স্বপ্নের ক্রাশ । সত্য ঘটনা অবলম্বনে । পর্ব -১৬
আহান আরোহিকে গাড়িতে করে আরোহির বাসায় নিয়ে যাচ্ছে,,,, আরোহি খুব ভয় পেয়ে আছে, তাই এখনই কিছু জিজ্ঞেস করছে না। আরোহি মাথাটা সিটের সাথে লাগিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আহান আরোহির ডান হাতটা ধরলো। আরোহিও আহানের হাত ধরলো। হুট করে আহানের কাধে মাথা রেখে কান্না করতে শুরু করে। আহান গাড়ি সাইড করে আরোহির মাথাটা বুকে জড়িয়ে ধরলো। আরোহি কান্না করছে
.
আরোহির বাসার সামনে গাড়ি থামিয়ে,
আরোহিঃ মা বাবাকে কিছু বলবেন না প্লিজ
আহানঃ আচ্ছা, তোমার চোখ মুছে নাও। যে কেউ দেখলে বুঝে যাবে তুমি কাঁদছিলে
আরোহি চোখ ভালোভাবে মুছে নিলো, বাসায় ঢুকতেই,
অরনিঃ মাাাাাাাাাাাা আপু এসেছে
আরোহির মাঃ তুই ঠিক আছিস? কোথায় ছিলি? জানিস কত টেনশনে ছিলাম।
আহানঃ আন্টি ওকে ম্যাম ডেকেছিলো, তাই আমরা পাচ্ছিলাম না
আরোহির মাঃ ওহ, আমি টেনশনে পড়ে গেছিলাম। তুমি বাহিরে কেন? ভেতরে বসো
আহানঃ না আন্টি আজ আসি, লেট হয়ে গেছে, অন্য একদিন আসবো
অরনিঃ আপনার নাম?
আহানঃ ( আরোহির দিকে তাকিয়ে) অহি
অরনিঃ ওহ
আহান চলে গেলো। আরোহি সারা রাত আজকের ঘটনা টা নিয়ে ভেবেছে, সারা রাত নিহা আর সায়রের সেদিনের কথাগুলো নিয়ে ভেবেছে আর নিঃশব্দে কেঁদেছে, কিছুতেই ঘুমাতে পারেনি৷ অরনি পাশেই ছিলো, আরোহির নাড়াচাড়ায় অরনির ঘুম ভেঙে যায়, উঠে দেখে আরোহি কেদে চোখ মুখ ফুলিয়ে রেখেছে,
অরনিঃ আপি, আমি জানি কিছু একটা হয়েছে। আমাকে বল, শেয়ার করলে মন হালকা হয় তুই ই তো বলিস। আমি কাউকে বলবো না। প্রমিস
আরোহিঃ ( অরনিকে জড়িয়ে ধরে কাদতে শুরু করি নিজেকে ঠিক রাখতে আমার যে এখন সত্যি একটা ভিত্তি দরকার ছিলো)
অরনিঃ [আরোহির চোখ মুছে দিয়ে] আপু কাদিস না বল
আরোহিঃ [কাদতে কাদতে অরনিকে সব খুলে বলি, কলেজের প্রথম দিনের কাহিনী থেকে আজ পর্যন্ত সব, আমার আর অহির মিট হওয়া, আমার রিজেক্ট করা, নিহার সাথে ক্লোজ হওয়া, সায়র আর নিহার হুমকি আর কালকের ঘটনা সব। তবে আমার মনে অহিকে নিয়ে রিসেন্ট ফিলিংস গুলো বললাম না]
অরনিঃ [ এখন আপুকে কি বলবো সত্যি বুঝতে পারছি না, তবে আমি সিউর আপু ঐ অহিকে ভালোবাসে। হয়তো নিজে জানে না অথবা আমাকে বলছে না। কিন্তু এইবার যে আমি অসহায় আহান না অহি,, আমি আপুর সাথে কারে মিলাবো আমি কোন দিকে যাবো ??? ] আচ্ছা আপু এখন ঘুমিয়ে পড়। পরে ভেবে চিনতে কিছু করা যাবে
আরোহিঃ হুম
অরনি শুয়ে পড়ে, আরোহিও শুয়ে পড়ে কিন্তু এই ঘুম পাগলির চোখ থেকে আজ ঘুম উধাও। যে মেয়ে প্রতিদিন মায়ের কাছে ঘুম নিয়ে বকা খায় তার আজ কোনোভাবেই ঘুম আসছে না।
হঠাৎ আরোহির ফোন বেজে উঠে। ফোনটা চেক করে অনেক ভেবে একটা ডিসিশন নেয় আরোহি।
আরোহিঃ আমাকে পারতেই হবে। হ্যা, পারতেই হবে অহির জন্য
কোনো মতে রাতটা পার হয়
পরদিন অরোহিকে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে দেখে আরোহির মা অবাক হয়। কারণ যে মেয়েকে সকালে ১ ঘণ্টা ধরে ডেকে উঠাতে হয়, উঠানোর জন্য পানি ঢেলে দিতে হয় গায়ে, সে আজ ৭ টায় কিভাবে উঠলো তাও আবার উইথআউট এলার্ম!!! অবশ্য উঠবে না কিভাবে? সারারাত যে ঘুম ই আসেনি ওর। চোখ মুখ ফুলে একাকার
আরোহির মাঃ আজ এতো তাড়াতাড়ি উঠে পড়লি কিভাবে? আর দেখি এদিকে ঘোর ( আরোহির মুখ আমার দিকে ঘুরিয়ে) চোখ মুখ ফুললো কিভাবে?
