ভালোবাসি তাই । পর্ব -১৪
আজ আমার আর আপুর বিয়ের শপিং করা হবে।সেজন্য আমার কিছু কাজিন পিয়া আপু, জারা আপুআর রিদন ভাইয়া এসেছে। আমি সারাকে বলেদিয়েছি বিকেলের দিকে আমাদের বাসায় আসারজন্য। সারা ছাড়া আমার কোনোকিছু করতেই ভালোলাগে না। একটা লিপস্টিক কিনবো সেটার জন্যওআমার সারাকে প্রয়োজন। হুমম মাঝে মাঝে সারারসাথে আমার খুব রাগ হয় কিন্তু সারাকে ছাড়া আমারআবার সবকিছু নিরামিষ লাগে । এটাই বোধহয় বেস্টফ্রেন্ডের প্রতি বেস্ট ফ্রেন্ডের ভালোবাসা। সারা যেমনআমাকে রাগিয়ে দেয় ঠিক তেমনি আমাকে হাসাতেওপারে। কি জানি ও আছে বলেই হয়তো আমি আজওএতটা স্ট্রং।।
.
বিকেল হয়ে গেছে সারাও চলে এসেছে। আমরা সবাইরেডি হয়ে ড্রয়িংরুমে দাঁড়িয়ে আছি। তখনি আপুড্রয়িংরুমে এলো। আপু আজ নীল রঙের একটা সিল্কশাড়ি পরেছে। আর নিজের চুলগুলো ছেড়ে রেখেদিয়েছে। আপুকে এই সাজে আমি আরো বছর দুয়েকআগে দেখেছিলাম। আপুর কলেজে কোনো একটাফাংশনে আপু এভাবেই সেজে গেছিলো। এই শাড়িটাপরেই গিয়েছিল সেদিন। ঠিক আজ যেভাবে সেজেছেসেদিনও এভাবেই সেজেছিল। আপুকে আজ খুবসুন্দর লাগছে। আপু চুল ছেড়ে দিয়েছে দেখে আমারওচুলগুলো ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু আমারকোমড়ের নিচে পড়া চুলগুলো ছেড়ে দিলে মানুষআমাকে পাগল ছাড়া কিছুই বলবেনা। তাছাড়া আমিযে ড্রেস পড়েছি তার সাথে খোলা চুল মানায়ও না।তার থেকে যেভাবে আছি সেভাবেই ভালো।।
.
একে একে আমরা সবাই গাড়িতে উঠে বসলাম। আপুজানালার পাশে বসেছিল আমি আপুর পাশেই বসেছি।আর সারা আমার পাশে। আপু জানালা দিয়ে দূরেতাকিয়ে আছে। যেন গভীর ভাবে কিছু ভাবছে। সারাগাড়িতে উঠার পর থেকেই বকবক করা শুরু করেছে।আমার অন্য কাজিনদের সাথে সারার আগে কখনোদেখা হয়নি। কিন্তু সারা যেভাবে কথা বলছে মনে হচ্ছেযেন ওরা সারার কতদিনের চেনা। সারা এই দুঘন্টায়পিয়া আপু আর জারা আপুর সাথে যা কথা বলেছেআমি এত বছরেও এত কথা বলিনি ওনাদের সাথে। সারা সবসময়ই এমন মিশুক প্রকৃতির। সবার সাথে ওখুব তাড়াতাড়িই মিশে যেতে পারে। মনে হয় যেনসৃষ্টিকর্তা সারাকে সবার সাথে এত সহজে মিশেযাওয়ার একটা ম্যাজিক্যাল পাওয়ার দিয়েছেন। সারারএই গুণটা আমার খুব ভালো লাগে। আপু গাড়িতেউঠার পর একটা কথাও বলেনি। সেই কখন থেকে কিযেন ভাবছে। আচ্ছা আপু কি সায়ন ভাইয়ার কথাভাবছে? হুমম ভাবতেই পারে। আজ কি আপু সায়নভাইয়ার জন্যই এভাবে সেজেছে? একবার জিজ্ঞেসকরবো আপুকে। আপুর উত্তরটা যদি হ্যাঁ হয় তাহলেকি আমার কষ্ট হবে? কষ্ট হলে হবে আরকি। অনেকভেবেচিন্তে আপুকে আমি বলে উঠলাম,
– আজ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে আপু।
আমার কথা শুনে আপু তার ভাবনার জগৎ থেকেবেরিয়ে এল।
– থ্যাংক ইউ রে।
– একটা প্রশ্ন করবো আপু কিছু মনে না করলে?
– হুমম কি বল না?
– আজ কি তুমি সায়ন ভাইয়ার জন্য এভাবেসেজেছো?
