Breaking News

সাইকো লাভার । পর্ব -১২ এবং শেষ



তিথির জীবনে কেটে গেল এই দশটি মাস।এই কয়দিন ধরে তিথির শরীরটা ভালো লাগছে না, মাথার ভেতর কেমন যেন ঝিমঝিম করছে, মাথা ঘুরাচ্ছে, বমি হচ্ছে। তবে আজ যেন একটু বেশি। বাইরে পর্যন্ত বের হতে পারছে না ওটার ক্ষমতা টুকু নেই আজ ভয় করছে ওর। বুঝতে পারছে একটা খুশির মুহূর্তের মুখ দেখতে চলেছে সে। কিন্তু তাও ওর চোখ ফেটে জল আসে, সে জানেনা এই খুশি কতক্ষণ ধরে রাখতে পারবে। আবার পর মুহূর্তেই কিছু ভেবে আনন্দে আনন্দিত হয়ে যায়। আকাশ ওর সন্তানকে মেনে নিয়েছে। মনের মধ্যে একটু শান্তি আসে,। এরপরেই সে অনুভব করে তার ভীষণ পেটে যন্ত্রণা করছে। কাউকে চেচিয়ে ডাকবে সেই ক্ষমতাও নেই। না এবার আকাশকে সব কথা বলতে হবে। ওর ডায়রিটা আকাশের কাছে পৌঁছাতে হবে। ওর এত পেটে ব্যথা করছে মনে হচ্ছে প্রাণটা এখনই বেরিয়ে যাবে। তাহলে কি আর আকাশকে দেখতে পারবে না।
!
— অন্যদিকে তিথি এত বেলা হয়ে যাওয়ার পরেও নিচে নামছে না দেখে আকাশ ওর ঘরে যায়, আকাশ তিথিকে দেখে অবাক, বিছানায় কাতরাচ্ছে তিথি। ভয় পেয়ে যায় আকাশ। ছুঁটে যায় তিথির কাছে।
!
তিথি তোমার কি হলো? একবার তো ডাকবে….
কষ্ট হচ্ছে না তোমার।
কাকা তিথির পেন উঠেছে এমবুলেস কল করুন। তিথি একটু সহ করো তোমার কিছু হবে না।
আমি তোমাকে কিছু হতে দেব না, (বুকে জড়িয়ে নেয় তিথিকে মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু খেয়ে ওকে স্বান্তনা দিতে থাকে। কিন্তু আকাশের আজ খুব ভয় করছে তিথির কিছু হয়ে যাবে নাতো)
!
–আকাশ তুমি আমাকে ভুলে যাবে নাতো? আমার মৃত্যু অব্দি তুমি আমার সাথ দেবে তো?
(অত্যাধিক পরিমাণে হাফিয়ে কথাগুলো বলছে তিথি।
অতিরিক্ত পরিমাণ কান্নাকাটি করা এবং চিন্তা করার জন্যে ওর এই অবস্থা নিস্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে
আছে আকাশের দিকে… চোখের থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে কিন্তু ওর ভীষণ
ব্যাথায় কাতরাচ্ছে বিছানায়। ছটফট করছে)
!
– একটু শান্ত হও, তোমার কিছু হবে না। এমন কথা বলো না তুমি আমাকে ছেড়ে কোথায় যাবে?
আমি যেতে দেবো না তোমাকে, ভাবলে কি করে! তোমার কিছু হবে না, কিছু হতেই দিব না তিথি।
( তিথি যখনই বলছে ওকে ছেড়ে চলে যাবে চোখ ফেটে জল আসছে আকাশের।
সে কেঁদে ফেলেছে কি করবে কিছু বুঝতে পারছেনা)
!
— তিথির সব যেন কেমন ঝাপসা ঝাপসা লাগছে চোখের সামনে অন্ধকার নেমে
এসেছে আর চোখ খোলা রাখতে পারছে না. শুধু আধো জ্ঞানে ডান হাতটা তুলে
আকাশে কিছু বোঝাতে চাইছে। ও ওর ডাইরি খুঁজে দিতে চায় আকাশকে।
যদি আর কখনো আকাশের সাথে ওর কথা না হয়, বা দেখা না হয়। ও মরে যায় আর না।
আর কিছু বলতে পারছে না শরীরটা নিস্তজ হয়ে আসছে।
চোখ বুজে আসছে ওর আর খোলা রাখতে পারছে না।
!
