Breaking News

কাছে থেকেও সে অচেনা । পর্ব- ৩৮

প্রিন্সের হাত আলগা হওয়ার কারণে মেহেক ফ্লোরে পড়ে যায়।
সেদিকে প্রিন্সের কোনো খেয়াল নেয়
সে এক ধ্যানে তার শরীরের একাংশকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে হতবাক হয়ে গেছে!
মায়ের নাড়ি ছিঁড়ে সদ্য ঝরে পরা রক্তাক্ত ভ্রূণের দিকে তাকিয়ে প্রিন্স থমকে গেছে !
কিছু ভাবার বা বলার মতো সে অবস্থায় নেয়।
গতকাল ও যাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনেছে তার মন।
আজ তার সে স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পুর্বে ঝড়ে পড়ে রয়েছে।
এটা তো হওয়ার কথা ছিল না।
ওর চোখের সামনে ভেসে উঠছে অনেক বছর আগে কাহিনী।যা সব সময় তাড়া করে বেড়িয়েছে তাকে ।
আজকেও ঠিক সেদিনের ক্ষতগুলো তাজা হয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
সেদিন আপনজনদের রক্তাক্ত দেহ দেখতে হয়েছে।
আজকে নিজের আত্মজার।
প্রিন্সের মনে হচ্ছে ,ওর মা,বাবা ও বোনের রক্তাক্ত শরীর ওকে ধিক্কার দিচ্ছে নিজের সন্তানকে রক্ষা করতে পারেনি বলে।
কষ্ট হচ্ছে ভীষণ কষ্ট এই কষ্টের শেষ কোথায় প্রিন্স তা জানে না।
সেদিন তো প্রিন্স বাচ্চা ছিল তবুও তাকে আপনজন হারানো এতো বড় ব্যথাটা সহ্য করতে হয়েছে।
আজকেও সন্তান হারানোর ব্যথা সহ্য করতে হচ্ছে ।
এ কেমন নিয়তি।
এ ব্যথা তো সহ্য হচ্ছে না।
মনে হচ্ছে সবকিছু ধ্বংস করে দেয়।
কতরাত নির্ঘুম কেটেছে অতীতের নিষ্ঠুরতা মনে পড়ে।
কিন্তু যেদিন সে শুনেছে পিতা হবে সেদিন থেকে অতীতের ব্যথা ভুলতে চেষ্টা করেছে সেটাই কি অপরাধ ছিল?
তাই আজকে ওর সন্তানের রক্তাক্ত দেহ দেখতে হয়েছে।
যার আগমন বার্তা শুনে জীবনে গতিপথ বদলাতে চেয়েছিল।
তা পেয়েও হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে।
প্রিন্স ভ্রূণটাকে দু হাতের আজলে নিয়ে বুকের মধ্যে চেপে ধরেছে।
ভ্রূণটিকে জড়িয়ে রেখে বলছেন, আমার একটা আদেশে বা ইশারায় কারো জীবনের বাতি থেমে যায়।
আমার মমতার হাত কারো মাথায় বুলিয়ে দিলে সে শূন্য থেকে পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
মাফিয়াদের বস আমি।
দেশ বিদেশে আমার শতশত লোকজন ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে আছে।
সবাই আমাকে ক্ষমতাধর ব্যক্তি মনে করে।
আমার ক্ষমতা দিয়ে তো নিজের আত্মজার জীবন বাঁচাতে পারিনি।
আমার এতো ক্ষমতা থেকে লাভ কি হলো !
বাবাকে মাফ করতে পারবি তো?
বাবা তোকে বাঁচাতে পারলাম না।
এই সুন্দর পৃথিবীর আলো দেখার আগে তোকে ওরা শেষ করে দিলো।
আর আমি তোর বাবা হয়েও কিছু করতে পারলাম না।
ওরা তোর বদলে আমাকে মারলেও এতোটা কষ্ট হতো না সোনা।
তুই যে আমার অন্ধকার জগৎ এ আলো হয়ে এসেছিল সোনা।
আমার জীবনের প্রদীপ ছিলি তুই।
সেই প্রদীপের শেষ আমি বেঁচে থেকে কি করে মেনে নিবো।
এই শাস্তির থেকে তো মৃত্যু ও অনেক ভালো।
তোকে নিয়ে কল্পনার পাহাড় ছিল যা ওরা গুড়িয়ে দিয়েছে।
তুই জানিস?
এদিকে আমি তোকে নিয়ে কত স্বপ্ন বুনেছি।
তোর মায়ের গর্ভে ছিলি তখন থেকেয়।
তোর প আগমন, আমাকে বাঁচার অনুপ্রেরণা দিচ্ছেলো তোর মায়াবী মুখের হাঁসি দেখতে চেয়েছি,
কিন্তু পারলাম না।
তুই প্রথম কথা বলার চেষ্টা , হোঁচট খেয়ে হাঁটতে শেখা , সারাদিন ক্লান্তি হয়ে বাড়ি ফেরার পর তুই দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়বি আমার কোলো।
তোকে নিয়ে কত শত ইচ্ছে এঁকেছি মনের মধ্যে।
এখন তার কি হবে?
