Breaking News

হঠাৎ বসন্ত । পর্ব -০৫



এরপরও সব জেনেশুনে কেমন করে তোর বাবা রিনি কে
তোর বৌ হিসেবে এ বাড়িতে নিয়ে আসতে পারে তা তুই ই বল নীল ।
আজ রিনির পিতৃ পরিচয় কী ?
আকাশের অবৈধ মেয়ে ছাড়া তো আর কিছুই পরিচয় ওঁর নেই।
কারণ আকাশ রায়মাকে বিয়েই করেনি ।
রক্ষিতা হিসেবেই আকাশের জীবনে রায়মা থেকে গিয়েছে।
রক্ষিতা তো কখনো স্ত্রীর সম্মান পায় না। সেই সঙ্গে তাঁর সন্তানও কখনো বৈধ সন্তান হয়না।
তাহলে সেই অবৈধ মেয়েকে এ বাড়িতে তোর বৌ করে আনবে কেমন করে তোর বাবা আর আমিও বা মেনে নেব কেন ?

” সবটুকু মন দিয়ে শুনে নীল কিছু সময় চুপ করে থেকে বলে উঠেছিল
( এতোক্ষ ফ্ল্যাশব্যাক ছিলো৷৷ এখন বাস্তবতায় ফিরি)
–” আচ্ছা মা এতে রিনির দোষ কোথায়? তাঁর মায়ের চরিত্রগত দোষের ভাগী সে হতে যাবে কেন ?
তাছাড়া রিনির মা রায়মা আন্টির সম্পর্কে বাবা পুরোপুরি যে ধারণা পোষণ করে আসছে
তাঁর সবটুকুই যে ঠিক তা নাও তো হতে পারে ।
কোন্ অবস্থায় রায়মা আন্টি নিজেকে বাবার থেকে বিচ্ছিন্ন করেছিল তা হয়তো বাবা জানে না।
তাছাড়া আজ পাঁচ বছর রিনির সঙ্গে আমার সম্পর্ক ।
রায়মা আন্টিকে যতটুকু দেখেছি বা চিনেছি তাতে রায়মা আন্টি কে আমার এতোটুকু অশ্রদ্ধা
করার মতো মহিলা দেখে তো মনে হয় নি। বরং ওনার শান্ত স্বভাব আমাকে মুগ্ধ করে।
উনি হয়তো পরিস্থিতির চাপেই এমন সব সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
আর সব সত্যটুকু জানতে গেলে রায়মা আন্টির কাছ থেকেও জানতে হবে।
তবে তো একজন মহিলাকে দোষারোপ করা যাবে। কোথায় যেন ভুল থেকে যাচ্ছে মা আমার ,
তোমার ,আমাদের সকলের। “

—” তোর কথাগুলো যে খুব একটা ভুল তা হয়তো নয় ।
তোর বাবা রায়মাকে ওপর থেকে যতটুকু দেখেছে তাতেই চিনেছে।
ওঁকে জানা বা চেনার মধ্যে হয়তো অনেকটাই ফারাক ছিল তোর বাবার।
নয়তো কোথাও তোর বাবা ঠিক বলছে না। আমাদের লুকিয়ে যাচ্ছে ।
পরিস্থিতির চাপে পরে একান্তই বাধ্য হয়ে রায়মা নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিল
এমন অদ্ভুত সব সম্পর্কে তাঁর জন্য কে দায়ী পরিস্থিতি না কী অন্য কেউ?”
–” হয়তো তাই । “

একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠেছিল নীলের কথাগুলির প্রত্যুত্তরে ।
—-“তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে রিনি।
বিকেলে অফিস শেষে যদি একবার আসো মিলেনিয়াম পার্কে তা হলে বলতে পারি।
” পরের দিন অফিসে গিয়েই মোবাইলে থেকে ফোনটা করেই বসে নীল রিনি কে।
রিনি এতে কিছু মাত্র অবাক হয়নি।
কারণ এরকম ভাবে নীল তাঁকে অনেক বারই মিলেনিয়াম পার্কে আসার জন্য বলেছে।
আর সেই সঙ্গে নানা গল্প আর আড্ডাতেও দুজনে সময় কাটিয়েছে বহুক্ষণ।
প্রত্যেক বারের মতো তৎক্ষণাৎ রাজী হয়ে গিয়ে ঠিক বিকেলের দিকে
অফিস শেষে রিনি উপস্থিত হয়েছিল মিলেনিয়াম পার্কে ।

গোধূলির শেষ বেলা। রাঙা মেঘে প্রকৃতি তখন নব বধূ সাজে।
হালকা বাসন্তী রঙের সিল্ক আর অনুরূপ ব্লাউজে সেদিন ভারী সুন্দর দেখাচ্ছিল রিনিকে।
নীল অপলক দৃষ্টি মেলে কিছু সময় তাকিয়ে থাকতে গেলে রিনি ঠোঁটের প্রান্তে ফুটে উঠেছিল লাজুক হাসির রেখা। নীল গাঢ কন্ঠস্বরে বলে উঠেছিল
—” আজ তোমাকে দারুণ লাগছে রিনি। শাড়িতে তোমাকে বড় একটা দেখিনি।
আজ শাড়ি পরে এসেছ । তোমার দিক থেকে চোখ ফেরানোই অসম্ভব হয়ে পরছে। “
—” শাড়িটা ভালো হয়েছে নীল ?
এটা আমার মায়ের শাড়ি।
মা যখন ঢাকায় থাকতো আমি
তখন অনেক ছোট । মা কে একজন গিফ্ট করেছিল।
মা যেই মাত্র শুনলো আমি আজ তোমার সঙ্গে দেখা করতে
যাবো তখনি মা এই শাড়িটা আমাকে পরতে বললো। আর বললো এই শাড়িটা পরলে দেখবি নীল তোর দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারবে না ।
” নীলের কথাগুলি শেষ হওয়ার পূর্বেই রিনি কথাগুলি বলে উঠেছিল লাজুক লাজুক কন্ঠস্বরে।
—” তোমরা ঢাকায় থাকতে তা তো কোনো দিন বলোনি রিনি ? ” কাঠের নির্মিত একটা ফাঁকা বেঞ্চের ওপর রিনির পাশ ঘেঁষে বসতে গিয়ে নীল যে মুহূর্তে কথাগুলি বলে ওঠে রিনি বেশ অবাক হয়েই প্রশ্ন করে উঠেছিল-‘

– সে কী তোমাকে আমি এই পাঁচ বছরে কোনোদিন বলিনি ? 
তুমি জানো না আমরা ঢাকায় থাকতাম? সে অবশ্য অনেক বছর আগের কথা। 
তখন মা একটি প্রাইভেট ফার্মে সবে ঢুকেছে। মায়ের পোস্টিং হল ঢাকাতেই। 
সেখানেই আকাশে সঙ্গে মায়ের আলাপ হয় মায়েদের কোম্পানির বস । 
আর তারপর যা হয় একজন পুরুষ আর নারীর মধ্যে আকাশের সঙ্গে 
ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে ফল স্বরূপ আমি জন্ম গ্রহণ করি। 
কিছু বছর কেটে যায় । আমি তখন খুবই ছোট আকাশ মানে 
আমার বাবা মারা গেলে আমার বাবার পরিবারের লোকজন আমাকে আর মা কে মেনে নেয় না । 
কারণ আমার বাবা আমার নামেই বাবা ছিলেন মায়ের সঙ্গে তাঁর কোনো 
বৈবাহিক সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। আমি মা বাবার অবৈধ সন্তান তকমা পেলাম।

