ্ছা তোর বৌমা কাল সন্ধ্যার সময় কোথায় গিয়েছিল রে? ওর ভাই এসেছিল না কাল( রিয়াজ)
!
— কেন বলত রিয়াজ? আর আমার বোমার কোন ভাই নেই। (আকাশের বাবা)
!
–ও তাহলে হয়তো আমি ভুল দেখেছি…. (রিয়াজ)
!.
–রিয়াজ আজ আসি এখন তাহলে। বাড়ি যাই কাউকে কিছু বলে আসেনি বড়বোন দুজনের চিন্তা করবে।(আকাশের বাবা)
!
— হ্যাঁ সাবধানে যাস আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি, আকাশ তো আমারও ছেলের মত (রিয়াজ)
!
–এর পর আকাশের বাবা থানা থেকে বেরিয়ে পড়েন আস্তে আস্তে সি এন জি এর দিকে এগোতে থাকে। আর অন্যদিকে ঘটছে এখন এক নতুন ঘটনা।
!
— হ্যালো বাবু কি করছো (মেয়েটি)
!
–কি ব্যাপার ম্যাডাম আর সকাল সকাল এত প্রেম(ছেলেটি)
!
— ও আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারি না? সত্যি তুমি কেমন যেন আনরোমান্টিক হয়ে যাচ্ছেো(মেয়েটি)
!
— আরে মাই সুইটহার্ট ডোন্ট অ্যাংরি বেবি (ছেলেটি)
!
— আর বেবি???(মেয়েটি)
!
–কেন সোনা কি হলো?? (ছেলেটি)
“!
–কবে আমাকে নিয়ে যাবে খান থেকে, আর ভালো লাগছে না আমার এখানে থাকতে প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো!(মেয়েটি)
!
— হ্যালো! হ্যালো! আয়ান।(মেয়েটি)
!
— এই দাঁড়াও দাঁড়াও আমার একটা কল ঢুকছে(আয়ান)
!
— তুমি আর তোমার কল! কল টা কেটে যায়, এই ছেলেটা পারেও বটে আমার সঙ্গে কথা বলার ওর এতটুকু সময় নেই সবসময় ব্যস্ত আর ব্যস্ত ভাল লাগে না ধুর।(মেয়েটি)
!
— কি আয়ান কার সাথে ব্যস্ত এতো সকালে!(অন্য মেয়ে)
!
— আরে বাবু আমাদের সোনার ডিম পাড়া হাঁসের কল এসেছিল সকাল সকাল(আয়ান)
!
— কি বলল তা সে??(মেয়েটি)
!
— ওই সেই একই কথা আমাকে নিয়ে চলো আমাকে নিয়ে চলো আর ভালো লাগছে না এই সবই (আয়ান)
!
— ধৈর্য হারিও না বাবু! ধৈর্য হারালে বিপদ (মেয়েটি)
!
–সে আর বলতে, বাবু একটা কথা বলব?(আয়ান)
!
–আজ আর না অন্য দিন বলিও কেমন (,মেয়েটি)
!
— ওইদিকে আকাশকে নিজের বাড়ি থেকে বের করে নিতে চাইলেও তিথির মন মানছে না। বুঝতে পারছে না ও কি করবে । আর অসহায় আকাশ মুক্তির আনন্দ উপভোগ করতে পারছে না বারবার মনে হচ্ছে সে গত রাতের তিথির সাথে খারাপ কিছু করেছে। তাই তিথির মুখে কথাগুলো শোনার পরে এবং তিথির এমন অস্বাভাবিক ব্যবহার দেখে আরো বেশি ভীত হয়ে রয়েছে। সে হাঁটছে৷ লন পেরোলেই মেইন রোড। এখান থেকে বের হতে পারলে সে নন্দিনী কাছে পৌঁছাতে পারবে, তার বাবার কাছে পৌঁছে যাবে।
!
