ভালোবাসি তো অনেক বেশী । পর্ব -০২
অধরা এখনো কাঁপতেছে যদি স্বপ্ন সত্যি হয় তাহলে সে কি ভাবে সব সামলাবে।
ভয়ে মাথাটা চিন চিন করে ব্যাথা করছে।
এখন আর ভার্সিটিতে যেতে ইচ্ছা করছে না।
ভার্সিটিতে যাবার ইচ্ছাই মাটি হয়ে গেছে।
কোন কিছুই ভালো লাগছে না।
অধরা এমন কিছুর কথা আগে কেন ভাবেনি?
কিন্তু এমন কিছু হবার সম্ভাবনা তো অনেক বেশী ছিল।
হঠাৎ করে ফোনটা বেজে উঠলো।
ফোনে শব্দ পেতেই অধরা ফোন টাকে খুঁজতে লাগলো। ফোনের শব্দটা বিছানার নিচ থেকে আসতেছে তার মানে ঘুমের মধ্যে ফোনটা হয়তো অধরা নিচে ফেলে দিয়েছে।
ফোনটা তুলে হাতে নিতেই কলটা কেটে গেল।
কে কল দিয়েছে চেক করা আগেই বমা(তমা) কল আবার কল করেছে। তমা অধরা বেস্ট ফ্রেন্ড।
প্রায় ৮ বছরের বন্ধুত্ব ওদের।
কল রিসিভ করতে ওপাশ থেকে- কিরে পেত্নী ঘুম ভাঙ্গছে তোর?
কখন বের হবি বাসা থেকে?
লেট লতিফা প্লিজ আজকেও লেট করিস না।
অধরা বমা তুই চুপ থাকলে আর ফোনটা রাখলে আমি রেডি হয়ে বের হইতাম আর কি।
আচ্ছা মা আমার আমি ফোন রাখলাম।
তুই সময় মতো চলে আসলেই হবে বলে তমা ফোনটা কেটে দিল।
অধরা ফোনটা রেখে মায়ের কাছে গেল।
(অধরার আম্মু রান্নাঘরে রান্না করছিল।)
অধরা: আম্মু তোমার থেকে একটা বোরকা দিবা?
আমি আজকে বোরকা পরে বের হবো।
অধরার আম্মু কিছুটা ভুত দেখার মতো অধরাকে দেখতে লাগলো?
তোর মাথা কি ঠিক আছে বাবুনী( অধরার আম্মু অধরাকে আদর করে বাবুনী ডাকে)।
অধরা: কেন কি হইছে?
অধরার আম্মু: কালকে রাতে কমপক্ষে ৪/৫ টা ড্রেস পরে আমাদের দেখালি আজকে কোনটা পরে যাবি আর এখন বলতেছিস বোরকা পরবি!?
আদিব: হুম আপু প্রতিটা ড্রেস পরে তোমার কম হইলেও ১০০ টা ছবি তোলে দিছি।
অধরা: উহ এতো কথা বলো কেন আমার মাথা ব্যাথা করতেছে।
আম্মু আদুকে(আদিব) দিয়ে তোমার থেকে একটা বোরকা পাঠাও তো বলে অধরা ফ্রেশ হতে চলে গেল।
ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে অধরা দেখলো আদিব কফি আর একটা বোরকা নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
অধরা কফিটা আদিবের হাত থেকে নিতেই আদিব বলতে লাগলো।
আচ্ছা আপু কেসটা কি সত্যি করে বলোতো।
তুমি কি পালায় যাবার প্লান আছে নাকি?
অধরা আদিবের কানটা ধরে এতো পাকা পাকা কথা কই থেকে শিখেছিস?
পালায় যাওয়া কাকে বলেরে?
আদিব: আপু কানটা ছাড়ো আর পালায় গেলে বলো আমি তোমার সাহায্য করবো।
অধরা: কানের নিচে দিবো একটা থাপ্পড় দিন দিন তোমার পাকামির মাত্রা বাড়তেছে।
বাসায় এসে আব্বুর কাছে বিচার দিবো।
আদিব: ধূর কারো সাহায্য করতে চাওয়াটা ভুল।
থাকো কোন বিপদে পরলে আমার কাছে আগে আসতে হবে।
অধরা: যখনেরটা তখন দেখা যাবে এখন ভাগ এখান থেকে।
আদিব রুম থেকে চলে যেতেই অধরা বোরকা পরে নেকাব পরে রেডি হয়ে বের হয়ে গেল।
অধরা রিকসায় বসে মনে মনে বলতে
লাগলো আম্মু আর আদিব আমাকে এই ভাবে বের হতে দেখে অনেক চিন্তা করতেছে।
কখনো তো এইভাবে বের হই না তাই চিন্তার পরিমাণটা বেশী।
আর আদিব অধরার থেকে ১০ বছরের ছোট হলেও কি হবে সে অধরার খেয়াল বড় ভাইয়ের মতো রাখে। এইতা রিকসাটা ও আদিব ঠিক করে দিছে আর রিকসাওয়ালা মামাকে বার বার বলেছে রিকসা সাবধানে চালাতে। কিন্তু কি আর করার যতোখন না সিউর হওয়া যাবে ও(অভ্র) এখানে ভর্তি হয়েছে কি না ততোক্ষণ এই ভাবে থাকতে হবে।
কিন্তু যদি ও এখানে ভর্তি হয়!?
