এক প্রতিবাদী নারীর জীবন যুদ্ধের গল্প । পর্ব- ৫২ এবং শেষ
শান রেশমার কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।
এসব কি বলছে রেশমা!
শান মৌরিকে তার মৌরিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে।
শানের বিশ্বাস হচ্ছে না রেশমা তাকে এমন কথা বলতে পারে!
এদিকে রেশমা রাগে এতটাই অন্ধ হয়ে গেছে যে এটাও ভুলে গেছে আগুনের হাত থেকে একদিন এই শান এবং তার ভাই বাঁচিয়েছে।
এজন্যই বলে, রাগে মানুষের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
তাইতো সেদিন সারাদিন রেশমা একবারও শাননে মৌরির কাছে ঘেঁষতে দেয়নি।
অন্যদিকে
সাদ সবাইকে ভিতরে দিয়ে তখনই বাসায় চলে গেছে।
কারণ তার মা রাত থেকে অনবরত তাকে ফোন দিচ্ছে।
সাদ ফোন ধরেনি কারণ সে জানতো মা কেন তাকে ফোন দিচ্ছে।
কিন্তু এখন বাড়িতে যাওয়ার দরকার তাই ফোন রিসিভ না করেই বাড়ির দিকে রওয়ানা দিয়েছে।
এদিকে রিফাত মৌরিকে অন্য হসপিটালে নেওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলেছে।
রেশমা তা শুনে রিফাতের কাছে গিয়ে বললো, ভাইয়া আপনার কাছে আমি কিছু চায়লে দিবেন?
রিফাত ভেবে পাচ্ছে না মৌরির এই অবস্থা দেখে রেশমা কেন এমন প্রশ্ন করছে?
রেশমা আবারো বললো দিবেন না ভাইয়া?
রিফাত রেশমার দিকে তাকিয়ে বললো,তোর কি চায় পিচ্চি বল?
রেশমা হড়ভড় করে বললো, ভাইয়া আপনি আপুকে যে হসপিটাল রাখবেন তার খবর যেনো চৌধুরী বাড়ির কেউ না জানে।
কারণ তারা জানতে পারলে আমার বোনকে বাঁচতে দিবে না।
তা আপনিও জানেন।
ইন্সপেক্টর সুমন তো ফোনে বলেছেন আলমাস চৌধুরী আপুর এক্সিডেন্টের সাথে জড়িত আছে।
এটা শুনার পর থেকে আমি চৌধুরী বাড়ির কাউকে বিশ্বাস করি না।
এরা আমার কাছে থেকে আমার মা’কে কেড়ে নিয়েছে এখন বোনের দিকে হাত বাড়াতে চাচ্ছে ।
রিফাত রেশমার কথা শুনে বলল, আমার মনে হয় না শান এমন কিছু করবে।
তবে তুই যেহেতু মৌরির বিষয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করতে বলছিস আমি তাই করবো ।
তবুও তুই এতো হাইপার টেনশন নিস না।
কারণ তুই অসুস্থ্য হলে মেহরাবকে সামলাতে কষ্ট হয়ে যাবে।
কারণ মেহরাব মৌরি আর তোকে ভীষণ ভালোবাসে।
তোদের ছাড়া এক মূহূর্ত থাকতে পারে না।
রিফাত সেদিন রাতেই শানের চোখ ফাঁকি দিয়ে মৌরিকে হসপিটালে থেকে বের করে।
শান যখন জানতে পারে মৌরিকে হসপিটালে থেকে নিয়ে গেছে তখন পাগলের মত করে।
শান শত চেষ্টা করেও রিফাত বা কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারে না।
এভাবে কেটে যায় কয়দিন।
এরমধ্যে শান রিফাতের বাসায় দুইদিন গিয়ে ফেরত এসেছে কারণ ওরা দার্জিলিং থেকে এসে বাড়িতে যায়নি।
হয়তো রিফাত জানতো শান মৌরির খোঁজ নিতে তার বাড়িতে আসবে।
সেজন্যই কেউ বাড়িতে আসেনি।
অন্যদিকে এক সপ্তাহ ধরে মৌরি কোন খোঁজ খবর না পেয়ে শান পাগলামি করতে থাকে।
খাওয়া দাওয়া একেবারে ছেড়ে অনেক অসুস্থ্য হয়ে যায়।
সাদ শানকে হসপিটালে নিয়ে স্যালাইন দিয়ে রাখতো এ সময়ে।
সেই সাথে সাদ তার ভাইকে বোঝাতে থাকে মৌরি সুস্থ্য হলে তো বাড়িতে আসবে।
শান যদি এমন খাওয়া দাওয়া ছেড়ে অসুস্থ্য থাকে তাহলে সে সময়ে তাদের মৌলি ভাবীকে দেখবে কিভাবে!
