এক প্রতিবাদী নারীর জীবন যুদ্ধের গল্প । পর্ব- ৪১
মৌরি মেহরাবকে কাঁপতে দেখে বলল, সোনা ভয় পাচ্ছ কেন?
তুমি না আমার সাহসী ছেলে?
এসো আমরা দেখে আসি তোমার ফুলি আন্টি চিৎকার করছে কেনো ।
মৌরি ছেলেকে নিয়ে নিচে এসে হতভম্ব হয়ে গেছে।
রেশমা রান্নাঘরে এককোণে বুকে হাত দিয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফ্লোরে কাপড় জাতীয় কিছুতে আগুন লেগেছে অন্যদিকে সাদ ও শান পা দিয়ে সেই আগুন নিভাতে ব্যস্ত হয়ে গেছে।
মৌরি দৌড়ে ওর বোনের কাছে এসে বোনকে জড়িয়ে ধরে।
রেশমা তখনো কাঁপছিল।
মৌরির বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না ওর বোনের ওড়নায় আগুন ধরে ছিল।
তাই ওর বোনটা ভয় পেয়েছে।
এদিকে শান মৌরিকে দেখে বললো সরি, তোমার অনুমতি ছাড়া আমরা রান্নাঘরে প্রবেশ করেছি।
কিন্তু এ ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না দূর থেকে ওর ওড়নাতে আগুন দেখে অন্য কিছু ভাবার সময় পায়নি।
মৌরি শানের খোঁচা মেরে কথা শুনে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।
কারণ ওদের রান্নাঘরে শানের পরিবারের ঢোকার নিষেধাজ্ঞা তো মৌরি নিজেই দিয়েছে।
তাছাড়া ,যে লোকটাকে মৌরি মোটেও এতদিন সহ্য করতে পারেনি ।
আজকে সেই রেশমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
শেষমেষ এটাও বুঝি হওয়ার ছিল।
মৌরি মনে মনে ভাবছে ,
নিয়তি আমাদের জীবনে কখন কি ঘটায় তা বুঝা বড় দায়।
এদিকে রেশমা বিরবির করে বলল, আপু আজকে ওনারা সময়মতো না এলে আমার শরীরে আগুন লেগে যেতো।
মৌরি বোনের কথা শুনেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।
শান সাদ রেশমার জীবন বাঁচিয়েছে এটা যেনো স্বাভাবিক ঘটনা মৌরির কাছে।
চেহারায় স্বাভাবিক দেখালেও শান ও সাদ চৌধুরী তার বোনের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে এসেছে।
এটা নিয়ে মনের মধ্যে তুমুল ঝড় উঠেছে।
আজকে ওর বোনের জীবন বাঁচিয়ে ওদের কাছে মৌরিকে কৃতজ্ঞ করে দিয়েছে ভাবা যায়?
কালকে যাদের চোখে মুখে ছিল অপরাধের চিহ্ন আজকে তাদের চোখে মুখে প্রবল আত্মবিশ্বাস দেখতে পাচ্ছে।
অন্যদিকে সাদ করুন দৃষ্টিতে রেশমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আজকে রেশমার কিছু হলে সাদ ঠিক থাকতে পারতো না।
রেশমা ওকে না ভালোবাসলে ও সাদ তো ওকে ভালোবেসেছে।
আর যতো দিন বেঁচে থাকবে ভালোবেসে যাবে।
ওর জীবন থাকতে ভালোবাসার মানুষটির ক্ষতি হবে তা সাদ স্বপ্নেও ভাবতে পারবে না।
আর আজকে কিনা সেই ভয়ংকর ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল।
কিছুক্ষণ আগের কথাটা ভাবতেই সাদের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছে।
রেশমার অবস্থা দেখে মৌরি যতোই স্বাভাবিক থাকুক না কেন।
সে যে মনে মনে বোনের অবস্থা দেখে ভয় পেয়েছে শানের তা বুঝতে বাকি নেই।
শান এটাও যানে মৌরি ভাঙতে রাজি তবে মঁচকাবে না ।
কিন্তু মৌরি কেনো বুঝতে পারছে না, শান ওর কাছের একজন হতে চায়।
শান চায় সব কষ্ট, দুঃখ ভয় ভালোলাগা হোক বা অপছন্দের তালিকা সব কিছু শুনার সঙ্গী হতে চায়।
নিজের ভুল এবং পাপের জন্য এ জীবনে মৌরি ও তার যে সময় হারিয়েছে তা ফেরত পাবে না ঠিক ।
তবে সামনে সব সময় আছে তা যেনো হয় ওদের সুখের সূচনা।
শান ইচ্ছে হয় অন্য সবার মতো স্ত্রী ও সন্তানের কাছে থাকার।
নিজের সবটুকু দিয়ে তাদের ভালো রাখার।
তবে শান জানে না ওর ইচ্ছে কখনো পূরণ করতে পারবে কিনা?
নাকি যতদিন বেঁচে থাকবে নিজের পাপের ফল স্বরুপ শাস্তি পেতে হবে।
কখনো স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে সুখের সংসার করতে পারবে না।
মৌরি কিছুক্ষণ আগে রেশমাকে নিয়ে রুমে এসেছে।
এসে থেকে জিজ্ঞেস করছে কিভাবে এমন অবস্থা হলো?
রেশমা তার বোনের প্রশ্ন শুনে চুপচাপ বসে আছে।
চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া কি আর বলবে!
