Breaking News

ভালোবাসি তাই । পর্ব -০৪

আমরা সবাই হসপিটালে এসে দেখি খালামণি আর আঙ্কেল আগেই চলে এসেছে।
খালামনি বসে বসে মুখে হাত দিয়ে কান্না করছে। আপু এবার কান্না করা শুরু করে দিল।
খালামণির পাশে বসে আপুও এবার কান্না করেই যাচ্ছে করেই যাচ্ছে।
আপু অল্পতেই ইমোশোনাল হয়ে পড়ে সেটা আগেও বলেছি।
আমি এক কোণায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। আজ খালি মনে হচ্ছে আমিই এসবের জন্য দায়ী।
সত্যি আমি একটু বেশিই খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি ওনার সাথে।
সকালেও ওনার সাথে ঝগড়া করেছি আবার বিকেলেও করেছি। সব কিছুর জন্য আমিই দায়ী।
সবাই এখন কান্নাকাটি করছে।
আপু আর আমিই জানি এক্সিডেন্টটা কেন হয়েছে? কারো চোখের দিকেই আমি তাকাতে পারছি না।
তখনই চোখ পরলো রাতুল ভাইয়া আর মহিন ভাইয়ার কাঁধে ভর দিয়ে সায়ন ভাইয়া আসছে।
ওনার পাশেই ইরাম ভাইয়া আর সিনান ভাইয়া। ওনার হাতে, পায়ে আর মাথায় ব্যান্ডেজ করা।
ওনার এ অবস্থা দেখে আমার মনের ভেতরটা কেমন জানি করে উঠলো।
মনে হচ্ছে যেন ওনার ব্যাথাটা আমি অনুভব করছি।
ওনি খালামণির সামনে আসতেই খালামণি ওনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন।
তখন সিনান ভাইয়া বলে উঠলেন,
– আন্টি প্লিজ এভাবে কান্নাকাটি করবেন না। সায়নের বেশি কিছু হয়নি।
বেশি কিছু হলে তো ডাক্তার আজ ছাড়তো না।
ডাক্তার বলেছে একসপ্তাহ বেড রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। এখন সবাই চলেন বাসায় যাই।
খালামণি এবার নিজেকে সামলে নিয়ে সামনের দিকে হেঁটে চলে গেলেন।
সায়ন ভাইয়াকে নিয়ে ওনার বন্ধুরা চলে গেল। আম্মু আর বাবা বাসায় চলে গেলেন।
আমাকে আর আপুকে খালামণির বাসায় পাঠিয়ে দিলেন।।
আমি সায়ন ভাইয়ার সামনে কিছুতেই যেতে পারছি না।
বারবার মনে হচ্ছে আমিই এরজন্য দায়ী। কিভাবে ওনার সামনে যাবো?
ওনার রুমে ওনার বন্ধুরা ছিল তাই যেতে পারিনি।
রাত একটু বাড়ার সাথে সাথে সবাই খাওয়া – দাওয়া করে চলে গেল।
শুধু ইরাম ভাইয়া থেকে গেলেন।
যখন দেখলাম সায়ন ভাইয়ার রুমে কেউ নেই তখনই মনে হলো এবার আমি একটু সায়ন ভাইয়াকে দেখে আসি। ওনার রুমে ঢুকতে লাগলেই কেউ পেছন থেকে আমার হাত ধরে ফেলে।
পেছনে তাকিয়ে দেখি আপু দাঁড়িয়ে আছে। আপু আমাকে বলে উঠলো,
– কোথায় যাচ্ছিস মালিহা?
– সায়ন ভাইয়াকে দেখতে ।
.
– ওনাকে তুই না দেখলেও চলবে। তোর উপর রাগ করেই তো ওনার এ অবস্থা হয়েছে। এখন তোকে দেখলে যদি ওনি আবার উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ডাক্তার বলেছে ওনি যেন একদম উত্তেজিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে।
আপুর কথাগুলো খুব খারাপ লাগলো। সত্যি আপু ওনাকে নিয়ে কতটা চিন্তিত। আমায় দেখলেই তো ওনি রেগে যাবেন তার চেয়ে আমি না যাওয়াই ভালো। এটা ভেবেই ওখান থেকে চলে এলাম ছাদে। ছাদের একপাশে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার ওনাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে কিন্তু আপু তো আমায় ঢুকতেই দিল না। খুব খারাপ লাগছে আমার। অন্তত আমায় ক্ষমা চাওয়ার একটা সুযোগ তো দিতেই পারতো আপু। কিন্তু না আমাকে একেবারে ওনার সামনেই যেতে নিষেধ করেছে। আজ আকাশে একটা ছাদ উঠেছে। তবে তেমন আলো নেই। আমি ছাদে দাঁড়িয়ে নানান কথা ভাবছিলাম। তখনি ইরাম ভাইয়া পেছন থেকে বলে উঠলো,
– এত রাতে ছাদে আসতে ভয় করেনি?
