Breaking News

কাছে থেকেও সে অচেনা । পর্ব- ৩৫

তা তুই কি জানিস তোর মামার ছেলেটা কে ?
ইস্ আমি কাকে কি বলছি!
যে মেয়ে তার আসল বাবাকে মনে রাখতে পারেনি ।
সে কিভাবে মামার ছেলেকে মনে রাখতে পারবে?
আমিও না।
সিকান্দার মির্জার কথা শুনে ,মেহেক কিছু বুঝতে না পেরে তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
তা দেখে সিকান্দার মির্জা বলে,আরে তুই যাকে দিনরাত রাক্ষস বলে মুখের ফেনা ফেলিস না?
সেই তো তোর মামার ছেলে।
মেহেক সিকান্দার মির্জার কথা শুনে চমকে গিয়ে বলে কি!
সিকান্দার মির্জা মেহেককে চমকে যেতে দেখে বলে,আরে আমিও তো তোর মতো চমকে গিয়েছিলাম যেদিন জেনেছি প্রিন্স মাহমুদ তোর মামাতো ভাই ।
মেহেক সিকান্দার মির্জার কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করছে ,
এই জঘন্য লোকটা আসলে বলতে চাচ্ছেটা কি?
এদিকে সিকান্দার মির্জা মেহেকের দিকে তাকিয়ে বলে, কি ভাবছিল?
আমি কিভাবে জানলাম তাইতো?
তাহলে শুন, আমি প্রিন্সের পরিচয় আগে জানতে পারলে কখনো তোকে ওর কাছে বিয়ে দিতাম না।
তোর মনে হয়তো প্রশ্ন জেগেছে প্রিন্সকে চিনলাম কি করে?
তোকে ওসব ভেবে ব্যস্ত হতে হবে না ।
আমি বলছি ,
প্রিন্সের বাড়িতে থেকে আসার দিন ওর পরিচয় জেনেছি।
মানে আসার আগে টাকা পয়সা নিতে তোদের বেডরুমে যাওয়ার পর
ওখানে প্রিন্সের ছোট বেলার ছবি দেয়ালে টানানো ছিল তা দেখে জেনেছি।
তুই কি জানিস ?
এতদিন একটা বিষয় অনেক ভেবেও আমি কুল কিনারা করতে পারছিলাম না।
আমার সাথে প্রিন্সের সমস্যাটা কোথায়?
তাকে তো আগে কখনো চিনতাম বলে মনে পড়ছে না!
তাকে প্রথম দেখি তোকে বিক্রি করতে যখন আমি পার্টিদের সাথে দর কষাকষি করছি সে সময়ে।
প্রিন্স মাহমুদ এসে আমাকে অবাক করে দিয়ে বেশ চরা মূল্য দিয়েয় তোকে বিয়ে করতে চায়!
সব চেয়ে অবাক করার বিষয় ছিল এতো টাকার মালিক ও ক্ষমতাসীন মানুষটি কিনা টাকা দিয়ে কেনা মেয়েকে রক্ষিতা না করে বৌ করতে চাচ্ছে।
এই ছেলে তোকে না দেখেয় আমার সাথে ডিল করতে চাচ্ছিলো।
তখন আমার মাথায় প্রশ্নটা এলেও তেমন গুরুত্ব দেয়নি।
ভেবেছি বড় বড় শিল্পপতিদের তো কত শখ বা নেশা থাকে।
আর তারা নারী লোভী হয়।
তাহলে এটা আর নতুন কি!
