গল্পঃ শুদ্ধ । লেখিকা - মাহাবুবা জাহান
গাড়ী ছুটে চলেছে।
জামিল বসে আছে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
সে এক জন ড্রাইভার কিন্তু আজকে সে গাড়ী চালাচ্ছে না
গাড়ী চালাচ্ছে তার মালিক রহমান সাহেব।
ভাবতে আবাক লাগে ড্রাইভারের পাশের ছিটে বসে
মালিক গাড়ী চালিয়ে ড্রাইভারকে নিয়ে চলেছে।
তাদের উদ্দেশ্য পতিতা পল্লী।
জামিল এক সময় পতিতা পল্লীর নিয়মিত কাস্টমার ছিল এর পর তার জীবনে এক দিন মিনুর আগমন ঘটলো আর তার জীবনকে পুরোপুরিভাবে বদলে দিল।
হুম জামিলকে আগে দেখলো হয়তো বুঝার উপায় ছিল না যে সে এই নিষিদ্ধ জগৎকে এতো ভালোবাসতো।
পতিতা পল্লীর প্রতি মেয়ে চেখে দেখা তার একটা নেশা ছিল।
সে নিয়মিত কাস্টমার হওয়াতে বেশ সুযোগ সুবিধা পেতো।
সে রকমেই একদিন জামিল পতিতালয়ে যাবার পর বড় খালা জামিলকে ডেকে এই ছোড়া এই দিকে আয়। নতুন একটা মাল এসেছে দেখতে বেশ সুন্দর আর ভালো।
কিন্তু রেটটা একটু বেশী।
জামিলের নতুন মেয়ের কথা শুনতে মাথা ঠিক তাকে না।
নতুন আর সুন্দর হলে সে তার জন্য বেশী টাকা দিতে রাজি আছে।
জামিল এখনকার সব কিছু চেনে তাই আর মেয়েটার রুমে যেতে ১ মিনিট ও লাগলো না।
জামিল রুমে যেতেই দেখে মেয়েটা জানালা দিয়ে আকাশ দেখছে এখনো চেহারাটা ঠিক মতো দেখে যায় না।
জামিলের শব্দ পেয়ে মিনু জামিলের দিকে তাকাতেই জামিল মিনুকে দেখে অবাক।
কোন সাজগোজ ছাড়াই
১৫/১৬ বছরের একটা মেয়ে হবে মেয়েটা।
দুধেআলতা গায়ের রং, কাজল কালো চোখ, পুরো চেহারা জুড়ে সে কি মায়া।
একবার দেখলে বার বার দেখতে ইচ্ছা করে।
এতো পিচ্চি একটা মেয়ে আর দেখা মনে হচ্ছে ভদ্র ঘরের মেয়ে।
তাহলে সে এখানে কী করে এলো।
তোমার নাম কি জিজ্ঞেস করলো জামিল।
জামিল নিজেই অবাক মেয়েটাকে তুমি করে বালায়।
কারন জামিল সে টাইপের লোক যে এখনে এসে সুখ খুঁজলেও বের হয়ে ঠিকেই বকা দেয়।
তার কথা শুনে মনে হয় এই টাই পৃথিবীর সব থেকে অপবিত্র এবং অশুদ্ধ জায়গা।
গঙ্গা জল দিয়ে গোসল করলেও এই জায়গা ও এই জায়গার মানুষগুলা শুদ্ধ আর পবিত্র হবে না।
জামিলের কথার উত্তরে মেয়েটি বললো মায়া।
জামিল জানে মেয়েটা নাম মায়া না কিন্তু মেয়েটার সাথে এই নামটা ভালো যায়।
মায়াবতীকে তো মায়া নামেই বেশী মানায়। জামিল মেয়েটার কাছে জানতে চাইলো তোমাকে দেখে তো ভদ্র ঘরের সন্তান মনে হয় তাহলে তুমি এখনে কি করে?
প্রশ্ন করে জামিল নিজেই অবাক কেননা এর আগে সে কোন মেয়ের কাছে এসব জানতে চায় নাই।
উল্টা টাকার বিনিমেয় ১ঘন্টা কিনে নিয়েছে বলে সে ১সেকেন্ড ও সময় নষ্ট করতে চাইতো না।
কতো মেয়ে শরীর ব্যাথা, জ্বর, মাথা ব্যাথা কতো অজুহাতে বাঁচতে চেয়েছে কিন্তু জামিল কোন কিছুতেই ছাড় দেয়নি।
কিন্তু আজ এই মায়াবতীর মায়া পরে কেন যেন তার মেয়েটার সব জনতে ইচ্ছা করতেছে।
মায়া: আরে বাবু এতো কিছু জেনে কি করবেন?
কাপড় খোলবো নাকি সেটা বলেন।
১৫/১৬ বছর হলেও মেয়েটার কথা মনে হচ্ছে এখানকার জীবন তাকে ৪০/৫০ বছর করে দিয়েছে।
জামিল: সব মেয়েদের কি কাপড় খুললেই ভালো লাগে?
কিছু মেয়েকে শুধু কাপড়েই মানায়।
না হলে মা, মেয়ে, বোন এই সম্পর্ক গুলা থাকতো না।
নিজের অজান্তে কথা গুলা বলে ফেলেন জামিল।
তার দু চোখ বেয়ে পানি পরতে শুরু করালো।
আজ জামিলের ওপর জামিলের নিজের ঘৃণা হচ্ছে।
সে কেমন পুরুষ যার মেয়েদের সম্মান করার কথা সে নিজেই মেয়েদের ভোগ করে মা** বলে বকা দিত।
জামিলকে কান্না করতে দেখে মেয়েটা জামিলের পাশে বসে।
প্রতিটা মেয়েই কারো মেয়ে, কারো বোন, কারো মা সব পুরুষ যদি এই কথা
ভাবতো তাহলে তো পতিতাবৃত্তি থাকতো না।
মেয়েদের ভোগের জন্য ব্যবহার করা হতো না।
এখানে থাকা প্রতিটা মেয়েকে তার সব কষ্ট শরীরের ব্যাথা লুকিয়ে সেজে তার কাস্টমারকে আকর্ষণ করা ও সেবা দিতে হতো না।
প্রতিটা মেয়ের কাস্টমার কি জানে প্রতিরাতে মেয়ে গুলা শরীরের ব্যাথায় কি ভাবে কুড়রে মরে?
শরীরের ব্যাথা আর মনের ব্যাথা এক হয়ে মেয়ে গুলা মৃত্যুর যন্ত্রণা থেকে বেশী যন্ত্রণা ভোগ করে?
তখন তো মনে হয় মৃত্যুই সকাল ব্যাথার মহা ওষুধ।
এখনে আসা বেশীর ভাগ মেয়ে নিজের ইচ্ছায় আসেনি।
যেমন মিনু আসেনি!!!
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com