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– ভয় কেন করবে? আমি আরও বেশি রাতেও ছাদে আসতে পারি।
– তাহলে তো বলা যায় তুমি খুবই সাহসী।
– সেটা বলতে পারবো না। এটা সাহসের কোনো বিষয়ও না।
– অহহ আচ্ছা। তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তোমার মন খারাপ। মন খারাপ কেন?
– কই না তো?
.
– তোমার মুখ দেখলেই আমি সব বুঝতে পারি। আচ্ছা তুমি সায়নের এ অবস্থার জন্য আবার নিজেকে দায়ী করছো না তো? দেখো এসব নিয়ে তুমি নিজেকে ব্লেইম করবে না। তুমি তো আর সায়নকে বলো নি এক্সিডেন্ট করতে।
– না না ঐরকম কোনো ব্যাপার না।
– ঐরকম কোনো ব্যাপার না হলে মুখ কালো করে রেখেছো কেন?
– আপনি একটু বেশিই ভাবছেন।
– ঠিকাছে বেশি ভাবছি। এখন একটা হাসি দাও তো। এখন যদি তুমি না হাসো তাহলে আমি কেঁদে দিব।
ওনার এ কথা শুনে আমি হেসে দিলাম। ওনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। হঠাৎ ওনি বলে উঠলেন,
– থ্যাংক ইউ মালিহা। এই চাঁদনী রাতে আমাকে একটা পরীর হাসি দেখানোর জন্য।
ওনার কথা শুনে আমার হাসি থেমে গেল। ওনি আবার এখানে পরী পেলেন কোথা থেকে। আমি আর কোনো কথা না বলে নিচে নেমে এলাম। এভাবে একটা অপরিচিত ছেলের সাথে কেউ ছাদে দেখলে অন্যকিছু মাইন্ড করবে। এসব ভেবেই রুমে চলে এলাম।।
.
রাত দুইটা বাজে এখনো আমার চোখে ঘুম নেই। ঘুম যে আসবে না সেটা আমি ভালো করেই জানি। ইচ্ছে করছে সায়ন ভাইয়াকে একটু দেখে আসি। কিন্তু আমার তো যাওয়া বারণ। মনটা ওনাকে একটা বার দেখার জন্য ছটপট করছে। আমার পাশে আপু নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে। আজ কতরাত আমি একটু নিশ্চিন্তে ঘুমুতে পারি না। আচ্ছা এখন তো অনেক রাত ওনি তো এখন গভীর ঘুমে। আমি গেলে তো বুঝতেও পারবে না। আপুও বুঝবে না। ওনাকে না দেখা পর্যন্ত আমি একটুও শান্তি পাচ্ছি না। তাই ওনাকে দেখার জন্য শেষ পর্যন্ত মনের সাথে যুদ্ধ করে উঠেই গেলাম।বালিশের পাশ থেকে ওরনাটা মাথায় দিয়ে ধীরে ধীরে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। এখন সবাই ঘুমুচ্ছে তাই কেউ দেখবে না।।
.
ওনার রুমের সামনে গিয়ে চিন্তা করছি এত রাতে ওনার রুমে যাওয়াটা ঠিক হবে কি না? মন বলছে, মালিহা যা। বিবেক বলছে, যাস না। শেষ পর্যন্ত মনই জিতে গেল। দরজা ঠেলা দিতেই খুলে গেল। আমি আস্তে আস্তে ভেতরে ঢুকলাম। পুরো ঘরই মোটামুটি অন্ধকার।সায়ন ভাইয়ার নিঃশ্বাসের শব্দই জানান দিচ্ছে যে ওনি গভীর ঘুমে আছেন। আমি ওনার পাশে গিয়ে বসলাম। ওনার মাথার ব্যান্ডেজে ছোপ ছোপ রক্ত লেগে আছে। আমি ওনার ভালো হাতটা ধরে বলতে লাগলাম,
.