তুই কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেছিস।
তুই জানিস?
তোকে ছাড়া আমার কাছে এখন বাঁচা মরা একেই।
প্রিন্স বিরবির করে কথাগুলো বলছে আর ওর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে।
হঠাৎ করে ওর চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে গেছে।
প্রিন্স ভ্রূণটি চোখের সামনে এনে বললো,
সোনা তোকে যারা আমার বুকে আসতে দেয়নি।
তোর মুখে বাবা ডাক শুনতে দেয়নি তাদের একটা কেও আমি ছাড়বো না।
এদের এমন বীভৎস মৃত্যু দিবো যা কখনো ওরা কল্পনাও করেনি।
আমি ভালো হতে চেয়েছিলাম ওরা হতে দেয়নি।
আমার কলিজায় হাত দিয়েছে।
তাতেও ওরা খান্ত থাকেনি বরং আমার কলিজা
টেনে তা ছিঁড়েছে।
তাদের পরিণতি কতটা ভয়াবহ হবে তা জানতেও পারবে না।
ওদের শাস্তি দেখে আমার শত্রুরা ও ভয়ে ক্ষেপে উঠবে।
ভালো হতে চেয়েছিলাম তার মূল্য দিতে দিয়েছে আমার সন্তানকে।
কিন্তু ওদের মূল্য দিবে কে?
অন্যদিকে ,
রনি আধাঘণ্টার বেশি সময় ধরে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।
তার বস এতো দেরি করছে কেন তাইতো বুঝতে পারছে না।
সিকান্দার মির্জার কথা অনুযায়ী রুমের মধ্যে ভাবী ছাড়া আর কেউ নেয়।
তাহলে ভাই এখনো আসছে না কেন।
আচ্ছা সিকান্দার মির্জা আমাদের ভুল ইনফরমেশন দেয়নি তো?
ভাইকে বিপদে ফেলতে।
ভাই ও মেহেক ভাবী ভিতরে ঠিক আছে তো?
আমার মনে হচ্ছে এখানে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।
কথাগুলো বলতে বলতে , রনি ভিতরের দিকে গেল।
দরজা খোলা থাকায় রুমের মধ্যে সরাসরি প্রবেশ করলো।
রনি ভিতরে এসে চমকে যায়!
ফ্লোরে এতো রক্ত কেন?
আর ভাই খাটের ওপাশে বসে বিরবির করে কি বলছে?
মেহেক ভাবীর কিছু হয়নি তো !
কথাগুলো ভেবে দ্রুত প্রিন্সের কাছে যায়।
ওখানে গিয়ে মেহেককে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে রনির মনে চলা প্রশ্নগুলোর সব উত্তর পেয়ে গেছে।
রনি সবচেয়ে আশ্চর্য হচ্ছে এটা ভেবে মেহেক ভাবী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে সেদিকে প্রিন্স ভাইয়ের খেয়াল নেয়।
যেখানে ভাবীর কিছু হলে সে পাগল হয়ে যায়।
সেখানে আজ এতো নীরব ।
তা রনির হজম করতে কষ্ট হচ্ছে।
তাছাড়া ভাইকে কেমন যেন বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে।
মনে হচ্ছে সে তার নিজের মধ্যে নেয়।
ভাই তো এটাও ভাবছে না ভাবী আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে মারা যেতে পারে।
নাকি তিনি মারা গেছেন তাই বস এমন উদ্ভট আচরণ করছে।
রনি কথাগুলো ভেবে প্রিন্সকে ধরতে গিয়ে থমকে গেছে!
কারণ তার ভাইয়ের হাতের তালুতে রক্তাক্ত মানব গঠনের মাংসপিন্ডো।
এই মাংসপিণ্ডটি যে তার ভাইয়ের সন্তান তা রনির বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না।
রনি দেখে তার প্রিন্স ভাই মানব ভ্রূনটার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে কি যেন বলে চলছে।
মানুষটা কতজনের সন্তানের স্বপ্ন পূরণ করেছে তার স্বপ্নটা এমন পরিণতি তো মানতে কষ্ট হচ্ছে।
সে তো বাবা তাহলে তার অবস্থাটা কেমন তা ভাষায় বলার মতো না।
তবে ভাইকে ভালো রাখতে পারবে একমাত্র মেহেক ভাবী সেজন্য যে করেই হোক তাকে বাঁচাতে হবে।
কথাটা ভেবে রনি প্রিন্সের কাঁধে হাত রাখল।
প্রিন্স কাঁধে কারোও ছোঁয়া পেয়ে পিছনে তাকায়।
তাকিয়ে রনিকে দেখে কিছু না বলে আগের মত বাচ্চার দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে করে কি যেনো বলে চলছে।
রনি প্রিন্সের এমন কান্ডে ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
রনি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে প্রিন্সের কাঁধে হাত রেখে বললো,
ভাই একজন আমাদের ছেড়ে চলে গেছে কিন্তু আমাদের ভুলে অন্যজন না আবার না ফেরার পথে চলে যায়।
প্রিন্স রনির কথা শুনে হতভম্ব হয়ে বলেন,কি বলছো এসব!