সাদের কথাটা শানকে টনিকের মতো টানে তার পর থেকে পাগলামি কমিয়ে দেয়।
ঠিকমতো না খেলেও অল্প কিছু তো খায়।
অন্যদিকে
মৌরি কিছুটা সুস্থ্য হতে এক সপ্তাহ সময়ে লাগে।
তবে তাকে আরও বিশ দিন হসপিটালে থাকতে হবে।
পুরোপুরি সুস্থ্য হওয়ার আগে ছাড়া পাবে না।
এক সপ্তাহ ধরে রিফাত দিন রাতের বেশিভাগ সময় মৌরির সেবায় কাটাচ্ছে।
রিফাত নতুন করে মৌরিকে পাওয়ার আশা মাথায় চাড়া দিয়ে উঠেছে।
তাইতো ইন্সপেক্টর সুমনের কাছে থেকে জানতে পেরেছে আলমাস চৌধুরী এসবের মধ্যে তেমন ভাবে জড়িত নয়।
সাজ্জাদকে বন্দি করে , তার কাছে থেকে শুধু মৌরির তথ্য নেওয়া হয়েছে।
আর পর্দার আড়ালে বসে চাবিকাঠি নেড়েছে অন্যজন।মৌরির এক্সিডেন্টের সাথে রেবার বাবা এবং মৌরির শত্রু মিলে করেছেন।
আর তাদের সাথে সঙ্গ দিয়েছে সাজ্জাদের বৌ রেবা।
পুলিশ সব কয়টাকে এরেষ্ট করেছে।
আলমাস চৌধুরী বাধ্য হয়ে মৌরির তথ্য দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে মৌরিকে হসপিটালে শান নিয়ে এসেছে, নিজের রক্ত দিয়েছে।
নিজের কাছে টাকা পয়সা যা ছিল সব কিছু মৌরির চিকিৎসার পিছনে খরচ করছে।
মূল কথা শান মৌরিকে বাঁচাতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেনি।
খবরটি জানার পরও রিফাত রেশমা বা মৌরিকে বলেনি।
সব শুনে রিফাত মনে মনে শানের কাছে কৃতজ্ঞ বোধ হলেও।
এসব কথা এখনেই মৌরি বা রেশমাকে জানাতে চায়নি।
ওরা শুনে যদি শানের উপরে দুর্বল হয়ে পড়ে তাই।
রিফাত মৌরিকে পেতে আরেকটু চেষ্টা করতে চায়।
নিজের ভালোবাসাকে পেতে না হয় একটু স্বার্থপর হলো।
তাইতো শানের খবর মৌরিকে দেয়নি।
এবং দিন রাত এক করে মৌরিকে সুস্থ্য করার পিছনে ব্যায় করেছে।
একমাস পর
রিফাতের সেবা যত্ন কেয়ারে মৌরি এখন মোটামুটি ভালো সুস্থ্য।
তাকে আজকে হসপিটালে থেকে রিলিজ দেওয়া হবে।
মৌরির ইচ্ছে এখানে থেকে সরাসরি বাড়িতে যাবে।
এদিকে রিফাত ভেবেছিল মৌরিকে তার ওখানে নিয়ে যাবে।
কিন্তু মৌরি নিজের বাড়িতে যাবে এ কথা শুনে না করতে পারলো না।
তবে বুদ্ধি করে কথার ছলে রিফাত নিজের মনের কথা মৌরিকে জানায়।
রিফাত আমতা আমতা করে মৌরিকে বলে,
তোমাকে আমার কিছু বলার ছিলো।
মৌরি রিফাতের কথা শুনে বলে,কি বলবেন বলে ফেলুন,
আমতা আমতা করছেন কেন রিফাত ভাই?
আচ্ছা মৌরি তোমার কি মনে হয় না মেহরাব দিন দিন বড় হচ্ছে।
এই বয়সে ছেলেরা বাবার সঙ্গ কামনা করে।
মেহরাবের তো বাবার আদর পেতে ইচ্ছে করে।
হয়তো তোমার কথা ভেবে বলতে পারছে না।
মৌরি রিফাতের কথা শুনে বলে, আপনার কথা বুঝতে পারছি না।
যা বলবেন ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বলে সরাসরি বলুন।
রিফাত মৌরির কথা শুনে বললো ,আচ্ছা মৌরি আমি কি মেহরাবের বাবা হতে পারি না?