দেখা যাবে বিয়ের অভিনয় করে রক্ষিতা হিসেবে ব্যবহার করছেন।
সেজন্য প্রিন্সকে নিয়ে এতো কিছু ভাবতে চায়নি।
এদিকে যেদিন তোর সাথে প্রিন্সের বিয়ে হয় তার পরের দিনেয় সে আমাকে আমার পাওনা বুঝিয়ে দেয়।
তাতেই আমি খুশি হয়ে গেলাম ‌
তোর বিয়ের দুই একদিন পর প্রিন্স মুনকে ও তোর কাছে নিয়ে যায় ।
আমি তো উটকো ঝামেলা থেকে মুক্তি পেয়েছি ভেবে খুশি হয়ে যায়।
কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর আমার মাথায় এলো।
প্রিন্স মাহমুদ অঢেল সম্পদের মালিক তার সাথে সম্পর্ক ভালো রাগলে আমার লাভ ছাড়া ক্ষতি তো নেয়।
আর ওর সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখতে হলে তোর প্রতি ভালোবাসা দেখাতে হবে।
কিন্তু প্রিন্স মাহমুদ আমাকে তোর আশেপাশে ঘেঁষতে দিতে নারাজ।
আমি অবশ্য টাকা পেয়ে তোকে নিয়ে ভাবার সময় ছিল না তবুও আরেটু পেলে ক্ষতি কী ভেবে প্রিন্সের দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিতে হবে ভাবছি।
সে সময়ে
হঠাৎ করে আমার কাছে একটা ব্যাবসার অফার আসে।
যেখানে আমার টাকা ছয় মাসের মধ্যে দিগুন হবে।
ভাগ্যে বেশি ভালো থাকলে টাকা তিন গুণ হাতেও পারে।
আমিও রাজী হয়ে গেলাম।
প্রথম প্রথম বেশ ভালো টাকা লাভ হয়।
আমি খুশি হয়ে আমার কাছে যতো অর্থ ছিল সব ব্যাবসার মধ্যে ঢুকায়।
কিন্তু সমস্যা শুরু হয় ব্যাবসায় ঢোকার ছয়মাস পর ।
ছয় মাসের পর আস্তে আস্তে ব্যাবসায় লসের সংখ্যা বেড়ে যায় বহুগুণে।
কিছুদিনের মধ্যেই আমি আগে মতো ব্যাবসায় লস খেয়ে শূন্য হয়ে পড়ি।
সে সময়ে আমার তোর বরের কথা মনে আসে।
তোর বরের তো অনেক টাকা আমাকে কিছু দিলে আমি আবারও উঠে দাড়াতে পারবো সমস্যা হবে না।
এটা ভেবে প্রিন্সের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি কিন্তু ও আমার সাথে দেখা করতে চায় না।
তখন থেকে আমার ওকে নিয়ে সন্দেহ হয়।
আমার দলের কিছু ছেলেকে প্রিন্সের সব খোঁজ খবর এনে দিতে বলি।
তবে ওরা প্রিন্সের সব কিছু জোগাড় করতে না পাড়লেও কিছু কিছু খোঁজ খবর এনে দেয় ।
সব ব্যাবসা খোঁজ খবর পায়নি ।
তবে প্রিন্সের কিছু কিছু তথ্য পায়।
ওদের এনে দেওয়া খবর আমাকে রিতিমত চমকে দেয়!
আমি যাদের সাথে এতদিন ব্যাবসা করেছিলাম।
তা প্রিন্সের লোক ছিল।
এমনকি তোর বিয়ের আগে আমার ব্যাবসার যে লোকসান গুনতে হয়েছে তাও প্রিন্সের কারণে।
কিন্তু আমার জানামতে ওর সাথে আমার কোনো শত্রুতা থাকার কথা নয়।
আমি ছোট খাটো একজন ব্যাবসায়ী আর ও তো হাই লেভেলের ।
মনের মধ্যে খঁটকা লাগে।
ওর সমন্ধে জানতে হলে আমাকে ওর বাড়িতে যেতে হবে।
ওখানে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা ছিল তুই।
তাইতো সুযোগ বুঝে তোর সাথে দেখা করে ,মাফ চাওয়া, তোকে ওখানে থেকে বের করার কথা বলেছি ,এমনকি আমি নিজের কাজে অনুতপ্তের অভিনয় করলাম।
তুই যে বলদ টাইপের মেয়ে তা আমি আগেই জানতাম
তুই আমাকে মাফ করে দিয়ে আমার প্লান মতো কাজ করতে রাজি হয়ে
গেলি তাতে বুঝতে বাকি রইলো না
তুই কতোটা বলদ।
সবচেয়ে বেশি বোকামি কোনটি জানিস?
