গল্পঃ বড্ড আদরে । পর্ব- ৭
পিচ্চিটার জন্য কিছু খাবার প্লেটে করে নিয়ে রুমে গেলাম। পিচ্চিটা বিছানায় শুয়ে আছে যা দেখে বুঝতে বাকি রইল না যে, পিচ্চিটা এখনো রেগে আছে।
খাবারের প্লেট টা নিয়ে পিচ্চিটার পাশে গিয়ে বসলাম। পিচ্চিটা আমাকে দেখেও না দেখার বান করে শুয়ে রইল! তা দেখে আমি বললাম,
– রাগ করে, খাবার না খেয়ে চলে এলে কেনো?
– ( পিচ্চিটা চুপ করে আছে )
– কিছু তো বলবে, চুপ করে আছো কেনো?
– চলে যান খাবার নিয়ে, আমি খাবো না!
– এতো রাগ করার কি আছে? তোমার আম্মু তোমার সাথে মজা করেছিল আর রাগ করে থাকতে হবে না, তোমার জন্য আমি খাবার নিয়ে এসেছি।
– না, খাবো না আমি!
পিচ্চিটার রাগ দেখে আর বাঁচিনা, এতো রাগ কারো থাকলে তার সাথে সংসার করা যায়নি! খাবার নিয়ে এসেছি এটা দেখেই তো রাগ ভেঙে যাওয়ার কথা, তা না উনি এখনো জেদ নিয়ে বসে আছে।
– এখন কিন্তু আমার রাগ হচ্ছে?
– তো! এখন আমি কি করবো?
– চুপচাপ খেয়ে নাও! ( রেগে )
– আপনি একটা বদ, অনেক পচা, আপনি শুধু আমায় দমক দেন! আমি বাসায় গিয়ে আম্মুর কাছে বিচার দিব, হুম।
কি এক মুশকিলে পড়লাম, কিছু বলা যায় না রাগ করে! একটু উচু কন্ঠে কথা বলা যায় না ভয় পায় আর সারাক্ষণ আম্মুর কাছে বিচার দিব আম্মুর কাছে বিচার দিব। এ যেনো এক মহা মুশকিল!
– সরি, আমার ভুল হয়ে গেছে! এমন আর কখনোই হবে না। এখন লক্ষ্মী মেয়ের মতো খেয়ে নাও?
– না, খাবো না আমি! আপনি জানেন না, কেউ আমায় দমক দিলে আমি ভয় পায়।
– সরি, আর কখনোই দমক দিব না। এবার খাবার খেয়ে নাও প্লিজ?
– আর কখনোই দমক দিবেন না, প্রমিস করেন?
– আচ্ছা, প্রমিস আর কখনোই দমক দিব না। এবার খেয়ে নাও লক্ষ্মী মেয়ের মতো?
– খাবো তবে একটা শর্ত আছে!
কি এক প্যারার মাঝে আঠকে গেলাম, এখান থেকে বাঁচার কোনো উপায় মনে হয় নাই। এই মেয়ের আবদার পূরণ করতে করতেই মনে হয় আমি মরে যাবো।
– কি শর্ত?
– বিকালে ঘুরতে যেতে হবে আমাকে নিয়ে?
– আচ্ছা যাব, এখন খেয়ে নাও?
– আচ্ছা এখন আমায় খাইয়ে দেন!
বলেই ছোট বাচ্চাদের মতো আমার সামনে এসে বসে পড়লো। আমি ভালো করেই জানি খাইয়ে না দিলে খাবে না বরং রাগ আরও বেড়ে যাবে। আমি খাইয়ে দিতে শুরু করলাম পিচ্চিটা চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে আর মাঝে মাঝে আমার দিকে মায়াবী নজর দিচ্ছে।
পিচ্চিটার খাওয়া হয়ে গেলে, খাবার প্লেট নিয়ে চলে গেল। আমিও ওয়াশরুম থেকে হাত ধুয়ে রুমে এলাম। এখানে আসার পর থেকে একটুও বিশ্রাম করতে পারিনি খুব ক্লান্ত লাগছিল। বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম, ক্লান্ত থাকায় চোখে ঘুম আসতে সময় লাগেনি কখন ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই।
হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে গেল কারো ডাকে, তাকিয়ে দেখি পিচ্চিটা আমার সামনে বসে আছে। ঘড়ি দেখলাম বিকাল হয়ে গেছে। তা দেখে ঘুম চোখে বললাম,
– এখন আবার ডাকছো কেনো?
– শর্তের কথা ভুলে গেছেন!
– শর্ত! কি শর্ত?
– আপনি না বলেছিলেন, বিকালে আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন?