তাই বাবা মারা যাওয়ার পর যখন বাবার পরিবারের কাছে আশ্রয় পাওয়ার জন্য 
মা আমাকে নিয়ে হাজির হয় তখন বাবার পরিবারের লোকজন আমাদের দূর দূর করে তারিয়ে দেয়।
মা আর কী করে আমাকে নিয়ে তখন কক্সবাজারের চলে আসে।
আর তারপর থেকেই মায়ের লড়াই শুরু আমাকে বড় করে তোলার।
“নীল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
রিনির জীবনের এই ঘটনাটুকুর আংশিক তাঁর পূর্বেই জানা হয়ে গেছে 
তাই ততটা অবাক না হয়ে বলে ওঠে

–” রিনি তোমার জীবনের বলতে গেলে আন্টি বা তোমার মায়ের জীবনে 
ঘটে যাওয়া আংশিক ঘটনা আমার জানা। কারণ ,,,,,,,,,
—” কারণ তোমার বাবা বুলবুল চৌধুরী এক সময়ে আমার মায়ের প্রেমিক ছিলেন তাই তো? 
মা আমাকে সব বলেছে। এবং আমি এ ও জানি আজ সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য ই 
তুমি আমাকে এখানে ডাকলে। তবে শোনো ওই অবিবেচক ভদ্রলোকের জন্যই আজ 
আমার মায়ের এই পরিণতি তা কী তুমি জানো নীল? জানো না। কারণ তোমার বাবা 
বুলবুল চৌধুরী পুরুষ মানুষ তাঁর মিথ্যাটা সত্য রূপে প্রকাশ পায় ।
 আর আমার মা একজন মেয়ে মানুষ তাই তাঁর চরিত্রের দোষ দিয়ে তাঁকে 
দোষী বলে বদনাম করা যায় আর তাঁর সত্যটাকে মিথ্যার আকার দেওয়া যায় ।”

—” মানে ? তুমি কী বলতে চাইছো রিনি ? আমার বাবা অবিবেচক ? 
তিনি তাঁর আর রায়মচ আন্টির সম্পর্কে যা বলেছেন আমার বা আমার মায়ের 
কাছে তাঁর সবটাই মিথ্যা ? বানানো গল্প ! আমি তো শুনেছি তোমার মা ই আমার 
বাবাকে বিয়ে করতে রাজী হননি কারণ তোমার মা তখন তাঁর অফিসের বসের সঙ্গে 
সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে গিয়েছিলেন। তোমার মা ই আমার বাবাকে ঠকিয়ে ছিলেন দীর্ঘ কয়েক 
বছর আমার বাবার সঙ্গে সম্পর্কে যুক্ত থেকেও ? তাঁর সবটাই মিথ্যা কথা? 
অবিবেচকের মতো কাজ? “
—” হ্যাঁ হয়েছিলেন বসের সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত আমার মা। তা সত্য । 
কারণ তাঁর সংসারে অভাব ছিল। অসুস্থ বাবাকে সুস্থ করা আর নিজেদের গ্রাসাচ্ছাদনের 
জন্য বাধ্য হয়েছিল বসের মর্জিমতো চলতে। তাতে দোষ কোথায়? 
আর মায়ের এই পরিণতির জন্য দায়ী কে? তাঁকে কে বাধ্য করেছিল বসের 
মর্জিমতো চলতে ? তাতে মাইনের পরিমাণ দ্বিগুণ হবে এই পরামর্শ দিয়ে । 
এরজন্য তোমার বাবা বুলবুল চৌধুরী দায়ী নীল। আমার মা যা মাইনে পেত তাতে 
তাঁর পক্ষে নিজের বাবার ক্যান্সারের চিকিৎসা বা নিজেদের ভরণপোষণ সম্ভব ছিল না। 
তাই একদিন নির্লজ্জ ভাবে তোমার বাবাকে বলেছিল