যে প্রিন্স মাহমুদ আমার হাত থেকে তোকে বাঁচাতে বিয়ে করেছে তুই তাকে ধোঁকা দিয়ে আমার সাথে হাত মিলিয়ে ওকে রুমে বন্দি করেছিস।
অবশ্য আমি তোদের ওখানে যাওয়ার আগে প্রিন্সকে শায়েস্তা করতে ওর শত্রুদের সাথে হাত মিলায়।
এরপর তোর মাধ্যমে প্রিন্সের বাড়িতে ঢুকি।
সেদিন ওখানে থেকে আসার ঘন্টা খানিক আগে প্রিন্সের রুমে গিয়ে ওর বাচ্চা বয়সের ছবি দেখে অবাক হয়ে যায়।
এবং ওর নামের শেষে মাহমুদ যা নিয়ে আগে কখনো ভাবেনি, কিন্তু সেদিন ছবিটা দেখে তা নিয়ে ভাবতে গিয়ে মনে পড়ে,তোর মা,নানা,মামার নামের শেষেও মাহামুদ ছিল।
কথাটা হুট করে মনে হতেই আমার কাছে সব ক্লিয়ার হয়ে যায় প্রিন্স মাহমুদ সম্পর্কে।
মেহেক সিকান্দার মির্জার কথা শুনে বলে, মানুষ এতো জঘন্য হয় তা তোকে না দেখলে জানতাম না।
তা সিকান্দার মির্জা সব কিছুই তো বললি ।
আচ্ছা আমার মা তো সুস্থ হয়ে যাচ্ছিল তাহলে হঠাৎ করে মারা যায় কিভাবে?
এটা তো বললি না?
সিকান্দার মির্জা মেহেকের দিকে তাকিয়ে বলল, বাবার নাম ধরে ডাকছিস বেয়াদব মেয়ে।
মেহেক সিকান্দার মির্জার কথা শুনে বলল,তোর মতো পিচাশ , খুনিকে এতদিন না জেনে বাবা বলেছি।
এখন থেকে তুই আমার কাছে শুধু সিকান্দার মির্জা।
তাই এসব কথা রেখে আমার মা কিভাবে মারা গেছে তা বল?
মেহেকের কথা শুনে সিকান্দার মির্জা হেসে বলল, বলছি তার আগে শুনে রাখ আমি সিকান্দার মির্জা না।
তুই আমার নাম ধরে না তোর বাবার নাম ধরে বারবার ডাকছিস।
মেহেক সিকান্দার মির্জার কথা শুনে রেগে বলে,মানে কী?
মানে হচ্ছে আমার নার রাশেদ হাসান সিকান্দার মির্জা নয়।
আর তোর জন্ম দাতা পিতার নাম সিকান্দার মির্জা ।
অবশ্য তোর বাবার মৃত্যুর পর তার বৌ বাচ্চাদের সাথে নামটাও আমার হয়ে গেছে।
আর তোর মায়ের কথা জানতে চাচ্ছিস তো?
