এক প্রতিবাদী নারীর জীবন যুদ্ধের গল্প । পর্ব- ৫১
শান আইসিইউর বাহিরে থেকে কাঁচের মধ্যে দিয়ে মৌরিকে দেখছে ।
মৌরি কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে।
শানের মৌরিকে এভাবে দেখে ভালো লাগছে না।
তেজী , রাগী , হুমকি দুমকী দেওয়া মৌরি শানের বেশি ভালো লাগে।
ক্লান্ত ও দুর্বল হেরে যাওয়া মৌরিকে শানের পছন্দ নয়।
শান মনে করে তার মৌরি এভাবে হেরে যেতে পারে না।
আল্লাহ তায়ালা আনহুর কৃপায় তার মৌরি মৃত্যুর মুখে থেকে ফিরে এসেছে এটাই সবচেয়ে বড় কথা।
বাহিরে থেকে আইসিইউর কাঁচের ভিতর দিয়ে মৌরির দিকে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে শান বিরবির করে কথাগুলো বলছিল
সাদ ভাইকে বিরবির করতে দেখে ভাইয়ের কাছে এসে বললো, ভাইয়া কি হয়েছে?
কিছু না ,শান সাদকে জবার দিলো।
সাদ ভাইকে এ বিষয়ে ঘাটলো না।
তবে ভাইকে বললো, ভাইয়া ভাবীর জ্ঞান ফিরেছে শুনলে তো ।
এবার বাসায় গিয়ে একটু রেস্ট নেও।
আমি এখানে আছি।
শান ছোট ভাইয়ের কথা শুনে বললো, বাসায় একটু যাওয়ার দরকার ছিল তবে রেষ্ট নিতে নয় আলমাস চৌধুরীকে পুলিশের কাছে তুলে দিতে।
কিন্তু এই মুহূর্তে মৌরিকে রেখে আমি যেতে পারছি না।
সাদ শানের কথা শুনে বলে,ভাইয়া এখন এসব নিয়ে আলোচনা করার দরকার নেয়।
পড়ে ঠান্ডা মাথায় আব্বুর ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
শান সাদের কথা শুনে বললো,
আমি ইন্সপেক্টর সুমনকে ফোন করে বলে দিয়েছি।
মৌরির অবস্থার কথা এবং এসব কিছুর সাথে আলমাস চৌধুরী জড়িত আছে সেটাও জানিয়ে দিয়েছি।
তারা কাছুক্ষণের মধ্যেই বাড়িতে পৌঁছে যাবে ।
আমি জানি ভাই তোর কষ্ট হচ্ছে নিজের বাবার ব্যাপারে এসব কথা শুনে।
কিন্তু একটা মেয়ের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার শাস্তি তো তাকে পেতেই হবে।
সাদ শানের কথা শুনে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো, তাহলে আমার সম্পর্কে তুমি ভুল জানো ভাই।
এই চিনো তুমি তোমার ভাইকে?
আর কেও না জানুক আমি তো জানি ,এমন সিদ্ধান্ত নিতে আমার থেকে তুমি বেশি কষ্ট পাচ্ছো ।
তবুও চাচ্ছ অপরাধীদের শাস্তি হোক।
তাহলে তোমার ভাই হয়ে আমি কেন একজন অপরাধীর জন্য কষ্ট পাবো।
সে যা করেছে তার জন্য তাকে শাস্তি পেতেই হবে।
শান সাদের কাছে এমন কথায় আসাকরে ছিল।
তাইতো সাদের কথা শুনে শান সাদকে বুকে জড়িয়ে ধরে।
অন্যদিকে আলমাস চৌধুরী সাজ্জাদকে বাড়িতে ঢুকতে দেখে দৌড়ে ছেলের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,বাবা তুই ঠিক আছিস?
ওরা তোর কোন ক্ষতি করেনি তো?
রেবা দূর থেকে শ্বশুরের আল্লাদ দেখে মুখ ঝামটা দিয়ে বিরবির করে বলে,ঢং একদিন তার বুইড়া ছেলে বাড়িতে আসেনি তাতে বুড়ো মনে হয় পাগল হয়ে গেছে।
যত্তসব ফালতু ইমোশন্যাল পাবলিক।
কথাটা বলে নিজের রুমে চলে গেল।
অন্যদিকে সাজ্জাদ বাবার কথা শুনে কিছু বলতে যাবে তার আগেই বাড়িতে দুই তিন জন পুলিশ ঢুকলো।
আলমাস চৌধুরী সেদিকে তাকিয়ে দেখে পুলিশ তিন জনের মধ্যে তাদের একজন মৌরির পরিচিতি ,কি যেনো নাম?
