Breaking News

ভালোবাসি তাই । পর্ব -০২

বাসায় এসেই মনটা ভালো হয়ে গেল। কারণ আম্মু বলেছে খালামণি নাকি আমাকে তাদের বাসায় যেতে বলেছে। এ তো মেঘ না চাইতেই জল। এরমানে হচ্ছে সায়ন ভাইয়ার সাথে আমার আবার দেখা হচ্ছে। রেডি থাকুন মিস্টার সায়ন। আমার থেকে আপনি যত দূরে যেতে চাইবেন আমি ততই আপনার কাছে যাবো। তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে বেরিয়ে পরলাম খালামণির বাসায় যাওয়ার জন্য।।
প্রায় এক ঘন্টা হতে চলল আমি খালামণিদের বাসায় এসে সোফায় বসে আছি। কিন্তু সায়ন ভাইয়াকে কোথাও দেখতে পেলাম না। এখন একা একা বসে থাকতে আমার খুবই বিরক্ত লাগছে। ওনার জন্য আমার আর তর সইছে না। তাই খালামনিকে বলেই ফেললাম,
– সায়ন ভাইয়াকে যে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না । ওনি কি বাসায় নেই?
– আর বলিস না দুপুরে খেয়ে যে কোথায় বের হয়েছে এখনও আসার নাম নেই। এই বাপ ছেলেকে নিয়ে আমি আর পারি না। দুজনেই ভ্রমণপিপাসু মানুষ। দেখতে পাচ্ছিস না এখন তুই না থাকলে আমি পুরোবাড়িতে একা। তাই তো তোকে ডেকে এনেছি।
– হুমমম বুঝেছি।
.
– এজন্যই তো আমি ঠিক করেছি মারিয়ার সাথে সায়নের বিয়েটা তাড়াতাড়িই দিয়ে দিব। তাহলে আমায় আর একা মরতে হবে না। সায়নের মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা শেষ হলেই তো ও ওর বাবার ব্যবসায় যোগ দিবে । এখন মারিয়া যদি মত দেয় আরকি ।
খালামণির মুখে এসব কথা শুনে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এখন এসব মাথায় আনলে তো চলবে না। আমায় যে আমার কাজটা কমপ্লিট করতেই হবে। তাই মনের জোর রাখাটা প্রয়োজন। আমি এসব চিন্তাভাবনা একপাশে ফেলে রেখে খালামণিকে বললাম,
– খালামণি তুমি কি রাতের রান্না করে ফেলেছো?
– নাহহ এখনো করিনি করবো কিন্তু কেন?
এটা শুনেই আমার মনটা আরো খুশিতে ভরে গেল। আজ যেন আমার মনটা শুধু খুশিই হয়ে যাচ্ছে। আজ খালি আমারই খুশি হওয়ার দিন। আমার মাথায় একটা প্ল্যান এলো। আমি খালামণিকে বললাম,
– তোমাকে আজ আর রান্না করতে হবে না। আজকে আমি রান্না করবো।
– এই না না। তুই পারবি না। পরে হাত পুড়ে ফেলবি ।
– খালামণি তুমি চিন্তা করো না তো। তোমার বোন আমাকে সব কাজ শিখিয়েছে। তাই এসব নিয়ে তুমি একদম ভেবো না।
– তুই পারবি?
.
– হুমম একশবার পারবো। আমি গেলাম তোমার ইচ্ছে হলে তুমি আসতে পারো।
এটা বলেই আমি কিচেনের দিকে হাঁটা ধরলাম।পেছন থেকে খালামণি বলে উঠলো,
– এই দাঁড়া আমিও আসছি।
দু ঘন্টার মধ্যে সায়ন ভাইয়ার সব ফেবারিট রান্না শেষ। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ওনি একেবারেই ঝাল খেতে পারেন না। আর আমি ঝাল ছাড়া খেতেই পারি না। বলা যায় আমি একটা আস্ত ঝালখোর। তারপরও আমার খুব আনন্দ লাগছে। আজকে সায়ন ভাইয়াকে আমি খুবই চমকে দিব। সায়ন ভাইয়ার রুমে গিয়ে ওনার রুমটা গুছিয়ে চলে এলাম। ড্রয়িংরুমে আসতেই কলিংবেল বেজে উঠলো। খুশিমনে গিয়ে দরজাটা খুললাম। দেখি যে সায়ন ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। আমায় দেখে যে অবাক হয়েছে সেটা তার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। আমি আমার বত্রিশটা দাঁত দেখিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললাম,
– চলে এসেছি ।
ওনি মুখটা গম্ভীর করে বললেন,
– সে তো দেখতেই পাচ্ছি। সর সামনে থেকে।
.
