Breaking News

শেষ বিকেলের রোদ । পর্ব -১২



ক্লাসে বসে ঝিমাচ্ছে তুবা। সুপ্তি ও স্নিগ্ধা ওর দুদিকে বসেছে। সুপ্তি ওকে ধাক্কা দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“কিরে ঝিমুচ্ছিস কেন?”
তুবা চমকে উঠে আশেপাশে তাকায় তারপর একবার টিচারের দিকে তাকায়। একটা ঢোক গিলে সুপ্তিকে বলে,
“পরে বলবো।”
“আচ্ছা।”
ক্লাস শেষে তিনজনে ভার্সিটির মাঠে আসে। তুবা ওদেরকে বলে,
“কখনো পদ্মাপারে গিয়েছিস?”
“হ্যাঁ”(স্নিগ্ধা)
“না, তবে ইচ্ছা আছে।”(সুপ্তি)
তুবা বেশ ভাব নিয়ে বলে,
“পদ্মাসেতুর একদম কাছের চরে গিয়েছিস?”
“না।”(দুজনে একসাথে)
“ভালোবাসার মানুষটা সেখানে নিয়ে গিয়েছিলো কখনো? সেখানে নিয়ে প্রোপজ করেছে?”
সুপ্তি চোখ বড়বড় করে বলে,
“তারমানে আলিয়ার ভাই?”
তুবা একটু লজ্জালজ্জা ভাব করে মাথা উপরনিচে নেড়ে বলে,
“হুম”
স্নিগ্ধা তুবার হাত ধরে হেসে বলল,
“কি কি হলো? বল না, বল না।”
“আচ্ছা, বলছি।”
তুবা পুরো ঘটনা বলা শুরু করে।
অন্যদিকে,
আজ ভার্সিটিতে যায় জিনাত। কেন যেন ইচ্ছে করছে না। কাল কোথায় গিয়েছিল আলিয়ার? এই একটা প্রশ্নই ওর মনকে গ্রাস করছে। আলিয়ার যে ওকে ভালোবাসে না এটা আর কেউ না জানলেও ও খুব ভালো করেই জানে।
জিনাতের রুমে আসে সুলতানা, হাতে কিছু বক্স। জিনাত মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। উনি নিজের হাতে থাকা বক্সগুলো বিছানায় রেখে ওকে বলে,
“খুলে দেখো, কি এনেছি?”
জিনাত মায়ের কথায় কিছুটা অবাক হয়ে বক্সগুলো খুলে। খুলে আরো বেশি অবাক হয় সে। সীতাহার, কন্ঠহার, মণিহার, কানের দুল, টিকলি, টায়রা, নাকের নথ, হাতের বালা, আংটি, ব্রেসলেট, নুপুর, কোমড় বন্ধনী আছে বক্সে আবার সবগুলোই স্বর্ণের।
জিনাত অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
“এসব কেন?”
“এগুলো সবই আমার। কিছুকিছু করে টাকা জমিয়ে সারাজীবনে এগুলো বানিয়েছি। তোমার বিয়ে হবে তাই নামালাম।”
“আম্মু, এসব কেমন পাগলামি?”
“মেয়ের বিয়েতে মা তো একটুআধটু পাগলামি করবেই।”
জিনাত হেসে বলল,
“ছোট বোন পাগলামি করে জানি, কিন্তু মা করে তা তো জানতাম না।”
“সবই হতে পারে।”
জিনাত হেসে গয়নাগুলো মায়ের হাতে দিয়ে বলে,
“যেদিন বিয়ে হবে, সেদিন এসব নিয়ে কথা হবে। আপাতত এগুলো তোমার কাছেই রাখো।”
সুলতানা হেসে বলল,
“যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা হবে। আমি সবার সাথে কথা বলবো।”
সুলতানা উঠে যেতে নিলে জিনাত উনার হাতে ধরে বলে,
“আম্মু, কি দরকার গায়ে পড়ে এসব তাদেরকে বলার। আমার তো মনে হয় উনারা কেউই চায় না বিয়েটা হোক। যদি চাইতো তবে কিছু না কিছু কথা ঠিকই বলতো।”
জিনাত মাথানিচু করে আছে। সুলতানা আবারও বলল,
“আর আলিয়ার, সে কি তোকে সত্যিই ভালোবাসে?”
জিনাত চমকে উঠে মায়ের দিকে তাকায়। সুলতানা বলল,
“অবাক হয়ে লাভ নেই, আলিয়ার তোর সাথে হয়তো গেম খেলেছে। দেখলি না কাল কিরকম করলো?”
জিনাত একটা ঢোক গিলে বলল,
“মা, যাও তো। আমাকে একটু একা থাকতে দাও।”
সুলতানা বেরিয়ে যায়। জিনাত মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে। আলিয়ার তো সতিই ওকে ভালোবাসে না, ও নিজেই তো মিথ্যাবাদী।
সন্ধ্যায়,
তুবা ও অনু বারান্দায় বসে আছে। কিছুদিন পরেই তাজিমের জন্মদিন, সে উপলক্ষ্যেই কিছুদিন ধরে শপিং ও নানান তোড়জোড় চলছে ওদের বাসায়, কিন্তু তা তাজিমকে না জানিয়ে।
অনু সবকিছু লিস্ট মিলিয়ে দেখে নেয়, তারপর তুবার কাছে এসে বলল,
“তুবা।”
তুবা ফোন টিপতেছিল। অনুর দিকে না তাকিয়েই বলল,
