সাইকো লাভার । পর্ব -০৯
আকাশের বাবার ফোন পেয়ে ডাক্তার এসে উপস্থিত হয়েছেন!
তিনি একবার রিপোর্ট টাকে ভালোভাবে দেখলেন…
কি ডাক্তার ভয়ের কিছু নেই তো(আকাশের বাবা)
ডাক্তার কপালে একটু ভাজ এনে নন্দিনীকে জিজ্ঞেস করলেন।
আচ্ছা বৌমা তোমার কতদিন ধরে এমন পেটে যন্ত্রণা হচ্ছে, তোমার বমি বমি ভাব আছে, তার সাথে মাথা ঝিমঝিম, খাবারের প্রতি অনীহা ঠিক বলছি তো( ডাক্তার)
হ্যাঁ প্রায় দু এক মাস আগে থেকে…. (সংক্ষেপ এর উত্তর দিলো নন্দিনী)
আচ্ছা ডাক্তার বৌমা কি মা হতে চলেছে??( আর ধৈর্য ধরে রাখতে না পেরে ডাক্তারকে প্রশ্ন করলেন আকাশের ফুফু)
নন্দিনী অসহায়ের মতো ফুফুর দিকে তাকায়, সে ভয় পেয়ে যায়। সত্যি তো,,,,
সে আয়ানের মিথ্যা ভালোবাসায় পরে আয়ানকে তার সবটা দিয়ে দিয়েছিল।
সে যদি প্রেগনেন্ট হয় হয়ে থাকে তাহলে। এ সন্তান যে আকাশের নয়।
এ বাড়ির মানুষগুলো তার ভুল ক্ষমা করেছে, তাই বলে একটা অন্য পুরুষের সন্তান
এর দায়ভার তারাই বা কেন গ্রহণ করবে।
আর কিছু ভাবতে পারছেনা নন্দিনী সব কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে.!
দু চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসতে চাইছে কোন রকমে আটকে রেখেছে সে জলের ধারা।
আচ্ছা আকাশ কোথায়? ওর সাথে আমার কিছু কথা বলার আছে (ডাক্তার)
সবাই চুপ, কারও মুখে কোন কথা বের হচ্ছে না। আকাশের ফুফু আদ্র গলায় জবাব দিলেন।
আকাশ কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আজ সাত মাস ধরে, (ফুফু)
তাহলে বৌমার এ অবস্থায়,,,,,,,,, (অসম্পূর্ণ রাখলেন কথাটা ডাক্তার বললেন)
কোন ভয়ের কিছু নেই তো ডক্টর (চিন্তিত হয়ে প্রশ্ন করলেন ডাক্তারকে)
তুই একটু বাইরে আয়,,,
তোর সাথে কথা আছে (ডাক্তার এবং আকাশের বাবার ডাইনিং রুমের দিকে গেলো)
এদিকে নন্দিনীর যেন আরো ভয় বেড়ে গেল। ফুফুর মুখেও গভীর চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।
কি হয়েছে ডাক্তার বৌমা কি প্রেগন্যান্ট (আকাশের বাবা)
প্রথমে সিমটম গুলো দেখে আমারও তাই মনে হয় হয়েছিল তবে।,,,,(ডাক্তার)
তবে কি? চুপ করে থাকিস বল আমায়( আকাশের বাবা)
ডাক্তার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে,– না বৌমা কনসিভ করেনি তবে আমার যা মনে হচ্ছে তা যদি সত্যি হয় তাহলে একটা চিন্তার বিষয়।(ডাক্তার)
তোর কি মনে হচ্ছে?(আকাশের বাবা)
আচ্ছা বৌমা কি না খাওয়া আছে এখনো (ডাক্তার)
আমি সেটা বলতে পারবো না, আমার বোন বলতে পারে ওকে ডাকি, তাই বরং ভালো হবে।
কথাটা বলে আকাশের বাবা ভিতরে গিয়ে তার বোনকে ডেকে নিয়ে এলো।
তারপর আকাশের ফুফু জানালো নন্দিনী আজকে সকাল থেকে কিছু খায়নি।
ডাক্তার জানালো নন্দিনীর এখনি একটা ইউএসজি করাতে হবে। দেরি হলে বিপদ হতে পারে।
আমার একজন পরিচিত ডাক্তার আছে সে একজন গাইনো সার্জেন্ট।
সে কারোর বাড়ি এসে যদিও চিকিৎসা করেন না। (ডাক্তার)
তার পর তারা নন্দিনীকে নিয়ে এলো হসপিটালে,
এসে চিকিৎসা করাতে সে ই,এম বাইপাস এর নামকরা নার্সিংহোম, রবি একজন উচ্চপদস্থ ডাক্তার ।
