এক প্রতিবাদী নারীর জীবন যুদ্ধের গল্প । পর্ব- ৪৭
আমি কী এমন কিছু করেছি যাতে তুমি কষ্ট পেয়েছো?
রেশমা রোহানের কথা শুনে বললো, আপনি কিছু করেননি রোহান ভাই।
আমার সৌভাগ্য আপনার মতো জীবনসঙ্গী পেয়েছি।
রোহান রেশমার কথা শুনে কপট রাগ দেখিয়ে বলল,এই মেয়ে তুমি আমাকে আবারো ভাই বলছো?
কতবার আপনি এবং ভাই বলতে নিষেধ করেছি তা তোমার কানে যায় না?
তুমি কি চাও আমার বাচ্চারা আমায় মামা বলুক?
রেশমা ভাই বলে পড়েছে মহা বিপদে।
রোহান ক্ষেপে একচোট ঝেড়ে দিয়েছে।
নিজের বোকামির কারণে রেশমা লজ্জা পেয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে না বোঝায়।
এরপর দাঁত দিয়ে জিভ কামড়ে বললো,সরি সরি আর হবে না।
আসলে অনেক দিনের অভ্যাস তো।
এতো সহজে যেতে চায় না।
রোহান রেশমার কথা শুনে ওকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় ধাপাস
করে বিছানায় শুয়ে পড়ল।
রোহান নিচে পড়েছে আর রেশমা ওর ওপরে।
রোহান নিচে থেকে রেশমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।
আর রেশমা চুপচাপ রোহানের বুকের ওপরে মাথা রেখেছে।
কিছুক্ষণ সময় পিনপতন নিরবতায় কেটে গেছে।
এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর রোহান বলে,জান কি নিয়ে এতো চিন্তা করছো?
এতো সুন্দর জায়গাও তোমার মন ভালো করতে পারছে না।
নাকি আমাকে নিয়ে তোমার মনে কোনো চাপ পড়েছে?
যদি আমাকে নিয়ে কিছু হয় তা হলে এসো দু’জনে আলোচনা করে যে বিষয়টি নিয়ে তুমি চিন্তিত তা সর্ট আউট করে ফেলি।
তবুও মন খারাপ করে থেকো না জান ।
আমি এভাবে তোমাকে দেখতে পারছি না।
রেশমা রোহানের কথা শুনে বলল, আপনাকে… ও সরি সরি তোমাকে নিয়ে আমার মনে কোনো চাপ পড়ার প্রশ্নয় আসে না রোহান।
তুমি মানুষটা এতোটাই ভালো যে আমাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় কয়েক মাস হয়ে গেছে।
তবুও কখনো নিজের অধিকারের জন্য জোর করনি।
বা নিজের চাওয়া পাওয়ার হিসেব কষতে দেখিনি তোমায়।
মেহরাব আমাকে ছাড়া ঘুমাতে পারে না।
তাই ও তোমাদের বাড়িতে এমনকি এখানে এসেও আমার কাছে ঘুমাচ্ছে।
তুমি আমাকে একা কাছে পাচ্ছো না।
তবুও তোমাকে সেজন্য কখনো বিরক্তবোধ হতে দেখিনি।
তোমাকে স্বামী রূপে পেয়ে আমি ধন্য রোহান।
তুমি তোমার সবটুকু দিয়ে আমার হৃদয়কে জয় করে নিয়েছো।
আমার হৃদয়ে এখন শুধু তোমার রাজত্ব।
রোহান রেশমার কথা শুনে বললো, ইস্ জান এভাবে বলতে হয়?
বুকের বাম পাশে দেখিয়ে বললো, এখানে লাগে তো।
জান আর বাটার লাগাতে হবে না ।
আমি এমনিতেই তোমার আছি।
তাছাড়া একটা কথা সব সময় মনে রাখবে আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি না তোমার সব কিছুকেই ভালোবাসি।
এখন আসল কথা বলো তো?
তোমার মুখের রঙ ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে কি জন্য?
রেশমা রোহানের কথা শুনে বলে,জানো আমার না বিকাল থেকে কেমন অস্থির লাগছে।
কেমন দমবন্ধ হয়ে আসছে।
রোহান রেশমার কথা শুনে লাফ দিয়ে উঠে বললো, জান তাড়াতাড়ি উঠতো।
রিসিভসনে ফোন করে দেখি হোটেলে কোনো ডাঃ আছে কিনা?
