Breaking News

গল্পঃ ভাড়াটে বউ । পর্ব - ০৫


ভাবি তুমি আবার মানে জানতে চাও,
তুমি জানো ভাইয়া আজকে ভোরে বড়
বাবার সাথে ফজরের নামাজ পড়তে  ছে।
— কী বলছো তুমি এসব?
— হ্যা ভাবি আমি ঠিকেই বলছি, কেননা
আমি নিজ চোখে দেখেছি ভাইয়া টুপি
পড়ে বড় বাবার সাথে মসজিদে যাওয়ার
জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছে। আজ এতো
বছর পর এই প্রথম আমি আবার বড় বাবাকে
হাসতে দেখেছি, ভাবি এতো ভালো
একটা কাজ করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না।
— এই মিথিলা তুমি সত্যি বলছো তো?
— হুম কেন ভাবি।
–আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না এই তুমি
আমাকে একটা চিমটি কাটোতো।
— ওকে ফাইন।
এই বলে মিথিলা মুচকি হাসতে- হাসতে
রাইসাকে ইচ্ছে করে জোড়েশোরে একটা
চিমটি মারে।
চিমটিটা খেয়ে রাইসা চিৎকার দিয়ে
বলে উঠে — উহ! মিথিলা চিমটি দিতে
বলেছি বলে এতো জোরে দিবে।
— স্যরি ভাবি।
কিন্তু রাইসা মিথিলার স্যরি কথাটি না
শুনে আনমনে চিন্তা করতে লাগলো— সেই
তো নামাজ পড়তে গেলো তাহলে আমার
সাথে কেন এমন আচরন করলো?
আসলে পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে যারা
নিজেদের কষ্ট, অনুভূতি আর নিজের
ভিতরের আসল মানুষটাকে সবার থেকে
লুকিয়ে রাখে, সেই মানুষ গুলোকে চেনা ও বড় দায়।
এই মানুষটা ও বোধ হয় তাদের তালিকার একজন হবে।
রাইসার এরুপ রোবটের মতো দাড়িয়ে
চিন্তার জগতে মগ্ন থাকতে দেখে
মিথিলা একটু বিরক্তিকরভাব নিয়ে
রাইসার হাত স্পর্শ করে বলে উঠলো — কী
এতো ভাবছো ভাবি।
— না কিছুনা।
— ও
এই বলে মিথিলা নিজের হাতটা গুটিয়ে
নিতে ব্যস্ত হতেই হঠ্যাৎ ওর মনে হলো
রাইসার শরীরটা কেমন জানি গরম হয়ে
আসছে, একটু অবাক কন্ঠে মিথিলা
রাইসাকে বললো— ভাবি তোমার শরীর
দেখি গরম হয়ে আসছে।
রাইসা মিথিলার কথা ঘুরানোর জন্য
হাসিমাখা কন্ঠে বলে উঠলো— আরে
আমার ননদিনী ও কিছুনা। এখন তুমি বল
এতো সকালে আমার ঘরে কেন আসছো।
মিথিলাও তখন রাইসাকে উদ্দেশ্য করে
বলে উঠলো–তোমাকে নিচে মা, বড় মা
ডাকছে চলো। আর তাছাড়া কতক্ষন পর
পাড়ার লোকজন আসবে তোমায় দেখতে।
— আমায় দেখতে, কিন্তু কেন?
— বা রে তুমি আমার ভাইয়ের বউ, এ
পাড়ার সব থেকে ধনী শামছুল হক
সাহেবের একমাএ পুএ রিয়ান হকের বউ,
তো তোমাকে দেখতে আসবে না কি
আমাকে দেখতে আসবে, আর তাছাড়া তুমি
নতুন বউ না, সবাই দেখবে না আমার
ভাবিটা কত সুন্দর।
মিথিলার কথায় রাইসা একটু অন্যমনস্ক
হয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো– নতুন বউ,
ভাবি, সবকিছু শুধুমাএ দুই মাসের জন্য। দুই
মাস পর সবকিছু শেষ হয়ে যাবে, সবকিছু।
— ভাবি তুমি কিছু বললে?
— হ্যা, না মা,মানে আমি বলেছি,
তাড়াতাড়ি নিচে চলো সবাই আমাদের
জন্য অপেক্ষা করছে।
— হুম যাবো কিন্তু এখন না।
— কেন?
–কারন তোমাকে তো এখন ও আমি
সাজালামেই না, বড় মা বলেছে
তোমাকে অনেক সুন্দর করে সাজাতে।
— এতো সাজ দিয়ে কী হবে।
— বারে আমার ভাইয়াকে তোমার প্রেম
ফাঁসাতে হবেনা।
রাইসা মিথিলার কথাটার কোনো উওর
না দিয়ে অট্টহাসি দিয়ে মিথিলার
দিকে তাকিয়ে রইলো।
—- ভাবি তুমি ঘরে বসো আমি একটু
আসছি।
— কোথায় যাচ্ছ?
— এসে বলবো, জাস্ট পাচমিনিট আর হ্যা
ভাবি এই পাচমিনিট তুমি একদম চুপটি
করে এখানে দাড়িয়ে থেকো।
এই বলে মিথিলা ঘর থেকে বেরিয়ে
যায়।
আর রাইসা অন্যমনস্ক হয়ে বিছানার উপর
বসে ভাবতে লাগলো— আমি কী এদের
ঠকাচ্ছি, এরা যখন জানতে পারবে আমি
দুই মাসের ভাড়া করা বউ, দুই মাস পর
নিজের ঠিকানায় চলে যাবো তখন এরা
কী করবে। আর , আর হয়তো অনেক কষ্ট ও
পাবে। কিন্তু আমিই বা কী করতে পারি।
আমি যা করছি সব তো…..