এইটা ভাবতেই ওর কলিজা শুকায় যায়।
পানির পিপাসা পায়।
ক্যাম্পাসের কাছাকাছি এসেই অধরা তমাকে কল দিল।
কিরে তুই কই? আমি তো চলে এসেছি।
তমা: আরে লেট লতিফা দেখি আজকে ফাস্ট লতিফা হয়ে গেছে।
আমি আসতেছি ২০ মিনিট লাগবে।
অধরা রিকসা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে চারপাশটা ভালোভাবে দেখতে লাগলো।
ভয়ে ভয়ে অধরা ক্লাসে এসে বসলো।
তমা এসে অধরাকে খুঁজতে লাগলো।
অধরা তমাকে দেখা হাত নাড়িয়ে কাছে ডাকলো।
তমা: জ্বী আপু আমাকে ডাকছেন কেন?
আমি আমার ফ্রেন্ডকে খুঁজতেছিল।
এই যে গেল গাধীটা।
অধরা: তমার হাত টান দিয়ে ওর পাশে বসিয়ে আরে ছাগলি আমি এখানে।
তমা: দোস্ত তোর কি হইছে তুই ঠিক আছিস তো?
তোর এলাকার ওই কুত্তাটা তোকে কিছু বলে নাই তো?
দাড়া এবার শালাকে এমন মাইর দিবো জীবনেও তোর দিকে তাকাবে না।
অধরা: ধূর বমা তুই ক বললে কলকাতা বুঝলে তো হবে না।
তমা: তাইলে তুই বোরকা পরছিস কেন?
অধরা: তেলাপোকার ভয়ে!!!
তমার এবার হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাবার উপক্রম।
তুই তেলাপোকাকে ভয় পাস জানি কিন্তু তেলাপোকার ভয়ে বোরকা পরতে হবে?
অধরা: রাগি গলায় তুই কি কখনো সিরিয়াস ভাবে কোন কথা নিতে পারিস না?
তমা: আচ্ছা মা আমার তুই তেলাপোকাকে ভয় পাস এটা সিরিয়াস ভাবে নিবার কি আছে?
তেলাপোকা ভয় পাবার মতো কি আছে?
অধরা: হুদাই কি আমি তোরে ছাগলি বলি?
এই তেলাপোকা সে তেলাপোকা না।
এই তেলাপোকা রাজশাহীর তেলাপোকা!
তোর এক সময়ের বেস্টু!
তমা: দোস্ত সত্যি ও এখানে ভর্তি হইছে?
(অধরাকে জড়িয়ে ধরে)
যাক ভালোই হইলো তাইলে আমার ভার্সিটি লাইফটা মজাদার হইতে যাইতেছে।
অধরা মন খারাপ করে মজাদার হইলে এখনি খেয়ে ফেল।
তাহলে আমার আর সমস্যা হবে না।
তুই মনে হয় সব ভুলে গেছিস ওর সাথে আমার কি হয়েছে? শুধু আমার সাথে না তোর সাথে ও।
আর ও তোরে ও ভুল বুঝে।
ও আমাদের কথা শুনবে কোন কিছুর বোঝার চেষ্টা ও করবে না দেখিস। ও যদি এখানে ভর্তি হয় তাহলে শুধু মাত্র আমাদের ১২টা বাজানোর জন্য হবে।
কারন ও প্রথম থেকেই জানে আমাদের স্বপ্ন এখানে ভর্তি হওয়া।
তমা: হুম এটা ঠিক ও তো তোর সাথে আমাকেও ভুল বুঝে আছে আর ও আমার কথা ও শুনতে চায় না। তোর জন্য আমাকে ব্লক করে রাখছে সব জায়গা থেকে।
আর ওর অনেক রাগ আছে তোর উপর সাথে আমার উপর ও।
এখন ও যদি এখানে চান্স পায় তাহলে আমাদের খবর আছে।
আমাদের জীবনকে পুরাই নরক বানায় দিবে।
অধরা: আমার ভয়টা এখানেই। ও যখন আমার সাথে ছিল তখন আমি নিজে কিছু বুঝি নাই আর যখন কিছু বোঝলাম তখন কিছু বুঝানোরর আগেই ও অনেক কিছু করে ফেলছে।
ওদের কথার মধ্যে স্যার চলে আসলো।
২জনের মধ্যে উত্তেজনা কাজ করতেছে অভ্র এখানে ভর্তি হবার চান্স আছে কারন অভ্র অধরা আর তমার থেকেও বেশী মেধাবী।
এই চিন্তার মধ্য দিয়ে ওদের ১ম দিনের ক্লাস শেষ হলো।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com