ভালোবাসি তাই । পর্ব -১৭
পুরো বাড়ি আজ ফাঁকা। কারণ সবাই কমিউনিটিসেন্টারে। বাড়িতে শুধু আমি, আপু আর সারা আছি।আমরা দু বোন বাড়ি থেকে সেজেই কমিউনিটিসেন্টারে যাবো। পার্লার থেকে মহিলারা এসে আমাদেরসাজিয়ে দিয়ে যাবে। আর সারার কাজ হলো আমাদেরদুই বোনকে রেডি করে কমিউনিটি সেন্টারে নিয়েযাওয়া। আজ বাড়ি ফাঁকা হওয়াতেও আমার ভালোলাগছে না। বিয়ের আগ পর্যন্ত তো সব কনেই তারফ্যামিলির সাথে থাকে আর আমাদের কপাল দেখোসবাই আমাদের বাড়িতে রেখে কমিউনিটি সেন্টারেচলে গেছে।
.
আমরা কমিউনিটি সেন্টারে গেলেই তোবিয়ে হয়ে যাবে। আর তো কারো সাথে থাকতে পারবোনা। সেই খেয়াল কারো নেই। অবশ্য এতে আম্মু আরবাবার কোনো দোষ নেই। সব অতিথিরা তোকমিউনিটি সেন্টারেই যাবে তখন যদি আমাদেরফ্যামিলির মানুষই না থাকে তাহলে সবাই তো খারাপভাববে। সেজন্যই সব আত্মীয় -স্বজনরা কমিউনিটি সেন্টারে। আমার আর আপুর ইচ্ছে ছিল আমাদেরবিয়েটা রাতে হবে তাই বাবা আর আম্মু সেইমতই সবকরেছে। ডিনারের পরই আমাদের বিয়ে হবে। এখনসন্ধ্যা হয় হয় তাই সবাই কমিউনিটি সেন্টারে।।
ভাবতে অবাক লাগছে এ বাড়ি ছেড়ে চিরদিনের জন্যপরের বাড়িতে গিয়ে আমায় থাকতে হবে। তাও যাকেআমি ভালোইবাসি না তার সাথে। আমি কি সত্যিভালো থাকবো ইরাম ভাইয়ার সাথে। ওনি কি ভালোথাকবেন আমার সাথে? এসব প্রশ্ন মাথায় আসলেইইচ্ছে করে এ বিয়েটাই করবো না। কিন্তু পরে আবারসবার খুশির চিন্তা মাথায় আসে। সবার সম্মানের চিন্তামাথায় আসে। বিয়েটা আমাকে করতেই হবে। হয়তোএই বিয়েটাই ছিল আমার ভাগ্যে লেখা। তাই তো এতচেষ্টা করেও আমি সায়ন ভাইয়াকে পেলাম না। এখনআর পাওয়ার চিন্তাও করি না। এখন ওনাকে পাওয়ারচিন্তা করাটাই যে আমার জন্য পাপ।।
পার্লারের মহিলারা আসতে আরো ঘন্টাখানেক দেরিহবে। আমার হাতে সায়ন ভাইয়ার পছন্দ করে দেওয়াসবুজ শাড়িটা। আমি এটা হাতে নিয়েই আয়নারসামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। কি অদ্ভুদ না? আমারভালোবাসার মানুষটার পছন্দ করা শাড়ি পরেই আমিঅন্যকারো সাথে নতুন সম্পর্কে জড়াবো। এর থেকেঅদ্ভুদ আরকিছু হয় নাকি। অবশ্য আমার জীবনটাইঅদ্ভুদ। সেখানে এটা তো কিছুই না। খুব কান্না পাচ্ছেআমার। আমার একটুও ইচ্ছে করছে না এই বিয়েটাকরতে। কিন্তু কি করবো আমিই তো সায়ন ভাইয়ারউপর জেদ করে এই বিয়েতে মত দিয়েছিলাম। এখনএভাবে বিয়ে থেকে কি সরে আসা যায়? যেখানে প্রায়অর্ধেক বিয়ে হয়েই গেছে।।
.
