এক প্রতিবাদী নারীর জীবন যুদ্ধের গল্প । পর্ব- ৪৮
রেশমার চোখের সামনে সবার শেষে প্রিয় বোনের মৃত মুখটা ভেসে ওঠলে সহ্য করতে পারে না।
ওখানে বসেই গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে লুটিয়ে পড়ে
রেশমার চিৎকার শুনে রোহানের ঘুম ভেঙ্গে গেল।
রোহান পাশে তাকিয়ে দেখে রেশমা ঘুমের ঘোরে আপু আপু বলে চিৎকার করে কাঁদছে।
তা দেখে রোহান রেশমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,এই জান চোখ খুলো ,
কি হয়েছে?
কাঁদছো কেন?
দুঃস্বপ্ন দেখেছো না কি,.
রোহানের ডাক রেশমার কান পর্যন্ত পৌঁছালো কিনা জানা নেয়।
রেশমা এখনও কেঁদে যাচ্ছে আর ঘুমের মধ্যে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়ছে এতে ওর কষ্ট হচ্ছে তা দেখেয় বোঝা যাচ্ছে।
রোহান বুঝতে পারছে না হঠাৎ করে কি এমন হলো!
এইতো ঘন্টা খানিক আগেই তো একদফা ভালোবাসা-বাসি করে ফ্রেস হয়ে তারপর গল্প করতে করতে দুজন ঘুমিয়ে পড়েছে।
তখনো তো রেশমা ঠিক ছিল।
রোহান কয়েকবার রেশমার শরীর ঠিক আছে কিনা জানতেও চেয়েছে।
রেশমা তখনো তো বললো না তার খারাপ লাগছে।
বরং ঠিক আছে বলেছে।
আচ্ছা ওর পেইন হচ্ছে না তো?
অবশ্য পেইন কিলার তো ঘুমানোর আগেই দেওয়া হয়েছে তাই পেইন হওয়ার কথা নয়।
চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষটির এমন অবস্থা দেখে রোহানের মাথা জ্যাম হয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ করে কিছু একটা ভেবে রেশমাকে ঝাঁকুনি দিতে থাকে ঘুম থেকে জাগাতে।
কারণ রোহানের মনে হচ্ছে রেশমার ঘুম ভাঙলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
এদিকে রেশমাকে কয়েকবার ঝাঁকুনি দিতে রেশমার ঘুমের ঘোর কেটে যায়।
রেশমা শুয়ে ছিল ঝাঁকুনিতে বিছানায় লাফ দিয়ে উঠে বসল।
মেয়েটা ঘেমেনেয়ে একাকার অবস্থা।
জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে আর আশেপাশে তাকাচ্ছে।
রেশমাকে আশেপাশে তাকিয়ে এমন টালোমালো করতে দেখে পাশে থেকে রোহান বলে,কি হয়েছে জান!
কি খুঁজছো? রেশমা রোহানের কথা শুনে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো, আপু কোথায়?
আমাকে বাসায় এনেছো কেন?
ওখানে আপু একা আছে ।
আমি আপুর কাছে যাবো।
রোহান রেশমার অসংলগ্ন কথাবার্তা শুনে বলল, এসব কী বলছো জান?
রেশমা রোহানের কথা না শুনেয়,
আমার আপু মরে যাচ্ছে তাকে বাঁচাতে হবে যলদি তার কাছে চলো কথাটা বলে ,রোহানকে ছেড়ে খাটে থেকে একা একা নিচে নামতে নিলে রোহান রেশমাকে ঝাপ্টে ধরে বললো,এই কোথায় যাচ্ছ?
আর আপু এখানে আসবে কোথায় থেকে আপু তো বাংলাদেশে ।
আর জান আমরা তো দার্জিলিং ঘুরতে এসেছি ভুলে গেছ?
রেশমা রোহানের কথা শুনে থমকে যায়।
তারমানে ও এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলো।
কিন্তু মনে তো হচ্ছিল স্বপ্ন নয় সব ঘটনা বাস্তবে ওর সামনে হচ্ছে।
রেশমা কথাটা ভেবে কেঁদে দেয়।
রোহান ওর কপালে চুমু দিয়ে বলল,জান কাঁদছো কেন?
