Breaking News

সাইকো লাভার । পর্ব -০৩



সাড়ে আটটা নাগাদ আকাশের ঘুম ভাঙলো। তিথি ঘরে নেই দরজাটাও লক করা,
দিনের আলোয় ঘরটা বড্ড সুন্দর লাগছে, পরিপাটি করে সাজানো।
আকাশ ভাবতে লাগলো কিভাবে এখান থেকে পালানো যায়।
বাবার কথা খুব মনে পড়ছে আকাশের, নন্দিনীর কথাও মনে পড়ছে।
আকাশ আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে যায়, চোখেমুখে জল ছিটায়।
একটা নতুন ব্রাশ রাখা ছিল, আকাশ দাঁত মেজে ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসে।
কাল রাতে ভীজে যাওয়ার পর তিথি হয়তো ওর ড্রেস চেঞ্জ করিয়েছে।
আকাশ ফ্রেশ হয়ে বিছানার উপর বসে থাকে। কিছুক্ষণ পর তিথি ঘরে এলো,
এবং আকাশের সামনে খাবার সার্ভ করার টেবিলটা রাখল।
আকাশ খাটের একটা কোনায় দুটো হাঁটুর ফাকে নিজের মাথা রেখে বসেছিল।
বড্ড অসহায় লাগছে নিজেকে ধিক্কার জন্মাচ্ছে নিজের উপর।
!
–আকাশ খাবার? (তিথি)
!
–আমি খাব না আমার ইচ্ছে করছেনা( আকাশ মাথা না তুলেই কথা বলল)
!
— আকাশ তোমাকে ওষুধ খেতে হবে,,, (তিথি)
!
–বললাম তো আমি খাব না। এত কেন জোর খাটাও তুমি (আকাশ)
!
— আকাশ তোমাকে ওষুধটা খেতে হবে আচ্ছা আসো আমি তোমাকে খাইয়ে দেই(তিথি)
!
( তিথি আকাশের আরেকটু কাছে সরে বসে…. এক টুকরো ব্রেড নিয়ে আকাশের মুখে তুলে দিতে যায়, আকাশ তিথির হাতটা শক্ত করে ধরে ব্রেডটা ফেলে দেয়।)
!
–আকাশ বড্ড বাড়াবাড়ি করছ তুমি…. কি ভাবছ তুমি এমন করলে আমি তোমাকে ছেড়ে দেবো? সে আশা ছেড়ে দাও। তুমি এখান থেকে বের হতে পারবে না।( তিথি)
!
— তিথি আমার স্ত্রী আছে, তুমি যা চায়ছো সেটা, কখনো তুমি পাবে না। আমার দাম্পত্য জীবনে তুমি এভাবে ঝড় তুলনা।( আকাশ)
!
–ও রিয়েলি! আমি তোমার দাম্পত্য জীবনে ঝড় তুলছি।
আর তুমি যে আমার মনে মধ্যে ঝড় তুলেছ তার কি হবে?
একটা কথা খুব ভালো করে শুনে এবং
ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে রাখো তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না।
আর আমি বাঁচতে চাই, আমি বাঁচতে চাই আকাশ তোমার সাথে বাঁচতে চাই।
তোমাকে যদি না পাই তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে ফেলব
(তিথি- আকাশের হাত দুটো শক্ত করে ধরে কথাগুলো বলতে থাকে, চোখের থেকে যেন আগুন ঝরছে ওর)
!
— তোমার যা খুশি করো, একটা কথা তুমিও জেনে রাখো।
আমার দেহে প্রাণ থাকতে তুমি কখনোই আমাকে পাবেনা।
আমি শুধুই নন্দিনীর আমার স্ত্রীকে ভালোবাসি (দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বলল আকাশ)
!
— তুমি আমাকে ভালোবাসো না তাইতো? তুমি তোমার স্ত্রীকে ভালোবাসো…. তুমি জীবিত থাকতে আমাকে গ্রহন করবে না? আমিও যে কারো কাছে হারতে শিখিনি আকাশ তোমাকে যদি আমি না পাই…… (কথাটা শেষ না করে ঘর থেকে ছিটকে বেরিয়ে যায় তিথি)
!
–কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগছিল ওকে। আকাশের কাল রাতের কথা মনে পড়ে যায়।
ওর হাত মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিল। ও নিজে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছিল।
সেই হাত নিয়ে তিথি আমার জন্য ব্রেকফাস্ট বানিয়েছিল আর আমি ওকে এতটা খারাপ ভাবে বললাম।
আমি বা কি করতে পারি? আমার স্ত্রী আমার বাবা তাদের কাছে যে আমার ফিরতে হবে।
কিন্তু মেয়েটা এমন ভাবে ছুটে গেল কোথায়?