মৌরি রিফাতের কথা শুনে বললো,কী?
রিফাত আবারো বললো ,তুমি যদি চাও তো মেহরাব ছাড়া আমাদের আর কোনো সন্তান আসবে না।
তবুও তুমি শুধু একবার আমাকে বিয়ে করতে রাজি হও।
রিফাতের কথা শুনে মৌরি,,,
.
রিফাতের কথা শুনে মৌরি কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে ঠান্ডা সুরে বললো, এতদিন অসুস্থ্য অবস্থায় আমার সেবা করেছেন।
আপনার বন্ধু ছেড়ে দেওয়ার পর পাশে দাঁড়িয়েছেন।
সেজন্য আজকে তার প্রতিদান চাচ্ছেন?
মৌরির কথা শুনে রিফাত চমকে যায়!
রিফাত মৌরির কথার প্রতিবাদ করে বলে, তুমি এসব কি বলছো?
আমি তোমাকে সাহায্য করেছি নিজের মানুষ ভেবে।
আর তোমাকে ভালোবাসি বলে বিয়ে করতে চাচ্ছি।
এখানে প্রতিদান আসলো কিভাবে?
মৌরি রিফাতের দিকে তাকিয়ে বললো, আপনি মানুষটা অনেক ভালো। আপনাকে আমি যথেষ্ট সম্মানও করি।
তবে আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।
আপনি আমাকে বিয়ের জন্য জোর করলে আমার কাছে মনে হবে আপনি প্রতিদান চাচ্ছেন।
আর প্রতিদান দেওয়া হয়ে গেলে আপনার জন্য এতদিন ধরে যে সম্মান আমার মনে আছে তা এক নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে।
.
সেদিন মৌরির কথা শুনে রিফাত বুঝতে পারে এই জীবনে মৌরিকে তার আর পাওয়া হবে না।
তবে সে না পেলেও শান জেনো মৌরিকে পায়।
সেটা ভেবে মৌরিকে ওর এক্সিডেন্টের বিষয়ে সবকিছু খুলে বলে।
এমনকি শান মৌরির জন্য কি কি করেছে।
মৌরি সব শুনে বলল, আমি এসব জানি,
এতটুকু জায়গায় তো পৌঁছাতে পেরেছি নাহলে একটা এনজিও চালাতে পারতাম বলুন?
মৌরির কথা শুনে রিফাত বুঝতে পারছে মৌরি সবকিছু আগে থেকেই জানে।
রিফাত মৌরিকে বললো, আমাকে তো ফিরিয়ে দিলে শানকে কি ফিরাতে পারবে?
সেদিন রিফাতের কথার মৌরি কোনো জবাব দেয়নি ।
মৌরি রেশমার সাথে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছে।
রিফাত সাথে আসতে চায়লে মৌরি নিষেধ করে দেয়।
এমনিতেই এতদিন অনেক করেছে মানুষটি।
তাকে আর জ্বালাতে চাচ্ছে না মৌরি।
মৌরিকে নিয়ে রেশমা বাড়িতে আসে।
শান মৌরিকে দেখে দৌড়ে তার কাছে যেতে নিলে রেশমা সামনে এসে দাঁড়ায়।
মৌরি রেশমাকে কিছু বলতে যাবে তার আগে সাদ রেগে রেশমাকে বলে,ভাবী তোমাকে তার পিএস রেখেছে যে তার সাথে কথা বলতে গেলে তোমার কাছে থেকে সময় ও অনুমতি নেওয়া লাগবে।
রেশমা সাদের কথা শুনে রেগে বললো, আপনার সাহস হয় কি করে আমাকে এসব বলার?
আমার বোনের ভালো মন্দ আমি দেখবো না তো কে দেখবে?
সাদ রেশমার কথা শুনে অবাক হয়ে বলে, এখানে ভালো মন্দ দেখার কি হয়েছে!
রেশমা সাদের কথা শুনে বলে, এখানে আলবাত ভালো মন্দ দেখার আছে।
তাছাড়া আপনার ভাই সুযোগ পেলে যে আমার বোনকে মেরে ফেলবে না তার গ্যরান্টি কোথায়?