আমি সরতেই ওনি আমাকে পাশ কেটে নিজের রুমে চলে গেলেন।
রাতে খেতে বসে টেবিলে ওনার সব পছন্দের রান্না দেখে তো ওনি খুবই খুশি। সেটা ওনার মুখে দেখেই আমি বুঝতে পেরেছি। খেতে খেতে ওনি বললেন,
– আম্মু কি রান্না করেছো আজকে অনেক মজা হইছে।
খালামণি হেসে বললেন,
– হুমম আজকে রান্নার হাত বদলে গেছে তো সেজন্য।
– তার মানে আগে তুমি ডান হাতে রান্না করতে আর আজকে বাম হাতে রান্না করেছো। প্লিজ আম্মু এবার থেকে এ হাতেই রান্না করো।
– আরে বোকা আজ আমি রান্না করিনি।
– তাহলে কে রান্না করেছে?
– আজকে মালিহা রান্না করেছে।
ওনি খালামণির কথা শুনে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। আমিও একটা ক্লোজআপ হাসি দিয়ে চোখ মারলাম। ওনি মুখটা কালো করে খাওয়ায় মন দিলেন।
নিজের অজান্তে হলেও এই প্রথম ওনি আমার প্রশংসা করলেন। সেটা ভেবেই আমার আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করছে। মন থেকে শান্তিরা যেন বলছে, ” আমরা আছি মালিহা। আমরা আছি “। ওনার হেরে যাওয়া মুখটা দেখে এখন আমার খালি হাসি আসছে। হাসিটা লুকিয়ে চুপচাপ খেয়ে নিলাম।
ওনি খাওয়া শেষে চুপচাপ রুমে চলে গেলেন।
আমি এত সহজে হেরে যাওয়ার পাত্রী নই। আমিও ওনার পেছন পেছন ওনার রুমে চলে এলাম। ওনি আমাকে না দেখার ভান করে মোবাইল টিপতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। আমি বললাম,
– শোনুন না।
.
– হুমম বল কি বলবি?
– চলুন আমরা বিয়ে করে ফেলি।
– আমি তো বিয়ে করছিই তোর ও বিয়ে করার ইচ্ছে হলে বল আমি খালামনিকে বলবো তোর জন্য পাত্র দেখতে।
– আরে আমি সেকথা বলিনি। আমি বলছি আপনার আর আমার বিয়ের কথা।
– তুই এত নির্লজ্জ কিভাবে হয়েছিস মালিহা? তুই জানিস তোর বড় বোনের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তারপরও তুই এসব বলে যাচ্ছিস। আচ্ছা তোর কি নূন্যতম কমসেন্স বলে কিছু নেই?
– দেখেন আমি সবই জানি। এসব কথা আমাকে বলে লাভ নেই। আমি গত তিনবছর ধরে এসব কথা শুনছি তাই এগুলো এখন আমার মুখস্ত।
– তিন বছর ধরে তোকে এগুলো বলছি তাও তুই নিজেকে শোধরাতে পারলি না। তোর মত বেহায়া কয়টা আছে বলতো?
ওনার মুখে বেহায়া শুনে খুব খারাপ লাগলো। তাও কিছু বললাম না ওনাকে।
– শোনেন বিজ্ঞানও চায় আমরা একাসাথে থাকি।
– মানে?
.
– মানে হলো আমি ঝাল খেতে পছন্দ করি। আর আপনি ঝাল মোটেই খেতে পারেন না। এদিক থেকে আপনি আর আমি একে অপরের বিপরীত। বিজ্ঞান কি বলে বলুন তো বিজ্ঞান তো সবসময় বিপরীত দিকেই আকর্ষিত হয়। লজিক এবার কি দাঁড়ায় বলুন আপনার আর আমার একসাথে থাকা উচিত। তাই না?