— আসবো।
রাইসা একটু চমকে বলে উঠলো— কে?
রিয়ান কোনো জবাব না দিয়ে ভদ্র
ছেলের মতো রুমে ঢুকে যায়। রাইসা
রিয়ানকে দেখতে পেয়ে বিছানার
বালিশগুলোকে ঠিক করতে লাগলো।
রিয়ান ও দাড়িয়ে রাইসার বালিশ ঠিক
করার দিকে তাকিয়ে রইলো।
রিয়ানের এভাবে অসহায়ত্ব ভাবে
দাড়িয়ে থাকতে দেখে রাইসা বালিশ
ঘুচিয়ে একটু শান্ত কন্ঠে রিয়ানকে বললো
— আপনে কী কিছু বলতে চান?
— না, মা, মা মানে?
— কী এতো আমতা – আমতা করছেন। কী
বলবেন বলে ফেলুন এই বলে রাইসা
বিছানাটা ঝারতে লাগলো ।
রিয়ান তখন আস্তে- আস্তে রাইসার কাছে
এসে বলে উঠলো— হাতটা পাতুন দেখি।
রিয়ানের এমন কথা শুনে রাইসা বিছানা
ঝারা বন্ধ করে বলে উঠলো— কেন?
— আরে পাতুন না।
— ওকে।
একটু অস্বস্তিকর ভাব নিয়ে রাইসা হাত
পাততেই রিয়ান রাইসার হাতে এক পাতা
প্যারাসিট্যামল দিয়ে প্রচন্ড রাগী মাখা
কন্ঠে বলে উঠলো— এই নিন আগেভাগেই
এখান থেকে ঔষুধ খেয়ে ফেলুন কারন বলা
যায় না সকালের পানিগুলো অনেক
ঠান্ডা ছিলো ওগুলোর স্পর্শতার কারনে
আবার জ্বর না চলে আসে তখন কিন্তু আবার
সব দোষ তো আমার ঘাড়ে এসেই পড়বে।
নিন খেয়ে নিন।
এই বলে রিয়ান নিজের আবেগটাকে
লুকানোর জন্য রাইসার থেকে এক প্রকার
পালিয়ে চলে যেতে লাগলো, ঠিক তখনি
রাইসা একটু হেসে রিয়ানকে বলে উঠলো
— অল্প জ্বরকেই যদি সহ্য করতে না পারি
তাহলে জিবনের ঝড়কে কীভাবে face
করবো। আর তাছাড়া অসুস্থ না হলে বুঝবেন
কী করে একজন অসুস্থ মানুষের কতটা কষ্ট।
রাইসার কথাগুলো শুনে রিয়ান থমকে
গিয়ে রাইসাকে আচমকা কন্ঠে বলে
উঠলো— মানে?
— মানে! আপনে বোধ হয় লাইফে কখনো
crisis face করেননি কী তাইনা?
—- তা বলতে পারেন এক প্রকার হ্যা,
আসলে ছোটবেলা থেকে মা — বাবার
ছায়ার নিচে থেকে মানুষ হয়েছি তো ,
এর জন্য কখনো রিয়েল লাইফের জটিলতার
মুখোমুখি হতে হয়নি।
— এর জন্যই এই অবস্থা। কিন্তু কী জানেন
আমি face করেছি, প্রতিদিন সত্যিকারের
বাস্তবতাকে, নিজের চোখের সামনে
দেখেছি মর্গে একসাথে স্বামী, ছেলে,
মেয়ের লাশ পড়ে থাকতে ও দেখে একটি
মেয়ে দমে যায়নি, জিবনটাকে নতুন করে
শুরু করেছে, আমি দেখেছি রোজ চাকরী
খুজতে যাওয়া বেকার সেই ছেলেটি যে
একদিন হঠ্যাৎ করে অ্যাকসিডেন্ট হয়ে
নিজের পা টাকে হারিয়ে ফেলে তবুও
জিবনের কাছে হার মানে নি।
আমি দেখেছি প্রতিদিন শকুনদের কাছে
নিজেকে শপে দেওয়া অসতী পাড়ার
সেই মেয়েটি যে নিজের শরীরের
বিনিময় মা- বাবা , সংসারের আর
বোনের পড়ার খরচ চালায়, অথচ এতোকিছুর
পর ও একটিবারের জন্য ও আত্মহত্যা নামক
পাপের কথা ভুল করে ও চিনতে করেনা।
রাইসার কথাগুলো শুনে রিয়ান অবাক
দৃষ্টিতে রাইসার পানে তাকিয়ে থাকে,
তারপর বলে উঠে —- আমার অনেক কাজ
আছে আমি আসি।
রাইসা ও রিয়ানকে কোনো বাধা
দিলোনা, কেননা রাইসা বুঝতে পেরেছে
— এই মানুষটি প্রত্যহ নিজের থেকে,
নিজের কাছের মানুষগুলোকে থেকে
পালিয়ে বেড়াচ্ছে। হয়তো একদিন এই
পালানোর সমাপ্ত হবে।
— শুনুন একটা কথা ছিলো?
গলার আওয়াজটি পেয়ে রাইসা দরজার
দিকে তাকাতেই দেখে রিয়ান
দাড়িয়ে রয়েছে।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com