সাইকো লাভার । পর্ব -০৭
এখন আর আকাশ তিথির৷ সাথে কথা বলে না। বাড়ি সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ হয়ে রয়েছে,
তবুও তিথি যেন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সে আকাশকে মুক্ত হতে দেবে না।
দুদিন হয়ে গেছে তবুও আকাশ তিথির সাথে কথা বলেনি। খেতে বসে খাচ্ছে না ঠিক করে,
ঘুমোচ্ছে না ঠিকভাবে,তিথি কিছু বুঝতে পারছে না। সেদিন রাত্রে ওরা একসাথে ডিনারে বসে ছিল,
তিথি খাবার সার্ভ করতে গেলে আকাশ খাবার রেখে উঠে চলে যায়,
তিথি ভীষণ কষ্ট পায় আকাশের এরকম ব্যবহারে। সেও খাবার ফেলে উঠে
গেলে তার কাকা তাকে বাধা দেয়।
!
— মা’রে ছেলেটাকে আর কষ্ট দিস না। ওকে ওর বাড়িতে ফিরতে দে। দেখ সবকিছু
জোর করে আদায় করা গেলও ভালোবাসা কিন্তু জোর করে পাওয়া যায়না।( তিথির কাকা)
!
— না কাকু আকাশ শুধু আমার… যত দিন বাঁচব আকাশ শুধু আমার হয়ে থাকবে(তিথি)
!
— তিথি মা ওর স্ত্রী আছে, (কাকা)
!
— তাতে কি হয়েছে! শুধুমাত্র আমার আকাশ চাই।
আর কিছু চাই না, তুমি খাও আমি আর আকাশ একসাথে খাব আকাশের ঘরে। (তিথি)
!
–তিথি শোন আমার কথা( তিথির কাকাবাবু)
!
–তুমি আর একটা কথা বলবে না কাকু। আকাশ আমার তাই ওর সাথে আমার যা ইচ্ছে আমি তাই করবো।( কথাটা বলেই তিথি খাবার সাজিয়ে নিয়ে ছুটল আকাশের ঘরে)
!
— কিন্তু তার শরীরটা কেমন যেন করছে, আকাশের ঘরে ঢুকে সে অবাক, আকাশ কাঁদছে।
!
–কি হয়েছে আকাশ?(তিথি)
!
–ডোন্ট কল মি আকাশ! গেট লস্ট! প্লিজ লিভ মি এলোন( আকাশ)
!
–আকাশ তোমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি(তিথি)
!
— কেমন নির্লজ্জ মেয়ে তুমি। তোমাকে আমি ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলছি আর তুমি আমায়
হেসে এসে খাবার খাওয়াতে এসেছো। তুমি একটি অন্তত বাচাল নোংরা মেয়ে,
না জানি আমার আগে আর কটা পুরুষের সাথে এমন করেছ, আচ্ছা তোমার বাবা-মা
তোমাকে ঠিক ভাবে জন্ম দিয়েছে তো। (আকাশ)
!
— আকাশ জাস্ট স্টপ! অনেক বলে নিয়েছো তুমি। আমাকে তুমি যা খুশি বল তবে আমার বাবা-মাকে এর মাঝে আনছো কেনো? তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে এতক্ষণে সে আর বেঁচে থাকত না (তিথি)
!
–আরে তোমার মত একটা মেয়ে ভালোবাসার কি মর্ম বুঝবে। তুমি শিখেছো কেবলই জেদ দেখাতে( আকাশ)
!
— আকাশ খাবারটা খেয়ে নাও(তিথি)
!
— বললাম তো খাব না (আকাশ তিথির হাত থেকে খাবার টা ছুড়ে ফেলে দেয়। তিথিকে একটা ধাক্কা মারে কিন্তু তিথি নিজেকে সামলে নেয়)
!
— কিন্তু ওর ভীষণ বমি পাচ্ছে ছোটে ওয়াশরুমে। আকাশ ভাবে এটা হয়তো আবার কোন
একটা নতুন নাটক আকাশ কে কাছে পাওয়ার জন্য। তাই সে তিথির সাথে যায় না, কিন্তু
কিছুক্ষন পর একটা শব্দ হয় এবার অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাকে যেতে হয়। গিয়ে দেখে তিথি পড়ে আছে।
কিছুটা ভয় পায় আর কিছুটা বিরক্ত বোধ করে আকাশ। ওর চোখেমুখে জল ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরায়।
মাথা ঘুরছে ওর একা হেঁটে আসতে পারবে না তিথি। আকাশের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলে সে
ওখানে রেখে চলে আসে। অনেক কষ্ট করে দেয়াল ধরে ধরে সে ঘরে আসে।
তিথি কিছুটা ভয় পায়, তাহলে কি আর বেশি সময় নেই। দুচোখ জল আসছে এরই মধ্যে তার
কাকা কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে ওপরে চলে আসে। তিথি তাকে বলে ডাক্তার ডাকার জন্য।
তার কাকা জানায় এত রাতে কোন ডাক্তারে আসবে না এখন ঘুমিয়ে পড়ো।
!