সাদ রেশমার কথা শুনে, হাসতে হাসতে বললো, তুমি শুধু হাতে পায়ে বড় হয়েছো।
বুদ্ধি সুদ্ধি এখনও হয়নি।
.
আর তুমি হয়তো এটা জানো না, আজকে তোমার বোন এইযে দাঁড়িয়ে আছে না সেটা কিন্তু আমার ভাইয়ের জন্য।
আমার ভাই যদি তাকে ঠিক সময়ে হসপিটালে না নিয়ে যেতো আর তার রক্ত না দিতো তাহলে হয়তো তুমি আজকে বোনের সামনে দাঁড়িয়ে বড় বড় কথা বলতে পারতে না।
রেশমা সাদের কথা শুনে হতবাক হয়ে গেছে!
এদিকে সাদ বলে চলেছে, আমার ভাইয়া তোমার বোনকে এতোটাই ভালোবাসে যে তার জন্য নিজের ছোট আব্বুকে পর্যন্ত ছাড় দেয়নি।
আর তুমি সে মানুষটির সাথে যা নয় তা ব্যবহার করছো।
ভাবীকে একমাস ধরে দেখতে পর্যন্ত দেওনি ছিঃ রেশমা তুমি এমন করবে আমি তা ভাবতেই পারিনি।
শান তার ছোট ভাইকে শান্ত হতে বলছে।শান সাদকে
রেশমা ছোট ওর কথায় রাগ করতে নিষেধ করেছে।
এদিকে রেশমার মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
এতদিন যাকে খারাপ যেনে এসেছে আজকে সেই কিনা তার বোনকে বাঁচিয়েছে।
আর সে কি করছে তার প্রতিদানে কথাটা ভাবতেই লজ্জায় ঘৃণায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
অন্যদিকে মৌরি শানের দিকে তাকিয়ে বললো, আমি ঠিক আছি।
আপনি চিন্তা করবেন না।
আমি খুব ক্লান্ত এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না পড়ে এ বিষয়ে কথা বলবো।
কথাটা বলে মৌরি তার রুমে চলে যায়।
আসলে মৌরি শানের সাথে এই মুহূর্তে কথা বলতে চাচ্ছে না।
দিনের পর দিন যাচ্ছে সপ্তাহ শেষে মাস আসে মৌরি সুস্থ্য হলেও আগের মতো স্বাভাবিক নেয়।
ওর মনের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে তোলপাড় চলছে।
এরমধ্যে শান কয়েকবার ওর সাথে কথা বলতে এসেছে।
কিন্তু মৌরি শানকে এড়িয়ে গেছে।
শান বুঝতে পারছে না মৌরির এমন পরিবর্তনের কারণ।
আগে তো কিছু হলে রাগ দেখাতো এখন ওকে কেমন নির্লিপ্ততা ঘিরে রেখেছে।
যার মাঝে রাগ অভিমান কোথায় যেনো লুকিয়ে গেছে।
আগের মৌরিকে শান খুঁজে পাচ্ছে না।
এভাবে কেটে যাচ্ছে দিন।
এরমধ্যে সাজ্জাদের বাবা,মা, সাজ্জাদ,শানের মা,বাবা ও বোনেরা মৌরির কাছে তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।
.
তারা অনুতপ্ত ।
মৌরি তাদের ক্ষমা করলেও তাদের সাথে কথা বলে না।
নিজের মতো করে থাকে।
অন্যদিকে রেশমা এখানে মানে গ্রামে এসে পড়েছে।
স্বামী ও সংসার ও মেহরাব কে নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।
মেহরাবের মতো সন্তানের মা হয়ে,রোহানের মতো স্বামীর ভালোবাসা পেয়ে রেশমার জীবন পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।
আর ওদিকে সাদ তার দুনিয়াতে রেশমাকে ছাড়া শূন্যতা অনুভব করে।
দিন কোনমতে কেটে গেলেও রাত কাটাতে চায় না।
লিলি কয়েক বার চেষ্টা করেছে ছেলেকে বিয়ে করানোর।
কিন্তু সাদের এক কথা, সে বিয়ে করে কাউকে ধোঁকা দিতে পারবে না।
কারণ তার এই মন শুধু একজনকে ভালবাসতো এখনো বাসে তাই সেখানে আর কাউকে জায়গা দিতে পারবে না।
তাহলে শুধু শুধু বিয়ে করে একটা মেয়ের স্বপ্ন ভেঙ্গে অভিশাপের ভাগ নিবে কেনো?