পার্লারের মহিলাদের যেহেতু আসতে দেরি হবে আমিভাবলাম ছাদ থেকে একটু ঘুরে আসি।
এই বাড়িতেছাদ আর বাগান আমার পছন্দের জায়গা।
দুইজায়গাতেই আমার নিজে হাতে লাগানো অনেক গাছআছে।
কমিউনিটি সেন্টারে চলে গেলে তো আর এইবাড়িতে আসা হবে না।
ওখান থেকেই শ্বশুড়বাড়ি চলেযাবো। এখনই সুযোগ ছাদ থেকে একটু ঘুরে আসার।
মহিলারা চলে আসলে আর যাওয়া হবে না। এই ভেবেআমি শাড়িটা রেখে ছাদে উঠে গেলাম। ছাদে এসেএকটা জোরে নিঃশ্বাস ফেললাম। ছাদে আসলেআমার মনটা এমনিই ভালো হয়ে যায়।
ছাদের মৃদুআলোতে আমার হাতে লাগানো গাছগুলোকে দেখাযাচ্ছে। হালকা বাতাস বইছে সেই বাতাসেই গাছগুলোমাথা দুলাচ্ছে। আমি গিয়ে ছাদের রেলিঙের উপরবসলাম।
জীবনটা সত্যিই অদ্ভুদ জিনিস। কখন কোনদিকে মোড় নিবে বলাই যায় না।
আমি সারাজীবনভেবেছি সায়ন ভাইয়াকে নিয়ে আর দেখো কার
সাথেবিয়ে হচ্ছে যাকে আমি কল্পনায় ও আনিনি তার সাথে।সত্যি জীবনের মত
অদ্ভুদ জিনিস বোধহয় আরকিছুনেই।
সৃষ্টিকর্তা কি একটা মিরাক্কেল করতে পারেন নাযাতে বিয়েটা বন্ধ হয়ে যায়।
আচ্ছা বিয়ে হওয়ার সময়যদি স্টার জলশার সিরিয়ালের মত
সব লাইট অফহয়ে গিয়ে কনে বদলে যায় তাহলে কেমন হবে?
.
আমারজন্য তো খুবই ভালো হবে। কিন্তু অন্য সবার জন্যসেটা ভালো হবে না। সত্যি মালিহা এত ডিপ্রেশনেথেকেও তোর মাথায় এতসব আজগুবি চিন্তা আসেকোথা থেকে? জীবনটা তো আর স্টার জলশারসিরিয়াল না। তাই ঐরকম কিছু হবেও না। ধুর কপালেযা আছে তাই হবে এসব ভেবে আর পাগল হতেপারবো না। আমার এখন কষ্ট হচ্ছে এ বাড়ি ছেড়ে চলেযাবো সেটা ভেবে। আচ্ছা আমি যদি বিয়ের পর এবাড়িতে আবার চলে আসি তাহলে কেমন হবে? সত্যিখুব ভালো হতো যদি এটা হতো কিন্তু এটা তো হবেনা।।
.
ছাদে বসে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। অন্যান্য বাড়িথেকে মৃদু আলো অন্ধকার রাস্তায় পরেছে। এই মৃদুআলোতে রাস্তাটা কেমন জানি অচেনা মনে হচ্ছে।আমি ঐদিকে তাকিয়ে বসে আছি তখনি কারোফোঁপানোর আওয়াজ কানে এলো। আমি যখন ছাদেএসেছি কাউকে তো ছাদে দেখিনি তাহলে কেফোঁপাচ্ছে। আমি একটু এগিয়ে যেতেই দেখলামছাদের অন্ধকার জায়গায় কারো অবয়ব দেখা যাচ্ছে।কিন্তু কে এটা? সবাই তো কমিউনিটি সেন্টারে। আমিআর একটু এগিয়ে যেতেই বুঝলাম এটা ভাইয়া। আমিঅবাক হয়ে বললাম,
– ভাইয়া তুই এই অন্ধকারে কি করছিস? তুইকমিউনিটি সেন্টারে যাস নি?
