Breaking News

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি । পর্ব -০৬

আদ্র আশেপাশে একবার তাকিয়ে নিলো কেউ আছে কিনা।
কেউ নেই দেখে আদ্র টুপ করে অনুর গালে চুমু দিয়ে দিল।
অনু গালে হাত দিয়ে আদ্রের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল৷
আদ্র হেসে অনুকে বলল,
–সবই সম্ভব অনু৷ তোমাকে দুচোখ ভরে দেখতে মন চাইছিল তাই আব্বুর কাছ থেকে ঠিকানা জেনে চলে এলাম। সারপ্রাইজড হয়েছো নিশ্চয়ই তাই না?
অনু মন খারাপ করে আদ্রকে বলল,
–হ্যা আমি ভাবতে পারি নি আপনি আজকে আমার বাসায় আসবেন।
কিন্তু আমার গালে চুমু দিলেন কেন?
অনু যেন এখন কেঁদেই দিবে এমন অবস্থা। আদ্র অনুকে গম্ভীর হয়ে বলল,
–তোমাকে চুমু দিতে ইচ্ছে করছিল তাই চুমু দিয়েছি। গালে চুমু দেওয়াতেই তোমার এই অবস্থা?
অন্য জায়গায় চুমু দিলে তখন কি করবে তুমি অনু?
অনু ভয় পেয়ে আদ্রের থেকে দুই কদম পিছিয়ে গিয়ে ভয় পাওয়া স্বরে বলল,
–অন্য জায়গায় চুমু দিবেন মানে? আপনি এতো পঁচা আমি ভাবতেও পারি নি আদ্র ভাইয়া।
আমার কাছ থেকে আপনি দূরে থাকবেন।

আদ্র অনুর বাসার ভিতরে প্রবেশ করে অনুর কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
–তোমার থেকে দূরে থাকবো কিনা সেটা পড়ে বলবো।
আমেনা বেগম ড্রইংরুমে এসে অনুকে বলল,
–কি হয়েছে রে অনু?এতো চিৎকার করছিস কেন?
অনু দৌড়ে আমেনা বেগমের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
–আম্মু ঐদিকে তাকিয়ে দেখো কে এসেছে!
আমেনা বেগম ড্রইংরুমের সোফায় আদ্রকে বসে থাকতে দেখে অবাক হলো।
আমেনা বেগমও ভাবতে পারে নি আদ্র তাদের বাসায় আসবে। অনুকে আমেনা বেগম জিজ্ঞেস করল,
–তোর বাবার বন্ধুর ছেলে আমাদের বাসায় কেন এলো?
অনু মুখ গোমট করে আমেনা বেগমকে বলল,
–আমি কি করে জানবো? বাবার বন্ধুর ছেলেকেই গিয়ে তুমি জিজ্ঞেস করো।
আমেনা বেগমকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আদ্র হাসিমুখে বলল,
–হাই আন্টি কেমন আছেন?

আমেনা বেগম এগিয়ে গিয়ে আদ্রকে বলল,
–ভালো আছি বাবা। তুমি কেমন আছো?
আদ্র হেসে আমেনা বেগমকে বলল,
–আমিও ভালো আছি আন্টি।
আমেনা বেগম চিন্তিত স্বরে আদ্রকে বলল,
–আদ্র বাবা তুমি হঠাৎ করে না জানিয়ে আজকে আমাদের বাসায় এলে! কারও কি কিছু হয়েছে?
আদ্র আমেনা বেগমকে বলল,
–না আন্টি কারও কিছু হয় নি। আমি এমনিতেই আপনাদের বাসায় এলাম।
আরমান আংকেল কোথায়? উনাকে তো দেখছি না?
আমেনা বেগম আদ্রকে বলল,
–অনুর বাবা তো অফিস চলে গেছে।

আদ্র আমেনা বেগমকে বলল,
–ওহ তাহলে আংকেলের সাথে পড়ে দেখা হলে কথা বলা যাবে।
আর সত্যি কথা হলো আন্টি আমি আসলে অনুর সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।
আমেনা বেগম আদ্রকে বলল,
–অনুর সাথে দেখা করতে এসেছো? তাহলে তোমরা গল্প করো।
আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
আমেনা বেগম আদ্রের জন্য খাবার বানাতে রান্নাঘরে যেতে গেলে অনু আমেনা বেগমকে বলল,
–আম্মু আমি ভার্সিটিতে গেলাম তাহলে।
আদ্র আমেনা বেগমকে বলল,
–আন্টি অনু চলে গেলে আমিও কিন্তু এখন চলে যাবো।
আমেনা বেগম আদ্রকে বলল,
–না বাবা। আজ তুমি আমাদের বাসায় প্রথম এলে। তোমাকে কিছু না খেতে দিয়ে ছাড়ছি না।
তুমি বসো। আমি বলছি অনু কোথাও যাবে না।