– কেন আপনি এত রেগে যান আমার উপর? আমাকে আজেবাজে কথা বলেছিলেন বলেই তো আমি আপনাকে উল্টাপাল্টা কথা বলেছি। তাই বলে আপনি নিজের এতবড় ক্ষতি করবেন? আপনি জানেন আপনার ব্যাথাটা আমার মনে কতটা আঘাত দিয়েছে। আপনি কেন বোঝেন না আপনি আমাকে না ভালোবাসলেও আমি তো আপনাকে খুব ভালোবাসি। আমি আপনার সামনে এলেই যখন আপনার রাগ হয় আমি আর আসবো না বিশ্বাস করেন। তারপরও আপনি তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যান প্লিজ। আমি আপনার কষ্ট নিজে চোখে কখনো দেখতে পারবো না।
আমার চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি ওনার হাতে পড়ে গেল। আমি তাড়াতাড়ি উঠে গেলাম। ওনার মাথায় ব্যান্ডেজটার উপর একটা চুমু দিয়ে চলে আসতে লাগলাম। তখনি পেছন থেকে ওনি আমার হাত ধরে ফেললেন। তবে কি ওনি এতক্ষণ জেগে ছিলেন? ভয়ে ভয়ে পেছনে তাকাতেই দেখি সায়ন ভাইয়া চোখ খুলে আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। ওনি আমাকে বলে উঠলেন,
– এত রাতে তুই আমার ঘরে কেন এসেছিস মালিহা?
– আপনাকে দেখতে এসেছিলাম।
– তাই বলে এত রাতে কেন?
.
– আপু তো আপনার রুমে আসতে নিষেধ করেছে তাই এত রাতেই এলাম।
– এত রাতে আসাটা কি তোর ঠিক হয়েছে?
– ঠিক হয়েছে কি না জানি না। তবে আপনার এ অবস্থার জন্য তো আমিও দায়ী তাই না?
– তোর তো এখানে কোনো দোষ নাই। আমিই জোরে বাইক চালিয়েছিলাম তাই এক্সিডেন্ট হয়েছে। এখানে তোর দোষ কোথায়?
– আমার উপর রাগ করেই তো এত জোরে বাইক চালিয়েছেন তাই না?
– তুই এ তো আমাকে রাগিয়ে দিলি। তুই কেন ঐ ইরা,,,,,,,
– কি পুরোটা বলেন থেমে গেলেন কেন?
– নাহ কিছু না। তুই এখন যা। তোকে আমার রুমে কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হবে। তুই চলে যা। আমার ঘুম আসছে।
– ঠিক আছে আসছি।
.
আমি ওনার রুম থেকে বেরিয়ে চলে এলাম। শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম কি বলতে গিয়ে ওনি থেমে গেলেন? অনেক চিন্তা করেও কিছুই বুঝলাম না। মনে মনে শুধু দোয়া করি ওনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায় যেন। শেষ রাতের দিকে আমারও ঘুম চলে আসলো ।।। আজকে একসপ্তাহ পর আমি আর আপু বাসায় ফিরে এসেছি। সায়ন ভাইয়া এখন অনেকটাই সুস্থ। এই একসপ্তাহ সায়ন ভাইয়াদের বাসায় সারাক্ষণই রাতুল ভাইয়া, সিনান ভাইয়া, মহিন ভাইয়া আর ইরাম ভাইয়ার যাওয়া আসা লেগেই ছিল। আমি সেদিন রাত্রের পর আর সায়ন ভাইয়ার সামনে যাওয়ার সুযোগই পাইনি। সবসময় আপু না হয় খালামণি ওনার রুমে থাকতো। তাই আমার যাওয়ার সুযোগ হয়ে উঠেনি। অবশ্য আমি ইচ্ছে করেও যেতে চাইনি। ওনার সাথে কথা বললেই মনে হয় আমি পারবো না ওনাকে ছাড়া থাকতে। তাই সুযোগ থাকলেও ওনার কাছে যাইনি।।
.
বাসায় এসেই আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। আপুও আপুর রুমে চলে গেল। আমি ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখি আপু আমার খাটের উপর বসে আছে। আমি আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
– কিছু বলবে আপু?
– হুমম। তুই নিশ্চয়ই আমার উপর রেগে আছিস তাই না মালিহা?