ভাইয়া ভয় পেয়ে আমার দিকে তাকালো। হয়তোবুঝতে পারেনি কেউ ছাদে আসবে। ভাইয়ার চোখদুটোলাল হয়ে ফুলে গেছে। অনেক্ষণ ধরে মানুষ কাঁদলেযেমন হয় ঠিক তেমন। আমাকে দেখেই ভাইয়াঅন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিল। ঐদিকে তাকিয়েই বলল,
.
– আমি যাইনি। কমিউনিটি সেন্টারে অন্যরা সবাই তোগেছে আমি গিয়ে আর কি করবো?
– তুই কাঁদছিস ভাইয়া?
– আমি কাঁদতে যাবো কেন? ছেলেদের কি কাঁদতেআছে নাকি?
– আমি জানি তুই কাঁদছিলি। তোর চোখদুটোই সে কথাবলছে।
– আমি কাঁদলে কাঁদছি তাতে তোর কি?
– আমাদের মিস করবি তাই না?
– তোদের মিস করতে যাবো কেন? তোর মত পেত্নী এইবাড়ি থেকে বিদেয় হলেই আমি বাঁচি। তোরা চলে গেলেআমি এই পুরো বাড়িতে রাজত্ব করবো বুঝেছিস।তোদের রুম দুটোও আমার হয়ে যাবে।
একথা বলতে বলতেই ভাইয়ার গলাটা ভারী হয়ে গেল।আমি বুঝতে পারলাম ভাইয়ার আমাদের জন্য মনখারাপ করছে। আমার ভাইয়ার কথা শুনে মনটাকেমন মোচড় দিয়ে উঠলো। আমার খুব কান্নাআসছিল। ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে আমিও কেঁদেদিলাম। ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার মাথায়হাত বুলালো।
– কাঁদছিস কেন তুই কি সারাজীবনের জন্য চলে যাবিনাকি? মন খারাপ করলে চলে আসবি আবার।
– হুমমম। আগের মত তো আর থাকতে পারবো না।
– তা ঠিক। কি করবি বল সবাইকেই তো পরের বাড়িযেতে হবে।
-হুমম।
.
– এই রে আমাকে তো কমিউনিটি সেন্টারে যেতে হবে।তুই এখনো রেডি হোসনি কেন? সর সর আমি গেলাম।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।
এটা বলেই ভাইয়া আমাকে ছেড়ে একপ্রকার পালিয়েগেল। আমি বুঝলাম আমার সামনে কাঁদতে ভাইয়ারইচ্ছে করছে না তাই লুকিয়ে কাঁদবে। আমিও চোখেরপানি মুছে নিয়ে নিচে যাবো তখনি সারা ছাদে এলো।
– কিরে তুই ছাদে আর আমি তোকে সারাবাড়ি খুঁজেবেড়াচ্ছি।
– কেন?
– কেন আবার পার্লার থেকে মহিলারা চলে এসেছেতাই?
– অহহ। আচ্ছা সাজলেই কি মনের ভেতরের সকল কষ্টলুকিয়ে যাবে? মুখে একটা মিথ্যে হাসি নিয়ে ঘুরা যেকতটা কষ্টকর সেটা আমি হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারিসারা। সাজের আড়ালে হয়তো আমার কষ্টটা দেখাযায় না কিন্তু তুই জানিস আমার মনের ভেতরটাপ্রতিনিয়ত জ্বলছে।
– আমি জানি সব মালিহা। সেজন্যই তোকে বলেছিনতুন করে শুরু কর কেন মিছেমিছি কষ্ট পাবি তুই?
– হুমম সেই চেষ্টাই তো এতদিন ধরে করে গেলামপারলাম কি? পারিনি সারা কিছুই পারিনি। আমার খুবকষ্ট হচ্ছে সারা। নিজের চোখের সামনে আমি সায়নভাইয়াকে আমার বড় বোনের হতে দেখবো। আমিসইতে পারবো তো সারা? এই কষ্টের থেকে তো আমারমরে যাওয়াই ভালো সারা। আমি পারবো না মেনেনিতে এতসব। আমার এখনই এত কষ্ট হচ্ছে তুই ভাবযখন আমার চোখের সামনে সায়ন ভাইয়া আর আপুরবিয়ে হবে আমি কিভাবে শক্ত থাকবো? আমারভেতরের সব কথা তো তখনই বেরিয়ে আসবে।
– তুই যদি চাস সবাই ভালো থাকুক তুই ঐরকম কিছুকরবি না মালিহা। তুই ভাবতে পারছিস আঙ্কেল-আন্টির মুখটা কতটা নিচু হয়ে যাবে সবার সামনে।
.