তোমাকে এই অবস্থায় দেখে আমার কলিজা ফেটে যাচ্ছে।একটু শান্ত হয়ে বসে কি হয়েছে আমাকে বলো।
রেশমা রোহানের কথা শুনে বলল, আমি এখন কোনোভাবেই শান্ত হতে পারবো না রোহান।
তুমি এক্ষুনি বাংলাদেশে যাওয়ার টিকেট কাটতে যাও।
আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে তো!
তাড়াতাড়ি টিকেট কেটে আনলে আমরা যলদি বাংলাদেশে যেতে পারবো বুঝতে পারছ না কেন?
রোহান রেশমার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেছে।
এই মাঝ রাতের বেলায় টিকেট কোথায় পাবে।
আর এটা তো বাংলাদেশে না যে ঘুষ দিয়ে বা পাওয়ার খাটিয়ে জোগাড় করে ফেলবে।
এখানকার নিয়ম কানুন আলাদা তাছাড়া যে দেশে মেহমান এলে সে খেয়ে যাবে কিনা তা জিজ্ঞেস করার পর তার জন্য রান্না বসানো হয়।
যেখানে বড় একটা মাছ কিনতে গেলেও জবাব দিহি দিতে হয়।
সেখানে মাঝরাতে টিকেট কোথায় পাবে?
রেশমা বিষয়টি বুঝতে পারছে না।
এদিকে রেশমা রোহানকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে বলল,ঠিক আছে তোমাকে যেতে হবে না।
আমিই যায়।
রোহান রেশমার কথা শুনে ধ্যান ভাঙল।
রেশমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো, সোনা কি হয়েছে
আমায় বলো?
কোনো দুঃস্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছো?
আপুর সাথে রিলেটিভ কোন কিছু দেখেছো?
রেশমা রোহানের কথা শুনে,ও স্বপ্নে কি কি দেখেছে গড়গড় করে বলছে আর কাঁদছে।
রোহান সব শুনে বিচলিত হয়ে গেছে!
রেশমা এমন স্বপ্ন দেখার মানে কি?
আপু কোন বিপদে পড়েনি তো?
কথাটা ভেবে চট করে রেশমার দিকে তাকিয়ে বললো,এই বোকা কাঁদছ কেন?
এটা একটা দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছু না।
আর আমাদের আপু আল্লাহর রহমতে হয়তো ভালো আছেন।
তুমি অযথা কেঁদে কেটে অস্থির হচ্ছো।
আপু পড়ে এটা শুনলে কিন্তু তোমাকে বকা দিবে।
তখন বকা থেকে বাঁচাতে আমি সাথে থাকবো না বুঝলে?
রেশমা রোহানের কথা শুনে বললো, আমি মজা করছি না।
তুমি বুঝতে পারছো না কেন?
আমার মন বলেছে আমার আপু ভালো নেয়।
রোহান রেশমার কথা শুনে, ওকে শান্ত্বনা দিয়ে বলল, তুমি কিছু চিন্তা কর না। এখন তো রাত আপু হয়তো রেষ্ট
নিচ্ছে ।
ভোর হতে দাও আপুর সাথে যোগাযোগ করবো।
দরকার হলে আগামী কাল দুপুরের মধ্যে দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করবো।
তবুও সোনা তুমি অস্থির হয়ো না।
রেশমা রোহানের দিকে তাকিয়ে বলল, আমার ছেলেকে আমার কাছে এনে দাও।
রোহান রেশমার কথা শুনে বলল,সোনা এখন মেহরাবকে এখানে আনলে ও তোমাকে এভাবে অস্থির হতে দেখলে ভয় পাবে।
আর যদি শুনে আপুকে নিয়ে বাজে স্বপ্ন দেখেছো তো কেঁদে কেটে বেহুঁশের মত অবস্থা করবে।
আর তুমি কি তাই চাও?
