Breaking News

এক প্রতিবাদী নারীর জীবন যুদ্ধের গল্প । পর্ব- ৪৯

হ্যাঁ তো একাই বের হয়েছে।
আরে বাবা সত্যিয় বের হয়েছে।
যে বিষয়ের সাথে জীবন মৃত্যু জড়িয়ে আছে সে বিষয়ে মিথ্যা বলব কি জন্য!
তাছাড়া আমার কি জানের ভয় নেয়‌ যে তোমাকে মিথ্যা বলবো।
কথাটা বলে ফোন রেখে দিয়ে লোকটি সামনে ঘুরে তাকাল। ‌
লোকটা ঘুরলে তাকে দেখে শান হতভম্ব হয়ে যায়!
কারণ তার সামনের লোকটা যে আর কেউ না তার ছোট আব্বু।
মানে আলমাস চৌধুরী।
শান দূর থেকে আলমাসের কথা শুনে প্রথমে গলা চিনতে পারেনি ।
কিন্তু তাকে দেখার পর শানের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে তার ছোট আব্বু মৌরির সম্পর্কে কাউকে ইনফরমেশন দিতে পারে!
আর এই মুহূর্তে তো মৌরি ছাড়া আর কেউ বাহিরে যাচ্ছে না।
এতেই বোঝা যাচ্ছে ছোট আব্বু মৌরির সম্পর্কে বাহিরের কাউকে ইনফরমেশন দিচ্ছে।
যে মেয়েটা তাদের থাকতে দিচ্ছে, কাজ করছে যার পরিচয়ে তার ক্ষতি করতে ছোট আব্বুর একটু বিবেকে বাঁধছে না।
এমন জঘন্য কাজ করতে পারে।
শান রেগে আলমাস চৌধুরীকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মনে পড়ে মৌরির কথা।
শান ভাবে আলমাস চৌধুরীকে পড়েও দেখে নিতে পারবে ।
কিন্তু এখন দিরে করলে অনেক বড় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কথাটা ভেবে আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে ছুটতে থাকে যে করেই হোক মৌরিকে ঢাকা যেতে বাধা দিতে হবে।
শান গেটের বাহিরে এসে দেখে মৌরির গাড়ি দেখা যাচ্ছেনা।
এখন কি করবে বুঝতে পারছে না,
আর এভাবে সময় নষ্ট করা মানে মৌরির জীবন সংকটও দেখা দিতে পারে।
কিছু যে একটা করতেই হবে কথাটা ভেবে শান এনজিওতে যেতে নিয়েও ফিরে আসে।
কারণ ওখানে বলা মানে কোনো ভাবে শত্রুপক্ষের কানে আসা।
এটা ভেবে দৌড়ে বাড়িতে আসে।
এসে নিজের বাইক চালিয়ে ছুটে যায়।
শান যানে গ্রামে থেকে শহরে যাওয়ার রাস্তা গ্রামের মধ্যে একটাই।
গ্রামের রাস্তা শেষ হলে তখন শহরে যেতে দুই তিনটা রাস্তা রয়েছে।
শান বাইক নিয়ে ছুটে চলছে কিন্তু গ্রামের রাস্তা শেষের দিকে এখনো মৌরির দেখা পাচ্ছে না।
মেয়েটা এতো দ্রুত শহরের রাস্তায় পৌঁছানোর কথা না যদি না গাড়ির স্প্রিট নরমাল থেকে বেশি না হয়।
কথাটা ভেবে শান নিজেও বাইকের স্প্রিট বাড়িয়ে দিলো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রামের রাস্তা শেষ হলে শান ঢাকার বড় রাস্তায় উঠে।
এখন কোনদিকে যাবে ভেবে পাচ্ছে না।
হঠাৎ করে মনে হয় মৌরি তো কখনো সর্ট কার্ট রাস্তা দিয়ে যাবে না।
কারণ ঐ রাস্তাগুলো কিছু কিছু জায়গায় জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে গেছে।
ওখানে অনেক সময় চুরি ও ডাকাতি হয়।