ওহ্ মনে পড়েছে সুমন।
আচ্ছা এরা বাড়িতে কেন এসেছেন কথাটা ভেবে আলমাস চৌধুরী চমকে যায় আর সাজ্জাদের তো এদের দেখার পর থেকে ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।
এদিকে ইন্সপেক্টর সুমন তাদের সামনে এসে বললো,ইউ আন্ডার এরেস্ট আলমাস চৌধুরী ।
আলমাস চৌধুরী ইন্সপেক্টর সুমনের কথা শুনে বললো,মানে কি?
ফাজলামি পেয়েছেন!
আপনারা অনুমতি ছাড়া চৌধুরী বাড়িতে ঢুকে এসব কি বলছেন?
ইন্সপেক্টর সুমন আলমাস চৌধুরী কাছে এসে বললো, আপনার সাহস হয় কি করে আমার বোন সমতূল্যে মৌরি ম্যাডামকে মারার পরিকল্পনা করার?
আলমাস চৌধুরী ইন্সপেক্টর সুমনের কথা শুনে আঁতকে উঠে।
আলমাস চৌধুরী মনে মনে বলল,তার মানে পুলিশ সব জেনে গেছে ।
আচ্ছা ইন্সপেক্টর সুমন এটা বলছে কেন আমি মৌরিকে খুন করার পরিকল্পনা করেছি
এটা তো সত্যি না।
এখন আমার কি হবে কথাটা মনে মনে বললেও শব্দ করে পুলিশকে বললো আমি কিছু করিনি অযথা আপনারা আমাকে হয়রানি করতে এসেছেন।
আমি কিন্তু আপনাদের নামে অভিযোগ করবো।
এরমধ্যে লিলি এসে বলল,কি যা তা বলছেন আপনারা?
আমার স্বামী এমন কিছুই করেনি।
ইন্সপেক্টর সুমন আলমাস চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললো, আপনার বিরুদ্ধে আমাদের কাছে যথেষ্ঠ প্রমান আছে তাই অযথা তর্ক করে আমাদের সময় নষ্ট করবেন না।
কথাটা বলে আলমাস চৌধুরীকে হ্যান্টক্যাপ পড়িয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
লিলি ও সাজ্জাদ বাঁধা দিতে এলে , ওদেরও থানায় নিয়ে যাবে বলে।
তা শুনে ওরা পিছিয়ে যায়।
এদিকে
খুব ভোরে মৌরির ঘুমের ঘোর কেটে যায়।
গতকাল জ্ঞান ফিরার পর একবার চোখ মেলেছিল তখন আসেপাশে সব ঘোলা ঘোলা দেখছিল তখন ঘোরের মধ্যে মনে হয়েছে ও মারা গেছে
ভেবে সে সময়ে মা ও খায়ের চৌধুরীকে মনে মনে খুব খুঁজেছে।
কিন্তু তাদের দেখা পায়নি।
কিন্তু এখন ভালো করে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে ও হসপিটালে আছে।
তার মানে সে বেঁচে আছে।
তাইতো মা ও দাদুকে দেখতে পায়নি।
তাকে এখানে কে এনেছে ?
কথাটা ভেবে মৌরি এদিকে ওদিকে তাকিয়ে উঠতে নিলে ব্যথা পায়।
একহাতে হাতে ক্যানেলা লাগানো ছিল সেটায় চাপ লেগে যায়।
মৌরি ব্যথা পেয়ে আহ্ করে উঠল।
মৌরি একটি বিষয় খেয়াল করছে ব্যথা পেলেও ওর হাত নাড়াতে ততো কষ্ট হচ্ছে না যতটা কষ্ট হচ্ছে শরীর নাড়াচাড়া করতে।
আর মাথা তো তুলতেই পাড়ছে না।
কেমন ভারি ভারি হয়ে আছে।
তখন মনে পড়ে মাথায় গাছের সাথে জোরে বাড়ি খেয়েছিল ।
তাই হয়তো তুলতে কষ্ট হচ্ছে।
কিন্তু ও তো জঙ্গলে ছিল তাহলে ওকে জঙ্গলে থেকে কে আনলো?