রেশমা মাথা ঝাঁকিয়ে না বোঝায়।
আচ্ছা ,যদি তাই না চাও তাহলে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো জান।
ঘুম থেকে উঠে দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে।
কথাটা বলে ,রোহান পরম যত্নে রেশমা মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে
প্রকৃতির হিসাব বোঝা বড় মুশকিল।
কে কখন কার কাজে লাগবে তা বলতে পারবে না কেউ।
আজকে যার জন্য তোমার সব স্বপ্ন, ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেছো।
হয়তো একদিন তার উছিলায় তোমার জীবনে বড় কোনো প্রাপ্তি বা কল্যান রয়েছে।
যাকে এতদিন তোমার দু’চোখে বীষের মতো লেগেছে।
হয়তো সেই তোমার জীবনের অমৃত হয়ে আসবে।
নিয়তি কখন কার কাছে নিয়ে আসে তা কেউ জানে।
সময় এবং অন্তর থেকে আল্লাহর নিকট তওবা কখনও কখনও বড় পাপীষ্টো কেও বদলে ইমানদার করে দেয়।
আবার কখনো ভালো মানুষটি সয়তানের ধোঁকায় পড়ে লোভের কারণে পাপের পথে পা বাড়ায়।
সুন্দর জীবনকে অভিশপ্ত করে ফেলে।
এই সব কিছু আমাদের কর্ম ফল ।
নিয়তি বা ভাগ্যের খেলা।
আইসিইউর সামনে শান ও সাদ দাঁড়িয়ে আছে।
সাদ তার ভাইকে বারবার শান্ত্বনা দিচ্ছে মনোবল শক্ত রাখার জন্য,
কিন্তু শান তা পারছে না।
পারবে কি করে!
তার চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছে মৌরির রক্তে ভেজা জর্জরিত নিথর দেহটা ।
শান তো গতকাল থেকে এ পর্যন্ত হাজারবার বলেছে তার মতো পাপীষ্ট মরে যাক তবুও যেনো আল্লাহ ওর নিষ্পাপ স্ত্রীকে ওর সন্তানের মা’কে বাঁচিয়ে দেয়।
তার সন্তানদের কোমল হৃদয়ের মা হারানোর ব্যথা সহ্য করতে পারবে না সে।
তা মৃত্যুতে হয়তো কারো ক্ষতি হবে না কিন্তু মৌরি চলে গেলে হাজার হাজার অসহায় মেয়েদের মাথায় থেকে ছাদ চলে যাবে।
মৌরির ভাগ্যে কি আছে এখনও বলা যাচ্ছে না
গতকাল থেকে এখনও ওর জ্ঞান ফিরেছে না।
প্রতিটি মুহূর্ত মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
গতকাল থেকে ওকে চার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে এরমধ্যে দুই ব্যাগ রক্ত শান নিজেই দিয়েছে।
শানের শরীরের কথা ভেবে ডাঃ শানকে রেষ্ট নিতে বলেছে।
কে শুনে কার কথা ।
শান গতকাল থেকে এখনও আইসিউর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
তার ধারণা সে এখানে থেকে সরে গেলে মৌরি তাকে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে।
তাইতো গতকাল থেকে এখানে একভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
তবে আজকে কিছুক্ষণের জন্য এই জায়গা ফাঁকা ছিল।
বলতে বাধ্য হয়ে ফাঁকা করে দিতে হয়েছে।
সকালের দিকে না খাওয়া ও দুশ্চিন্তার কারণে শান প্রেশার ফল করে কিছুক্ষণের জন্য জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ।
এমনিতেই রোগী নিয়ে ডাক্তারেরা ঝামেলায় আছে তার মধ্যে রোগীর সাথের লোকটার অবস্থা দেখে কিছুটা বিরক্ত হয় তারা।
অবশ্য তবুও অসুস্থ্য শানকে ফেলে রাখেনি বরং চিকিৎসা করে।
স্যালাইন দেওয়ার পর শানের জ্ঞান ফিরলে মৌরির কাছে যেতে জেদ করে।
ডাঃ ধমকে আগে স্যালাইন শেষ করতে হবে জানায়।
শানের বাড়িতে খবর দিতে বলে।
তখনই শান সাদকে মৌরির অবস্থার কথা জানায় এবং এই খবর যেনো বাড়িতে কেউ না জানে তাই আগে থেকেই সতর্ক করে দেয়।
সাদ খবর শুনে দেরি করেনি এখানে এসে মৌরির অবস্থা ও শানের পাগলামি দেখে বুঝতে পারছে না কি করবে!