–তিথি চোখ খোলো, তিথি চোখ খোলো না, দেখো এটা ইয়ার্কি মারার সময় নয় কিন্তু।
আমার ভীষণ ভয় করছে তিথি……
তিথি প্লিজ (আকাশ কাঁদছে আর পারছেনা সহ করতে।
নিজের থেকেও খুব ভালোবেসে ফেলেছে তিথিকে। নিস্তব্ধ দেহটা পড়ে রয়েছে আকাশের সামনে।
মুখে কথা সরছে না, দেখে ভয়ে আতঙ্কে শেষ হয়ে যাচ্ছে আকাশ।
শুধু উপরআলার কাছে একটাই প্রার্থনা করছে আমাকে নিয়ে নাও তবুও আমার থেকে আমার
তিথিকে ফিরিয়ে দাও। আমার তিথিকে সুস্থ করে দাও।)
!
–এমন সময় নিচে এম্বুলেসের শব্দ হয়। ওরা সবাই উপরে এসে সবাই মিলে তিথিকে এম্বুলেন্সে তোলা হলো।
সবারই আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে তিথি,
মনে হচ্ছে কোন দূর থেকে ওরা ওকে ডাকছে। আকাশ এর কান্নার আওয়াজ শুনতে পারছে
কিন্তু তিথি চোখ খুলতে পারছেনা।
তিথিকে এম্বুলেন্সে তোলা হলো এখান থেকে নার্সিংহোম ১৫ মিনিটের রাস্তা. গাড়িতে উঠে যায়….
অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে তিথিকে। ওর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল,
আকাশ ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বসে আছে। আর আল্লাহর কাছে কেবল প্রার্থনা করে যাচ্ছে।
কি হবে কিছু বুঝতে পারছেনা। আকাশ শুসেছে মেয়েরা সন্তান প্রসব
করতে গিয়েও মারা যায়। তার ওপর তিথির বয়স অনেক কম।
তিথি ফিরে আসবে তো ওর কাছে। চিন্তার মধ্যে হসপিটালে পৌঁছায়।
!
— ডক্টর তিথির অবস্থা দেখে চমকে ওঠে, এবং ওর অলরেডি জল ভেঙে গেছে।
ডক্টর ওকে দেখেই বুঝতে পারে।
!
–আমি বারণ করেছিলাম এই সময়কে বেবি টাকে না নিতে এইটুকু বয়সে তার ওপর মারাত্মক…
(ডক্টর আর কিছু না বলে তিথিকে ওটিতে নিয়ে যাওয়ার অর্ডার দিয়ে আকাশকে
ফর্মালিটিস বুঝিয়ে দিতে লাগলেন। এবং কিছুটা রেগে গেলেন, ওর উপর।
এতটা দেরিতে তিথিকে এখানে আনার জন্য।
উনার মতে উনার মতে তিথির যা কন্ডিশন অপারেশন থিয়েটারে কোন কিছু ঘটতে পারে।)
!
— দেখুন মিস্টার আকাশ, তিথির কন্ডিশণ ভালো নয় আপনাকে বন্ডে সাইন করতে হবে,
যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার কিছু হবে না।(ডক্টর)
!
— আপনি ওকে সুস্থ করে দেন না ডক্টর আমার তিথিকে ভালো করে দিন,
আমি আপনার পায়ে পড়ছি( আকাশের আজ কোন দিকে খেয়াল নেই সে ডক্টরের
পা জড়িয়ে ধরে. তিথির কাকাও কাঁদছে। আরোও কষ্ট হচ্ছে। আকাশের করুণ অবস্থা
দেখে উনি আকাশকে সামলে নেয় ফর্মালিটিজ কমপ্লিট হয়েছে ওটির লাল আলো জ্বলছে।
আকাশ পাথর হয়ে সামনে একটি চেয়ারে বসে আছে।)
!