– আর একটু ঘুমায় তারপর নিয়ে যাবো।
পিচ্চিটা আমার কোনো কথা শুনলো না! আমাকে ঠেলতে ঠেলতে বলতে লাগলো,
– অনেক ঘুমিয়েছে আর না! এখন আমায় নিয়ে ঘুরতে যেতে হবে, উঠেন বলছি?
বুঝতে পারলাম এখন না উঠলে আর হবে না। এখন যতোই চেষ্টা করিনা কেনো পিচ্চিটার জন্য আর ঘুমাতে পারবো না। বাধ্য হয়ে উঠে পড়লাম তখন পিচ্চিটা বলে,
– আমি গিয়ে রেডি হয়ে আসি আর হ্যা আপনিও ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিবেন।
– আচ্ছা, তুমি যাও!
বলেই ফ্রেশ হতে চলে গেলাম কারণ পিচ্চিটার সাথে কথা বলে কোনো লাভ হতো না। শেষ মেষ পিচ্চিটার জেদের কাছে হাড় মানতেই হবো। ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখি পিচ্চিটা বিছানায় বসে আছে রেডি হয়ে। আমিও কথা না বাড়িয়ে অন্য একটা শার্ট পড়ে নিলাম তখন পিচ্চিটা বলে,
– আপনার রেডি হওয়া শেষ হয়ে থাকলে চলেন যাওয়া যাক?
– হুম চলো যাই।
পিচ্চিটাকে সাথে করে নিয়ে, শাশুড়ি মাকে বলে বাহিরে চলে এলাম। রিক্সার জন্য অপেক্ষা করতেছি আর পিচ্চিটা কে আড় চোখে দেখতেছি। একটা রিক্সা চালকে ডাক দিয়ে পিচ্চিটাকে বললাম,
– এখন বলো কোথায় যেতে চাও?
– এই দিকে একটা পার্ক আছে, চলেন ওখানে যাই।
– আচ্ছা চলো।
দুজনে রিক্সায় উঠে বসলাম। পিচ্চিটা আজ একটা নীল শাড়ি পড়েছে অসম্ভব সুন্দর লাগছে নীল শাড়িতে। পিচ্চিটা সুন্দরী তো বটেই তার উপরে নীল শাড়ি মনে হয় একটা পরীর সাথে বসে আছি।
পিচ্চিটার সাথে বিয়ের পর থেকে কখনোই ভালো করে খেয়াল করে দেখিনি, আজ দেখলাম আমার পিচ্চি বউটা কত সুন্দরী। পিচ্চিটার সৌন্দর্য দেখে যে কেউ পাগল হয়ে যাবে যাকে বলে ভয়াবহ সুন্দর।
পিচ্চিটাকে বউ হিসাবে মেনে নিতে পারছিলাম না, তার কারণ পিচ্চিটা আমার থেকে গুণে দশ বছরের ছোট তার উপরে এখনো বড়দের মতো জ্ঞান বুদ্ধি হয়নি। রিক্সা চালক পার্কের সামনে চলে এলো, রিক্সা ভাড়া দিয়ে দুজনে পর্কে ঢুকে পড়লাম। তখনি পিচ্চিটা বলে উঠে,
– চলেন ওদিকে গিয়ে বসি?
– হুম চলো।
দুজনে সুন্দর একটা জায়গা দেখে বসে পড়লাম। দুজনে কিছুক্ষণ বসে গল্প করার পর পিচ্চিটা বাইনা ধরে আইসক্রিম খাবে। কি আর করার আইসক্রিম এনে না দিলে আবার রাগ করবে। বাধ্য হয়ে আইসক্রিম আনতে চলে গেলাম। আইসক্রিম নিয়ে এসে বললাম,
– এই নাও আইসক্রিম!
– একটা কেনো? আপনি খাবেন না!
– না, আমি খাবো না তুমি খাও।
পিচ্চিটা আর কথা বলেনি চুপ করে আইসক্রিম খাওয়া শুরু করে দিল। পিচ্চিটার আইসক্রিম খাওয়া দেখে অনেক কষ্টে হাসি চেপে রাখলাম কারণ ইভা ছোট বাচ্চাদের মতো করে খাচ্ছে, নাকে মুখে আইসক্রিম লেগে আছে। তা দেখে বললাম,
– এতো ব্যস্ত হওয়ার কি আছে, আইসক্রিম সারা মুখেই লেগে যাচ্ছে!
– সমস্যা নাই, দুজনে পরিষ্কার করে নিব।
আমি পিচ্চিটার দিকে প্রশ্নকারী চোখে তাকিয়ে রইলাম তখন পিচ্চিটা বলে,
– আপনি অনেক বুদ্দু! কিছুই বুঝেন না দাঁড়ান দেখাচ্ছি,
বলেই আমার শার্টের কলার ধরে টেনে দুজনের ঠোঁট এক করে দিল আর তখনি..
চলবে…..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com