Breaking News

গল্পঃ বড্ড আদরে । পর্ব -০১


বিয়ের জন্য বাসা থেকে অনেক চাপ প্রয়োগ করছিল, হয়ে নাকি যাচ্ছি আধ-বুড়ো! বহু অজুহাত দিয়ে বিয়ে ভেঙ্গেছি কুড়ি বিশেক। অফিসে বসে কাজ করছিলাম, এমন সময় হঠাৎ বাসা থেকে আম্মুর কল আসে। আমি কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে,
– তুই তাড়াতাড়ি বাসায় আয় বাবা?
– অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি, এখন আসবো কি করে?
– সেটা তোর আব্বু দেখবে, তুই বাসায় আয়!
– হঠাৎ বাসায় কেনো? কোন সমস্যা হয়ছে?
– বেশি কথা না বলে দ্রুত বাসায় আয়!
– ওকে রাখো!
বলেই কলটা কেটে দিয়ে, ম্যানেজারকে বলে অফিস থেকে বেড়িয়ে গেলাম গাড়ি নিয়ে। রাস্তায় প্রচুর চিন্তা হচ্ছিল হঠাৎ এভাবে বাসায় ডাকা নিয়ে, আম্মুর কোনো বিপদ-আপদ হয়নি তো? গাড়ি থেকে নেমেই সোজা আম্মুর কাছে চলে গেলাম আর বললাম,
– এবার বলো কিসের জন্য বাসায় আসতে বলেছ?
– তুই আগে ফ্রেশ হয়ে, রেডি হয়ে নে!
আমিও আর কথা বাড়ালাম না, কথা বাড়িয়ে কোন লাভ হবে না উল্টো দমক খেতে হবে। ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতেই দেখলাম আম্মু রেডি হয়ে বসে আছে, বিষয়টা দেখে অনেক অবাক হলাম! বুঝলাম না, এই সময় আম্মু রেডি হয়ে বসে আছে কেন? আম্মুর কাছে এগিয়ে বললাম,
– এবার তো বলো কি জন্য অফিস থেকে ডেকে এনেছো?
– তোকে নিয়ে আমার বান্ধবী রুবিনার বাসায় যাব, যা গাড়ি বের কর।
– কেনো?
– গাড়ি বের করতে বলছি? ( রেগে )
– গাড়ি বের করাই আছে!
আমি বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়ির দিকে যেতে লাগলাম। আম্মু এসেই গাড়িতে উঠে বসলো। আমি আর কথা বাড়ানোর চেষ্টা না করে চুপচাপ গাড়ি চালানো শুরু করলাম। আমাদের বাসা থেকে রুবিনা আন্টির বাসা ব্যস দূরেও না আবার কাছেও না, যেতে প্রায় ঘন্টা খানিক লাগে।
রাস্তায় আম্মুর সাথে টুকটাক কথা বলতে বলতে আন্টির বাসায় চলে এলাম। আম্মু গাড়ি থেকে নেমে আমাকেও সাথে নিয়ে বাসায় প্রবেশ করেন।বাসায় ঢুকতেই হঠাৎ রুবিনা আন্টি এসে আম্মুকে জড়িয়ে ধরেন! দুজনে কোশল বিনিময় করেন,
– কেমন আছিস? আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো? ( আন্টি )
– এমন একটা খুশির দিনে ভালো না থেকে উপায় আছে? তুই ভালো আছিস! ( আম্মু )
– ভালোই আছি, তা তোর ছেলেটা কই? দেখছি না তো!
– এইতো আমার ছেলে।
বলেই হাত দিয়ে আমাকে দেখিয়ে দিলেন! আমিও ভদ্রতাসূচক বললাম,
– আসসালামু অলাইকুম আন্টি, ভালো আছেন?
– ভালো, তুমি কেমন আছো বাবা?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
– জামাই বাবাজি তো দেখি ভালোই বড় হয়ে গেছে, মাশাল্লাহ!