এই রাস্তা দুটি ছাড়া যেটা আছে আল্লাহর নাম নিয়ে সে রাস্তার উঠে যায় ্
ঢাকা রাস্তায় উঠার কিছুক্ষণ পর দূরে মৌরির গাড়ি দেখতে পেয়ে শান খুশি হয়ে যায়।
তবে সে খুশির সময় বেশিক্ষণ স্থায়ীত্ব ছিল না।
শানের চোখের সামনে বড় একটা ট্রাকের সঙ্গে মৌরির গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় এতে গাড়িটা দুমরে মুচড়ে যায়।
এই দৃশ্য দেখে শানের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে নেয়।
শান মৌরি বলে চিৎকার করতে নেয় এরমধ্যে খেয়াল করে ট্রাকটি একটু পিছিয়ে মৌরির গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে জঙ্গলের দিকে ঠেলে দেয়।
ট্রাকের ধাক্কায় মৌরির গাড়ি ছিটকে পড়ে জঙ্গলে।
শান দৃশ্যটি বুঝতে পারছে ট্রাকের ড্রাইভার মৌরিকে মারতে এসেছে।
আর সে মৌরি নাম ধরে ডাকলে বা গাড়ি নিয়ে সামনে জঙ্গলে নামলে লোকটা বুঝে যাবে এতে মৌরিকে বাঁচাতে কষ্ট হবে
কথাটা ভেবে গাড়ি ঘুরিয়ে আরেকটু পিছনে গিয়ে জঙ্গলে নেমে যায় মৌরিকে খুঁজতে।
শান অস্থির হয়ে দৌঁড়ে গাড়ির কাছে গিয়ে দেখে গাড়ির অবস্থা এতটাই খারাপ
যে এরমধ্যে মৌরি থাকলে বাঁচার সম্ভাবনা নেয় বললেই চলে। শান কতটা ভেবে মৌরি বলে চিৎকার করে উঠল।
শান পাগলের মত গাড়ির মধ্যে উঁকিঝুঁকি দিয়ে মৌরিকে খুঁজতে লাগলো।
কিন্তু গাড়ির মধ্যে মানুষের কোন অস্তিত্ব খুঁজে না পেয়ে সুস্থির নিঃশ্বাস ছাড়লো।
তার মানে ওর মৌরি যেহেতু গাড়িতে নেয় তাহলে নিশ্চয় আসে পাশে কোথাও ছিঁটকে পড়েছে।
তার মানে ওর মৌরি বেঁচে আছে।
শান কথাটা ভেবে আশেপাশে তন্ন তন্ন করে খুঁজে বেড়াচ্ছে কিন্তু কোথায় মৌরির নাম নিশানা নেয়।
একটু পরে সন্ধ্যা নামবে তার আগে যে করে হোক মৌরিকে খুঁজে বের করতে হবে।
এটা ভেবে শান গাড়ির আশেপাশে থেকে খুঁজতে খুঁজতে অনেকটা সামনে জঙ্গলের দিকে চলে যায়।
ছোট ছোট গাছ সরিয়ে শান মৌরিকে খুঁজতে থাকে।
এক সময় জঙ্গলের মধ্যে মৌরিকে দেখে চমকে উঠে।
ছুটে যায় মৌরি কাছে।
কাছে গিয়ে মৌরিকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে ডাকতে থাকে।
কিন্তু মৌরির কোনো সাড়াশব্দ নেয়।
ইস্ মৌরির সারা শরীর রক্তে জর্জরিত হয়ে আছে ।
মৌরিকে এমন অবস্থায় দেখে শানের পাগল পাগল লাগছে।
শান অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত করে ।
কারণ এই মুহূর্তে মৌরিকে বাঁচাতে হলে হসপিটালে নিতে হবে।
আর এখানে থেকে একটু সামনেই একটা সরকারি বড় হসপিটাল আছে।
শান একবার দেখেছে হসপিটালটি ।
ওটা শহরের রাস্তায় পড়াতে সব রকম চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।
শান আর দেরি না করে মৌরিকে কোলে নিয়ে হাঁটতে থাকে।
বাইকের কাছে এসে মৌরিকে বাইকের পিছনে বসিয়ে গায়ের শার্টটা খুলে মৌরিকে নিজের সাথে বেঁধে নেয়।