সে তো বোনকে বলতে পারবে না , আপু সাদ আমাকে প্রেম নিবেদন করেছেন।
আমার তার প্রতি ভালোবাসা না থাকা সত্ত্বেও তার চোখের পানি আমার সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে।
আমার জন্য সাদের আকুলতা ও ছটফটানি দেখে আমার মনের এক কোনায় তার জন্য খারাপ লাগছে।
কারণ তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সে অন্যরকম।
শুধুমাত্র রোহানের প্রতি অবিচার করা হবে তা ভেবে ওনার কথা ভাবতে চায় না।
এবং তার পরিবারের জন্যেই আজকে তোমার জীবনে স্বামীর আদর,ভালোবাসা পাওনি।
স্বামী থাকতেও সন্তানকে পিতার পরিচয়ের বদলে দিতে হয়েছে দাদা শ্বশুড়ের পরিচয়।
একেই বাড়িতে তোমার সন্তানের বাবা থাকা সত্ত্বেও আমাদের ছেলে বাবার শূন্যতা অনুভব করছে।
আজকে তাদের জন্যেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
তারা যদি অতীতে তোমার প্রতি একটু ভালোবাসা দেখাতো তাহলে আজকে এমন হতো না।
এদিকে মৌরি বোনকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে বললো,দেখ কখনো ছোট খাটো কথা আপনজনের কাছে থেকে লুকাতে গিয়ে মনের উপর চাপ সৃষ্টি করে।
আমার বোন হয়ে তোর মনে কোনো বিষয় নিয়ে চাপ পরুক তা আমি চায় না।
আর না কখনো চায়বো।
আচ্ছা রেশমা, আমি আবার তোর উপরে রোহানকে চাপিয়ে দিচ্ছি না তো?
আমার কথা ভেবে বা ওদের উপকারের জন্য তুই এই বিয়েতে মত দিসনি তো?
যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে এই বিয়ে করতে হবে না।
কেউ উপকার করলে তার প্রতিদানে আমরা সারাজীবন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে যাবো।
যদি কখনো সময় আসে তাদের উপকার করার তখন সবার আগে এগিয়ে আসবো।
তবে উপকারিতা বদলে জীবন নিয়ে খেলাটা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়।
রেশমা মৌরির কথা শুনে চমকে উঠে।
তার বোন বুঝে গেছে তার মনে কিছু চলছে।
রেশমা কখনো বোনের কাছে থেকে কিছু লুকিয়ে রাখতে পারে না।
যেমন আজকেও তার বোন আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিচ্ছে।
কিন্তু আপু যা ভাবছে তা পুরোপুরি ঠিক নয়।
হ্যাঁ, একসময় ভাবতাম রোহান ও রিফাত ভাইয়ের উপকারের জন্য এই বিয়েতে রাজি হবো।
কিন্তু রোহান নিজের সবটুকু ভালোবাসা, কেয়ার,আদর যত্ন এবং ভালোবাসার মিষ্টি শাসনের মাধ্যমে আমার মনে পাকাপোক্ত ভাবে জায়গা করে নিয়েছে।
যা সাদের চোখের পানি দিয়ে টলানো যাবে না কোনোভাবে।
মৌরি রেশমাকে চুপ করে থাকতে দেখে বলল, তুই চিন্তা করিস না, আগামী কাল রোহান ভাইয়ের সাথে আমি কথা বলবো।
দরকার হলে বিয়ে ভেঙে দিবো তবুও তোর মনে কোনো চাপ পড়তে দিবো না।
রেশমা বোনের কথা শুনে চমকে উঠে বললো, আপু প্লিজ এমন কিছু করো না।
আমার মনে কোনো চাপ নেয়।
বরং ওনাকে না পেলেই আমার মনে চাপ সৃষ্টি হবে।
মৌরি বোনের কথা শুনে মুচকি হেসে বোনকে বুকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে বললো,সাদের ভালোবাসা যে তোর মনে দ্বিধা সৃষ্টি করছে তা আমি বুঝতে পারছি।
তাছাড়া রোহানকে নিয়ে তোর কোনো দ্বিধা আছে কিনা তাও জানার ছিল।
তাইতো তোর সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি।
কারণ আমি চায় না সাদের চোখের। কিছুদিনের ভালোবাসা দেখে রোহানের এতো বছরের শেষ হয়ে যাক।
তবে আজকে তর চোখে সাদের জন্য সহানুভূতি না থেকে ভালোবাসা থাকলে সাদের সাথেই তোর বিয়ে দিতাম।
কিছুদিন পর
আম্মা সারাদিন আজাইরা খেয়ে খেয়ে শরীরে তো ভালোই চর্বি জমিয়েছেন।
নাহলে সকাল হয়েছে সে কখন!
এখনো আপনার নাস্তা বানানো হয়নি ।
এমন করলে তো চলবে না বাফু।
ও আরেকটা কথা গতকাল আপনার ছেলে পাঁচটি গলদা চিংড়ি এনেছিল আমি এবং আপনার ছেলে রাতে চারটি খেয়েছিলাম।
সকালে খাওয়ার জন্য একটা রাখা হয়েছিল তা পাচ্ছি না কেন?
দোলা কাঁচুমাচু মুখ করে বললো, রাতে খাওয়ার জন্য করল্লা ভাজি ছাড়া আর কিছু ছিলো না।
আর আমি করল্লা ভাজি খেতে পারি না তো।
তাই চিংড়িটা দিয়ে ভাত খেয়েছি বৌমা।
কী?
বয়স কম হয়নি এখনও স্বাদ খোঁজেন?
আর আমার মাছ চুরি করে খাওয়ার সাহস হলো কেমনে?
সাধারণ একটা চিংড়ি মাছের লোভ সামলাতে পারলেন না?
ভালো কিছু দেখলেই জিভ লকলক করে তাই না?
এতো ছোট আপনার মন ছিঃ ছিঃ।
ভবিষ্যৎ এ আমার স্বামীর আনা কিছু না বলে খেলে জিহ্বার স্বাদ সারাজীবনের জন্য ঘুচি,,,,,,
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com