রুবিনা আন্টির মুখে জামাই শব্দটা শুনে অনেক লজ্জা পেলাম। উনি জামাই কেনো বলল এটা ভেবেই অবাক হয়ে গেলাম, অবাক হওয়ার এইতো কথা। তখনি রুবিনা আন্টি বললেন,
– এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে আয় বিতরে আয়?
– হুম চল!
রুবিনা আন্টি আম্মুকে সাথে করে বিতরে নিয়ে গেলেন আর আমি ওখানেই একটা সোফায় গিয়ে বসে পাড়লাম। চোখ দিয়ে চারদিকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম, মনে হচ্ছে আজ কোনো অনুষ্ঠান আছে।
বাসায় আমরা ছাড়াও প্রচুর মেহমান এসেছে অথচ বাসার বাহিরে দেখে বুঝার কোনো উপায় নাই যে, এ বাসায় আজ একটা অনুষ্ঠান হবে বড়ই আজব ব্যাপার! আম্মু আমার কাছে এগিয়ে এলো হাতে একটা পাঞ্জাবী নিয়ে,
– উপরে আয় তো বাবা আমার সাথে!
বলেই হাত ধরে টানতে টানতে একটা রুমে নিয়ে গেলেন, আমার বিষয়টা মুঠেই সুবিধার লাগছিল না।
– আম্মু এখানে নিয়ে এলে কেনো?
– ছট করে এই পাঞ্জাবী টা পড়ে!
– আমি কেনো পড়বো? আর এটা তো মনে বিয়ের পাঞ্জাবী!
– আজ তোর বিয়ে, তাই পড়তে হবে।
– কিহ! আমার বিয়ে, এসব কি বলছো?
– হুম আজ তোর বিয়ে! আমার বান্ধবীর মেয়ের সাথে।
– কিহ, ঐ পিচ্চিটার সাথে আমার বিয়ে? ওতো আমার থেকে কত ছোট!
– তো কি হয়ছে? চুপচাপ পাঞ্জাবী টা পড়ে নিচে চলে আয়।
– না, এই বিয়ে আমি করতে পারবো না।
– দেখ বাবা এমন করিস না? আমি রুবিনাকে কথা দিয়েছি, তোর সাথে ইভার বিয়ে দিব। ইভাকে এই এলাকার কিছু বখাটে ছেলে এদানিং খুব বিরক্ত করছে। তাই আমি অনেক ভেবে চিন্তে তোর সাথে ইভার বিয়ে ঠিক করেছি কারণ মেয়েটাকে আমার অনেক ভালো লাগে। প্লিজ বাবা তুই বিয়েতে রাজি হয়ে যা, আমার জন্য?
– আম্মু ইভা তো আমার থেকে বয়সে অনেক ছোট তাছাড়া…
– তাছাড়া কিহ? তুই কি কাউকে ভালোবাসিস?
– না, বিষয়টা এমন না!
– তাহলে কেমন?
– আমি এখন বিয়ে করতে চাই না, প্লিজ আম্মু!
– দেখ বাবা, আমার তো বয়স হয়েছে কতদিন এই বাঁচবো? আমার ইচ্ছে পূর্ণরূপ করার জন্য তুই এই বিয়েটা কর।
আমি বুঝতে পারলাম রাজি না হলে আম্মু খুব কষ্ট পাবে। আম্মুর ইচ্ছের জন্য নিজেকে কোরবানি করা ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই। আম্মুর সাথে আর কথা না বাড়িয়ে বিয়েতে রাজি হয়ে গেলাম।
কি আর করার! অবশেষে বিয়েটা হয়ে গেল, ইভাকে গাড়ি করে নিয়ে আসার সময় অনেক কান্না করছিল। কোন ভাবেই ওকে শান্ত করতে পারছিলাম না। পাড়বোই বা কি করে, মেয়েটা আমার চেয়ে গুণে দশ বছরের ছোট সবে মাত্র এস এস সির পাশ করেছে।
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com