এদিকে শান মৌরির জন্য ওষুধ নিতে গিয়েছিলো।
বাহিরে থেকে এসে কেবিনে উঁকি মেরে দেখে মৌরি নড়াচড়া করছে।
তা দেখে শান দৌড়ে কেবিনে ঢুকে মৌরিকে হালকা করে জড়িয়ে ধরে বললো,জান তোমার কেমন লাগছে?
কোথাও ব্যথা করছে না তো?
জান….
শান কথাটা শেষ করতে পারেনি তার আগেই মৌরি একহাতে ওর সব শক্তি দিয়ে শানকে ধাক্কা দিল।
শান হালকা করে ধরে থাকায় নিচে পড়ে যায়।
মৌরি তখন অনেক কষ্টে বলে,আপনার সাহস হয় কি করে , যে হাতে আমার মায়ের রক্ত লেগে আছে সেই হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরার?
নাকি মায়ের মতো আমাকেও খুন করতে চাচ্ছেন?
মৌরির কথা শুনে শান হতভম্ব হয়ে গেছে।
মৌরি এই শরীরেও ওকে নিজের অতীত মনে করিয়ে দিতে ব্যস্ত।
যে অতীত শান ভুলতে চায় তা কেন ওর সামনে বারবার এগিয়ে আসে।
শান ধাতস্থ হয়ে কিছু বলতে যাবে এরমধ্যে রুমের মধ্যে রিফাত, রোহান, তাদের বাবা, রেশমা ও মেহরাব ঢুকে ।
আর সবার শেষে সাদকে কেবিনে ঢুকতে দেখলো।
শান তাতে বুঝতে পারছে ওদের আনতেই তখন সাদ বাহিরে গেছে।
এদিকে রেশমা ও মেহরাব মৌরিকে ধরে কেঁদে দিয়েছে।
মৌরির চোখ দিয়েও পানি বের হচ্ছে।
মেহরাব তো মায়ের মুখে অনবরত চুমো খাচ্ছে আর বলছে মা ও মা তোমার খুব ব্যথা করছে?
এদিকে মৌরি ভাবতেই পারেনি রেশমা ও মেহরাবকে আবার দেখতে পাবে।
আল্লাহ তায়ালা ওকে দেখার সুযোগ দিয়েছে। তা ভাবলেই চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে।
তবে হঠাৎ করে এমন লাগছে কেন!
মাথায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হচ্ছে।
মনে হচ্ছে মাথাটা ফেটেয় যাবে বোধহয়।
এদিকে রেশমা ও মেহরাবের কান্না দেখে রিফাত ও রোহানের চোখেও পানি এসে গেছে।
তবে রিফাত রেশমা ও মেহরাবকে বললো,তোমরা এমন করলে মৌরি আরও বেশি অসুস্থ্য হয়ে যাবে।
ওকে ছাড়ো তোমরা।
আর রেশমা তুমি মেহরাব কে বুঝাবে কি তার বদলে নিজেই অবুঝের মতো করছো!
রিফাত কথাটা বলে মৌরির দিকে তাকিয়ে দেখলো ,মৌরি চোখ বুজে আছে।
রিফাত মৌরির কাছে গিয়ে হাতের নার্ফ চেক করে আঁতকে উঠে।
তাড়াহুড়ো করে রেশমা ও মেহরাব কে সরিয়ে দিয়ে বললো, রোহান শানকে নিয়ে যলদি যা ডাঃ ডেকে আন।
মৌরি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে ওর অবস্থা ভালো না ।
রিফাতের কথা শুনে শানের হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।
সময় মানুষকে কোথায় নিয়ে যাবে তা কেউ বলতে পারে না।
সময়ের ব্যাবধানে একসময় যত্নের অভাবে যে সম্পর্কগুলো ছিল রূক্ষ।
যত্ন ও ভালোবাসা পরশে সে সম্পর্কগুলো হয়ে ওঠে সজিব ও প্রাণবন্ত।
এক সময় কাছে থেকেও যে ছিল অনেক দূরে।
আজ মনের টানে সে এসে গেছে কাছে।
জীবন যুদ্ধের হারের মাঝেও যে জিত লুকিয়ে থাকে সেটা সবাই বুঝতে পারে না।
তবে যারা বুঝতে পারে তারাই তো প্রকৃত সুখী।
এটাই তো জীবন ।
এক বছর পর
মেহরাব সোনা কোথায় তুমি?