যদি না থাকে তো তোমাকে নিয়ে এখানকার হসপিটালে যেতে হবে।
এই জান জলদি উঠো না।
রেশমা রোহানের কথা শুনে রেগে বললো,আরে আমি ঠিক আছি।
এজন্যই তোমাকে বলতে চায়নি।
রোহান রেশমার বলতে চায়নি কথা শুনে বলল,মারব এক চর,বদ মেয়ে কোথাকার।
আমাকে বলবে না তো কাকে বলবে?
রেশমা বুঝতে পারছে রোহান রেগে যাচ্ছে,এই ছেলে ওর ছোট খাটো ব্যাপারেও অস্থির হয়ে পড়ে।
তখন এর মাথায় কোনো কাজ করে না।
কথাটা ভেবে রেশমা আমতা আমতা করে বলল,আসলে সমস্যা শরীরে না মনে।
ইয়ে এ কথাটা হচ্ছে আপুর জন্য আমার অস্থির লাগছে।
মন বলছে আপু কোনো বিপদে পড়েছে ।
রেশমার কথা শুনে রোহান সুস্থির নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,সত্যিই তুমি ঠিক আছো তো,
আর ইউ সিউর?
রেশমা মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বুঝায়।
রোহান রেশমাকে কাছে টেনে বললো, আপু ছাড়া তোমার তো কখনও এতো দূরে আসা হয়নি।
তাই এমন লাগছে।
আপুর জন্য বেশি খারাপ লাগলে , একটা ফোন করলেই তো হয়।
রেশমা রোহানের কথা শুনে বলল, কতবার ফোন করেছি কিন্তু আপু ধরছে না তো?
কলিকে ফোন করলাম সে বললো, আপু হসপিটালের কাজে ঢাকা গিয়েছে।
আপু হয়তো ব্যস্ত আছে জান।
তাইতো তোমার ফোন ধরছে না।
দেখবে ফ্রি হলেই তোমাকে ফোন করবে
রোহান রেশমাকে কথাটা বলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
রেশমাও রোহানের বুকের সাথে লেপ্টে আছে।
সে সময়ে রোহানের ফোনে টুং করে শব্দ হয়।
রোহান এক হাতে রেশমাকে ধরে অন্য হাতে ফোন নেয় চেক করতে।
ফোনের দিকে তাকিয়ে রোহান শব্দ করে হেসে উঠলো।
হাসির শব্দ শুনে রেশমা রোহানের দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে ফেললো।
রোহান তা দেখে রেশমার নাকে চুমু দিয়ে বলল,দেখো ভাইয়া কি লেখেছে।
রেশমা উঁকি দিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে, রিফাত লেখেছে, আজকে মেহরাব আমার কাছে থাকবে।
আমরা আজ চুটিয়ে আড্ডা দিবো।
সেই সুযোগে তোরা অসহায় বুড়াবুড়ী
তোদের যতো ভালোবাসার উম্মাদনা আছে করে নে ।
রেশমা ম্যাসেজ দেখে নাক ছিটকে বললো, ছিঃ কি লজ্জাজনক কথা।
এই ভাইয়াকে তুমি আবার কিছু বলো নি তো?
রোহান রেশমাকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে নিজের শরীরের ভর ওর উপরে ছেড়ে দিয়ে বললো, আমি কিছু বলিনি তো জান।
তবে ভাইয়া হচ্ছে মুরুব্বি মানুষ তার কথা না শুনলে চলে তুমিই বল?