— অপরদিকে যখন সকালে তিথি বুঝতে পারছিল ওর শরীরে যথেষ্ট খারাপ।
তখন নন্দিনী কাছে একটা টেক্সট করেছিল। নন্দিনী খবরটা পাওয়ামাত্র বেরিয়ে
পড়েছে আকাশের ফুফু শুধু আল্লাহর নাম জপ করছে। আকাশের বাবা এতটা স্থির হয়ে গেছে যে
উনার মুখ দেখে বুঝার ক্ষমতা নেই উনার। মনে এখন কি চলছে
কেবল এই নন্দিনী বুঝতে পারছে।নন্দিনী কেঁদে চলেছে, যে মেয়েটাকে তারা কখনো দেখেনি সে
মেয়েটির মায়াতে আজ তারা চোখের জল ফেলছে। ড্রাইভারকে বারবার গাড়ি জোরে চালাতে বলছেন।
চিন্তা হচ্ছে আকাশের জন্য। তিথি যে কথা
এতদিন কাউকে বলে উঠতে পারেনি সে কথা নন্দিনী এর কাছে বলেছিল।
তিথির কাছে সত্যি হতে বেশি সময় নেই।
!
— ওটি চলছে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে। আকাশ আর পারছেনা স্থির থাকতে। ওর নাক, কান গরম হয়ে উঠেছে। মাথার ভেতর ঝিমঝিম করছে। তিথির বাবাকে খবর দেওয়া হয়েছিল সেও আসছেন।
!
— নন্দিনী আগে তিথির বাড়িতে গিয়েছিল এবং সেখানে ওমেন্স জানিয়েছেন
তিথিকে নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি ফিরিয়ে নার্সিংহোম এর দিকে রওনা হয়।
কিছু সময়ের মধ্যে ওরা সেখানে পৌঁছে যায়। প্রেসক্রিপশনে জানতে পারে ওটি চলছে।
ওটির দিকোই ছুটে আসছিল নন্দিনী। কিছু দেখে থমকে দাঁড়ালো।
– আকাশ ,,,,, আজ এতগুলো মাস পর নন্দিনী আকাশকে দেখলো। চোখ ফেটে জল গড়িয়ে পড়ার অবস্থা।
নন্দিনী ছুটে গেল আকাশের কাছে।
!
–বোন কেমন আছে? কখন ওটিতে নেওয়া হয়েছে? ( নন্দিনী)
!
— চেনা গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে তাকায় আঁকাশ এ যে নন্দিনী। পিছনে ওর বাবা ফুফু। কিছু বুঝতে পারছে না আকাশ, ওরা খবর পেলে কিভাবে?
!
— বাবা বলে বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আকাশ তার বাবার বুকে! আজ এতগুলো
মাস পর ওর বাবা এবং তার চোখে দেখতে পেয়েছে।
নন্দিনীর দিকে আকাশ তাকাতে পারছে না, নন্দিনী ও তার থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে, ওটিনর
একদম সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। মিতা সংক্ষেপে তিথির সাথে তাদের যোগাযোগের প্রসঙ্গ টা
আজকে বুঝিয়ে বললো, সব শুনে ও ধপ করে বসে পড়লো চেয়ারে। নন্দিনী এবার ওর
পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ওর কাঁধে হাত রাখল।
!
— সব ঠিক হয়ে যাবে আকাশ দেখে নিও তোমার আর তিথির একটা খুব সুন্দর বেবি হবে।
জানো আমি ওই পাগলীটা কে বলেছি এবার তুমি আর আমাদের ছোট পুচকু টাকে বাড়িতে ফিরবে।
আমাদের বাড়িতে নতুন অতিথি আসছে। আর দূরে থেকে বাবা আর ফুফুকে দুঃখ দিও না প্লিজ,
— আকাশ নন্দিনীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে এ কোন নন্দিনীকে দেখছে এর সাথে আগের নন্দিনীর
এতোটুকু মিল নেই।
!
–এগুলো তুমি কী বলছো? (নন্দিনীকেআকাশ জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে আছে নন্দিনীর মুখের দিকে)
!
-হ্যা আকাশ আমি বলছি! ‘এই কয়টা মাস অনেক কিছু ঘটে গেছে জানো আমার জীবনে।
বোন বাড়িতে এলে আমার একটা সঙ্গী হবে আমার ওকে নিয়ে কোন সমস্যা নেই।
আমি সব ওকে দিয়ে দেবো। শুধু তোমরা বাড়ি ফিরে চলো। (কথা আটকে যায় নন্দিনীর)
!
–ওটির আলো নিভেছে একজন নার্স একটা ছোট্ট বাচ্চা কে নিয়ে বাইরে এল।
!
— মিষ্টি আনুন ! মেয়ে হয়েছে আপনার। দেখুন কত মিষ্টি (নার্স)
!