যাক গে যেখানে গেছে যাক আমি কেন ভাববো ওর জন্য এত। ওকে হয় আমার।
কিন্তু আজ অব্দি নন্দিনী কখনো এমন ভাবে আমায় খাইয়ে দেয় নি,
আর এই মেয়ে আমার কেউ হয় না, তাও আমার জন্য এত চিন্তা করছে।
আমি ঠিক করলাম না তো। ওর সাথে এত খারাপ ব্যবহার করে,।
!
–অন্যদিকে আকাশের বাবা তার বন্ধু তাদের বাড়িতে এসেছে। সমস্ত রকম তদন্তে জেনে গেছে।
এবং একটি মিসিং ডায়েরি করে দেয়।
তারা আজ থেকে কাজে লাগবে এমন ভাবে আশস্ত করে গেছে।
কিন্তু বাবার মন ছেলের জন্য কেবল ব্যাকুল হয়ে রয়েছে।
যতক্ষণ না আকাশ তার সামনে আসে কোনোভাবে সে শান্তি পাচ্ছেনা।
!
–ইতিমধ্যে আকাশের পিসি তার ভাইয়ের জন্য চা বানিয়ে নিয়ে এসেছে।
এই কাজটা এতদিন নন্দিনী করত আজ তার বোন এনেছে দেখে আকাশের বাবা অবাক হয়েছেন।
পরে নন্দিনীর কথা জানতে চাওয়ায় তিনি বললেন।
— নন্দিনী নাকি সকালে কোথায় বেরিয়েছে……( অবাক হন আকাশের বাবা)
— এদিকে তিথি বেরিয়ে যাওয়ার পর আকাশ কাচ দিয়ে ঘেরা বেলকনি তার সামনে দাঁড়িয়ে
নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে। এমন সময় হঠাৎ এক বয়স্ক লোক ছুটে আসে এই ঘরে তিনি
হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন মারাত্মক অঘটন ঘটে গেছে তিথি!
–বৃদ্ধ লোকটির সাথে আকাশ ধীরপায়ে নিচে নেমে এলো, যা দেখল ওটা দেখে আকাশের পায়ের
তলার মাটি সরে যাওয়ার মত অবস্থা। কিচেনের ছুরি দিয়ে নিজের ডান হাত থেকে পাগলের মত ক্ষত
বিক্ষত করেছে তিথি। আকাশ খোঁড়াতে খোঁড়াতে তিথির কাছে দৌড়ে যায়, তিথি কো
বারবার করে ডেকেও কোনো সাড়া পায় না। চারপাশে রক্ত দিয়ে ভরা।
তিথির হাত দিয়েও রক্ত ঝরিয়ে পড়ছে।
–এলোমেলোভাবে ছুরি চালানোর জন্য হাতের শিরা কেটে গেছে…..
— না ডাক্তারকে ফোন করতে হবে আমাকে…. নাম্বার দিন, ও আমার ফোনটা তো আবার আমার কাছে নেই আপনি এখননি ডাক্তারকে ফোন করুন (আকাশ)
— হ্যাঁ বাবা এখনি করছি(বৃদ্ব লোকটি)
— আকাশ তিথিকে কোলে তুলে নিয়ে যে ঘরে আকাশ বন্ধি ছিল সে ঘরেই তিথিকে নিয়ে যায়। মেয়েটি অজ্ঞান, খুব আস্তে শ্বাস পড়ছে। আকাশ তিথিকে খাটে শুইয়ে দেয় এমন সময়ে।ওই লোকটি এসে খবর দেয় সে এ বাড়ির নিয়মিত ডাক্তার কে কল দিয়েছে।উনি আসছেন।
কিন্তু তিথির হাতের থেকে যে পরিমাণ রক্তপাত হচ্ছে, বেশি দেরি হলে সবশেষে বলে।
!
— আকাশ বৃদ্ব লোকটিকে ফ্রিজ থেকে বরফ নিয়ে আসতে এবং তুলো নিয়ে আসতে বলল। কাটা জায়গায় এই মুহূর্তে ব্যান্ডেজ করা না হলে। আকাশ আর ভাবতে পারছে না কিছু। বৃদ্ব লোকটি পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।
— আমাে তিথি দিদিমণি কি আর ফিরবে না চলে যাবে আমাদের ছেড়ে। (বৃদ্ব লোকটি)
— কি ভুলভাল বলছেন আপনি তিথি কোথাও যাবে না আর কিছু হবেনা( ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে আকাশ)
(–খুব কষ্ট হচ্ছে ওর জন্য তিথির জন্য। তিথির হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে আকাশ। তবে রক্ত বন্ধ হয়নি খুব ভয় করছে এবার। ডাক্তারি বা কেন আসছে না এখনো।)
( এভাবে কিছুটা সময় কেটে যায় বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছে তিথি….