আপু আমার প্রশ্ন শুনে কিছু চিন্তা করলো। তারপরস্নান হেসে বলল,
– কারো জন্য সাজিনি তো। ইচ্ছে হয়েছে তাই সেজেছি।কারো নাম মনে করে সাজার কি আছে? কারো নামকরে সাজিনি। নিজের ইচ্ছায় সেজেছি।
– অহহ।
আপুর উত্তর শুনে আমার যেন একটা চিন্তা কেটেগেল। আমি খুব টেনশনে ছিলাম আপু যদি বলতোআপু সায়ন ভাইয়ার জন্যই সেজেছে তাহলে সত্যিআমার খুব কষ্ট লাগতো। আমি আর আপুকে কিছুবললাম না। আপু ও তার আপন ভাবনায় ব্যস্ত হয়েপরলো। সবাই কথা বলায় ব্যস্ত ছিল তাই কেউআমাদের দু বোনের কথা শুনতে পায়নি। সারা এবারআমায় ধাক্কা মেরে বলে উঠলো,
– কিরে জানু তুই কি আমায় ভুলে গেলি নাকি? আজতো তুই আমার সাথে কোনো কথাই বলিসনি।
আমি কিছু বলবো তার আগেই রিদন ভাইয়া বলেউঠলো,
.
– এই যে মিস সারা আপনি মালিহাকে এসব জানু, বেবীবলে কেন ডাকছেন? আপনি কি ভুলে যাচ্ছেন যেমালিহার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এখন ঐসব নামেমালিহার হাজবেন্ডই ওকে ডাকবে বুঝলেন? এখনথেকে এ অভ্যেস পাল্টান।
– ওহহ রিয়েলি ভাইয়া! আমি তো জানতাম না বিয়েঠিক হয়ে গেলে এসব নামে বেস্ট ফ্রেন্ডকে ডাকা যায়না? শুনুন ভাইয়া মালিহাকে ঐ নামে আমি যদিডাকতে না পারি তাহলে আমি মালিহার বিয়েই হতেদেব না।
– হুমম মালিহা তো সারা জীবন আপনার ঐসব নামশোনার জন্য বিয়ে না করে বসে থাকবে । তার থেকেভালো আপনি একটা বয়ফ্রেন্ড খুঁজে নেন। তাকেসারাদিন এসব নামে ডাকেন কেউ আপনাকে মানাকরবে না।
– তাই নাকি ভাইয়া? শুনুন আমি মালিহাকে এসবনামেই ডাকবো দেখি কে আমাকে আটকায়। আরবয়ফ্রেন্ড জোটানোর কি আছে আমি বিয়ের পরআমার হাজবেন্ডকেই এসব নামে ডাকবো। বুঝলেনভাইয়া?
– মিস সারা কখন থেকে আপনি আমাকে ভাইয়াভাইয়া ডাকছেন। আপনি দয়া করে বলবেন কি আমিআপনার কোন জনমের ভাইয়া?
.
– দেখুন ভাইয়া আপনি মালিহার ভাইয়া। মালিহাআমার বোনের মত মানে বোন।
তাহলে বোনের ভাইতো বোনের ভাই এ হবে তাই না ভাইয়া?
– মিস সারা আপনার মাথায় নিশ্চিত কোনো সমস্যাআছে।
আপনি একটা সহজ কথাকে যেভাবেজিলাপির ন্যায় জটিল বানাচ্ছেন তাতে আমার মনেহয় সত্যি
আপনার মাথায় কোনো গন্ডগোল আছে।আপনার সাথে কথা বলে আমার আপনার সাথে
পাবনায় যাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই।
রিদন ভাইয়ার এমন কথা শুনে সারার মুখটা পুরোপুরিবন্ধ হয় গেল।
আমি কিছুতেই হাসি চেপে রাখতেপারলাম না। সবাই একসাথেই হেসে দিলাম।
সারাওএবার হাসতে লাগলো। সারা যেখানে থাকবে সেখানেহাসি -ঠাট্টা হবে না তা কখনো হয় নাকি? আগেওবলেছিলাম সারা খুব মজার মানুষ।
সারা ইচ্ছে করেসবাইকে হাসানোর জন্য এভাবে উল্টা -পাল্টা কথাবলে।
এ কথাটা কেউ না বুঝলেও আমি খুব ভালোইবুঝতে পেরেছি।
এরকম হাসি -ঠাট্টা করতে করতেইআমরা শপিংমলে পৌঁছে গেলাম।
সায়ন ভাইয়ারা আরইরাম ভাইয়ারা আগেই চলে এসেছেন।
তাই আমরাআর দেরি না করে শপিংমলে ঢুকে গেলাম।
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com