গল্পঃ বড্ড আদরে । পর্ব- ৩
আপনি একটা বদ, আপনি অনেক পচা! আপনি আমায় দমক দিয়ে কথা বলেন কেন? জানেন না, আমাকে কেউ দমক দিলে আমি ভয় পায়।
– ওরে বোন, কান্না থামাও না হলে আম্মু আবার চলে আসবে?
– এ্যা এ্যা এএ এ্যা…
– এখন আবার কি হয়ছে, কান্না করছো কেনো?
– এ্যা এ্যা উমম উমম, আপনি আমায় বোন বললেন কেন? আমি না আপনার বউ হয়, বউকে কেউ বোন বলে? আমি আম্মুর কাছে বলবো আপনি আমায় বোন বলেছেন!
ইভার কথা শুনে বুঝলাম, ওরে যেমন পিচ্চি দেখা যায় সে মুঠেই তেমন পিচ্চি না! বড্ড ইতরে পাকা একটা মেয়ে। আল্লাহ এ কি ঝামেলাপূর্ণ পরিস্থিতিতে ফেললে আমাকে? বিয়ের জন্য আমার কপালে এমন পিচ্চি একটা মেয়েই রাখলে?
– আম্মুকে এসব বলো না, প্লিজ! আমি তো তোমার সাথে মজা করছিলাম আর কখনোই বোন বলবো না।
আম্মুকে যে আমি কি পরিমাণ ভয় পায় তা বলে বুঝাতে পারবো না! হাতের কাছে যা পায় তা দিয়েই মারতে শুরু করে, বুঝতেই চাই না আমি যে বড্ড বড় হয়েছি। আম্মু এখনো সেই ছোটবেলার মতো শাসন করে।
– আচ্ছা বলবো না তবে একটা শর্ত আছে?
– কি শর্ত বলো, আমি সব মানতে রাজি!
– আপনাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে দিতে হবে আর সকালে ঘুম থেকে উঠেও যেনো দেখতে পায় আপনার বুকের উপর শুয়ে আছি।
– আচ্ছা, তোমার যেভাবে ইচ্ছে ঘুমিয়ো তবুও আম্মুকে কিছু বলো না।
– বলবো না, আসুন আমরা ঘুমিয়ে পড়ি।
বলেই ইভা আবার আমাকে আগের মতো জড়িয়ে ধরে বুকের উপর শুয়ে পড়লো। আমি চুপচাপ অসহায় ভাব নিয়ে বিছানায় নাম মাত্র শুয়ে রইলাম। তখনি ইভা বলে উঠে,
– কি হলো, আপনি আমায় জড়িয়ে ধরেন না কেন?
অবশেষে বাধ্য হয়ে ইভাকে জড়িয়ে ধরলাম। এই পিচ্চি মেয়েকে বিশ্বাস নেই, কথা না শুনলে হয়তো আবার আম্মুকে কান্না করতে করতে ডাক শুরু করবে। ইভা আমার উপর একটা পা তুলে জড়িয়ে শুয়ে আছে, মনে হচ্ছে আমি ওর কোলবালিশ!
কেমন যেনো লাগছিল, ঘুম আসছিল! অনেক বিরক্ত লাগছিল তবুও কিছু বলতে পারছিলাম না আম্মুর ভয়ে। কখন যে চোখ বুজে এলো মনে নেই হঠাৎ ইভার কন্ঠ কানে ভেসে এলো,
– কি হলো! আপনি কি ঘুমিয়ে গেছেন?
– না, কিছু বলবে? অনেক রাত হয়েছে এখনো জেগে আছো কেনো?
– ঘুম আসে না তো!
– তা আমায় কি করতে হবে?
– আমার রাতে ঘুম না এলে আম্মু মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো! আপনিও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন না?
পিচ্চিটার এমন কথা বার্তা শুনে রাগের সাথে হাসিও পাচ্ছিল। আল্লাহ এই পিচ্চিটা কে নিয়ে আমি সংসার কি করে করবো?
– আমি এসব পাড়বো না, আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে!
– আমি কি আম্মুকে ডাক দিব?
– দূর কি এক ঝামেলায় পড়লাম।
বাধ্য হয়ে ইভার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে শুরু করলাম। ইভা আমায় জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পড়লো। ড্রিম লাইটের আলোয় ইভাকে ঘুমন্ত পরীর মতো লাগছিল। ইভাকে দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গেলাম।
হঠাৎ ঘুমের মাঝে একটা মেয়ের কান্নার আওয়াজ পেলাম। ঘুমের মাঝে কান্না শুনতে খুব বিরক্তিকর লাগছিল। চোখ খুলে তাকিয়ে খোঁজ শুরু করলাম কান্নার শব্দ কোথায় থেকে আসছে। চারদিক দেখে বিছানায় চোখ যেতেই অবাক হয়ে গেলাম, ইভা বাচ্চাদের মতো বসে বসে কান্না করছে।
– আরে এখন আবার কি হলো, কাঁদছো কেনো?
– উমম উমম ( ঠোঁট ভেঙ্গে কান্না )
– চুপ করে আছো কেনো? কি হয়ছে বলবে তো?
– এ্যা এ্যা উমম উমম
ইভা কান্নার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে! ইভার কান্নার কারণে আমার খুব ভয় হচ্ছিল, আম্মু না আবার এসে পড়ে।
– আরে কান্না করছো কেনো? কি হয়ছে বলো আমায়?
– আপনি অনেক পচা, আস্ত বদ! আপনি আমায় আপনার বুকের উপর থেকে সরিয়ে দিলেন কেনো?
– ও এই ব্যাপার! ঘুমের মাঝে হয়তো সরিয়ে ফেলেছি, এর জন্য কান্না করার কি আছে?
– কেনো সরিয়ে দিবেন? আপনাকে না আমি রাতে বলে ঘুমিয়েছি, সকালে উঠে যেনো আপনার বুকের উপর নিজেকে পায় মনে নেই কথাটা।
– ঘুমের মাঝে সরিয়েছি এতে আমার কি করার ছিল?
– কিছু করার নেই না! এখন আবার আমায় জড়িয়ে ধরে, মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেন।
পিচ্চিটার কথা শুনে খুব রাগ হচ্ছিল কিন্তু কিছুই বলতে পারছিলাম না আম্মুর কারণে! আম্মুকে ভয়ের আরেক কারণ আমাদের বাসার ঝাটা!
– আমি পারবো না ঘুম পাড়িয়ে দিতে, আমার তীব্র ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমালাম।
– আমি কিন্তু কান্না করবো আর আম্মুকে ডেকে বলবো, আপনি আমায় বকেছেন!
কি এক ঝামেলায় পড়লাম রে বাবা! কথায় কথায় শুধু কান্না করবো আর আম্মুকে ডাক দিবো আর ভালো লাগছে না এই প্যারা।
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com