– হুমমম সবার ভালোর জন্য সবার সুখের জন্য সবারমুখে হাসি ফোটানোর জন্যই তো আমি প্রতিনিয়ত দগ্ধহচ্ছি। সায়ন ভাইয়া আমার অস্তিত্বে মিশে গেছে সারা।আর সে অস্তিত্বকেই আমি টেনে হিঁচড়ে নিজের থেকেবের করে দিতে চাইছি প্রতিনিয়ত। সবার ভালো থাকারকথা তো আমি ভাবলাম আমার ভালো থাকার কথা কিতোরা কেউ ভেবেছিস?
– মালিহা আমি কি তবে ভুল করলাম। বিশ্বাস করআমি চেয়েছিলাম তুই খুব ভালো থাক সেজন্যইবলেছি নতুন করে শুরু কর। সায়ন ভাইয়া তো তোরদিকে ফিরেও তাকায় না। তাই আমি তোকে একথাবলেছি। কিন্তু আমি একটুও বুঝতে পারিনি যে তুইসায়ন ভাইয়াকে এত ভালোবাসিস। আমি ভেবেছিলামতুই সায়ন ভাইয়ার থেকে বেরিয়ে এসেছিস। আমিবুঝতে পারিনি আমরা সবাই তোর উপর আমাদেরডিসিশন চাপিয়ে দিয়েছি। সরি মালিহা আমি তোরবেস্ট ফ্রেন্ড হয়েও তোকে বুঝতে পারলাম না।
.
– নাহ সারা তুই কাঁদছিস কেন? তোর তো কোনো দোষনেই। আসলে আমার মাঝে মাঝে নিজেকেএলোমেলো মনে হয় তখন আবোল – তাবোল বকতেথাকি। তুই তো একেবারে বেস্ট ফ্রেন্ডের মতই কাজকরেছিস। একজন বেস্ট ফ্রেন্ড সবসময় চায় তারবেস্ট ফ্রেন্ডটা যেন খুব সুখে থাকে তুইও সেটাইচেয়েছিস। এখানে তোর কোনো দোষ নেই।
সারা আমার কথা শুনে আমাকে শক্ত করে জড়িয়েধরলো। ওর চোখের পানি আমার কাঁধে পড়ছে। সারারআর আমার বন্ধুত্ব অনেক দিনের। মেয়েটা অনেকভালো মনের মানুষ। আমাকে খুব ভালোবাসে। আমিযতই বকা-ঝকা করিনা কেন ঘুরে ফিরে সেই আমারকাছেই আসবে। মাঝে মাঝে মনে হয় সারা আমারপাশে আছে বলেই আমি এতদূর আসতে পেরেছি।সায়ন ভাইয়াকে নিয়ে আমার সকল ফিলিংস আমিসারার সাথেই শেয়ার করেছি। মাঝে মাঝে ও খুব রেগেযেত যে মানুষটা আমাকে পাত্তাই দেয়ে না আমি কেনআজও তার পেছনেই পড়ে আছি এসবও বলত। আমিওর প্রশ্নের উত্তরে বেশি কিছু বলতাম না একটা ছোট্টনিঃশ্বাস ফেলে বলতাম, ” ভালোবাসি তাই “।।
পুরোনো কথা মনে পড়তেই আমার আবার কান্না শুরুহয়ে গেল। সারার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো একেএকে মনে পড়তে লাগলো। এতে আমার কান্নার বেগআরো বেড়ে গেল। সারা সেটা বুঝতে পেরে আমায়ছেড়ে দাঁড়ালো। আমার দিকে তাকিয়ে চোখের পানিমুছে বলল,
– তোকে খুব মিস করবো জানু।
– হুমম আমিও করবো।
.