আরোহিঃ রাতে অরনি জালিয়েছে, ওর জন্য কালকে একটুও ঘুমতে পারিনি তাই
অরনি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় সব শুনতে পায় কিন্তু কোনো প্রতিবাদ করে না। কারণ আরোহির মিথ্যা বলার কারণ সে জানে। আর মা এসব জানতে পারলে অনেক টেনশন করবে। তাই কিছু বলেনা।
আরোহি কলেজে যায়,
আহান বার বার আরোহির সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু আরোহি ইগনোর করেছে। আহানের খুব রাগ উঠে এতে। হঠাৎ করে আহানকে আর দেখতে পায় না। আরোহির খারাপ লাগে কিন্তু আহানকে যে তার ইগনোর করতে হবে। তাই আহানকে খোজা বন্ধ করে ফ্রেন্ডদের কাছে চলে যায়।
মিতুঃ আরু কেমন আছিস?
আরোহিঃ ভালো
নিশাঃ আজকে না আসলেই পারতি
আরোহিঃ কেন? আমার তো কিছু হয় নি, আমি একদম ঠিক আছি
মিতুঃ আচ্ছা বাদ দে
আরোহিঃ হুম শোন
নিশাঃ হুম বল
আরোহিঃ মা বাবা কে কিছু বলিস না প্লিজ
মিতু ও নিশাঃ ওকে
তারপর আরোহি মিতু নিশা সবাই ক্লাসে যায়।
ক্লাস শেষে আরোহি বারান্দা দিয়ে আনমনে হেটে যাচ্ছে। হঠাৎ কেউ ওকে হাত ধরে ফাঁকা রুমে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। অন্ধকারে আরোহি দেখতেও পাচ্ছে না। কিন্তু আরোহির হার্ট বিট অনেক ফাস্ট হয়ে গেছে তাই আরোহি বুঝতে পেরেছে এটা অহি ছাড়া আর কেউ না।
আরোহিঃ অহি এসবের মানে কি?
আহানঃ [ ওর সামনে এসে ওকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলাম] তুমি বলো এসবের মানে কি? আমাকে ইগনোর কেন করছো? আর তোমার চোখ মুখের এ অবস্থা কেন?
আরোহিঃ কারণ আমি তোমাকে পছন্দ করি না। (চিল্লিয়ে) আর আমার কি অবস্থা তা নিয়ে তোমাকে মাথা ঘামাতে হবে না।
আহানঃ শাট আপ। আমি জানি তুমি আমাকে পছন্দ করো। আর তোমাকে নিয়ে আমি ভাববো কি না সেটা আমার ব্যাপার
আরোহিঃ দেখো আমি আর কিছু শুনতে চাই না। তুমি আর আমার সামনে আসবে না। আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই না। প্লিজ,, এরপর আমার কোনো বিষয়েও তুমি হস্তক্ষেপ করবে না। নয়তো ভালো হবে না বলে দিচ্ছি
আহানঃ ( অবাক হয়ে) আরোহি
আরোহিঃ কি আরোহি হ্যা? আমার যা যা ক্ষতি হয়েছে সব কিছুর জন্য তুমি দায়ী,, একমাত্র তুমি। আর তুমি এতোটা নির্লজ্জ রিজেক্ট হওয়ার পরও আমার পিছনে পড়ে আছো। ছিঃ…….
আহানঃ (এবার আহান মারাত্মক রেগে গেছে) [ ওর হাত দেওয়ালে চেপে ধরে] আমি নির্লজ্জ তাই না? ফাইন, এরপর থেকে আমি আর তোমার ব্যাপারে কথা বলতে আসবো না। যখন নিজের ভুল বুঝবে তখন আমার সাথে কথা বলতে আসবানা
আরোহিঃ( খুব কান্না পাচ্ছে নিজেকে সামলে অহিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে তাড়াতাড়ি ওখান থেকে চলে আসি, ওয়াসরুমে এসে মুখে পানির ছিটে দিই আর কান্না করতে শুরু করি) আম সরি অহি, আমার কাছে আর কোনো রাস্তা খোলা ছিলো না
আহানঃ (রেগে দেওয়ালে ঘুষি দিলাম হাতে ব্যাথা পেয়েছি কিন্তু মনের ব্যাথাটা আরও বেশি,, রুমের কিছু ব্রেঞ্চ ভাঙচুর করে বের হয়ে গেলাম)
আরোহিঃ ( ওয়াস রুম থেকে বের হতেই আবার অহির সাথে মুখোমুখি, পাশ কাটিয়ে যেতেই দেখলাম ওর হাত থেকে রক্ত পড়ছে, তাড়াতাড়ি ওর হাত ধরে) অহি তোমার হাতে রক্ত? এক্ষুনি ব্যান্ডেজ করতে হবে
আহানঃ ( আমার হাতটা ছুটিয়ে নিলাম) আমি যেমন তোমার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবো না আশা করি তুমিও আমার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না আর আমি কি করবো না করবো তোমাকে না ভাবলেও চলবে [বলেই চলে আসলাম]
.
to be continued……
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com