— নন্দিনী ছুটে যায় বাচ্চাটার কাছে দেখে সত্যিই কত মিষ্টি এই বাচ্চাটা।
নন্দিনীর নিজেও যেন মাতৃত্বের স্বাদ অনুভব করল। আবার ভেতরে চলে গেল বাচ্চাটা কে নিয়ে।
!
— কংগ্রাচুলেশন আকাশ!( ছল ছল চোখে আকাশের দিকে তাকায় নন্দিনী)
!
–এরপর ডক্টর বাইরে বেরিয়ে এলেন, তার চোখে-মুখে চিন্তা. আকাশ ভয় পেয়ে গেল.
!
— আমার তিথি কেমন আছে? আমার তিথি বেঁচে আছে তো? ডক্টর বলুন না আমার তিথি ভালো আছে তো?( আকাশের মুখের দিকে তাকায় অন্তত গম্ভীরভাবে বললো)
!
— তুমি কি জানতে তিথির আরো কিছু প্রবলেম ছিল? আমার মনে হয় না তুমি জানো( ডক্টর)
!
–আকাশ ভয় পেয়ে যায়, আরো কিছু তিথিকি আমার থেকে কিছু লুকিয়ে।(মনে মনে ভাবতে থাকে আকাশ)
!
–তিথির ছোটবেলা একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল,শিড়ি থেকে গড়িয়ে নিচে পড়ে গিয়েছিল।
মাথার পিছনে আঘাত লেগেছিল, সেই সময় কিছু বুঝা যায়নি।
তবে যত বয়স বাড়ে মাথার পিছনে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করেছিল।
এবং এক পর্যায়ে এই জমাট বাঁধা রক্ত ধীরে ধীরে ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে।
ওর লাস্ট স্টেজ চলছিল। আমি ওকে বারণ করেছিলাম টেনশন না করতে তাহলে ওর অবস্থা
আরো খারাপ হবে। কিন্তু ও শুনল না আমার কথা! নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনল।
আর ৭২ ঘন্টা না কাটলে কিছু বলতে পারব না উপরওয়ালার কাছে প্রার্থনা করো( ডক্টর চলে যায়)
!
— কান্নায় ভেঙে পড়ে আকাশ নিজের কানে বিশ্বাস করতে পারছে না,
মাথার ভিতর ঝিমঝিম করছে না আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না আকাশ।
সবকিছু অন্ধকার হয়ে আছে, ধপ করে পড়ে যায় আকাশ, নন্দিনী ও মিতা ও
আকাশের বাবা সবাই ছুটে আসে ওর কাছে চোখে জলের ছিটা দেওয়া হয়।
অতি কষ্টে জ্ঞান ফেরে ওর।
!.
— গাড়ি নিয়ে দ্রুত গতিতে বাড়ির দিকে বেরিয়ে যায়।
সবকিছু এত দ্রুত ঘটছে যা ভাবার সময় নেই কেউ পাচ্ছে না।
বাড়িতে এসে তাড়াতাড়ি তিথির ঘরে যায় ঠিক সেই স্থান থেকেই তিথি সারা করেছিল সে
জায়গাটায় কিছু খুঁজতে থাকে। একটা ডায়রি সাথে প্রায় আরো একটি ঘরের চাবি পায়।
আকাশের বুঝতে বাকি থাকেনা এটা কোন ঘরের চাবি! ডায়রিটা খুলে পরতে শুরু করে……….
!
আকাশ তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি। সেই যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম সেদিন থেকে।
তোমাকে পাওয়ার একটা ভীষণ জেদ চেপে ছিল আমার।
যেন অর্থ থাকলে কেউ সুখি হয়না আমার ক্ষেত্রেও তাই ঘটল।
তোমাকে জোর করে পেতে চাইলাম।
যখন তুমি আমার সামনে নন্দিনীর কথা বলতে ভীষণ কষ্ট হতো।
ভীষণ রাগ মনে হতো। মনে হয়নিজেকে শেষ করে দেই।
কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছিলাম ওই উপরে কেউ একজন বসে আছে।
যে আমার সমস্ত দোষের হিসাব রাখছে। আমার মৃত্যুটাকেই দেখ,
যখন তোমাকে পেলাম, যখন তোমার ভালোবাসা পেলাম ,
তখন আমার হাতে আর সময় নেই। উপরওয়ালা আমাকে তার কাছে ডেকে নিচ্ছে।
তোমার সঙ্গে একটা ছোট্ট সংসার বাঁধার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু পারলাম না
সেই তোমাকে বিদায় জানাতে হবে। তবে তুমি আমার সন্তানকে মানুষ করবে
তো আকাশ? তুমি আমার ভালোবাসাকে ভালবাসলে আমি ওর মধ্যে বেঁচে থাকবো।
আমি ওর মধ্যে দিয়ে তোমার ভালোবাসা পাবো।
— আর পড়তে পারছে না আকাশ, চোখ দিয়ে. শুধুই জল গড়িয়ে পড়া ছাড়া আর কিছু করার নেই।ডাইরিটার একেবারে শেষ পাতা এবার আকাশ পড়লো।
!