তাহলে শুন আমার এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীকে আমাদের বাসায় রাখতাম ‌ তোর মায়ের দেখাশোনা করতে।
অবশ্য তোর মা’কে দেখাশোনা তো ছিল লোক দেখানো।
আমি তো বান্ধবীকে রেখেছি আমার চাহিদা পূরণ করতে।
তা তো কেউ জানে না।
এদিকে এক রাতে বান্ধবীর সাথে একান্তে সময় কাটানোর সময় তোর বাবাকে আমি খুন করেছি তা বলছিলাম।
তোর মা পানি খেতে উঠে আমাদের কথা শুনে নেয়।
আমাকে হাতে নাতে ধরে ফেলে।
তোর মা আমাকে পুলিশের কাছে দিতে চায় আমি রেগে তাকে ধাক্কা দিলে সে সময়ে তোর মার পেটে নয় মাসের মুন।
ধাক্কাটা জোরে হওয়াতে সহ্য করতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে গিয়ে তোর মায়ের রক্তপাত শুরু হয়ে যায়।
আমার বান্ধবী ভয় পেয়ে তোর মাকে হসপিটালে নিয়ে যায়।
ইমারজেন্সিতে ভর্তি করে সিজার করে মুনকে বের করা হয়।
অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ হওয়ার কারণে অপারেশন থিয়েটারে তোর মায়ের মৃত্যু হয়।
মেহেক রাশেদ হাসানের মুখে মায়ের মৃত্যুর বর্ণনা শুনে ঠুকরে ঠুকরে কেঁদে বলে, তুই আমার মাকেও মেরে ফেললি ‌।
তুই মানুষ রূপি জানোয়ার।
রাশেদ হাসানকে কথাটা বলে ।
মেহেকের চোখে মুখে এই মুহূর্তে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে।
ওকে খুন করতে পারলে হয়তো মেয়েটা শান্তি পেতো।
মেহেক অনেক চেষ্টার পর নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে
আশেপাশে তাকিয়ে দেখছে কিছু পাওয়া যায় কিনা।
আজকে সে এই লোককে সে খুন করে ফেলবে।
শুধুমাত্র সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জানোয়ারের কারণে ওদের হাসি খুশি পরিবারটা শেষ হয়ে গেছে।
ওরা দুই বোন বাবা ও মাকে হারিয়ে এতিম হয়ে গেছে।
কিন্তু দুঃখের বিষয় মেহেক হাতের কাছে লোকটাকে আঘাত করার জন্য কিছু পেলো না।
তবে থেমে থাকলো না রাশেদ হাসানের দিকে তেড়ে আসে।
রাশেদ হাসান মনে হয় জানতো মেহেক তেড়ে আসবে ।
তাইতো তড়িগড়ি করে মেহেককে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দ্রুত রুমের বাইরে চলে যায়।
সেদিনের পর থেকে মেহেক কে খাবারের মধ্যে ড্রাগ দেয়।
তবে ইদানিং মেহেকের অবস্থা বেগতিক দেখে প্রতিদিন ড্রাগ দেয় না রাশেদ হাসান।
শুধু আজকে মেহেকের খাবারের ড্রাগ দেয়া হয়নি। কোবরা মেহেকের কাছে আসবে তাছাড়া সিকান্দার মির্জা কোবরাকে যতটুকু চিনে তাতে একটা জংলি বিল্লিকে কিভাবে কাবু করতে হয় তা ভালো জানে।
তবে রিক্স নেওয়া যাবে না।
তাইতো মেহেককে অনাহারে রাখবে যাতে দুর্বল হয়ে পড়ে।
কোবরা হচ্ছে হিংস্র বাঘ তার থাবা থেকে আজকে মেহেকের নিস্তার নেয়।
সিকান্দর মির্জা ভেবেছে কোবরা এদিকে মোচ করবে তাহলে সে বসে থাকবে কেন?
আজকে সারারাত ক্লাবে গিয়ে ফূর্তি করবে।
অন্যদিকে সন্ধ্যর কিছুক্ষণ পর কোবরা মেহেকের রুমের দরজা লক খুলে ভিতরে ঢুকে।
মেহেক তখন গভীর ঘুমে।
আজকাল ঘুমটা বেড়ে গেছে ।
ইদানিং চোখ খুলে রাখা দায় হয়ে পড়েছে ওর।
কোবরা ঘুমন্ত মেহেককে দেখে তেমন পছন্দ হলো।
মেয়েটার চোখের নিচে কালি শরীর কেমন শুকনো।
এসব মেয়েদের দিয়ে তো কোবরা জুতা মুছতে রাখবে না।
অবশ্য এতো অত্যাচের পর যে বেঁচে আছে এই মেয়ে এটাই তো বেশি।
কোবরা উঠাবসা যে সব মডেলদের সাথে তাদের চেকে এমন নিরামিষ তার মুখে রুচে না।
তবুও এই মেয়েকে ছাড়বে না।
মেয়েটা প্রিন্সের দুর্বলতা তাকে তো কোবরা ভোগ করবেই আজ।
প্রিন্সকে তো তার বৌয়ের সাথে একান্তে কাটানো মূহুর্তগুলো দেখাতে হবে।
কথাটা ভেবে কোবরা ঘুমন্ত মেহেকের উপর ঝাপিয়ে
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com