অন্যদিকে ডাঃ জানিয়েছে মৌরির অবস্থা বিশেষ ভালো না।
যে কোনো সময় কিছু একটা হয়ে যেতে পারে।
শান ও সাদ রেশমা ও রিফাতকে বারবার ফোনে ট্রাই করেও পাচ্ছিল না।
তখন মনে পড়ে ওরা দেশে নেয় তাইতো আগের নাম্বার কাজ করছে না।
এদিকে মৌরির একদিনের চিকিৎসায় টাকা যাচ্ছে পানির মতো।
শানের বিকাশে যা ছিল তা খরচ করা শেষ গতকাল রাতেয়।
আজকে সাদ আসার সময়ে গোপনে শানের আলমিরার ডয়ারে অল্প কয়েকটা গহনার আছে তা বিক্রি করে টাকা নিয়ে আসতে বলেছে এবং সাদের কাছে টাকা থাকলে তাও আনতে বলেছে।
সাদ ভাইয়ের কথা অনুযায়ী যা টাকা নিয়ে এসেছে তাও শেষ হওয়ার পথে।
অবশ্য এনজিওতে জানালে টাকার সমস্যার সমাধান হতো কিন্তু মৌরি বেঁচে আছে সে খবর জানাজানি হলে মৌরির শত্রুরা আবারো হামলা করতে পারে সে ভয়ে জানানো হয়নি।
যেখানে শত্রু নিজের ঘরে মধ্যে আছে সেখানে প্রতিটা পদক্ষেপ চিন্তা ভাবনা করে এগুতে হবে।
এমন পরিস্থিতিতে শান ও সাদ কি করবে ভেবে পাচ্ছে না!
শান যে কোনো মূল্যে মৌরিকে বাঁচাতে চায় আদৌও তা পারবে কিনা যানে না।
শান আইসিইউর বাহিরে বসে গতকাল বিকালের কথা ভাবছে,মৌরি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার কথা জেনে ওর সাথে শানও যেতে চায়।
কিন্তু মৌরি কোনমতেই শানকে সাথে নিতে রাজি হয়নি।
বরং শানের উপর এক চোট ঝেড়েছে।
শান মৌরির যাত্রাপথে আর অশান্তি করতে চায়নি তাই ওর সাথে যাওয়ার চিন্তা বাদ দেয়।
মৌরির গাড়ি বাড়ির গেট অতিক্রম করলে শানের কেমন অস্থির অনুভূত হয়।
কিন্তু মনের অস্থিরতা পাত্তা না দিয়ে বাড়ির ভিতরে যেতে নেয়।
সে সময়ে বাগানে থেকে কারো কন্ঠ শুনে ওদিকে এগিয়ে যায়।
দেখার জন্য কে কথা বলছে?
শান একটু সামনে এগিয়ে গেলে শুনতে পায়,কেউ ফোনে বলেছে,হ্যাঁ বাবা এইমাত্র বাড়িতে থেকে বের হয়েছে।
আরে হ্যাঁ তো একাই বের ,,,,,
।
বিঃদ্রঃ গল্প পড়েন ৮০০শ -৯০০শ জন কিন্তু লাইক দেয় ৯০-১০০ জন কমেন্ট করে ১০-১৫ জন।
বাকিরা নীরব।
হয়তো অনেকেই বলবেন তাহলে গল্প লেখেন লাইক ও কমেন্ট পাওয়ার জন্য!
আমার উঃ হচ্ছে না।
লেখি মনের শান্তির জন্য।
আর আপনাদের রেসপন্স পেলে সে শান্তি উৎসাহে বদলে যায়।
সেজন্য মৌরি গল্পে আজকের পর্বে সবার মন্তব্য আশা করছি ,নীরব পাঠকেরাও সাড়া দিন প্লিজ।
তবে কেউ নাইস, নেক্সট সুন্দর হয়েছে লেখবেন না।
আজকে আপনাদের গঠনমূলক মতামত চায়।
গল্পটা শেষের দিকে আছে আর হয়তো এক বা দুই পর্ব আছে।
গল্পটা সম্পর্কে আপনাদের পজেটিভ ও নেগেটিভ যা মতামত আছে শুনার ইচ্ছে করছে।
রেসপন্স বেশি পেলে তাড়াতাড়ি পরের পর্ব দেওয়া চেষ্টা করব।
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com