ভালোবাসি তাই । পর্ব -১২
পাঁচ মিনিটের মত হয়ে গেছে আমি ইরাম ভাইয়াররুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ওনার রুমের দরজাটাএকটু ভেজানো সেজন্যই আমি ইতস্তত করছি ভেতরেঢুকতে। এভাবে কারো রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেযাওয়াটা বড়ই দৃষ্টিকটু লাগে। সেজন্য রুমের বাইরেদাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম। ওনি যদি বের হন তাহলেআমি ওনাকে বলেই ঢুকবো। আমি এসব মনে মনেভাবছিলাম তখনি ইরাম ভাইয়া দরজা খুললেন। আমিওনাকে দেখে অনেকটাই ভড়কে গেলাম। ওনি এখনকি ভাবছেন কি জানি। আমার দিকে অবাক চোখেতাকিয়ে আছেন। হয়তো বুঝতে পারছেন না আমিএখানে কি করছি। আমি ওনাকে দেখে আমতা আমতাকরে বললাম,
– আ – আমাকে আ -আন্টি বলেছে আপনার রুমটাদেখে যেতে। তাই এসেছি ।
– তুমি এভাবে তোতলাচ্ছো কেন মালিহা?
– কই না তো। এমনি আরকি।
– ঠিকাছে নিজের রুম দেখতে এসেছো দেখবে। এততোতলানোর তো কিছুই নেই। আসো ভেতরে আসো।
আমার ওনার কথা শুনে খুব লজ্জা লাগছে। কি না কিভাবছেন কি জানি। সব ঐ সারার জন্য দাঁড়া এখানথেকে বের হই তারপর তোর খবর আছে।
– কি ভাবছো বলো তো?
– কই কিছু না।
– তুমি যে কিছুই বলছো না?
আমি ওনার সাথে বলার মত কোনো কথাই খুঁজেপাচ্ছি না। তাই ভাবতে লাগলাম কি বলা যায়।
– আপনার কি কোনো ভাই আছে?
– হুমম আছে তো আমার ছোট ভাই আছে।
– অহহ। কিন্তু ওকে তো কখনো দেখলাম না। ওর নামকি? কই থাকে?
– হাজবেন্ড ফেলে হঠাৎ দেবর নিয়ে পড়লে যে? আমায়নিয়ে তো দেখি তোমার মনে কোনো প্রশ্নই নেই।
কথাটা বলতে বলতে ওনি আমার অনেকটা কাছে চলেএসেছেন। আমার কপালে ওনার নিঃশ্বাস পড়ছে।আমি ওনার চোখে কেমন আমার প্রতি অধিকারবোধদেখতে পাচ্ছিলাম। আমি ওনার দিকে একবারতাকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ওনি হয়তোবুঝতে পেরেছিলেন আমার অস্বস্থি হচ্ছে তাই আমারথেকে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ালেন।
– আসতে পারি দুলাভাই?
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে দেখি সারা একটা মুচকিহাসি দিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
– আরে শালিকা যে। আসো আসো অনুমতি নেওয়ারকি আছে?
আমি ইরাম ভাইয়ার এমন কথা শুনে হা করে তাকিয়েআছি। এখনো বিয়ের খবর নেই আর ওনারা দুলাভাই,শালিকা এখনোই বলা শুরু করেছেন।
– শোন না মালিহা আমার ভাইয়া এদিক দিয়েই যাচ্ছে।তাছাড়া সন্ধ্যা হয়ে গেছে আমি তো একা একা বাসায়যেতে পারবো না। তাই আমি ভাইয়ার সাথে এখনোইচলে যাচ্ছি।
– তো চল আমিও চলে যাই।
– আরে না না তোকে ইরাম ভাইয়া পৌঁছে দিয়ে আসবে।তুই থাক আমি আসছি। ঠিক আছে দুলাভাই আপনিমালিহাকে ঠিকমত পৌঁছে দিয়েন। আমি আসছি।
– আচ্ছা শালিকা সাবধানে যেও।
সারা আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হাসতেহাসতে চলে গেল। আমার খুব রাগ লাগছে। কিন্তু সেটাআমি প্রকাশ করতে পারছি না।।
আধঘন্টা আন্টির সাথে কথা -বার্তা বলে আমি আরইরাম ভাইয়া বাসায় যাওয়ার জন্য বের হলাম। রাস্তায়আসতেই সায়ন ভাইয়ার সাথে দেখা হয়ে গেল। ওনিওএদিক দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। আমাকে দেখে ওনারমুখটা কেমন জানি হয়ে গেল। আমি নিচের দিকেইতাকিয়ে রইলাম। ইরাম ভাইয়া আর সায়ন ভাইয়াঅনেক কথা বললেন। আমি চুপচাপ সব শুনছিলাম।কথা শেষ হতেই ইরাম ভাইয়া বললেন,
– চলো মালিহা তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।
আমি কিছু বলবো তা আগেই সায়ন ভাইয়া বলেউঠলেন,
– তুই ঐ বাড়ির নতুন জামাই। বিয়ের আগে এভাবেযাওয়া ঠিক হবে না। আমি তো খালামণির বাসায়যাবো। আমি মালিহাকে নিয়ে যাচ্ছি। তোকে আর কষ্টকরে যেতে হবে না।
– অহহ তুই যাবি। আচ্ছা ঠিকাছে তাহলে মালিহাকে তুইপৌঁছে দিস। আমি আর যেতে হবে না।
– হুমম আচ্ছা আসি ।
– আচ্ছা।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও রিক্সা করে আমি সায়ন ভাইয়ার পাশেবসে বাসায় যাচ্ছি। সায়ন ভাইয়া চুপচাপ বসে আছেন।আমিও চুপচাপ বসে আছি। সায়ন ভাইয়া হঠাৎ করেবলে উঠলেন,
– আমার কাঁধে একটু তোর মাথাটা রাখবি মালিহা?
আমি ওনার কথা শুনে অবাকের সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছেগেলাম। ওনি তখন সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন।
– কিরে মাথাটা রাখ না প্লিজ।
আমার মনে যত রাগ ছিল সব যেন নিমিষেই কোথাওহারিয়ে গেল। আমি ওনার কাঁধে মাথাটা রেখে চোখবন্ধ করে রাখলাম। আমার মাথায় তখন আর কিছুইনেই। এভাবেই সারাটাজীবন ওনার সাথে থাকতে চাইআমি।
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com