লিলি ছেলের যুক্তির কাছে হার মেনে নেয়।
এছাড়া আর কি করার আছে।
বড় ঝা থাকলে হয়তো সাদকে বুঝাতে পারতো।
কিন্তু সে তো কিছু দিন হল না ফেরার দেশে চলে গেছে।
শানের মা মারা গেছে।
শান ভাবতে পারেনি তার মা এতো যলদি চলে যাবে।
তবে মরার আগে তার মা শয্যাসায়ী ছিল।
শৈলী বেগমের অনেক কষ্ট হচ্ছিল।
.
মৃত্যু যেনো তাকে এই কষ্টের হাতে থেকে মুক্তি দিয়েছে।
শান মায়ের জন্য সব সময় দোয়া করে।
অন্যদিকে চৌধুরী বাড়িতে নতুন খবর হচ্ছে সাজ্জাদের সাথে ওর বৌ রেবার তালাক হয়ে গেছে।
রেবার সাত বছরের জেল হয়েছে।
কারণ মৌরিকে মারার চেষ্টা করছে, নিজের স্বামীকে কিডনাপ করেছে।
সে বিবাহিত হয়েও একাদিক পুরুষের সাথে প্রেমের নাটক করে টাকা হাতিয়ে নিতো।
রেবার শাস্তি হওয়াতে সাজ্জাদ ভীষণ খুশি।
সে এখন রেবার মতো কালশাপের কাছে থেকে মুক্ত।
তবে মৌরির কারণে আলমাস চৌধুরীর শাস্তি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মৌরি মনে করে , আলমাস চৌধুরী তার ছেলেকে বাঁচাতে এমন করতে বাধ্য হয়েছে।
সেজন্য ইন্সপেক্টর সুমনের সাথে কথা বলে,তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ কিছুটা শিথিল করে দেয়।
তবে সম্পূর্ণ মওকুফ করে না।
এদিকে শান একদিকে মা’কে হারিয়েছে অন্যদিকে মৌরির এমন পরিবর্তন ।
শান মৌরির এমন আচরণ দেখে অধৈর্য হয়ে পড়ে।
শানের মা এক সময় শানের বন্ধু ছিলো।
শান মায়ের কাছে সবকিছু শেয়ার করতো।
হয়তো কিছু কারণে মায়ের থেকে কিছুদিন দূরে ছিল।
তবে মা’কে সে কম ভালোবাসতো না।শান তার
মা’কে তো হারিয়ে ফেলেছে।
কিন্তু মৌরিকে হারাতে চায় না।
হারানোর ভয়ে শান মৌরির সাথে কথা বলার জন্য এনজিওতে গিয়ে সবার সামনে মৌরিকে টেনে আনে।
মৌরি রেগে গিয়েও কিছুদিন আগে শান তা মা’কে হারিয়েছে তা ভেবে নিজেকে শান্ত করে বললো,এটা কোন ধরনের অভদ্রতা?
.
শান মৌরিকে জোর করে বাইকে বসিয়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে বলে,এখন ঠিক মতো বসে থাকবে।
তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
যা এখানে বলা সম্ভব নয়।
কথাটা বলে চুপ করে বাইক চালাতে থাকে।
মৌরিও শানের কথা শুনে আর কিছু বলেনি।
তবে মৌরি কিছুক্ষণ পর খেয়াল করে দেখে শানের বাইক বাড়ির দিকে ছুটে চলছে।
কিছুক্ষণ পর শান বাইক নিয়ে বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকে।
তবে ভিতরে না গিয়ে মৌরিকে নিয়ে বাগানে গেল।
মৌরি শানের দিকে তাকিয়ে বলল,কি বলবেন জলদি বলেন?
রেশমার ওখানে থেকে মেহরাব কে আনতে যেতে হবে।
শান মৌরির দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি ইদানীং আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছ কেন?
মৌরি শানের কথা শুনে বললো,এটা আপনার ভুল ধারণা।
শান মৌরির একদম কাছে গিয়ে বলল, মোটেও ভুল ধারণা না।
তুমি আমাকে দেখলে পালায় পালায় করছো ।
মৌরি শানের কথা শুনে বলে, আপনি বললেই তো হবে না।
তাছাড়া দুই একদিনের মধ্যেই আপনার সাথে আমি কথা বলতাম।
আপনি আপনার মায়ের জন্য কিছুদিন ধরে আপসেট ছিলেন তাই বলা হয়নি।
শান মৌরির দিকে প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে মৌরি কি বলবে?