— এতক্ষণ তিথি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল দুই চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে মাথার ভেতরে কেমন যেন সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। না তাকে আকাশকে আটকাতে হবে, আকাশকে ছাড়া বাচতে পারবেনা আকাশ তাকে কত ভালোবেসে, আদর করছে, সেবা করেছে, আকাশ ছাড়া তার জীবন অচল। সে ছুটে নামতে যায় শিড়ি দিয়ে, তারপরে একটা ধাপ করে শব্দ হয়, চারদিকে অন্ধকার আর কিছু মনে নেই তিথির। প্রায় ২২ ঘণ্টা পর তিথির জ্ঞান ফিরল।
!
— এখন ঠিক লাগছে মা? মাথার পিছন দিকটায় হাল করে লেগেছে আর কিছু হয়নি।(কাকা)
!
— আমি কোথায়? আকাশ… আকাশ কোথায়(তিথি)
!
— তিথি মা কি করছো বলতো? এখন তুমি উঠতে পারবে না তোমার মাথায় আঘাত লেগেছে, ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছে তোমায় উঠতে পারবে না…..
!
— আকাশ আমার আকাশ( ঘুমিয়ে পড়ে তিথি)
!
— ডাক্তার ওকে দেখেছে মাথার পেছনে ফেটে গেছে আজ যদি আর একটু এদিক-ওদিক হতো তাহলে হয়তো তিথি সারা জীবনের জন্য হারিয়ে যেত। আল্লাহ যা করেন। ভালোর জন্যই করেন…..
!
— অনেকটা লেগে গেছে, তিথি এখন ঘুমাচ্ছে শান্তিপূর্ণভাবে ঘুমাচ্ছে, তিথির কাকু সমস্ত ওষুধ বুঝিয়ে দিয়ে এবং তিথির যেন কোন রকম মানসিক চাপ না পড়ে সেদিকে লক্ষ রাখতে বল, বেরিয়ে গেলেন ডাক্তার ঘুমের ঘরে মেয়েটি আকাশের নাম নিয়ে যাচ্ছে না জানি কি স্বপ্ন দেখছে!
!
— আকাশ চলে গেছে না কাকা?(তিথি)
!
— তুমি মাথায় চাপ দিওনা মা, একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো(কাকা)
!
— না কাকা বলো না!( তিথি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে) তিথির কাকু বলেন আমি তোমার খাবারটা নিয়ে আসছি।
!
–তারমানে আকাশ চলে গেছে আবার একটা( দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিথি)
!
–দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে, খুব কষ্ট হচ্ছে। হ্যাঁ সত্যি হারিয়ে ফেলল ওর প্রথম ভালোবাসা আকাশকে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে তিথি, ভীষণ মাথা যন্ত্রণা করছে হঠাৎ ঘরে কারোর পায়ের শব্দ চমকে ওঠে। তবে উক্ত চমকে উঠে লাভ নেই ওর ভালবাসার মানুষ চলে গেছে ছেড়ে। সে তার নিজের স্ত্রীর কাছে চলে গেছে।
!
— আমি খাব না কাকা , তুমি খাবারটা নিয়ে যাও, আমার খাওয়ার ইচ্ছা নেই, আমার ভালো লাগছে না।(তিথি)
!
— খাবার না খেলে দুর্বল হয়ে পড়বে…….
!
–চেনা গলার আওয়াজ শুনতে পেয়ে তিথি পিছন ফিরে দেখে আকাশ খাবার নিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ওর মুখটা আর আগের মত নেই। সেই হাসি মাখা মুখটা হারিয়ে গেছে, একটা বিরক্ত একটা তিক্তা মুখে ভর করে বসেছে। তাহলে কি আকাশ ওকে দয়া করেছে।
!
— I am sorry(তিথি)
!
— খাবারটা খেয়ে নাও (আকাশ)
!
–ক্ষমা করে দাও, আমি তোমার কাছে ছুটে আসতে চাচ্ছিলাম কিন্তু তারপর পা টা স্লিপ কাটলো আর তারপর চারপাশ অন্ধকার। (তিথি)
!
–খাবারটা খেয়ে নাও (আকাশ)
!–
–আকাশ প্লিজ আমার কাছে একটু বসবে। (তিথি)
!