– আচ্ছা এখন কান্নার পার্ট বাদ দে। সাজুগুজু করতেহবে তো। চল চল সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষাকরছে।
– হুমমম চল।
আমার সাজ শেষ। আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।ব্রাইডাল মেকআপ তার উপর গায়ে কত গয়নাগাটি।একেবারে বউ বউ লাগছে। কতদিনের শখ ছিলএভাবে বউ সেজে সায়ন ভাইয়ার সাথে তার বাড়িতেযাবো। হুমম আজ আমি বউ সেজেছি কিন্তু সায়নভাইয়ার জন্য না অন্য কারো জন্য। আমার কপালেইবোধহয় বিধাতা এত কষ্ট লিখে রেখেছে।
– বাহ মালিহা জানু তোকে তো দারুণ লাগছে। আজবিয়েতে যত ছেলে আসবে সব তোর উপর ক্রাশ খাবে।
– হুমমম হয়েছে তোর এসব চাপা মারা কথা আর শেষহবে না।
– আমি তো এমনই জানু তুমি কি সে কথা জানো না?
– জানি জানি সব জানি।
– শোন না তোকে দেখে আমার একটা গান মনে পরছে।
– কি গান?
– “যদি বউ সাজো গো আরো সুন্দর লাগবে গো “।
সারার গান শুনে আমার খুবই হাসি আসলো। আমিহাসতে লাগলাম আর সারা আমার দিকে তাকিয়েআছে। কোনো ক্রমে হাসি থামিয়ে আমি বললাম,
– কিরে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
– এই হাসিটাই এতক্ষণ মিসিং ছিলো।
– হুমম এখন ঠিক আছে?
.
– একদম পারফেক্ট। সবসময় এভাবেই হাসবি বুঝলি।
– এভাবে হাসতে থাকলে মানুষ আমাকে পাগল বলবে।
– আচ্ছা যা বেশিও হাসার দরকার নাই।
– হুমম।
আমাদের দুজনের কথার বলার মধ্যেই আমারমোবাইলে মেসেজ আসার শব্দ হলো। আমিমোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম ইরাম ভাইয়ার নাম্বারথেকে একটা মেসেজ এসেছে। আমি মেসেজটা ওপেনকরতেই দেখলাম মেসেজটা এরকম,
” মালিহা আর্জেন্ট কিছু কথা ছিল। তোমাদের বাড়িথেকে কিছুটা দূরে যে পার্ক আছে সেখানে আমিঅপেক্ষা করছি। তুমি প্লিজ একটু আসো। আমিতোমার অপেক্ষায় রইলাম। “
ব্যস এইটুকুই। কি এমন কথা যে ফোনে বলা যাবে না।তাছাড়া এখন সাতটা বাজে। এখন তো ওনারকমিউনিটি সেন্টারে যাওয়ার কথা তাহলে? আমি আরআপুও তো এখুনি কমিউনিটি সেন্টারে যাবো। ওখানেগেলেও তো ওনি কথা বলতে পারবেন।
– কিরে কার মেসেজ?
সারার কথায় আমি ভাবনার জগত থেকে বেরিয়েএলাম। ওর দিকে মোবাইলটা এগিয়ে দিলাম।
– ইরাম ভাইয়া এখন তোকে কেন আলাদা ডাকছে?কিছুক্ষণ পরই তো তোদের বিয়ে। তখনই তো সববলতে পারবেন।
– কি জানি আমিও বুঝতে পারছি না। কি এমনআর্জেন্ট কথা যে এখুনি বলতে হবে?
– হয়তো সত্যিই কোনো দরকারি কথা। এখুনি বলতেহবে তাই হয়তো ডেকেছেন।
– কিন্তু এখন ওনার কথা শুনে যাওয়াটা কি ঠিক হবে?যদি ওনার ফোন থেকে অন্য কেউ মেসেজ করে?
– সেটা তো তুই গেলেই দেখতে পাবি। আমার মনে হয়ইরাম ভাইয়াই মেসেজ করেছে।
– তুই কি বলিস যাবি?