অনু অবাক হয়ে আমেনা বেগমকে বলল,
–এসব তুমি কি বলছো আম্মু? আমার ক্লাস আছে!
আমেনা বেগম রেগে গিয়ে অনুকে বলল,
–আজ তোর ভার্সিটিতে যেতে হবে না। আদ্র বাবা তোর জন্য এতো দূর থেকে এখানে এসেছে।
আর তুই স্বার্থপরের মতো ভার্সিটিতে চলে যাবি?
অনু মন খারাপ করে আমেনা বেগমকে বলল,
–ঠিক আছে আম্মু আমি কোথাও যাবো না।
আমেনা বেগম অনুকে হেসে বলল,

–এইতো আমার লক্ষী মেয়ে।
আমেনা বেগম আদ্রের জন্য খাবার বানাতে চলে গেল।
অনু একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্র অনুর দিকে গালে একহাত দিয়ে তাকিয়ে আছে।
আদ্রের এভাবে তাকানো দেখে অনু মনে মনে বলল,
–এই আদ্র ভাইয়ার হলো টা কি? আমার সাথে কেন দেখা করতে এসেছে?
আদ্র অনুকে গম্ভীর স্বরে বলল,
–অনু আমার পাশে এসে বসো।
অনু গিয়ে অন্য সোফায় বসে পড়ল। আদ্র রাগী স্বরে অনুকে বলল,
–আমি তোমাকে আমার পাশে বসতে বসেছিলাম। তুমি অন্য সোফায় বসলে কেন?
আমার পাশে বসতে তোমার সমস্যা কি?
অনু শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,

–আমি কেন আপনার পাশে বসবো? আমি আপনার পাশে একদমই বসবো না।
আদ্র গিয়ে অনুর পাশে বসে হঠাৎ করেই অনুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল।
আদ্র যে এমন করবে অনু কল্পনাও করতে পারে নি।
অনুর বাসাতে বসেই আদ্র অনুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে? ভাবা যায় ব্যাপারটা?
অনু অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,
–আদ্র ভাইয়া আপনি উঠুন।
আদ্র অনুকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে অনুর পেটে নিজের মুখ চেপে রাখল।
অনুর পুরো শরীরে যেন মুহুর্তেই কেঁপে উঠল।
আদ্র অনুর পেটে মুখ গুঁজে রাখায় অনুর ভীষণ কাতুকুতু লাগতে লাগলো।
অনু অসহায় স্বরে বলল,

–আদ্র ভাইয়া প্লিজ আপনি আমার উপর থেকে সরুন।
আম্মু এসে আপনাকে এভাবে আমার উপর শুয়ে থাকতে দেখলে আপনাকে খারাপ ভাববে।
আদ্র শান্ত স্বরে অনুকে বলল,
–কেউ আসবে না। আই এম সো টায়ার্ড অনু। সো প্লিজ ডোন্ট ডিসটার্ব মি।
অনু আর কিছু বলল না।
আদ্র এমনভাবে অনুর কোলে অনুকে জড়িয়ে ধরে শুয়েছে যে অনু উঠতেও পারছে না।
ভীষণ লজ্জা লাগছে অনুর। কখনো তো অনুর সাথে এমন কিছু ঘটে নি।
হঠাৎই অপ্রতাশ্যিতভাবে অনুর সাথে এমন কিছু হবে অনু কল্পনাও করে নি।
তাও আবার অনুর নিজ বাসাতেই। আদ্র অনুকে বলল,
–তোমার মোবাইলটা আমাকে দাও।
অনু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,

–কেন? আমার মোবাইল দিয়ে আপনি কি করবেন?
আদ্র গম্ভীর স্বরে বলল,
–আমি দিতে বলেছি দাও।
অনু পাশে রাখা ব্যাগ থেকে নিজের ফোনটা আদ্রকে দিল।
আদ্র নিজের মোবাইল পকেট থেকে বের করে অনুর মোবাইল থেকে কি দেখে নিয়ে
যেন নিজের মোবাইলে টাইপ করতে লাগলো। অনু আর দেখল না।
কারণ আদ্র অনুকে এভাবে জড়িয়ে ধরাতে অনুর বুকের ভিতর ইতিমধ্যেই প্রচুর ধুকপুক করছে।
একটু পর আদ্র নিজেই অনুর কোল থেকে উঠে পড়ে আগের সোফাতে বসে পড়ল।
অনু আদ্রের দিকে মন খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আদ্র অনুকে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করল,
–এখনও কি আমাকে তোমার ভয় লাগছে অনু?