হঠাৎ দরজায় নক করার শব্দ প্রাণ ফিরে পায় দুটি মানুষের মধ্যে।বৃদ্ব মানুষটি ছুটে দরজা খুলে দেন।
এবং মিসেস রিনা খাতুন তিথিররুমে নিয়ে আসে।
ডাক্তার দেখে চমকে উঠেন পালস রেট খুব কম।
অনেকটা ব্লাড বেরিয়ে গেছে উনি তৎপরতার সঙ্গে তিথির চিকিৎসা শুরু করেন।
এমনটা করেছে শুনেছে তিনি ভেবেছিলেন যদি রক্ত দিতে লাগে তার জন্য যা
কিছু লাগে তা সবই নিয়ে এসেছেন।কেবল উনি রক্ত নিয়ে আসেন নি। কিন্তু এখন তিথির যা
অবস্থা তিনি অবজার্ভ করছে। তাতে তিথিকে ইমিডিয়েটলি রক্ত দিতে হবে।)
!
–উনি উনার সাথে এক নার্স কে সাথে নিয়ে এসেছে। তাকে ব্লাড ব্যাংকে ফোন
করতে বলেন তবে সেক্ষেত্রেও একটা সমস্যা দেখা যায়। তিথির ব্লাড গ্রুপ নেগেপিভ।
এই মুহূর্তে কোন ও নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত না পাওয়ায় নার্সটি ম্যাডামের কাছে এসে ভয় পোষণ করে।
এদিকে তার অবস্থা আরো খারাপ এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এসবের মধ্যে ভাল রয়েছে একটা।
আকাশের ব্লাড গ্রুপ আর তিথির ব্লাড গ্রুপ এক হওয়্য় আকাশ তিথিকে রক্ত দিতে প্রস্তুত হয়।
!
–কেটে গেছে বেশ কিছুক্ষণ, বিকাল হয়ে গেছে তবে তিথি এখনও জ্ঞান ফেরেনি।
তিথির কোন ইমপ্রুভ হচ্ছে না, সেটাই এখন টেনশনের।
আকাশে তিথির এমন অবস্থা চোখে দেখতে পারছে না।
বাইরের কাচের জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখের থেকে ক্রমাগত জল পরছে।
তিথির জন্য খুবই কষ্ট হচ্ছে, আর যে বয়স্ক লোকটি ছিলেন,
তিনি তিথির দেখাশোনা করেন। তিথির বাবার দূর সম্পর্কের ভাই হয়,
সেক্ষেত্রে উনি তিথির কাকা হন। খুব ভালোবাসে উনি তিথিকে।
!
–এক ভাবে তিথির মাথার কাছে বসে আছে আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছে তিথি যেন খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়….. কিন্তু আকাশত সাহসী নয় তাই তিথির কাকার চোখের দৃষ্টি লুকিয়ে একভাবে জানালায় তাকিয়ে রয়েছে।
!
হঠাৎই তিথি একটু কেঁপে ওঠে, জড়ানো কন্ঠে পাখির মতো করে আকাশের খোঁজ করতে থাকে।
!
— মামুনির জ্ঞান ফিরেছে,শুনছো বাবা মামুনির জ্ঞান ফিরেছে, আসো এদিকে তোমায় ডাকছে।(তিথির কাকা)
!
–আকাশ ছুটেযায় তিথির কাছে, ওর মাথার কাছে বসে মধুর কন্ঠের তিথিকো ডাকে।
সম্পূর্ণ চোখ খুলতে পারে না তিথি, তবে যতটুকু উন্মোচন করে।
সেইটুকু দিয়েই আকাশ এর দিকে তাকিয়ে থাকে। তিথি এমন দৃষ্টি যেন আজ সেল বাধাচ্ছে আকাশের বুকে।
মুখে কিছু বলতে পারছে না তবে বুকে একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছে আকাশ।
তিথির কাকা অবস্থা কিছুটা বুঝতে পেরে সেখান থেকে চলে আসেন।
!
–তিথির দু চোখের কোনা দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে কিন্তু ছটফটে মেয়েটা আজ নিস্তব্ধ হয়ে গেছে…. কেবল চোখের কোনা দুটো ভিজে যাচ্ছে। আর আকাশ নিজেকে আটকে রাখতে পারে না তিথিকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠে আকাশ।
!
— কেন করলে এমন তিথি তুমি? তুমি জানো কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, কেন করলে এমন কেন (কাঁদতে কাঁদতে বলে আকাশ)
!
–তিথির আর কিছু বলার ক্ষমতা নেই কেবল আকাশের হিদয়ের উষ্ণতা এবং আকাশে হৃদয়ের প্রতি হৃৎপিণ্ড নিজেকে ভিজিয়ে নিচ্ছিল তিথি।আর আকাশ…….
!
–সে তিথিকে বুকে চেপে নিজের হৃদয়ের ব্যথাটাকে মুছে ফেলতে চাইছিল নিজের কাছে রাখতে চাই ছিল… এবং সময়ের কাটা আজ যেন সম্পূর্ণ থেমে গিয়ে এই মুহূর্তে অনুভব করছিল।
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com