– যা। দরকার না হলে কি ইরাম ভাইয়া তোকে এমনিএমনি ডাকতো নাকি?
– তুইও চল না। আমার খুব ভয় করছে।
– আমিও যদি তোর সাথে চলে যাই তাহলে এদিকটাকে দেখবে? মারিয়া আপু যখন তোকে খুঁজবেআমাকেই তো সামাল দিতে হবে।
.
– হুমম তাও ঠিক। ঠিকাছে আমি একাই যাই তাহলে।
– হুমম চল আমি তোকে একটু এগিয়ে দিয়ে আসি।পার্কে পায়ে হেঁটে যেতে তোর আধা ঘন্টা লাগবে। তুইবরং গাড়ি পেলে গাড়ি করেই যাস। আর তাড়াতাড়িফিরে আসিস।
– আচ্ছা চল।
সারা আমাকে রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেল। পেছনফিরে দেখলাম ও এখনো দাঁড়িয়ে আছে।
ওকে দেখেকেন জানি আমার খুব মায়া লাগছে। মনে হচ্ছে যেনএটাই সারার সাথে আমার শেষ দেখা।
আপুকে বলেআসার সাহস পাইনি।
আপু কি না কি মনে করে তাই।আমি মেইন রাস্তা পর্যন্ত হেঁটে হেঁটেই আসলাম।
শাড়ি-গয়নার ভারে আমার হাঁটতে খুব অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তুআমি কোনো গাড়িই পাচ্ছিলাম না।
তাই হেঁটে যেতেইবাধ্য হলাম।
রাস্তার পাশ ধরে হাঁটছিলাম আর নানানকিছু ভাবছিলাম।
এসময় ইরাম ভাইয়ার আমাকেআলাদা করে ডাকার কারণটা কি?
আমাদের তোকিছুক্ষণ পর বিয়ে। ওনি তো তখনই সব বলতেপারতো।
মেইন রাস্তা তাই অনেক গাড়ি একটার পরএকটা যাচ্ছেই।
মাঝে মাঝে মনে হয় গাড়িগুলো যেনগায়েই লেগে যাবে।
আমি কিছুদূর হেঁটে এসে রাস্তারওপাশে যাচ্ছিলাম। আমার মাথায় তখন নানান চিন্তাঘুরপাক খাচ্ছে।
তাই দুপাশ থেকে গাড়ি আসছে কিনাখেয়ালই করিনি।
নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটছিলাম।তখনি একটা তীব্র আলো চোখে পরলো আমি চোখবন্ধ করে ফেললাম।
মনে হলো কিছু একটার সাথেআমি প্রচন্ড জোরে ধাক্কা খেলাম।
রাস্তাতেই ঢলে পড়েগেলাম। মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছিল।
.
মাথাটা চেপেধরতেই হাতে তরল জাতীয় কিছু লাগলো হাতটাসামনে এনে
দেখলাম যে আমার হাত রক্তে লাল হয়েগেছে। আমি কি তবে মরে যাবো?
সায়ন ভাইয়াকেশেষ দেখাটা আর দেখতে পারবো না?
আর কিছুইভাবতে পারলাম না। চোখ বন্ধ হওয়ার আগে দেখলামকিছু মানুষ আমার দিকে ছুটে আসছে।
আমার যেনগভীর ঘুম আসছিল। চোখটা কিছুতেই আর খোলারাখতে পারলাম না।
গভীর ঘুমে ধীরে ধীরে আমিতলিয়ে যেতে লাগলাম।
সায়ন ভাইয়ার হাসি মুখটাওধীরে ধীরে কেমন জানি অদৃশ্য হয়ে যেতে লাগলো।
জানি না আর কখনো ওনার সাথে আমার দেখা হবেকি না।
তবে আমি আজও বলতে চাই ভালোবাসিআপনাকে খুব ভালোবাসি। এরপরই চোখটা লেগেগেল।
আমি যেন কোনো অজানায় হারিয়ে যেতেলাগলাম।।
.
চলবে,,
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com