ডাকতে ডাকতে শান মৌরির রুমে ঢুকে মৌরিকে দেখে বললো,জান তোমাকে শাড়িতে যা সুন্দর আর স্বিগ্ধ লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না।
আজকে সকালটা স্বিগ্ধতার রানীকে দেখে শুরু হয়েছে।
তারমানে সারাটা বেলা দারুন যাবে।
মৌরি শানের কথা শুনে বলল, বয়স তো আর কম হলো না।
এখনও মেয়েদের দেখলে ফ্লাট করতে মুখিয়ে থাকো।
এখনও সময় আছে অব্যাশটা বদলাও।
শান মৌরির কথা শুনে বলল, ছিঃ জান আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছ কেন?
আমি তোমাকে ছাড়া আর কারও দিকে ভুলেও তাকায় না।
ফ্লার্ট করা তো অনেক দূরের বিষয়।
মৌরি শানের দিকে তাকিয়ে বলল,ও হ্যাঁ আমি তো ভুলেই গেছি তুমি তো আবার শাধু পুরুষ মানুষ।
শান মৌরির কথা শুনে বিরবির করে বললো,শাধু পুরুষ না হলে তোমার মত আগুন সুন্দরী বৌ থাকতে কেউ একা থাকতে পারে!
যেখানে তোমাকে দেখলেয় মনে হয় বুকের মধ্যে পিষে ফেলতে।
তুমি মেয়ে তা কি বুঝবে!
শানকে বিরবির করতে দেখে মৌরি চোখ রাঙিয়ে বললো, চৌধুরী সাহেব কি পাগল হলে নাকি?
একা একা বিরবির করছো?
শান মুচকি হেসে বললো,জান এখনো পাগল হয়নি তবে তোমার মতো সুন্দরী ডাক্তারে সেবা পেলে পাগল হতে বাঁধা নেয়।
মৌরি কপট রাগ দেখিয়ে বললো ,চৌধুরী সাহেব বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু!
শান মৌরির দিকে তাকিয়ে বলল,আরে আরে রাগছো কেন আমিতো ছেলের জন্য এখানে এলাম।
ওকে স্কুলে দিয়ে তারপর অফিসে যাবো।
তা আমার সোনা বাবাটা কোথায়?
এরমধ্যে মেহরাব শানের সামনে এসে বললো ওহ্ আব্বু তোমার জন্য আমি ঠিকমত দুই নাম্বারটা সাড়তে পারলাম না।
শান জিভে কামড় দিয়ে বললো, ইস্ সরি সোনা ভুল হয়ে গেছে।
মেহরাব ওর বাবার কথা শুনে বলল ইটস্ ওকে বাবা।
এখন স্কুলে চলো দেরি হয়ে হচ্ছে তো।
শান মৌরির দিকে তাকিয়ে ,ম্যাম আসি বলে মেহরাবের হাত ধরে বললো আব্বুজান চলুন আপনার নাকি দেরি হয়ে যাচ্ছে।
মেহরাব বাবাকে বললো হুঁ।
শান বাইকে মেহরাবকে বসিয়ে নিজে বসে স্কুলের উদ্দেশ্যে ছুটে চলছে ছেলেকে নিয়ে।
স্কুলের সামনে এসে ছেলেকে বিদায় দিবে সে সময়ে মেহরাবের সহপাঠী তানি বললো, হ্যালো শান কেমন আছো?
শান মেয়েটাকে চেনা।
এই পিচ্চি মেয়ে তার ছেলের সাথে পড়ে।
মেয়েটা তাকে দেখলেই হাসি দেয়।
তাই মেয়েটার কথা শুনে মুচকি হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ ।
তবে সোনা হ্যালো এবং নাম ধরে না বলে আঙ্কেল বললে ও সালাম দিলে বেশি খুশি হতাম।
তানি শানের কথা শুনে বলে, আমিতো তোমাকে সালাম দিবো ভেবেছি কিন্তু মা যে বলে তোমাকে দেখতে নায়কের মতো লাগে।
আর নায়কেরা তো হাই হ্যালো এবং স্মার্টদের বেশি পছন্দ
তাছাড়া তুমি হচ্ছো আমার ক্রাশ সেজন্য আঙ্কেল বলা যাবে না।
আচ্ছা শান আমাকে কি তোমার পছন্দ হয়েছে?
শান এই পিচ্চির কথা শুনে টাস্কি খেলো।
আর মনে মনে শুকরিয়া করলো মৌরির শিক্ষার। মেহরাব মৌরির শিক্ষা মাথায় রেখে সঠিক পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে বলে।
শানকে চুপচাপ দেখে তানি আবারো বললো,কি ব্যাপার বললে না যে?