– তোর এসব আজগুবি লজিক শোনার মত টাইম আমার নেই। বের হ আমার রুম থেকে।
– এখন আমাকে বের করে দিচ্ছেন ঠিকই কিন্তু কিছুক্ষণপর আপনি নিজেই আমাকে এ রুমে ডেকে নিয়ে আসবেন।
– ভুলেও না।
– চ্যালেঞ্জ করলাম আমি।
– ওকে চ্যালেঞ্জ এক্সসেপ্টেড।
– ওকে।
আমি এবার হাসতে হাসতে বেরিয়ে এলাম ওনার রুম থেকে। আরেক রুমে শুয়ে আছি। মনের সুখে এখন আমার গান আসছে । সায়ন ভাইয়ার হেরে যাওয়া ফেসটা আমি আবার দেখতে পাবো এটা ভেবেই আমার খুব আনন্দ লাগছে। আমি আমার বেস্টু সারাকে কল দিয়ে সব বললাম। এরপর দুজনে মিলে কিছুক্ষণ হাসলাম। সারার সাথে কথা শেষ হতেই শুনতে পেলাম সায়ন ভাইয়া ড্রয়িংরুম চিৎকার চেঁচামেচি করছে। খালামণিকে বলছে,
– আম্মু আমার মোবাইলটা কোথায়?
– তোর মোবাইল তো তোর কাছেই থাকে।
– আরে যেটা আমার কাছে থাকে সেটা তো আছেই। ঘরে যে মোবাইলটা থাকে সেটা কোথায়?
– আছে হয়তো কোথাও খুঁজে দেখ।
– তোমার কি মনে হয় আমি না খুঁজে এসে তোমাকে বলছি?
– অহহ তাহলে খুঁজেছিস? আচ্ছা তোর রুম তো মালিহা গুছিয়েছে। ওকে জিজ্ঞেস কর তাহলেই তো হয়।
– আমি কি কাউকে বলেছি নাকি আমার রুম গোছাতে?
ওদের মা ছেলের কথার মাঝেই আমি ড্রয়িংরুমে চলে এলাম। খালামণি আমায় দেখেই বললেন,
– মালিহা তুই তো সায়নের রুম গুছিয়েছিস। ওর মোবাইলটা কোথায় রেখেছিস একটু দেখিয়ে দিয়ে আয় তো মা।
আমি এবার একটা ভাব নিয়ে বললাম,
– খালামণি ওনি আমাকে ওনার রুমে যেতে নিষেধ করেছে। ওনি না বললে আমি ওনার রুমে যাবো না। আমারও তো মান সম্মান বলে কিছু আছে নাকি?
.
খালামণি এবার ওনাকে বললেন, আমাকে ওনার রুমে নিয়ে যেতে।
ওনার হয়তো মোবাইলটা খুব প্রয়োজন তাই দাঁতে দাঁত চেপে বললেন ওনার রুমে যেতে।
এ কথা বলেই ওনি হাঁটা ধরলেন। আমি ওনার পেছন পেছন হাঁটছি আর গুণগুণ করে গান গাইছি।
আজ আমার খুবই আনন্দের দিন।
ওনাকে আমি দুবার হারিয়ে দিলাম। ওনার রাগটা বাড়িয়ে দিতে আমার ভালোই লাগছে।
হঠাৎ ওনার দিকে চোখ গেল। দেখলাম যে রাগে ওনার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।
নাহ আর রাগানো ঠিক হবে না। না হয় ওনি রাগে ফেটে পড়বেন।
আচ্ছা ওনি যখন রাগে ফেটে যাবেন তখন কি সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।
সত্যি বিষয়টা অনেকটাই আজগুবি। মনে মনে আমার ভীষণ হাসি পেল।
ওনার রাগ বাড়াতে চাই না বলে গানটা বন্ধ করে ওনাকে ওনার মোবাইলটা বের করে দিলাম।
সত্যি মোবাইল লুকানোর বুদ্ধিটা কিন্তু সেই ছিল।
ওনি আমার হাত থেকে টান দিয়ে মোবাইলটা নিয়ে গেলেন।
এরপর শুয়ে শুয়ে মোবাইল দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।
এমন ভান করে রয়েছেন যেন এ ঘরে ওনি ছাড়া আর কেউ নেই।
আমি এবার মনে একটু জোড় এনে বললাম,
– আপনার জন্য কফি বানিয়ে আনি।
.