—” বুলবুল অনেক বছর তো আমাদের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে এবার পরিণতি পাক।
চলো এবার বিয়ে করি।
তাহলে আমার আর তোমার রোজগার মিলিয়ে অন্তত আমার বাবা আর মায়ের ভরণপোষণটা হয়ে যাবে।
আর দুতিনটে টিউশনি বারিয়ে নেবো তাতে বাবার চিকিৎসা করাতে কোনো অসুবিধা হবে না আমার।
বিয়ের পর তোমার আমার দুজনের রোজগারের ওপর দুজনেরই অধিকার থাকবে।
যে অধিকারের বোঝা বিয়ের আগে তোমার ওপর কখনোই চাপানো সম্ভব নয় আমার পক্ষে ।
” তোমার বাবা তৎক্ষণাৎ বিয়ে করতে অস্বীকার করেন বলেন–
–” এখনো তাঁর চাকরি পাকা হয়নি। কিছু অর্থ নৈতিক সাহায্য সে যেমন করে আসছে
রায়মা কে তেমনি করে আসবে। বিয়ে করে রায়মা সহ তাঁর বাবা মায়ের বিশাল দায়িত্বের
পাহাড় কাঁধে নেওয়া এমতাবস্থায় কখনোই সম্ভব নয়। তাই বিয়ে করা এখন অসম্ভব ।

” আত্মমর্যাদা রক্ষার্থে তোমার বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেছিল এর আরও পরে আমার মা।
যখন মা বুঝতে পারলো বিয়ে না করে কিছু অর্থ আমার মায়ের পরিবারের জন্য 
ব্যয় করে মায়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো, প্রেম প্রেম খেলার মধ্যে তোমার বাবা দিনের পর 
দিন আনন্দ পেতে চাইছিলেন ?
আসলে আমার মা কে তোমার বাবা প্রেমের নামে ঠকিয়ে ছিলেন ভালো তাঁকে
 কোনো দিন ও বাসেননি ।
তাঁকে বিয়ে করতে রাজী না হয়ে তাঁকে তিলে তিলে এগিয়েও দিয়েছিলেন বরং 
বসের দিকে তোমার বাবা ই। বসের কু নজর রয়েছে আমার মায়ের ওপর
 তা তোমার বাবাকে জানিয়ে ছিল এক সময়ে আমার মা।
তোমার বাবা তবুও কোনো হেলদোল দেখাননি।

বরং বলেছিলেন ওই রকম একটু আধটু বসের সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত সব প্রাইভেট 
ফার্মের মেয়েদেরই হতে হয় আর বসের ওটা কুনজর নয় সুনজর। এতে ফায়দা নেওয়াই ভালো।
মা প্রতিবাদ করেছিল তোমার বাবার কথায় ।
কিন্তু তোমার বাবা সেই মুহূর্তে জানিয়ে ছিলেন
—” সতী সেজে থাকলে তোমার সংসারের দায় কে বহণ করবে রায়মা ? 
আমার পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়।” মা আর তারপর কথা বাড়ায়নি।
তোমার বাবা কোনোদিন ই যে আমার মা কে বিয়ে করবে না তা 
আমার মা বুঝে গিয়েছিল সম্পূর্ণ ভাবে ।

তারপর মা আরো বুঝেছিল যখন মাকে নিজের জীবন থেকে পুরোপুরি দূর করে
দেওয়ার জন্য তোমার বাবা একটা অজুহাত খুঁজে বার করেছিল। কারণ ?
বলাই বাহুল্য একটা গরিব অসহায় মেয়ের পারিবারিক দায় দায়িত্ব সমেত বিয়ে করা অসম্ভব
কিন্তু তাঁর সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করা খুবই সম্ভব ।
কিন্তু সহজে তো দীর্ঘ কয়েক বছরের সম্পর্কে ইতি টানা যায় না তাই সুযোগের অপেক্ষায়
ছিলেন বুলবুল চৌধুরী মানে তোমার বাবা যা দিয়ে রায়মার চরিত্র দোষ দেখিয়ে তাঁকে নিজের
জীবন থেকে ছেঁটে ফেলা যায় । আর সুযোগ এসেও গিয়েছিল একদিন ।


চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com