তা দেখে মৌরি বলে,শান আমি আপনাকে তালাক দিতে চায়।
এই মুহূর্তে কথাটা বলা দরকার ছিল।
নাহলে বলতাম না।
.
আমাদের বিয়েটা যেহেতু আইনি ভাবে হয়নি তাই আপনি আমার সাথে কাজি অফিসে গিয়ে মুখে তালাক দিলেই হবে।
আর কিছু করতে হলে কাজী সাহেব বলে দিবেন।
শান মৌরির কথা শুনে চমকে যায়!
মৌরি এসব কি বলছে?
শান মৌরির দিকে তাকিয়ে বললো, আমি কখনো তোমাকে তালাক দিবো না।
মৌরি প্লিজ তুমি এই শব্দটি আমার সামনে উচ্চারণ করো।
তোমার মুখে এই তিনটি শব্দ শুনে যেনো আমার কলিজায় আগুনের সেঁকা লাগলো।
শানের কথা শুনে মৌরি বললো, দেখুন জীবন কোনো সিনেমা নয়।যে মাসের পর মাস একে অপরের কাছে থেকে দূরে থাকব ।
এদিকে তালাক না দিয়ে একে অপরকে কবুলের সম্পর্ক দেখিয়ে বা তার দোহাই দিয়ে বন্দি করে রাখবো।
তাছাড়া জীবনে আমি হয়তো কখনো আপনাকে মন থেকে স্বামী রূপে মানতে পারবো না।
হ্যাঁ ,এটা ঠিক আপনি আমার জন্য যা করেছেন সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ।
কিন্তু কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা ও একসাথে সংসার করা এক নয়।
তাছাড়া আপনি পুরুষ মানুষ আপনারও তো চাহিদা আছে।
এই সম্পর্ক থেকে আপনাকে মুক্ত করে দিতে চায় যাতে নতুন করে জীবন সাজাতে পারেন।
শান মৌরির দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি আমাকে এতটাই ঘৃণা কর যে তোমার নামের সাথে আমার না জড়িয়ে থাকুক তা চাচ্ছ না!
নাকি আমাকে মুক্ত করলে তুমি নতুন করে রিফাতের সাথে জীবন শুরু করবে?
তুমি যদি রিফাতের সাথে জীবন শুরু করতে চাও তো আমার যতো কষ্টোয় হোক না কেন,
আমি তোমার পথ থেকে সরে দাঁড়াবো।
মৌরি শানের কথা শুনে বলল, আপনার শেষের উঃ আগে দেয়,আমি শুধু রিফাত নয় অন্যে কারো সাথেই জীবন শুরু করতে চায়।
.
আমার কাছে এনজিও, হসপিটাল মেহরাব কে সময় দেওয়ার পর সময় কোথায়?
তাছাড়া আমি এই জীবনে সন্তুষ্ট আছি।
আমার অন্য কাউকে দরকার নেয়।
শান মৌরির কথা শুনে বললো, তুমি যেহেতু রিফাতের সাথে জড়াতে চাচ্ছ না,
তাহলে কি আমরা মেহরাবের কথা চিন্তা করে এক হতে পারি না মৌরি?
তুমি কি আমাকে অতীতের জন্য মাফ করতে পারো না?
মৌরি শানের কথা শুনে বললো,শান আপনি আমার সমস্যা বুঝতে পারছেন না।
আরেকটা কথা আমি আপনাকে আরও আগেই মাফ করে দিয়েছে।
আপনার পরিবর্তনের পরেও কেনো আপনার কাছে আসতে পারছি না জানেন, আপনার বাবাকে দেখলে আমার মায়ের রক্তাক্ত মুখটা ভেসে আসে।
ভেসে আসে আপনার সেদিনের বলা কথা গুলো।
আপনি বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না!
আমি আপনার পরিবর্তনকে সম্মান করি।
আপনার কিছু কাজে গর্ববোধ হয়।
আপনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
কিন্তু যখনেই আমরা একসাথে সংসার করবো তখন আমার মায়ের কথা মনে হলে আপনার প্রতি সম্মান, কৃতজ্ঞতা অম্লান হয়ে যাবে।
আপনার বাবাকে দেখলে রাগ উঠে যাবে।
তাদের সাথে খারাপ আচরণও করতেও আমার বাঁধবে না।
দেখা যাবে ,আপনার সাথে ঝগড়া ও অপমান করতে সব সময় মুখিয়ে থাকবো তাতে আমার ছেলের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে।
মেহরাব এখনও অনেক ছোট ওর সামনে এসব হলে সে নিশ্চয় আনন্দ পাবে না।
তাই আমি চায় না আমরা একসাথে থেকে সম্পর্কটাকে তিক্ততায় ভরে যাক ।
এর থেকে দূরে থেকে একটা ভালো সম্পর্ক থাকায় কি ভালো না?
