Breaking News

গল্পঃ বড্ড আদরে । পর্ব- ৪


কি এক ঝামেলায় পড়লাম রে বাবা! কথায় কথায় শুধু কান্না করবো আর আম্মুকে ডাক দিবো আর ভালো লাগছে না এই প্যারা। পিচ্চিটা আম্মুর ভয় দেখাচ্ছে তাই বাধ্য হয়ে জড়িয়ে ধরে আবার শুয়ে পড়লাম।
বুকের বাঁ পাশটা খুব ভারি লাগছিল কারণ পিচ্চিটা বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে। খুব বিরক্তি লাগছিল পিচ্চিটা কে! হঠাৎ পিচ্চিটা বলে,
– আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন না, তাহলে তাড়াতাড়ি ঘুম চলে আসবে।
– এতো কিছু পাড়বো না! ঘুমালে ঘুমাও নাহলে আমাকে ছাড়ো?
– আমি কিন্তু আ…
– থাক! এতো রাতে আর আম্মুকে ডাকতে হবে না, আমি হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
কি করবো আম্মুকে তো আমি বিষণ ভয় পায় তাই বাধ্য হয়ে পিচ্চিটার কথা মেনে নিলাম নয়তো আম্মুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া দায় হয়ে যেত। পিচ্চিটার মাথায় মিনিট পাঁচেক হাত বুলিয়ে দিতেই, পিচ্চিটা ঘুমের দেশে চলে গেল আর আমার ও ঘুম চোখে ছিল তাই আমিও পিচ্চিটার সঙ্গী হলাম!
সকালে ঘুম ভাঙ্গে দরজায় টুকার শব্দে! খেয়াল করলাম পিচ্চিটা আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলাম কিন্তু পিচ্চিটা আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরছিল। তখনি আম্মুর কন্ঠ ভেসে আসে,
– ইথান, তোদের কি এখনো ঘুম ভাঙেনি!
– আম্মু আমি উঠে গেছি কিন্তু ইভা এখনো উঠেনি?
– দুজনে তাড়াতাড়ি উঠে পর, ইভাদের বাসা থেকে মেহমান এসেছে তোদের নিয়ে যাবে।
– আচ্ছা উঠছি, তুমি যাও!
আম্মু চলে গেল! কোথায় যেনো আমি পড়েছি, বাসর রাত নাকি পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট রাত! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেলাম কারণ বেলা অনেক হয়েছে। আমি পিচ্চিটা কে ডাকতে শুরু করলাম,
– কি হলো! এতো সকাল সকাল ডাকছেন কেনো?
– বেলা হয়েছে অনেক এখন উঠে পড়ো আর তোমাদের বাসা থেকে মেহমান এসেছে।
– আচ্ছা! আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন তারপরে আমি উঠে যাচ্ছি।
বলেই পিচ্চিটা আমাকে ছেড়ে দিল। আমিও উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি পিচ্চিটা বিছানা গুছাচ্ছে। বিছানা ঠিক করে পিচ্চিটা ফ্রেশ হতে চলে গেল, আমি পিচ্চিটার বাহির হওয়ার অপেক্ষায় রইলাম।
কিছুক্ষণ পর পিচ্চিটা ফ্রেশ হয়ে এলে, দুজনে নিচে গেলাম। নিচে গিয়ে লক্ষ করলাম ইভাদের বাসা থেকে অনেক মানুষ এসেছে। ভদ্রতা সূচক এগিয়ে গিয়ে মেহমানদের সাথে ভালো মন্দ টুকটাক কথা বার্তা বলতে লাগলাম।
মেহমানদের সাথে কথা বার্তা শেষ করে, সকলে এক সাথে নাস্তা করতে বসলাম। সকলেই রান্নার খুব প্রশংসা করলো কারণ আম্মুর রান্নার হাত বিষণ ভালো। নাস্তা করে রুমে ফিরে গেলাম আর বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলাম।
আজকের সকালটা ভিন্ন, অন্যরকম লাগছে সব কিছু! মনের মাঝে একটা আনন্দদায়ক অনুভূতি কাজ করছে তবে কারণটা অজানা! হঠাৎ পিচ্চিটা রুমে চলে এলো হাতে খাবারের প্লেট! এসেই আমার পাশে গাঁ ঘেসে বসে পড়ল আর বলল,
– আমার খুব খুদা পেয়েছে, আমাকে খাইয়ে দেন?
সকাল সকাল আকাশ থেকে পড়লাম মনে হয়, বলে কি এই পিচ্চিটা! নিজের হাত থাকতে আমাকে বলে খাইয়ে দিতে, অদ্ভুত!
– তোমাকে আমি কেনো খাইয়ে দিব?
– আমি হাতে খেতে পাড়ি না! তাই আপনাকে বলছি আমাকে খাইয়ে দিতে।
পিচ্চিটা বলে কি? নিজের হাতে খেতে পারে না অথচ এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে দিলো কি করে? ওর তো পি এস সি দেওয়ার কথা!
– আমি খাইয়ে দিতে পারবো না, আম্মুর কাছে যাও!
– আম্মুই আপনার কাছে পাঠিয়েছে বলছে খাইয়ে দিতে।
– আমার এসব ভালো লাগছে না! তুমি নিজের হাতে খেয়ে নাও প্লিজ!
– নাহ আমি খাবো না! আমাকে খাইয়ে দেন?
আল্লাহ এ কি ঝামেলাপূর্ণ পরিস্থিতিতে আমাকে ফেললা! যে মেয়ে নিজের হাতে খেতেও পারে না, তাকেই আমার কপালে বউ হিসাবে দিলা। এই মেয়েকে সাথে নিয়ে সংসার নামক গল্প সাজাবো কি করে?
বাধ্য হয়ে পিচ্চিটা কে খাইয়ে দিতে লাগলাম নয়তো দেখা গেলো আম্মুর কাছে আমার নামে বানিয়ে বানিয়ে বিচার দেওয়া শুরু করবে। আমি চুপচাপ পিচ্চিটা কে খাওয়াতে লাগলাম! পিচ্চিটার খাওয়া হয়ে গেলে আমি ওয়াশরুমে গিয়ে হাত ধুয়ে নিলাম আর পিচ্চিটাও প্লেট নিয়ে চলে গেল।
বিছানায় গিয়ে বসে রইলাম, ভাবতে লাগলাম জীবন কতোই না অদ্ভুত! বিয়ে করেছি কই বউয়ের হাতের সেবা যত্ন পাবো তা না উল্টো আমাকেই তার সেবা যত্ন করতে হবে মনে হচ্ছে! খেয়াল করলাম পিচ্চিটা আবার এসেছে,
– আপনি বসে আছেন কেন? রেডি হবেন কখন! ( ইভা )
– আমি তো কোথাও যাবো না, তাহলে রেডি হবো কেনো?
– আমাদের বাসায় যাবেন না?
– না! তোমার ইচ্ছে হলে তুমি যাও।
– আম্মু দুজনকেই যেতে বলেছে আর আমাদের বাসা থেকে মেহমান যারা এসেছে তারা আমাদের নিয়ে যেতে এসেছে।
– বলছি তো আমি যাবো না, যাও তো এখান থেকে বিরক্ত করো না!
পিচ্চিটা দমক খেয়ে চুপচাপ চলে গেল আর কোনো বিরক্ত করলো না। আমি ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকলাম, নিউজ স্পিডে ঘুরাঘুরি করছি তখনি…
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com