– আমি কেন তোমার উপর রেগে থাকবো আপু? তোমার উপর রেগে থাকার কি কোনো কারণ আছে?
– হুমম আছে তো। সেদিন তুই যখন সায়ন ভাইয়ার রুমে ঢুকতে যাচ্ছিলি আমি তখন তোকে আটকে দিয়েছি। আবার তোকে বকেছি।
.
– অহহ তুমি এখনও সেখানেই পরে আছো? সে তো অনেক আগের কথা। আমার মনেও নেই। আর আমি তোমার কথায় কিছু মনেও করিনি। তুমি তখন সায়ন ভাইয়াকে নিয়ে চিন্তিত ছিলে তাই কি বলতে কি বলে ফেলেছো তুমি নিজেও জানো না। ওসব আমি মনেও রাখিনি।
আপু আমায় জড়িয়ে ধরে বলল,
– আমি জানি তুই আমাকে ভুল বুঝিসনি। তুই তো আমার সোনা বোন। আমি জানি তুই সবটা বুঝেছিস। আমার উপর একটুও রেগে নেই।
– হুমম আপু আমি তোমার উপর একটুও রেগে নেই। এখন শান্তি? এ কথাটা বলার জন্য তুমি এসেছো? সত্যি আপু আমার ওসব মনেও নেই।
– হুমম বুঝেছি। তোকে না আরেকটা কথা বলতে এসেছি।
– হুমম বলো না।
– কি করে যে বলি? আমার খুব লজ্জা লাগছে।
– আপু তুমি এগুলা কি বলো? আমার সাথে কথা বলতে তোমার লজ্জা লাগছে?
– না মানে আজ লাগছে।
– কিন্তু কেন?
.
আপু এবার একটু সামনের দিকে হেঁটে গেল। আমি চিন্তা করতে লাগলাম আপু কি বলার জন্য এত লজ্জা পাচ্ছে। আপু ঐদিকে তাকিয়ে থেকে সাহস জোগালো। তারপর আমার দিকে ফিরে হাসিমুখ করে বলল,
– মালিহা আমি সায়ন ভাইয়াকে বিয়ে করতে রাজি। ওনার পরীক্ষা পর্যন্ত আর অপেক্ষা করতে হবে না। আমি বুঝতে পেরেছি যে আমি ওনার রাগ ঠিক সামলাতে পারবো।
এ কথা শুনে আমার মাথাটা কেমন জানি ঘুরতে লাগলো। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। এবার তো আপুও রাজি। আর কোনোভাবেই আমি সায়ন ভাইয়াকে পাবো না।
– কিরে কি ভাবছিস?
– এ – এ তো খুবই ভালো খবর। তাহলে সবাইকে তোমার মত জানিয়ে দাও আরকি?
– না না আমি বাবাকে বলতে পারবো না। তুই তো দেখলি তোকে বলতেই আমার কত লজ্জা লাগছে। আর বাবাকে বলতে গেলে তো লজ্জায় মরেই যাবো।
– তাহলে কে বলবে?
– কেন তুই।
– আমি মানে?
– তুই মানে তুই বলবি।
– আচ্ছা বলবো।
– এই তো আমার সোনা বোন আমি আসছি।
– হুমম।
.
আপু চলে যেতেই আমার মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল। সায়ন ভাইয়ার হাতে তো এখনো সময় আছে তাই না? কেন ওনি আমায় সহ্য করতে পারেন না আমি সেটাই বুঝি না। এবার আরকি আমার সামনে দিয়েই আপু সায়ন ভাইয়ার বউ হয়ে চলে যাবে। আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবো। আমার কপালটাই খারাপ। ছোট থেকে এই একটা মানুষের প্রতিই আমার ফিলিংস এসেছে। আর সে মানুষটাও আমার হলো না। সবই কপাল। যাক গে এসব ভেবে আর লাভ নেই। শুধু শুধু নিজেই কষ্ট পাবো। তার থেকে ভালো যা হচ্ছে তা হতে দেওয়া। তাহলেই সবাই ভালো থাকবে। এখন বাবাকে আপুর মত বলার জন্য মনে জোর আনতে হবে।।
খাবার টেবিলে সবাই চুপচাপ খাচ্ছি। আপু আমাকে বারবার ইশারা করে মনে করিয়ে দিচ্ছে আপুর মত। আমিও মাথা নেড়ে বললাম আমার মনে আছে।
.