রনি প্রিন্সের দিকে তাকিয়ে সাহস নিয়ে বললো, ভাবীকে দেখে তার অবস্থা ভালো মনে হচ্ছে না।
রুমের মধ্যে রক্তের ছড়াছড়ি দেখে মনে হচ্ছে আমারা দেরি করলে ভাবীকে বাঁচাতে পারবো না।
রনির কথা শুনে প্রিন্সের টনক নড়ে।
সে নিজের কষ্টে এতোটাই বিভোর হয়ে ছিলো যে মেহেকের কথা একদম ভুলে গেছে।
আচ্ছা মেহেক তো আমার বুকে ছিলো সেখানে থেকে পড়লো কখন!
মেহেকের নিস্তেজ দেহ দেখে প্রিন্সের মনে হচ্ছে , তার বুকের মধ্যে কেউ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্ত বের করছে।
মেহেকের কিছু হলে মুনকে কি বলবে?
কথাটা ভাবা মাত্র পকেটে থেকে একটা রুমাল বের করে ভ্রূনটিকে রুমাল দিয়ে পেঁচিয়ে রনিকে বলে, রনি আমার বাচ্চাটাকে তোমার হাতে একটু নেও।
রনি অবাক হয়ে বললো, বাঁচ্চা?
রনিকে অবাক হতে দেখে প্রিন্স ওকে বলে,হ্যাঁ আমার বাচ্চা।
তোমার কাছে এটা একটা মাংসপিণ্ড কিন্তু আমার কাছে আমার দেহের অংশ।
আমার সন্তান।
রনি প্রিন্সের কথামত ভ্রূণটিকে নিজের হাতে নেয়।
ওদিকে বাচ্চাটা রনির কাছে দিয়ে প্রিন্স সময় নষ্ট না করে মেহেককে কোলে তুলে নেয়।
রনি তা দেখে এক হাতের তালুতে ভ্রূনটি রেখে ডাঃ ইজাজ কে ফোন দেয়।
বলে, ভাবী অসুস্থ্ প্রিন্স ভাই ভাবীকে নিয়ে আসছে ভাই আপনি অটি রেডি করুন।
এবং আপনার বিশ্বস্ত কোনো গাইনী ডাক্তারকে অটিতে এনে রাখুন।
আর খেয়াল রাখবেন বিষয়টি যেনো বাহিরে না যায়।
কথাগুলো বলে রনি ফোন কেটে দিল।
প্রিন্স আর রনি মেহেককে নিয়ে বের হয়ে আসে।
বাহিরে এখনও গোলাগুলি চলছে।
বাহিরে একজন গার্ডকে বললো , এখানে নিচ তলায় দক্ষিণ সাইডে একটা গোপন রুম আছে।
ওটা ভালোমত চেক করবে ওখানে সিসি ক্যামেরায় যতো রেকর্ড তা বের করে আমার কাছে নিয়ে এসো।
কথাটা বলে প্রিন্স মেহেককে নিয়ে গোপন রাস্তা দিয়ে বের হতে নেয় ।
ওর পিছনে পিছনে রনিও আসছে।
ওরা যখন বিলিং থেকে বের হতে যাবে তখন সামনে তাকিয়ে দেখে কোবরা প্রিন্সের দিকে বন্ধুক তাক করে রেখেছে।
প্রিন্স কোবরা দিকে তাকিয়ে বললো, কোবরা আমার রাস্তা থেকে সরে দাঁড়া।
আমাকে যেতে দে।
কোবরা উচ্চস্বরে হেসে বললো, আজকে তো তোকে ছাড়বো না।
তুই আমার ঢেড়ায় এসে বড্ড ভুল করেছিস প্রিন্স।
তোকে তো মরতে হবেই ।
প্রিন্স কোবরা কে উদ্দেশ্য করে বললো, বাঘের লেজ দিয়ে কান চুলকাতে আসিস না,
তাহলে থাবা খেতে হবে।
তাছাড়া আমি তোকে এক সপ্তাহ সময় দিলাম আমার থেকে বাঁচতে পারিস তো বেঁচে দেখা।
কোবরা প্রিন্সের কথা শুনে হো হো করে হেসে বলল,তুই এখন বেঁচে ফিরলে তো আমায় মারার কথা ভাববি।
আজ আমার হাতে তোর মৃত্যু নিশ্চিত কথাটা বলে প্রিন্সের দিকে সুট করতে…..
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com