শান ভেবে পাচ্ছে না এই বয়সে এতো বেয়াদব আর ইচড়ে পাকা হয়েছে কেমনে।
শান চুপচাপ থাকলে মেহরাব চুপ থাকলো না।
বরং সে তানিকে বলে,এই তোরা এতো পঁচা কেন?
তুই আমার বাবাকে নিয়ে একদম এসব বলবি না।
আর তুই পঁচা তোর বাবাও পঁচা।
শান ছেলের কথা শুনে বললো, ছিঃ বাবা কাউকে তার বাবা নিয়ে কথা বলতে নেয়।
মেহরাব অভিযোগের সুরে বললো,এই মেয়েটা সব সময় তোমাকে নিয়ে বকবক করে।
যা আমার একটুও ভালো লাগে না
আর ওর বাবা তো আমায় দেখলেই মায়ের কথা জানতে চায় এবং বলে,
আমার মা নাকি আগুন সুন্দরী।
তার তাপে সবাই গলে যাবে।
কথাটা শুনে শানের মুখ শক্ত হয়ে গেছে।
রাগে মনে চাচ্ছে তানির বাবাকে মেরে ভর্তা করতে।
তার বৌয়ের দিকে নজর দেয় শালা লুচ্চা।
কিন্তু ছেলের স্কুল এটা তা ভেবে মনের রাগ মনেতে মাটি চাপা দেয়।
ছেলের ক্লাস শুরু হয়ে যাবে দেরি বলে,শান নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বললো, সোনা তুমি তো আমার গুড বয়।
আর গুড বয়েরা তো বাজে কথায় কান দেয় না।
মেহরাব মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বুঝায়।
শান ছেলের কপালের চুমু দিয়ে চলে গেল।
শান ভেবেছিল মেহরাব কে দিয়ে অফিসে চলে যাবে কিন্তু তানির বাবার কথা শুনে, হাত নিসপিস করছে।
অফিসে যেতে ইচ্ছে করছে না।
মৌরি সব সময় শালীনতার বজায় রেখে চলাফেরা করে তারপর কিছু মানুষ ওর দিকে নজর দিবেই যা শানের কাছে ভালো লাগে না।
শানের মাঝে মাঝে মনে হয় মৌরিকে সবার নজর থেকে বাঁচিয়ে ওর সামনে বসিয়ে রাখতে।
কিন্তু সে অধিকার যে ওর নেয়।
তবে মৌরি ওকে একটা অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছে বলে আফসোস নেয়।
বছর খানেক আগে যা ছিল স্বপ্ন তা এখন হাতের মুঠোয় পেয়েছে সেটায় কম কিসে কথাটা ভেবে শান একবছর আগের অতীতে চলে যায়।
সেদিন মৌরি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে শান ডাক্তার ডেকে নিয়ে এলে রিফাত ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানতে পারে মৌরির জীবনের এখনও পুরোপুরি সংকট কাটেনি তা জ্ঞান হারানোয় বুঝা যাচ্ছে।
তবে তারা আশাবাদী মৌরিকে বড় কোনো হসপিটালে নিলে তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
রিফাত কথাটা শুনা মাত্র তার পরিচিত ডাঃ ও হসপিটালে কথা বলতে বাহিরে চলে যায়।
রিফাত বাহিরে গেলে শান মৌরির কাছে যেতে নেয় সে সময়ে রেশমা শানের হাত ধরে টেনে কেবিনে থেকে বাহিরে নিয়ে এসে বলে, খবরদার শান চৌধুরী ভুলেও আমার বোনের কাছে যাবেন না।
আমার বোনের থেকে দশহাত দুরত্ব বজায় রাখুন।
শান রেশমার কথা শুনে বলে,দেখো তোমার সাথে আমি পড়ে কথা বলছি এই মুহূর্তে মৌরির কাছে থাকা আমার ভীষণ দরকার।
রেশমা কথাটা শুনে বলে, আমার বোনকে খুন করতে চান!
সে বেঁচে আছে তা আপনার সহ্য হচ্ছে না।
সেজন্য উঠে পড়ে লেগেছেন তাকে মারতে কিন্তু আপনি ভুলে যাচ্ছেন মৌরির সাথে তার ছোট বোন আছে।
আপনি বা আপনার পরিবার তার কিছুই করতে পারবে না।
চাচাকে দিয়ে আমার বোনকে মারতে চেয়েও শান্তি হয়নি না?
শান রেশমার কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।
এসব কি বলছে রেশমা সে মৌরিকে তার মৌরিকে,,,,
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com