বাবার কড়া নিষেধ খাবার টেবিলে কোনো কথা বলা যাবে না। তাই খাবার টেবিলে সবাই চুপচাপ। খাওয়া শেষ হতেই আমি বাবাকে বলে উঠলাম,
– বাবা তোমার সাথে আমার কথা ছিল।
– হ্যাঁ বল না রে মা।
– না মানে কথাটা আমার না আপুর।
– মারিয়ার কথা তুই কেন বলছিস?
– আহা আগে শুনো না।
– আচ্ছা বল।
– আপু আমাকে বলেছে সায়ন ভাইয়াকে বিয়ে করতে আপুর কোনো আপত্তি নেই। মানে আপু এ বিয়েতে রাজি। তোমরা কথা আগাতে পারো।
বাবা এবার আপুর দিকে তাকিয়ে বলল,
– মালিহা যা বলছে তা কি সত্যি?
আপু মাথা নাড়তেই বাবা খুশি হয়ে বললেন,
.
– এ তো খুবই ভালো খবর। আমি এক্ষুণি আপাকে কল করে সবটা বলছি।
সবাই আজ খুব খুশি। আপু বিয়েতে মত দিয়েছে সেজন্য। সবাই খুশি হলেও আমি খুশি হতে পারলাম না। আমার মনের ভেতরটা যেন ক্ষত- বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। অথচ যার জন্য আমি এত কষ্ট পাচ্ছি সে আমাকে পাত্তাই দিল না। আমি রুমে চলে আসলাম। রুমে এসে বেলকনিতে চলে গেলাম। কিছুই ভালো লাগছে না আমার।।
বাড়ির পেছনের বাগানে দাঁড়িয়ে আছি সেই কখন থেকেই। বাগান ঘুরে দেখার কোনো ইচ্ছে নেই। কারণ বাগানের প্রতিটা কোণাই আমার দেখা হয়ে গেছে। বাগানে আসার কারণ সায়ন ভাইয়ারা আজকে আমাদের বাসায় এসেছে। তারা আসার কারণে আজ আমার ভার্সিটিতে যাওয়া হয় নাই। সায়ন ভাইয়ারা কেন এসেছে সেটা আমি জানি। জানি বলেই ঘরে আমার খুব অস্বস্থি হচ্ছিলো। তাই বাগানে চলে এসেছি। সায়ন ভাইয়াও নাকি এসেছে। তবে আমি দেখিনি। বাগানে আমার একটা গাছ সবথেকে প্রিয়। গাছটা আরো চারবছর আগে সায়ন ভাইয়া আমার জন্মদিনে গিপ্ট করেছিলেন। সকাল – বিকাল এ গাছটাকে আমি পরিচর্যা করেছি। এখন গাছটা অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। বাগান করার ইচ্ছে আমারই ছিল। ভাইয়া, আপুর এত নেশা নেই।
আমি ছোট বেলায় টিফিনের টাকা জমিয়ে গাছের চারা কিনতাম। এ বাগানের সব গাছই আমার হাতে লাগানো। আমার গাছের প্রতি নেশা দেখেই সায়ন ভাইয়া আমাকে গাছ গিপ্ট করেছিলেন জন্মদিনে । এখন ভাবতে অবাক লাগে চারবছর আগেও সায়ন ভাইয়া আমার সাথে খুবই ভালো ছিলেন। আর এখন যেন দু চোখে সহ্য করতে পারেন না। সেজন্য এখন ওনার সামনে পরতেও ভয় লাগে। ওনি তো যেকোনো জায়গায় সিনক্রিয়েট করে বসেন। তার থেকে আমার ওনার সামনে না যাওয়াই ভালো। বাগানের পাশে একটা পুকুর আছে। আমি পুকুরের পাড়ে গিয়ে বসলাম। আমার জীবনটা কেমন জানি হয়ে গেছে এখন। কথায় আছে না মানুষ অধিক শোকে পাথর হয়ে যায়। আমার অবস্থাও তেমনি। একেবারে পাথর হয়ে গেছি আমি। তাই এখন কোনো কষ্টই আমার কষ্ট মনে হয় না। চুপচাপ বসে আছি। আমার মাথায় নানান চিন্তা ঘুরছে। তখনি আমার পাশে কোথা থেকে সায়ন ভাইয়া এসে বসলেন। আমি আড়চোখে তাকে দেখলাম। আমার মত তার দৃষ্টিও শূণ্যে।
তবে আজ তাকে কেমন যেন দেখাচ্ছে। চোখে মুখে কেমন চিন্তার ছাপ। বুঝতে পারলাম না তার হঠাৎ কি হলো। ওনি যা চেয়েছেন তাই তো হচ্ছে। তাহলে ওনি কি চিন্তা করছেন। আমার এটা ভেবে অবাক লাগছে ওনি হঠাৎ আমার পাশে বসলেন কেন? ওনার তো আমাকে দেখলেই নাকি রাগ লাগে। কি জানি ওনার মাথায় কি চলছে ওনিই ভালো জানেন। ওনি চুপচাপ বসে আছেন। আমি এবার বলে উঠলাম,
– আপনি এখানে কেন সায়ন ভাইয়া? আপনার তো এখন সবার সাথে থাকার কথা তাই না?