শান মৌরির কথা শুনে কি বলবে বুঝতে পারছে না।
মৌরি তো একদিক দিয়ে ঠিকেই বলেছে।
তাছাড়া কোনো প্রকৃত সন্তান মায়ের খুনিদের সাথে থাকতে পারে না।
এ দিক দিয়ে মৌরিকে দোষ দিতে পারবে না।
শান যখন এসব ভাবছিল সে সময়ে মৌরি বললো,
এক জীবনে সব কিছু পাওয়া য়ায় না শান।
আমার সিদ্ধান্ত হয়তো এখন আপনাকে ক্ষনিকের জন্য কষ্ট দিবে, কিন্তু এক সময় আপনি নিজেই আমার সিদ্ধান্তকে সম্মান দিবেন,
.
মৌরির কথাটা শুনে শান মৌরিকে বলে,
এই জীবনে তোমাকে কখনো নিজের করে পাবো কিনা জানি না!
তবে যতদিন বেঁচে থাকবো আমার হৃদয় তোমাকে ভালোবেসে যাবে।
আমার কাছে থেকে সে অধিকার তুমিও নিতে পারবে না,মৌরি।
মৌরি সেদিন শানের কথা শুনে আর কিছু বলেনি।
এরপর দুই দিন কেটে যায় শান বা মৌরি কেউ কারো সামনে আসেনি।
হয়তো তারা সময় নিচ্ছে যেহেতু সময় মানুষকে বড় থেকে বড় ঘা ভরিয়ে দেয় ।
দুইদিন পরে শান মৌরির সামনে এসে বললো, তোমার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আমি অনেক ভেবেছি।
কিন্তু আমার মন তোমাকে ছাড়তে চায় না।
তাছাড়া মৌরি, আমি একবার যে মনে তোমাকে বসিয়েছি সেখানে আর কাউকে জায়গা দিতে পারবো না।
তাছাড়া একবার ভেবে দেখো আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলো।
কয়েক বছর যদি কখনো তোমার মনে আমার জন্য তোমার মনে একটু জায়গা তৈরি হয়েছে।
আমরা দুজনে একসাথে থাকতে পারি সেদিন তালাক শব্দটি আমাদের মাঝে দেয়াল হয়ে দাঁড়াবে।
কারণ আমাদের ধর্মে তালাক দিলে পুনরায় সে স্ত্রীকে গ্রহণ করা যায় না।
গেলেও আমি যতটুকু জানি তাতে পুনরায় আবার তাকে অন্য কারো স্ত্রী হয়ে নতুন স্বামীর সাথে কিছুদিন সংসার পর তালাক নিয়ে আগের স্বামীকে বিয়ে করতে হবে।
বিষয়টি কতটা ঘৃণার বুঝতেই পারছ।
তাই আমার মনে তোমাকে পাওয়ার যে ক্ষৃণ আসা আছে সেজন্য আমি চাইনা আমাদের তালাক হোক।
তবে তুমি চিন্তা করো না, আমি কখনো তোমার কাছে স্বামীর অধিকার চায়তে আসবো না যতক্ষণ তুমি না সেচ্ছায় দিবে।
.
তবুও আমাকে তোমাকে ছাড়তে বলো না।
মৌরি সেদিন শানের কথা রেখেছে, তবে মৌরির শর্ত জুড়ে দিয়েছে ,শান মেহরাবের বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করতে পারবে তবে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে মৌরির।
তবে ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া,খেলা করা।
ছেলেকে নিজের কাছে নিয়ে ঘুমানো মানে একজন বাবা হিসেবে ও সবকিছু করতে পারবে।
এবং তারা দুজনে মেহরাবের সামনে অন্য সব বাবা মায়ের মতো আচরণ করবে কিন্তু একা থাকলে নিজেদের মতো করে ব্যাবহার করবে।
শান কখনও মৌরির উপরে অধিকার দাবি করতে পারবে না।
শান বিনা বাক্য ব্যয়ে মৌরির কথা মেনে নিয়েছে।
দুই মাস পর
শান মনে করে একদিন তার ভালোবাসা মৌরির মন জয় করবেই।
এক সময় শানের ভালোবাসা মৌরির মনের আকাশে ডানা মেলবে।
তাছাড়া শান কখনো কি ভেবেছিল ছেলেকে কাছে পাবে, আদর করতে পারবে।
ছেলের মুখে বাবা ডাক শুনবে বা
মৌরিকে বন্ধু রূপে পাবে।
.