–আমি একটু একা থাকতে চাই
–তুমি খাবারটা খেয়ে নাও, আমি চলে যাচ্ছি আর এতো নাটক না করলেও পারতে। আমায় তো বন্ধ করে রেখেছিলে, কেন এইটুকু মুক্তি দিলে? তবে কি জানো তোমার প্রতি আমার যেটুকু ভালোবাসার জন্য ছিল তুমি সেসব ভালোবাসা টুকু গলা টিপে মেরে দিলে। ভালো করলে। আমারই ভুল তোমাকে এত বিশ্বাস করেছিলাম, সত্যিটা কি জানো তুমি অন্তত নির্লজ্জ মেয়ে। তোমার মত একটা মেয়ে কখনো কারো ভালো চাইতে পারে নি তুমি একটা নোংরা মেয়ে (আকাশ)
!
— আকাশ.. (তিথি..)
!
–একটা কথাও বলবে না, আর খেয়ে নাও (আকাশ)
!
–তিথি খেতে বাধ্য।সে কাঁদছে কিন্তু, তাকে তাও খেতে হচ্ছে নয়তো আকাশ এখান থেকে যাবে না আরো কষ্ট পাবে। নিঃশব্দে তিথিকেদে চলেছে। অন্যদিন হলে আকাশ খেয়াল করতো তবে আজ আর তেমন চাইল না ভুলেও তিথির দিকে ফিরল না। আকাশ ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে। আজ প্রথমবার আকাশের চোখে এতটা ঘৃনা দেখল। আকাশে ভালবেসেছিল, ও নিজেই শেষ করে দিল সব। আজ আর এতোটুকু ভালবাসাও নেই ওর তিথির প্রতি, যেটুকু আছে সেটুকু ওর প্রতি দয়া মায়া। এতোটা ঘৃণা নিয়ে আমি বাচবো কি করে।
!
?
অন্যদিকে পুলিশ আকাশের খোজে বেরিয়েছে, কলেজ মার্কেট সব জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ চেক করলো তবে কিছুই জানা যায় নি। এক অফিসার এসে বলে।
!
–স্যার উনি যেদিন কিডন্যাপ হোন সেদিন এই মার্কেট বন্ধ , তবে সেদিন এখানকার একটি চায়ের দোকান খোলা ছিল তবে আজ সেটি বন্ধ আছে, হয়তো কাল আসলে কিছু একটা আলোর দিশা পেতে পারি (জুনিয়ার অফিসার)
!
–এরপর থানায় ফিরে আসেন তারা, আকাশের বাবা কে যে কি বলবে তাই ভেবে চলেছে রিয়াজ। ওই মানুষ যে বড্ড অসহায়। কিন্তু আরেকটা কথা বড্ড ভাবাচ্ছে তাকে এর আগের দিন নন্দিনীকে দেখতে ভুল করে নি একদমদই। যদি নন্দিনী কোন ভাই না থাকে তাহলে সেদিন কে ছিল ওর সাথে। আকাশের বাবা কে তখন সে বলেনি জোর দিয়ে, তার কারণ আকাশের বাবা আরো চিন্তা করত কিন্তু কিছু একটা ঘটেছে যার আন্তাজ কেউ পাচ্ছে না। গাড়িতে উঠে একই কথা ভাবছে রিয়াজ, সে তার বন্ধুকে একটা কল করবে নাকি সেটা ভাবতে থাকে এমন সময় তার ফোনটা বেজে ওঠে।
!
— হ্যালো রিয়াজ (আকাশের বাবা)
!
–হ্যাঁ বল….(রিয়াজ)
!
— কিছু পেলি ভাই?(আকাশের বাবা)
!
— হ্যাঁ আমরা খোঁজ করেছি আমরা অবশ্যই আকাশ কে খুঁজে বার করব, তবে তুই বৌমাকে একটু খেয়াল করিস(রিয়াজ)
!
— কেন বলতো?(আকাশের বাবা)
!
— বললাম তো একটু খেয়াল রাখিস(রিয়াজ)
!
–অন্য দিকে ঘটছে……
.
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com