— আমি জানি তুমি যখন এই ডায়রিটা পড়বে তখন আমি নাও থাকতে পারি।
আমি জানি তুমি এখন কাঁদছো। কাঁদবে না তুমি, যখন আমি থাকবো
না তখন তুমি ঐ আকাশের দিকে তাকাবে তুমি তোমার তিথিকে দেখতে পাবে।
আর হ্যাঁ আমার পুচকু টাকে কিন্তু মানুষের মত মানুষ তৈরি করবে। আমার মত
ওর জীবনে ভালবাসার অভাব আসতে দিও না। আর একটা দিথি তৈরি করো না তোমরা।
তুমি আর আপু ওকে ভালোবেসে ভরিয়ে তোলো।
আর পাশের ঘরটা খুলে দেখ এবার। ওই ঘরে যা আছে সব আমার পচকুর।
আর দশটা চিঠি আছে ওকে ওর পাঁচ বছরের জন্মদিন থেকে প্রত্যেকটা জন্মদিনে একটা করে চিঠি দিও।
!
,–আকাশ এতদিনে পাশের ঘরটা খুলে, এমন কোন খেলনা কিংবা টেডি বিয়ার নেই
যেটা ওর ঘরে নেই! ঘরটা এত সুন্দর করে সাজানো, আকাশের কান্নার তীব্রতা বেড়ে
চলেছে। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না আবার ছুটে হসপিটালে।
!
–এখনো তিথিে জ্ঞান ফেরেনি। দিনটা পার হয়ে গেছে, প্রায় 25 ঘন্টা কেটে গেছে সবাই মুখ নিচু
করে প্রার্থনা করছে তিথি বেঁচে ওঠার জন্য। নন্দিনী কাল থেকে বাচ্চাদের কাছে রয়েছে।
এমন সময় নার্স এসে খবর দেয় তিথির জ্ঞান ফিরেছে। আকাশ ছুটে আই সি ইউতে
ঢোকে, দুর্বল শীর্ণকায় একটা দেহ পড়ে আছে।
সে এসে তিথির পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
!
–এতো বড় ছলনা টা আমার সাথে করতে পারলে। আমার সাথে একবারও জানালে না।
আজ যদি তোমার কিছু হতো ( কান্না করা গলায় বললো আকাশ)
!
–আমাকে ক্ষমা করো আকাশ তোমার আমার পথ চলা এতোটুকুই,
( আদ্র গলায় আকাশকে কতগুলো বলছে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে)
!
–আকাশ তিথিকে বুকে জড়িয়ে ধরে, নন্দিনী বাইরে থেকে সব দেখছে এবং শুনছিল।
মনে মনে ভাবছে কত ভালোবাসে ওরা একের উপরকে। নন্দিনী এবার ভেতরে আসে।
!
— আকাশ এখনো একটা কাজ বাকি রয়ে গেল আমার বোনটাকে স্ত্রীর মর্যাদা দাও
তোমাদের এই পবিত্র ভালবাসাকে আমি কখনো অবৈধ তকমা লাগাতে দিতে চাইনা
( বলেই আকাশের হাতটা নিজের বুকে জরিয়ে নেয়)
!
— আকাশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নন্দিনীর মুখের দিকে।
তিথির মনের মধ্যে হাজার ও বেলুন উড়ছে…..
আজ ও আকাশের পরিণীতা আকাশের অর্ধাঙ্গিনী খুব ভালো লাগছে নন্দিনী।
নন্দিনীও কাদছে তিথি ইশারায় নন্দিনীকে ডাকে।নন্দিনী এগিয়ে আসে,
তিথি নন্দিনীর হাতটা আকাশের হাতে তুলে দেয়।
!.–
— কিন্তু এরপর নন্দিনী কোথাও যেন বেরিয়ে যায়। আকাশ আর তিথি
একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের ভাষা আজ নিস্তব্ধতায় ডুবে গেছে। নন্দিনী ছোট্ট একটা বাচ্চাকে নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করে।
!