আমার এ কথায় যেন ওনি ফেটে পড়লেন।
শোয়ার থেকে উঠে আমার হাত মোচড় দিয়ে ধরলেন। আমি ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠলাম।
সেদিকে ওনার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আমাকে এভাবে ধরে রেখেই বলতে লাগলেন,
– কি ভেবেছিস তুই আমার পছন্দের রান্না করে, আমার রুম গুছিয়ে,
আমার জন্য কফি বানিয়ে আনলেই আমি তোকে ভালোবাসতে শুরু করবো?
তোকে আমি এতদিন পর্যন্ত ভালোই জানতাম।
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তোর মত বেহায়া, নির্লজ্জ মেয়ে বোধহয় এ পৃথিবীতে দুইটা নেই।
আমি তোকে কোনোদিনও ভালোবাসবো না। আই ডোন্ট ওয়ান্ট ইউ। আই ওয়ান্ট মারিয়া।
ইয়েস আই জাস্ট ওয়ান্ট মারিয়া নট ইউ।
.
ওনার আই ডোন্ট ওয়ান্ট ইউ কথাটায় আমার একটুও খারাপ লাগেনি।
কারণ এ কথাটা এর আগেও আমি বহুবার শুনেছি।
কিন্তু আই জাস্ট ওয়ান্ট মারিয়া এ কথাটায় আমার বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে গেল।
ওনি কথাটা একবার বলেছেন। কিন্তু এ একটা কথাই আমার কানে সহস্রবার প্রতিধ্বনিত হয়েছে।
ওনি আপুকে চান। তাহলে কি আমিই এতদিন ধরে অন্যায় করে এসেছি?
এটা ভেবেই চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।
ওনার সামনে কাঁদতে চাই না। তাই ওনার হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিঃশব্দে ওনার রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।
এক দৌড়ে ছাদে চলে গেলাম।।
ছাদে দোলনায় বসে আছি । এত রাতে ছাদে আসতে সবারই ভয় লাগে।
কিন্তু আমার কখনো ভয় লাগে না। আমি অনেক রাতেও ছাদে আসতে পারি।
আর খালামণিদের বাসায় এসেছি তবে ছাদে আসিনি এটা কখনোই হয়নি।
এর একমাত্র কারণ সায়ন ভাইয়া।
প্রত্যেকবার আমি এখানে আসলেই ওনি আমাকে কটু কথা শোনাবেন।
আর আমি মন খারাপ করে ছাদে চলে আসি। খালামণিদের ছাদটা আমার খুবই ভালো লাগে।
অবশ্য সব ছাদই আমার ভালো লাগে। আজ আকাশে চাঁদ নেই।
তবে পুরো আকাশটা তারায় ভরা ।
আমি সেদিকেই তাকিয়ে আছি।
মন খারাপের সময় আকাশের দিকে তাকালে মনটা ভালো হয়ে যায় আমার।
কিন্তু এখন কেন জানি মনটা ভালো হচ্ছে না।
মনে হচ্ছে কোনো বিষন্নতা আমাকে গ্রাস করে নিয়েছে।
আমার হয়তো এখন ইচ্ছে মত কাঁদার কথা কিন্তু আমার কান্নাই আসছে না।
কান্না গুলো যেন গলায় দলা পাকিয়ে আটকে আছে।
তারা যেন আজ পণ করেছে কিছুতেই গড়িয়ে পড়বে না।।
.