তাছাড়া শানের কারণে ওদের সম্পর্ক আপনি থেকে তুমিতে নেমেছে।
যা এক সময় ওর কাছে মনে হয়েছে অসম্ভব।
তবুও তো সে অসম্ভব গুলো আস্তে আস্তে সম্ভব হয়েছে।
শান যখন অতীতের ভাবনাতে বিভোর সে সময়ে মৌরি এসে শানকে বললো,কি ব্যপার তুমি অফিসে যাও নি?
শান মৌরির ডাকে অতীত থেকে বর্তমানে আসলো।
মৌরির দিকে তাকিয়ে বলল, ভালো লাগছিলো না ।
সেজন্য যায়নি জান।
তা তুমি এই সময়ে এখানে কেন?
আমাকে মনে পড়ছিল বুঝি?
মৌরি শানের দিকে তাকিয়ে বলল,কয়টা বাজে সে খবর আছে?
একটু পরেয় তো মেহরাবের স্কুল ছুটি হওয়ার কথা।
তাই ওকে নিতে এসেছি।
আমি জানতাম নাকি তুমি ফাঁকি বাজদের মতো অফিস ফাঁকি দিয়েছো।
তাই এখনও ওর স্কুলের সামনে বসে আছ!
শান মৌরির দিকে তাকিয়ে বলল,এই তুমি আমাকে ফাঁকি বাজ বললে?
মৌরি শানের কথা শুনে বলে, ফাঁকি দিবে তো কি বলবো!
দিন দিন তুমি যা ফাঁকি বাজ হচ্ছ আমার তো ভয় হচ্ছে ছেলেও না আবার বাবার মতো ফাঁকি দিতে শুরু করে।
শান মৌরির কথা শুনে বলে,জান তুমি এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারো।
কারণ আমাদের ছেলে কিন্তু স্বাভাব চরিত্র তোমার মতো পেয়েছে।
সে তার বাবার মতো খারাপ না।
.
মৌরি শানের কথা শুনে বলল, তোমাকে না এসব বলতে নিষেধ করেছি।
তুমি ভুল করেছো তার জন্য শাস্তিও কম পাওনি।
তাছাড়া স্ত্রী থাকতে একা থাকতে হচ্ছে।
কষ্ট হলেও নিজেকে এভাবে মানিয়ে নিয়েছো।
ধৈর্য ধরে আছো একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
আদৌও তা না হওয়ায় সম্ভবনা বেশি।
এতেই বোঝা যাচ্ছে আগের শান চৌধুরী আর এখনকার শান চৌধুরীর মধ্যেকার পরিবর্তন।
তুমি অতীত মনে করে কষ্ট পেলে আমার খারাপ লাগবে।
শান মৌরির কথা শুনে হেসে, বলে,এই জান আমাকে আবার ভালোবেসে ফেললে না তো?
মৌরি শানের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো, তুমি জীবনেও ঠিক হবে না ।
সুযোগ পেলেয় ফ্লার্ট করা শুরু হয়ে যায়।
শান মৌরিকে চোখ মেরে বলে, তবুও তো মহারানীর মনের ঘরে ঢুকতে পারছি না।
শান মৌরির চোখ রাঙানি দেখে বললো,ভয় পেয়ছি গো।
ওরা স্কুলের বাহিরে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল ।
মেহরাব স্কুল থেকে বের হয়ে শান ও মৌরিকে দেখে মা বলে দৌড়ে গিয়ে মৌরিকে জড়িয়ে ধরে বললো,কি মজা আজকে আব্বু ও মা একসাথে নিতে এসেছে।
ছেলের খুশি দেখে মৌরির চোখে পানি এসে যায়।
মনে মনে ভাবছে, ঝোঁকের মাথায় তখন তালাক নিলে হয়তো ছেলের প্রাপ্তির হাঁসি মাখা মুখ দেখা হতো না!
আর ওদিকে শান মৌরির মুখে হাঁসি ও চোখে পানি এবং ছেলের হাঁসি মাখা মুখটা দেখে বিরবির করে বলে, এখনও জীবনটা মন্দ নয়।
<>সমাপ্ত<>
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com