— কিন্তু তিথির ঘুম আসছে না…..
যে কথা সে সবার আড়ালে লুকিয়ে রেখেছে আজকে সেই কথাই সকলের সামনে আসতে চলেছে।
না, না এটা হতে পারে না আবার গা’টা গুলিয়ে ওঠে তিথির আবার ওয়াশরুমে যায়।
তবে আকাশকে আর আসতে বলে না, একাই যায়। আকাশ ঘুমাইনি সে জেগেফ আছে।
তিথি নেমে ওয়াশরুমে গেছে সেটাও সে লক্ষ্য করেছে।
!
–রাতে আরো দু একবার বমি হয়। কারোরই ঘুম হয়নি সারারাত।
আকাশ সোফায় আর তিথি খাটে শুয়ে ছিল।
ভোর বেলার এখন আকাশ ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো,
তিথি আস্তে আস্তে ওর কাছে যায় একটা চাদর নিয়ে ওর গায়ের ঢাকা দিয়ে সরে
আসতে যাচ্ছিল এমন সময় আকাশ দিতে হাতটা শক্ত করে ধরে।
!
— নন্দিনী আমায় ভুল বুঝোনা আমাকে একটু ভালোবাসো প্লিজ (ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নন্দিনীর নাম করেছে আকাশ)
!
— ছেড়ে যেও না প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না আমাকে অনেক ভালোবাসো( আকাশ)
!
— তিথি আস্তে আস্তে আকাশের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
সে জানে আকাশ নন্দীনিকোে ভালবাসে তবে সে এটাও জানে তার জন্য
আকাশের মনে একটু হলেও ভালোবাসা আছে। তিথি মনে মনে বলে আকাশ
আমি আমার মৃত্যু অব্দি তোমাকে এই কেবল বলবো ভালোবাসবো তোমায়।
আকাশ তোমাকে ভালোবাসবো, আই লাভ ইউ আকাশ, আই রিয়েলি লাভ ইউ।
!
— একটু ঘুম ভাঙতেই সে যখন অনুভব করল সে তার নন্দিনীকে নয় তিথিকে বুকে জড়িয়েছে।
আবার ও সে তিথিকে সরিয়ে দেয়। আকাশের এমন ব্যবহার তিথিকে খুব কষ্ট দিচ্ছে।
কিন্তু কিছু করার নেই। সে তিথিকে কষ্ট দিচ্ছে যাতে তাকে রাগের বশে এসে মুক্তি দেয়।
কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না, এতে অপমানিত হওয়ার পরও তিথি তার পিছু ছাড়ছে না।
আগের মতোই তার খেয়াল রাখছে। আকাশ তার ব্যবহারে যতই কঠিন হোক না
কেন, তিথিকে এভাবে অপমান করে তারও কষ্ট হচ্ছে।
হঠাৎই আবার তিথির মাথা ঘুরে পরে যায়। তবে এবার সে মাটিতে নয় আকাশের বুকের উপর পরে।
আকাশ তিথিকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়েছে।
তার চোখে মুখে স্পষ্ট দুর্বলতার ছাপ। আটটা নাগাদ ডাক্তার
আসেন তিথিকে ভালোভাবে পরীক্ষা করার পর তিনি যা বললেন তাতে সবাই অবাক।
!
— তিথি কনসিভ করেছে…. আকাশ ভয় পেয়ে যায়, তিথি লজ্জায় মাথা নিচু করে।
যাক সে যেটার ভয় পাচ্ছিল সেটি আপাতত নয়। ডাক্তার আর তিথির কাকু রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
!
— আকাশ আনন্দিত হবে না রাগ করবে বুঝে উঠতে পারছে না। তার যত দূর মনে আছে সে সঞ্জানে তিথির সাথে কিছু করেনি। এমন যাতে সে কনসিভ করতে পারে।
!