— তিথি তোমার মেয়ে হয়েছে, ঠিক তোমার মতো সুন্দরী হয়েছে।
+ নন্দিনী মুখে একটু হাসি এনে কথাগুলো বলার চেষ্টা করে)
!
–নন্দিনী নিজের দুহাত বাড়িয়ে দেয় তার মেয়ের দিকে। অতিকষ্টে বাচ্চাটার ছোট্ট হাত ধোয়ার চেষ্টা করে। তারপর নন্দিনীর উদ্দেশ্য বলে।
!
–আমার ভালোবাসা আর আমার পুচকু কে তোমার দায়িত্বে রেখে যাচ্ছি আপু. আগলে রেখো কিন্তু আমার আকাশে অনেক ভালোবাসো, (তিথি)
!
–এরপর হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তিথির…..
!
–আমার আর সময় নেই ভালো….(তিথি কথাটা শেষ না করতেই দুচোখ বন্ধ করে ফেলে। আর বলতে পারেনা তিথি। আকাশ টেনে তুলে ওর দেহটাকে ওর বুকে টেনে ধরে। কান্নায় ভেঙে পড়ে আকাশ। নন্দিনীও ডুকরে কেঁদে উঠে।
!
— আমি জানি তুমি মজা করছ…… এমন মজা করতে নেই তিথি, দেখ আমি বলছি আমি তোমায় খুব ভালোবাসি , তুমি বলবে না রাগ করছো নাকি আমার উপর, তিথি আমার ভয় হয় খুব। শুনো আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি আর কখনো তোমাকে কাঁদাবো না তোমায়, সবসময় বুকে আগলে রাখব। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো কিভাবে( পাগলের মত করতে থাকে আকাশ, তিথি ওকে ছেড়ে চলে গেছে সাইকো লাভার, আজ সত্যিই ওকে মুক্তি দিল।
!
— তিথির বাবা শেষ মুহূর্ত আসলেও জীবিত অবস্থায় মেয়েকে দেখতে পায়নি সে। ডক্টর এসে তিথিকে নিয়ে যায়, আকাশ প্রায় পাগল হওয়ার মতো।
–কেটে গেছে পাঁচটা বছর ছোট্ট মেঘা এখন পাঁচ বছরের। তার বাবা মা তাকে খুব ভালোবাসে। আধো আলতো গলায় বাবা মা বলে যখন ডাকে মেঘা নন্দিনী তখন ভারি মজা পায়। আজ আবার সেই ছোট্ট পরীর জন্মদিন। বাড়িতে কত আয়োজন করেছে। কত লোক৷ এসেছে। তার দাদা-দাদী এসেছে,তিথির ও কাকা এসেছে, নন্দিনীর বাড়ির লোক আবারও সবাই খুশিতে আছে, মেয়ের সাথে সম্পর্ক। নন্দিনীর সবটাই এখন মেঘা কে নিয়ে ঘিরে।
!
–সোনা তোমার একটা গিফট আছে তোমার মামমাম তোমাকে কত গিফট দিয়ে গেছে। আর এটাও তোমার মামামের গিফ্ট, —- তিথির লেখা প্রথম চিঠির আকাশ তুলে দেয় মেঘা হাতে। নন্দিনীই মেঘাকে মামমাম ডাকা শিখিয়েছে। নন্দিনী কখনো চায়না, তিথি কেন তার মেয়ের ভালোবাসা থেকে বন্ঞ্চিত হোক।
!
— এভাবে বড় হতে থাকে মেঘা। ধীরে ধীরে তিথির সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারে। এখন মাঝেমধ্যেই মেঘা ছাদে দাঁড়িয়ে তার বাবার মতোই তার মামমাম এর সাথে কথা বলে। নন্দিনীও কখনো কখনো এইসব দেখে কেঁদে ফেলে। কিন্তু যখন আবার বাপ মেয়ে এক সাথে এসে তার ওপর হাজার খুনসুটি তখন আবার সব ভুলে যায় সে।
– হয়তো তিথিওয দূরে থেকে এসব দেখে খুশি হয়।
<>সমাপ্ত <>

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com