এছাড়া আর কোন উপায়ও নেয়।
শান কিছুক্ষণের মধ্যেই মৌরিকে নিয়ে হসপিটালে আসে।
চিৎকার করে নার্স ডাঃ জড়ো করে ফেলে।
ডাক্তাররা মৌরির আশংকাজনক অবস্থা দেখে এখানে ভর্তি করতে চায়নি।
তাদের কথা এই রোগীর কন্ডিশন ভালো না।
দেখা যাবে ভর্তির পর কিছু হলে।
হসপিটালের বদনাম হবে।
সেজন্য এই রোগীকে এখানে রাখতে পারবে না।
কিন্তু তাদের কথা শুনে শান হতাশ না হয়ে
তার বৌকে বাঁচাতে ডাক্তারদের পায়ে হাতে ধরে।
তাদেরকে বলে,তারা মৌরির চিকিৎসা না করলে শানের ছেলেটা মা হারা হবে।
তাদের কারণে একটা বাচ্চা এতিম হয়ে যাবে।
তাছাড়া তার স্ত্রীর জীবনের সাথে অনেকের জীবন জড়িয়ে রয়েছে।
আর জন্ম মৃত্যু আল্লাহর হাতে।
আল্লাহ চায়লে তাদের উছিলায় মৌরি বেঁচেও যেতে পারে।
শানের কথা শুনে এবং অনুরোধের কারণে ডাঃ মৌরির চিকিৎসা শুরু করে।
সে থেকে শান হসপিটালে মৌরির জ্ঞান ফিরার অপেক্ষা করছে।
শান একবার নিজের দোষে মৌরিকে হারিয়েছে।
এবার কোনো কিছুর বিনিময়ে মৌরিকে হারাতে চায় না।
মৌরি শুধু শানের হৃদয়ে নয় ওর অস্তিত্ব জুড়ে মিশে রয়েছে।
এতদিন মৌরি থেকে দূরে থেকেছে ওর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে।
শান চায়নি তার জন্য তার অস্তিত্ব মানে মৌরি কষ্ট পাক।
তাইতো দূরে থেকে মৌরিকে ভালোবেসে গেছে।
শান আইসিইউর বাহিরে বসে শান বিরবির করে বলল, আমার ভালোবাসায় আঘাত করে ছোট আব্বু ভালো করনি।
এজন্য তোমাকে চরম মূল্য দিতে হবে।
এদিকে সাদ শানের কাছে ওর বাবার কথা শুনে লজ্জায় ঘৃণায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
ওর পরিবারের কারণে মৌরি এবং মৌরির পরিবার বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এটা মানতে পারছে না।
সাদ এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবার মৌরির সাথে যা হয়েছে এর সাথে যদি তার বাবা কোনো না কোনো ভাবে জড়িয়ে থাকে বা অন্য কেউ জড়িত থাকে তাহলে তাদের কঠিন শাস্তি পেতে হবে।
বাবা যা করেছে তার শাস্তি তো তাকে পেতেই হবে।
দরকার হলে সাদ তার বাবাকে নিজের হাতে পুলিশের কাছে তুলে দিবে।
অন্যদিকে রোহান ও রিফাত মৌরিকে কয়েকবার ফোন করেও পায়নি।
রেশমা বোনের কোন খবর না পেয়ে ছটফট করতে থাকে।
মেহরাবের জন্য কাঁদতে পারছে।
রিফাত রেশমার অবস্থা দেখে রোহানকে ইমার্জেন্সি টিকেট বুক করতে বলে।
রিফাতের ধারণা রেশমা যেহেতু মৌরির চিন্তায় অস্থির হয়ে রয়েছে ।
আর দুই বোন দুজনের হৃদয় । তাই রেশমার চিন্তা ভুল হতে পারে না।
এখানে থেকে সময় নষ্ট না করে দেশে ফিরে যাওয়া উচিত।
ওদিকে চৌধুরী বাড়িতে কেমন যেনো একটা নিরবতা ছেয়ে গেছে।
আলমাস চৌধুরী গতকাল রাত থেকে ঘুমাতে পারেনি।
সেদিকে কারো খেয়াল,,,,,
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com