– হুমম এতক্ষণ তো ওখানেই ছিলাম। তুই এখানে বসে আছিস কেন?
– এমনি। আমি ওখানে থেকে কি করবো। যে কনে সে তো ওখানেই আছে। আপনি চলে এলেন কেন?
– এমনি বড়দের মাঝে ভালো লাগছিল না তাই।
.
ওনার কথা শুনে অবাক হলাম। আগে জানতাম আমার সাথে থাকতে ওনার ভালো লাগে না। কিন্তু আজ জানলাম বড়দের সাথে থাকতে ভালো লাগছে না? ওনার মতিগতির ঠিক নেই। এখানে আমি ওনার সাথে বসে আছি এটা কেউ দেখলে সমস্যা হবে। তাই আমি দাঁড়িয়ে বললাম,
– অহহ আচ্ছা আমি আসি। আপনিও চলে আসুন তাড়াতাড়ি। না হয় সবাই খুঁজবে আপনাকে।
এটা বলে ওনার জবাবের অপেক্ষা না করেই আমি চলে আসতে লাগলাম। তখনি ওনি পেছন থেকে আমার হাত ধরে ফেললেন। আমি পেছনে তাকাতেই ওনি শান্ত ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
– তুই অনেক বদলে গেছিস মালিহা।
আমি ওনার দিকে হ্যাবলার মত তাকিয়ে আছি। আমি বদলে গেছি মানে? কি বলেন কি ওনি? খুশিতে ওনার মাথা খারাপ হয়ে গেল কি না কে জানে। আমি এবার বলে উঠলাম,
– কোথায় বদলে গেছি আমি? আমি তো আগের মতই আছি। আগে যেমন ছিলাম এখনো তেমনি আছি।
– না তুই আগের মত নেই। যে বদলে যায় সে বুঝতে পারে না যে সে বদলেছে। কিন্তু তার আশে পাশের মানুষগুলো খুব ভালো করেই বুঝতে পারে যে সে বদলে গেছে।
– আপনার কথার আগা – মাথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আচ্ছা আপনিই তাহলে বলে দেন আমি কোন দিক দিয়ে বদলে গেছি।
.
– তুই আমাদের বাসায় একসপ্তাহ ছিলিস। কিন্তু আমি তোকে একদিনও দেখিনি। শুধু যেদিন আমার এক্সিডেন্ট হয়েছিল সেদিন রাতে তুই আমার রুমে গিয়েছিলি আমাকে দেখতে। আর একদিনও তো দেখতে আসলি না আমি কেমন আছি? এমনকি বাড়ি চলে আসার দিনও আমার থেকে বিদায় নিলি না।
– হুমম যাইনি। কারণ আমার আপনার রুমে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। আপু আর খালামণিই আপনার পুরোপুরি খেয়াল রেখেছে। তাই আমার যাওয়ার আর দরকার পরেনি । আর বাড়ি আসার দিন খুব ব্যস্ত ছিলাম তাই আর বলা হয়নি আপনাকে। সমস্যা কি আমি না বললেও আপু তো আপনাকে বলে এসেছে। তাই আমি আর বলতে যাইনি।
.