গাড়িতে তারা একসাথে গেল নার্সিংহোমে তৎপর। 11:45 এর মধ্যে রিপোর্ট হয়ে গেল
আজ বিকেলের মধ্যে রিপোর্ট হাতে চলে আসবে।
সেখান আকাশের বাবা ও তার বোন নন্দিনীকে বাড়ি নিয়ে আসে। সকলের চিন্তায় চিন্তিত।
আর এইদিকে…
তিথি এখন আর আগের মতো হুড়োহুড়ি করতে পারে না,
সেই চঞ্চল’ মেয়েটি একবারে শান্ত হয়ে গেছে। শুধু দুটো ঘরে তার বেশি আনাগোনা।
একটা তার নিজের ঘর আর একটা অতি পছন্দের একটা ঘর।
তবে সেই ঘরে আজ অব্দি কারো ঢোকার সুযোগ হয় নি।
তিথী টেবিলে বসে কিছু একটা লিখছে এমন সময় আকাশ তার জন্য সুপ নিয়ে এলো।
তিথি আকাশকে দেখে লেখাটা বন্ধ করে দিল। আকাশ জানে আজও সে তার সাথে কথা বলবে না।
তাই সে আর বৃথা চেষ্টা করল না। খাবার দিয়ে থেকে পরম স্নেহে খেতে বলল।
এবং তারপর সেখান থেকে যাওয়ার জন্য উদ্দেশ্য হলো।
আকাশ….. (তিথি)
আকাশ অবাক আজ অনেকগুলো মাস পর তার নাম ধরে ডাকলো,
কিছু বলবে (আকাশ)
না তেমন কিছু নয়, কিন্তু তোমার বাবার নাম্বার মনে আছে তোমার? ( জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আকাশ তাকিয়ে রয়েছে তিথির দিকে)
বাবার নাম্বার দিয়ে কি হবে?( আকাশ)
একটু দরকার আছে আমার। হয়তো তুমি দেবে না তবু আমার নাম্বারটা খুব দরকার,
তুমি নাম্বার টা না দিলেও আমাকে অন্য ভাবে তা খুঁজে নিতে হবে (দৃষ্টি জানালার বাইরে নীল আকাশের দিকে রেখে কথাগুলো বলল তিথি)
তারপর সে তার বাবার নাম্বারটা দিলো……
একটা রিকোয়েস্ট করব রাখবে? (আকাশ)
হ্যাঁ বলো”” (তিথি)
আমার বাবা হাটের পেসেন্ট, এমন কিছু বলো না যাতে আমার বাবা আমার মায়ের মতো
আমাকে ছেড়ে চলে যায়. বিনীতভাবে নিবেদন করছি প্লিজ আমার থেকে
আর কাউকে কেড়ে নিয়ো না ,,,,, (আকাশ)
তিথি এবার আকাশের দিকে তাকায়, ওর চোখো স্পর্ষ্ট আবারও একটা ঘৃণা, একটা আতঙ্কের ছাপ।
তবে অনেকদিন পর সে আকাশের মুখের দিকে তাকাল, কেমন যেন লাগছে।
উদাসীনত স্পষ্ট ওর চোখে মূখে। রোগা হয়ে গেছে অনেকটা, চুলগুলো বড় বড় হয়ে গেছে।
এক ঝলক তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে নিচের দিকে দৃষ্টিপাত করে তিথি।
ভয় নেই তোমার আর কোন কোন ক্ষতি করব না।
সব ফিরিয়ে দেবো তোমাকে, ভয় পেয়ো না। (তিথি)
আমি তোমাকে এভাবে বলতে চাইনি, আমি কিছু ভুল বলে থাকলে সরি (আকাশ)
না আকাশ ঠিক আছে(তিথি)
হুম,,,,( আকাশ)
আকাশ এতদিনেও তোমার একবারও সন্তানের জন্য মন টানেনি, ইচ্ছা হয়নি
একবারও জানতে এই পুচকু টা কত বড় হয়েছে। (গলা ভিজে আসছে তিথির,
দৃষ্টি তখনো অন্যদিকে স্থির রেখে সে কথাগুলো বলল)
আকাশ আর স্থির থাকতে পারলো না…….
তার এতদিনের আবেগ আর যত কষ্ট হয়েছে সব মনে পড়তে লাগলো।
তার চোখ দিয়ে জল গড়তে শুরু হলো।
সে তিথির কাছে এসে তাকে আবারো বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিল।
দুজনে কাঁদছে। কেন জানিনা আকাশের মনে হচ্ছিল সে হয়তো তিথি কে হারিয়ে ফেলবে।
শক্ত করে চেপে ধরেছে তিথিকে।
কিন্তু তারপর হঠাৎই আকাশের মনে হলো তিনি যেন তার দাড়িয়ে থাকা অবস্থা নেই,
নেতিয়ে করছে ওর অচৈতন্য দেহটা।
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com