আচ্ছা আমি কি সায়ন ভাইয়ার সাথে বেশিই করে ফেলেছি । আমি তো ওনাকে ভালোবাসি।
তাই ওনাকে চেয়েছিলাম সবসময় আমার পাশে। কিন্তু ওনি কেন এতটা রিয়েক্ট করে ফেললেন।
তবে কি আমি ওনাকে পাওয়ার জন্য বেশিই বেহায়া হয়ে গেছি।
ওনি কেন বুঝলেন না যে আমি ওনাকে ভালোবাসি। এটা কোনো মোহ না এটা কোনো আবেগ না।
আমি সত্যি ওনাকে ভালোবাসি। কিন্তু ওনি তো বললেন ওনি আপুকে চান।
তাহলে তো ওনি কোনোদিনও আমায় ভালোবাসতে পারবেন না।
কারণ আপু মত দিলেই আপুর সাথে ওনার বিয়েটা হয়ে যাবে।
আর তখন আমি হয়ে যাবো থার্ড পারসন। সায়ন ভাইয়া ধীরে ধীরে আপুকে ভালোবেসে ফেলবেন।
কারণ একটা মানুষের সাথে থাকতে থাকতে তার প্রতি একটা মায়া পড়ে যায়।
তখন আর এ মায়া থেকে বেরোনো যায়। ছিঃ এসব আমি কি ভাবছি।
আমার নিজের আপুর হাজবেন্ড হবে সায়ন ভাইয়া। আমার তো সবসময় আপুর ভালো চাওয়া উচিত।
কিন্তু আমি কিসব ভাবছি। সত্যিই আজকাল আমি বড্ড সার্থপর হয়ে গেছি।
সায়ন ভাইয়া নামক রোগে ধরেছে আমায়।
যে রোগ থেকে না পারছি আমি বেরোতে না পারছি অন্যকিছু ভাবতে।।
.
আজকের পর সায়ন ভাইয়াকে আর জ্বালাবো না। কি লাভ জ্বালিয়ে? ওনি কখনোই পারবেন না আমাকে ভালোবাসতে। যদি পারতেন তাহলে তিন বছর ধরে আমাকে ওনার পেছনে ঘুরতে হতো না। শুধু শুধু মরীচিকার পেছনে দৌড়ে কোনো লাভ আছে? তার থেকে ওনাকে আর বিরক্ত না করাই ভালো। আর যাই হোক ভালোবাসা তো জোর করে পাওয়ার মত জিনিস না। বাজারের কোনো পণ্যও না যে কিনে নিয়ে আসা যাবে । থাকুক না সায়ন ভাইয়া ওনার মত করে। আমি আর চাই না ওনাকে রাগাতে। এখন থেকে ওনার জীবন থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করবো। এতেই হয়তো সবার ভালো। আচ্ছা সত্যিই কি আমি ওনাকে ছেড়ে দিতে পারবো? আমার যে পুরোটা জুড়েই সায়ন ভাইয়া। চাইলে কি ওনাকে আমার থেকে আলাদা করে দিতে পারবো? হয়তো হ্যাঁ নয়তো না।
হঠাৎ মনে হলো কেউ ছাদে এসেছে। আমি জানি এটা সায়ন ভাইয়া। ওনার দিকে তাকাতে ইচ্ছে করলো না তাই আকাশের দিকেই দৃষ্টি স্থির রাখলাম। তবে ওনার এখন ছাদে আসার কারণ বুঝলাম না। নাকি এখনো আমাকে বকা শেষ হয়নি আরো বকতে এসেছেন। ওনি এসে দোলনায় একেবারে আমার পাশেই বসে পড়লেন। আমি তো পুরোই অবাক। সায়ন ভাইয়া বসেছে আমার পাশে এটা তো কল্পনায় ভাবতাম। বাস্তবে যে কখনো বসবেন এটা চিন্তায়ও ছিল না। ওনি শান্ত গলায় বললেন,
– মালিহা!
.
ওনার এমন শান্ত ভয়েজ আমার কেমন জানি লাগলো। আমিও বললাম,
– হুমম
– তোর হাতে খুব লেগেছে তাই না? আসলে তুই তো জানিস রাগলে আমার মাথাই ঠিক থাকে না। তখন কি করতে কি করে ফেলি নিজেও জানি না। আমি জানি না আমি তোকে কেন ভালোবাসতে পারি না। আমার কেন তোকে দেখলেই রাগ উঠে যায়। আমি যদি তোকে ভালোবাসতে না পারি এটা কি আমার দোষ বল। তুই ও তো সারাক্ষণ খালি আমার পেছনে পড়ে আছিস। এত অপমান করি তোকে তারপরও কেন আমার কাছে আসিস। আমি তো শুনেছি তুই বাড়িতে কেউ কিছু বললে রাগ করে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিস। আর আমি তোকে এতকিছু বলি তারপরও তুই আমার কাছে কেন আসিস?