–তিথি সে রাতে কি হয়েছিল আমাদের মধ্যে,,,, (আকাশ) তিথি কোনো কথা বলে না
তিথি আমি তোমাকে কিছু বলেছি,,, (তিথি তখনো মাথা নিচু করে ডান
হাতে তার বাম হাত রেখে কচলে চলেছে) তিথি +ধমক দিয়ে ওঠে আকাশ)
!
— কি জানতে চাও তুমি বলো? এই বাচ্চার বাবা তুমি কিনা সেটা? হ্যাঁ সেদিন রাতে আমাদের মধ্যে অনেক কিছু হয়েছিল, তুমি আমাকে ছুঁয়েছো আমাকে ভালোবেসে নিজের করে নিয়েছিলে। (তিথি)
!
–“what the rubbish?? “(আকাশ)
!
— nothing meg…. You stil love this night (তিথি)
!
— তিথি বিশ্বাস করো আমাকে আমি যা করেছি আমি তার বিন্দুমাত্র জানিনা। সে রাতে আমার ভীষণ নেশা হয়ে গিয়েছিলো। নন্দিনীকে আমি দেখেছিলাম সেদিন তোমার মধ্যে, আমি নন্দিনীকে আদর করেছিলাম কিন্তু তুমি তো ছিলে কেন বাধা দিলে না আমাকে?(আকাশ)
!
— কেন না আমি সত্যি কথা বলতে বাধা দিতে চাইনি, আমি এটাই চেয়েছিলাম(তিথি)
!
— না তিথি তুমি ভুল করেছো। এই অনাগত সন্তানকে তুমি কি করবে? কোন পরিচয় মানুষ করবে তুমি? এই সন্তানকে এবং এই সমাজ তোমাকে কোন চোখে দেখবে একবার ভাবতে পারছ। তার থেকে ভালো এই সন্তানকে তুমি পৃথিবীতে আনার দরকার নেই তুমি অ্যাবসান করে নাও( আকাশ)
!
— ছিঃ আকাশ ছিঃ তুমি এতটা নিচ আমি ভাবতেও পারছিনা। এই সন্তানকে আমি জন্ম দেব তা যেকোন মূল্যেই হোক না কেন। (তিথি)
!
–দেখতে দেখতে কেটে গেছে ৬টি মাস না তিথি অ্যাবসান করেনি। আকাশের সঙ্গে তাঁর কথা এখন আর হয় না খুব একটা, তবে আকাশ এখন আর তিথির উপর রাগ করে নেই। খুব ইচ্ছে করে ছোট্ট পিচকু টাকো ঠিক কত বড় হয়েছে তা জানতে। কিন্তু সাহস পায় না যেদিন প্রথম তার আসার খবর সে পেয়েছিল সেদিন সে তাকে অস্বীকার করেছিল তাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। লজ্জা হয় তার নিজের প্রতি। তিথির পেটটা কিছুটা উঁচু হয়েছে। সেই থেকে মেয়ে টা একবারে শান্ত হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে একা একা তার অনাগত পিচকুর সাথে কথা বলে।
!
–আকাশটা দরজার আড়াল থেকে লক্ষ্য করে একা একা নিজের মনে মনে হাসে। ইচ্ছে হয় ছুটে গিয়ে তিথির পেটে কান রেখে অনুভব করতে কিন্তু পারে না। তিথি তাকে এখান থেকে মুক্তি ও দেয়নি আর তিথি তার সাথে কথা বলা বন্ধ করেছে।
!
— তিথির খুব ইচ্ছা করে আকাশকে কাছে টেনে নিতে। কিন্তু পারে না, আকাশের প্রতি তার ভীষণ অভিমান জন্মেছে যে কেনো কেনই বা হবে না বলুন তো। যে সন্তানটা আকাশের সবথেকে আদর হওয়ার ছিল, যার আসার খবর পেয়ে আকাশের আনন্দে আত্মহারা হওয়ার কথা ছিল, সে আকাশ কি বলল এই সন্তানকে পৃথিবীতে আনার দরকার নেই। আকাশ অন্যায় করেছে। এর কোন শাস্তি হয় না।
!
–তবে তিথির কিছু ব্যবহারের আকাশের অস্বাভাবিক লাগছে কিছু দিন ধরে। তিথি কি যেন লিখে। কত গিফট অর্ডার করে, সে গুলোকে আবার একটা ঘরের সুন্দর করে সাজিয়ে রাখে। এভাবে চলতে থাকে সবকিছু।
!
–প্রত্যেক মাসেই তিথি আকাশের বাড়িতে কিছু টাকা পাঠায় তার কাকার হাত দিয়ে, তবে…..
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com