– হুমম। কিন্তু আগে তো তুই প্রয়োজনে – অপ্রয়োজনে, কারণে – অকারণে আমার পেছন পেছন ঘুরতি। সারাক্ষণ ভালোবাসি ভালোবাসি বলে পাগলামি করতি। আর সেই তুই এখন আমার সামনেই আসিস না।
– হুমম। আগের আর এখনের পরিস্থিতি তো এক না। আপনাকে তো সেদিন ছাদেই সব কথা বলে এসেছি। তাছাড়া আজ বাদে কাল আপনার আপুর সাথে বিয়ে হয়ে যাবে। আমি যদি এখনো আপনার পেছনে ঘুরতে থাকি তাহলে সবাই তো আমাকেই খারাপ বলবে তাই না? তাই এসব থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছি।
– তুই কিন্তু সেদিন এটাও বলেছিলি যে ভালোবাসলে ইগো দেখাতে নেই। তাহলে আজ কি সব ভুলে গেছিস?
– নাহ কিচ্ছু ভুলিনি। আমি তো ইগো দেখিয়ে আপনার জীবন থেকে সরে যাচ্ছি না। আমি শুধুমাত্র স্যাক্রিফাইজ করলাম।
– স্যাক্রিফাইজ মানে?
.
– আপনার সাথে আপুর বিয়ে হয়ে গেলে একদিন না একদিন আপনি আপুকে খুব ভালোবাসবেন। আর আমার ভালোবাসাটা হলো এক তরফা ভালোবাসা। আমিই আপনাকে ভালোবেসে গেছি। আপনি তো কখনো ভালোবাসেন নি আমাকে আর না কখনো বাসবেন। কিন্তু আপুকে ঠিক ভালোবাসতে পারবেন। তখন আমি হয়ে যাবো আপনাদের দুজনের মধ্যে তৃতীয় ব্যাক্তি। আর তৃতীয় ব্যাক্তির ভালোবাসা কখনোই পূর্ণতা পায় না। তখন তৃতীয় ব্যক্তি তার ভালোবাসাটা স্যাক্রিফাইজ করে দেয়। এখন আমার যা অবস্থা আরকি। এক তরফা ভালোবাসা কখনো জিততে পারে না। দুজন দুজনকে ভালোবাসলেই জেতা যায়। সেটা যখন হবে না তখন আমার ভালোবাসা স্যাক্রিফাইজ করাই সকলের জন্য মঙ্গলজনক তাই না?
.
– সেজন্য তুই আমাকে এভোয়েড করছিস?
– এভোয়েড করছি না। যেটা ঠিক সেটাই করছি। এভোয়েড করলে তো আমি আপনার সাথে এখন কথা বলতাম না।
– অহহহ আচ্ছা। তাই এখন তোর আমাকে ভালো লাগে না। আমি তোর আপুর হাজবেন্ড হয়ে যাবো তাই অন্য কাউকে এখন ভালোবাসতে শুরু করেছিস তাই না? ভালো খুব ভালো। এই তুই আমাকে খুব ভালোবাসিস? তোর ভালোবাসা আমার বুঝা হয়ে গেছে।
– মানে কি? ভালোবাসা কি বাজারের পণ্য নাকি যে ক্ষনে ক্ষণে সেটা চেন্জ করা যায়। আর অন্য কাউকে ভালোবাসতে শুরু করেছি মানে কি? অন্য কেউটা কে?
– সেটা তুই এ ভালো জানিস।
.
এটা বলেই সায়ন ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। আমার কোনো কথাই আর শুনলো না। ওনাকে আমি বুঝতেই পারি না। এতদিন চাইতো আমি যেন ওনার সামনে না যাই। আর এখন আমি কেন যাই না সেটা নিয়ে ঝগড়া লেগে গেছে। ওনার মাথাই বোধহয় খারাপ হয়ে গেছে। আজব পাবলিক। আমি নাকি অন্য কাউকে ভালোবাসতে শুরু করেছি । আচ্ছা সে অন্য কেউটা কে সেটাই তো বুঝলাম না। আমি মরি ওনাকে হারানোর চিন্তায় আর ওনি বলছে আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি। আচ্ছা যদি বাসিও তাহলে ওনার এত রাগ উঠছে কেন? ওনার তো খুশীই হওয়ার কথা। আমি আর ওনাকে জ্বালাবো না এটাই তো ওনি চেয়েছিলেন। এখন যখন আমি জ্বালাচ্ছি না তখন ওনি বলছেন আমি নাকি বদলে গেছি। সত্যি ওনার মাথায় বোধহয় কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে।।
চলবে,,,,,,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com