অনু কিছু বলল না। মাথানিচু করে বসে রইল। আদ্র আবারও জিজ্ঞেস করল,
–কি হলো অনু কিছু বলছো না কেন?
অনু কোনো উত্তর দিল না। আদ্রের ভীষণ রাগ হলো। অনু কেন কোনো উত্তর দিচ্ছে না?
আদ্র রেগে অনুকে কিছু বলতে যাবে এরই মাঝে আমেনা বেগম আদ্রের জন্য খাবার নিয়ে আসে।
খাবারগুলো হলো বিরিয়ানি, সেমাই, বিস্কুট, চানাচুর, বিভিন্ন রকমের ফলমূল।
আদ্র শুধু একটা বিস্কুট হাতে নিয়ে খেল। তারপর আমেনা বেগমকে হাসার চেষ্টা করে বলল,
–আন্টি আজকে আমি তাহলে আসি।
আমেনা বেগম অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,
–আদ্র বাবা তুমি তো কিছুই খেলে না? না খেয়েই এখন চলে যাবে?
আদ্র মুচকি হেসে আমেনা বেগমকে বলল,
–একটা বিস্কুট তো খেলাম আন্টি। খেলাম না কোথায়? আমি অন্য কোনোদিন আবারও নাহয় আসবো।
এখন আমার একটা ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে তাই আমাকে যেতে হবে। আমি তাহলে আসি আন্টি।
আমেনা বেগম মন খারাপ করে আদ্রকে বলল,

–আবার আমাদের বাসায় এসো।
আদ্র আমেনা বেগমকে বলল,
–ঠিক আছে আন্টি।
আদ্র বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অনুর দিকে তাকাল।
কিন্তু অনু একবারও আদ্রের দিকে তাকাল না। আদ্র অনুকে বলল,
অনু আমি গেলাম—
ভালো থেকো—
অনু তবুও আদ্রের দিকে একবারও তাকাল না—
কি করে তাকাবে?…….
অনু এখন শুধু মনে মনে দোয়া করছে কবে এই আদ্র ভাইয়া যাবে আর অনু নিজের ঘরে যাবে।
আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
–আমার উপরে তোমার এতো রাগ? আমাকে তুমি এতো ভয় পাও?
একটু আমার দিকে তাকালেও পর্যন্ত না? আমি কি দেখতে এতো খারাপ?

তাহলে সব মেয়েরা কেন আমার জন্য পাগল হয়? তোমার এই ভয় রাগ একদিন থাকবে না অনু।
আমার মন যেহেতু তোমার উপর একবার পড়েই গেছে তুমি আমার থেকে আর রেহাই পাবে না।
আদ্র অনুর বাসা থেকে চলে গেল। অনু দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে হাঁপাতে লাগলো।
অনু নিজের পেটে হাত দিয়েই আঁতকে উঠল।
একটু আগে আদ্র ভাইয়ার ঠোঁট অনুর পেটে লাগছিল ভাবতেই অনুর গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।
অনু চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলল,
–কেন আবারও আদ্র ভাইয়ার সাথে আমার দেখা হলো?
এখন নিজের উপরই রাগ হচ্ছে। গতকাল যদি আমি জন্মদিনের অনুষ্ঠানে
না যেতাম তাহলে আদ্র ভাইয়ার সাথে আমার কোনোদিনও দেখাও হতো না।
আর আদ্র ভাইয়া আমার বাসাতেও আর আসতো না।
কিন্তু আদ্র ভাইয়া এমন করছেন কেন? আমার পিছুই তো ছাড়ছেন না।

আমাকে এভাবে জ্বালাতে হয়তো তিনি খুব মজা পাচ্ছেন।
আদ্র নিজের অফিসের চেয়ারে কপালে হাত রেখে বসে আছে। আদ্রের মন ভালো নেই।
এই অনুটা আদ্রের সাথে একটু হাসিমুখে কথাও বলছে না। এতো কিসের ভয় অনুর?
আদ্র রেগে গিয়ে নিজ মনে বলতে লাগলো,
–তোমাকে আমি আমার করেই ছাড়বো অনু্।
আমিও দেখবো তুমি আমার সাথে এমন আচরণ ঠিক কতদিন করতে পারো।
এইতো সবে শুরু। জাস্ট ওয়েট এন্ড সি।

চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com