“হুম”
“কাল কোথায় গিয়েছিলে? ফিরতে এতো রাত হয়ে গেল?”
তুবা ফোন রেখে অনুর দিকে তাকিয়ে বলে,
“বলেছিলাম তো এক ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে গেছিলাম।”
“আমিও তো বলেছিলাম এভাবে সেজেগুজে আমি তোমার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে যেতাম।”
তুবা মাথানিচু করে হেসে আবার অনুর দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমিও তোমার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।”
অনু চোখ বড়বড় করে তুবার দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমার তো কোনো ভাই নেই, এক বোন আছে।”
তুবা অনুকে ধরে রুমে নিয়ে যায়। তারপর বিছানায় দুজন মুখোমুখি বসে। তুবা বলে,
“আমার বিয়ের পর আমার হাসবেন্ডকে তুমি কি ডাকবে?”
“ভাই।”
“তবে?”
তুবা ভ্রু নাচিয়ে উঠলে অনু হেসে উঠে বলে,
“কে সেই ব্যক্তি?”
তুবা ভাব নিয়ে বলে,
“কেন বলবো?”
“তোমাকে পায়েস, ক্ষীর করে খাওয়াবো।”
“শুধু পায়েস আর ক্ষীর?”
অনু একটু ভেবে বলল,
“তবে চকলেট খাওয়াবো।”
“সেটা তো ভাইয়াই খাওয়াতে পারে।”
অনু বলে,
“বাঁশ খাবে, বাঁশ। পান্ডা একটা।”
“বাঁশ কেন খাওয়াবে?”
“তুমি একটা ছেলের সাথে ঘুরতে গেছো এটাই তো তোমার বাঁশ খাওয়ার জন্য যথেষ্ট।”
বলেই হাসতে থাকে অনু।
তুবা রেগে বলে,
“তবে নাম বলবো না।”
“তবে তোমার ভাইয়াকে বলে দিয়ে বাঁশ খাওয়াই।”
অনু উঠে যেতে নিলে তুবা ওকে আটকে বলে,
“ওয়েট, ওয়েট, ওয়েট।”
অনু এসে আবারো ওর পাশে বসে বলে,
“কি?”
“আলিয়ার, উনার নাম আলিয়ার।”
অনু ঠোঁট উলটে হেসে বলল,
“আলিয়ার।”
“তো কাল কোথায় গিয়েছিলে?”
“পদ্মাপারে।”
“বাহ, বাহ। তো কি হলো?”
“ইলিশ মাছ খেলাম।”
“আর কি খেলি?”
“ভাত।”
“আর?”
“বলবো না।”
অনু মাথানিচু করে বলে,
“শেষে আমার কিউট ননদিনীটাও প্রেমে পড়ে গেল?”
“কখন কার জীবনে এই প্রেম নামক অনুভূতিটা আসবে তা কে জানে?”
“বাহ, বেশ বড়ও হয়ে গেছে।”
তুবা মাথানিচু করে হাসছে।
অন্যদিকে,
আলিয়ার অফিসে কিছু জরুরি ফাইল ঘাটাঘাটি করছে।
এত এতো ফাইল দেখতে দেখতে দুপুরের খাবারটাও খাওয়া হয়ে উঠেনি ওর।
আলিয়ার এখনো সেই একই কাজ করেই যাচ্ছে।
হঠাৎ আলিয়ারের কোমড়ের বামপাশের পেছন দিকটায় প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়।
অসহ্য সেই ব্যথা সহ্য করতে পারছে না আলিয়ার।
একগ্লাস পানি খেয়ে নেয়, তবুও ব্যথা কমে না আলিয়ারের।
আলিয়ার কোমড়ে হাত দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে থাকে।
চোখমুখ খিঁচে সহ্য করার চেষ্টা করে।
এমনসময় তুবা কল করে, আলিয়ার ফোন বের করে তুবার নাম্বার দেখে রিসিভ করে।
“হ্যালো, আলি।”
আলিয়ার নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে বলে,
“হুম”
“কি করতেছেন?”
আলিয়ার একটা ঢোক গিলে বলে,
“অফিসে আছি, তুবা। একটু (একটু থেমে একটা ঢোক গিলে) পরে কথা বলি।”
তুবা বুঝতে পারলো আলিয়ারের কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। তুবা উত্তেজিত হয়ে বলল,
“কি হয়েছে, আলি?”
“কিছু না তুবা। অনেক কাজের চাপ আছে।”
“সত্যি তো?”
“হুম, একদম।”
“তবে ফোন রাখি?”
সঙে সঙেই আলিয়ার ফোনটা কেটে দেয়। অনেকক্ষণ স্থির হয়ে থাকার পর ব্যথাটা কিছুটা কমেছে। আলিয়ার স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে কাজে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করে।
.
চলবে….

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com