কথাটা বলে রেশমার ঠোঁট দখলে নিয়ে নেয়।
রেশমা মন আজকে রোহানকে বাঁধা দিতে নারাজ।
আজকে দুজনে ভালোবাসার সাগরে ডুবে যেতে ব্যাকুল হয়ে আছে।
রোহান রেশমার ঠোঁট ছেড়ে গলায় নেমে আসে।
ছোট ছোট চুমু দিয়ে তার ভালোবাসা জানান দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
আর রেশমা পরম আবেশে তা অনুভব করতে ব্যস্ত।
দুজনের অনুভূতি মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।
একসময় দুজন দুজনের মাঝে হারিয়ে যায়।
রেশমা অনেকক্ষণ ধরে হসপিটালে ভিতরে মৌরির কেবিনের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।
রিফাত আগেই এসে মৌরির অবস্থা তাড়াহুড়ো করে হসপিটালে থেকে বের হয়ে যায়।
রিফাত মৌরিকে ঢাকা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে গেছে।
মেহরাব এখনও জানে না তার মায়ের অবস্থার কথা।
তাকে রোহানের সাথে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে রেশমা বোনকে রেখে বাড়িতে যাবে না।
সেজন্য বোনের কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
অন্যদিকে ,মৌরিকে ডাক্তার দেখছে।
কিন্তু ওর শরীরের অবস্থা দেখে কোনো কূল কিনারা করতে পারছে না।
অনেকক্ষণ পর ডাঃ মৌরিকে দেখে কেবিনে থেকে বের হয়ে এলো।
ডাক্তারকে বের হতে দেখে রেশমা দৌড়ে তার কাছে গিয়ে বলল, আমার বোন এখন কেমন আছে?
ডাঃ রেশমার কথা শুনে অবাক হয়ে বলল,
কে আপনার বোন! ডাঃ মৌরি আমার বড় বোন কথাটা বলতে রেশমা সময় নিল না।
ডাঃ রেশমার দিকে তাকিয়ে বলল, গতকাল তো রোগীর সাথে আপনাকে দেখিনি?
ডাক্তারে কথা শুনে রেশমার বিরক্ত লাগছিল তবুও নিজেকে সামলে বললো, দেখুন আমি দার্জিলিং বেড়াতে গিয়েছিলাম।
খবর পেয়েই এমার্জেন্সি এসে পরেছি।
এবার তো বলুন আমার বোন কেমন আছে।
ডাঃ রেশমার কথা শুনে বললো, আসলে গতকাল তাকে যখন এখানে এনেছে
সে সময়ে তার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল বলার মতো না।
আমরা তার নাম ও পেশাটাই শুধু জানতে পেরেছিলাম সাথে থাকা কার্ডে থেকে।
কিন্তু তার সাথে কোনো গার্ডিয়ান না থাকায় হসপিটালের রোলস
মেনে তার চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হয়ে গেছে।
তার মাথার আঘাতে রক্তক্ষরণ বেশি হওয়াতে এখনো কিছু বলতে পারছি না।
আপনি চাইলে তার সাথে দেখা করতে পারেন।
রেশমা ডাঃ এর কথা শুনে দৌড়ে মৌরির কেবিনের দিকে গিয়ে থেমে যায়।
কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা ঠেলে কেবিনের মধ্যে ঢুকে।মৌরির সারা শরীরে ব্যান্ডিজ দেখে
ওর পা কাঁপছে শরীর ঘামছে ।
কোনদিন মৌরিকে এভাবে দেখতে হবে রেশমা তা ভাবেনি।
রেশমার দমবন্ধ হয়ে আসছে।
অন্যদিকে দিকে মৌরি রেশমাকে দেখে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।
আর চোখ দিয়ে বোনকে কাছে যেতে ইশারা করে।
রেশমা বোনের ইশারা বুঝতে পেরে কাছে যায়।
মৌরি অনেক কষ্টে মুখের মাকস খুলে ফিসফিসিয়ে বললো, মেহরাব কে দেখে রাখি…..
স।
কথাটা বলে চোখ বন্ধ করে নেয়।
রেশমা বোনকে চোখ বুঝতে দেখে আপু আপু বলে জোরে জোরে চিৎকার করে ডাকতে থাকে।
ওর জোরে জোরে ডাক শুনে ডাঃ কেবিনে আসে।
কেবিনে এসে মৌরির নিথর দেহ দেখে পাল্স চেক করে।
রেশমার দিকে তাকিয়ে বলল,সি ইজ নো মোর।
রেশমা ডাক্তারের কথা শুনে,একে একে মায়ের মৃত্যু, ছোট বোনের মৃত্যু।
খায়ের চৌধুরীর মৃত্যু চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছিল।সবার শেষে প্রিয় বোনের মুখটা ভেসে ওঠলে
গগনবিদারী চিৎকার দিলো।
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com