– ভালোবাসি তাই।
.
– আবার ভালোবাসি তাই। এ কথাটা শুনলেই আমার রাগ উঠে যায়। আমি বলছি কি শোন এসব কিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দে। আজ বাদে কাল আমি তোর আপুর হাজবেন্ড হবো তখন তোকে আমায় ভুলে যেতেই হবে তাই না? সবকিছু ভুলে নতুন করে শুরু কর তাতেই সবার ভালো হবে।
এবার ওনি আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে ফেললেন। ভুলে যাওয়া কি এতই সহজ? আমার খুব রাগ হলো ওনার কথায়। তাই দোলনা থেকে দাঁড়িয়ে ওনার শার্টের কলার চেপে ধরে বলতে লাগলাম,
.
– ব্যস আপনি অনেক বলে ফেলেছেন। মাথা থেকে সব ঝেড়ে ফেলে দে বললেই কি সব ফেলে দেওয়া যায়? আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমার ভালোবাসাটাকে কি আপনি ঠুংকো ভাবছেন? যদি আমার ভালোবাসাটা তেমনি হত তাহলে তিনটা বছর শুধু আপনাকে নিয়ে ভাবতাম না। এত সহজে যদি আপনাকে ভুলে যেতে পারতাম তাহলে এতদিনেই ভুলে যেতাম। আপনাকে হারানোর ভয়ে বারবার আপনি অপমান করার পরও আপনার কাছে ছুটে আসতাম না। আপনি আমায় বকা ঝকা করেন বলে কি ভাবেন আমার কষ্ট হয় না? আমারও কষ্ট হয় খুব কষ্ট হয়। কারণ আমিও তো রক্তে মাংসে গড়া মানুষ রোবট তো না। কেন আপনার অপমান গায়ে মাখি না জানেন? আপনার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য। আমি চাইলেই ইগো দেখিয়ে আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে পারতাম। কেন যাইনি জানেন? আমার মনে হতো ভালোবাসায় ইগো দেখাতে নেই।
তাহলে সেটা আর ভালোবাসাই থাকে না। তাই কখনো আপনাকে ইগো দেখায়নি। তবে আর না। আমি আর আপনার সামনেই আসবো না। পারলে এখনই চলে যেতাম কিন্তু সেটা যখন সম্ভব হচ্ছে না কাল সকাল পর্যন্ত আমায় সহ্য করুন। আমি আর বারবার ভালোবাসি বলে আপনাকে বিরক্তও করবো না। আপনি থাকুন আপনার মত ভালো থাকুন। কখনো ভালোবাসা চাইতেও আসবো না। অনেক তো করেছি আমি আর কত বিরক্ত করবো আপনাকে? আমাকে দেখলেই যখন আপনার রাগ হয় আমার আপনার সামনে না আসাই ভালো। এতদিনে যখন আমায় ভালোবাসতে পারলেন না আর কখনো পারবেন না এটা আমি বুঝে গেছি। আপনি আপুকে চান তাই না? আপনি আপুকেই পাবেন। আমি আর কখনো আপনাদের মাঝে আসবো না। আপনার প্রতি আমার ভালোবাসাটা আমি আর কখনোই প্রকাশ করবো না। তার মানে এ না যে আমি আপনাকে আর ভালোবাসি না? ভালোবাসি সারাজীবন ভালোবাসবো তবে সেটা আর কাউকে দেখাবো না। আমার মনের মাঝে সুপ্ত অবস্থায় রেখে দেব। খুব ভালো থাকবেন। আপুকে নিয়ে সুখী হোন।।
কথাগুলো বলেই ওনাকে ছেড়ে দিয়ে চলে এলাম। আমি জানি ওনি এখন অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো কিছু বলতে চেয়েছেন। আমার শুনতে ইচ্ছে করছিলো না তাই চলে এলাম। পেছনে ফিরতেও ইচ্ছে করলো না। কি দরকার আর মায়া বাড়ানোর? পেছনে ফিরলেই ওনার মায়ায় পড়ে যাবো।।
চলবে,,,,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com