সিনিয়র লাইফ পার্টনার
ঐ madam… আপনার জামার পিছনের জিপটা খোলা।
আপনার মাঝপিঠের জোড়া তিলখানা দেখা যাচ্ছে।
কথাটা শোনার সাথে সাথে ভার্সিটির গেটের সামনে থমকে দাঁড়ায় ইসুয়া।
জলদি করে নিজের back side টা একটা গাছের আড়াল করে দাঁড়ায়।
তারপর উক্ত কথাটা কে বলেছে বোঝার চেষ্টা করে। কিন্তু, বোঝার কোনো উপায় নেই।
কারণ,এইমাত্র এক দল boys gang ঢুকেছে ভার্সিটির গেট দিয়ে।
তার মধ্যে কোন ছেলেটা এই কথা বলতে পারে তা ইসুয়ার বোধগম্য হচ্ছে না।
ইসুয়ার ইচ্ছে করছে দৌড়ে বাড়িতে গিয়ে নিশুয়া বান্দর টা কে চাপকাতে।
আজ ভার্সিটিতে প্রথম দিন।নিশুয়া ই ইসুয়া কে ড্রেস টা পছন্দ করে দিয়েছে।
পরক্ষণে ইসুয়া নিজেই বুঝতে পারে এতে নিশুয়ার কী দোষ?ড্রেস টা তো আসলেই খুব সুন্দর।
কিন্তু চেইনটা কি করে খুলে গেল?তাও আর কারো চোখে পড়লো না কোথাও?
Direct ভার্সিটির গেটে একদল ছেলের চোখেই পড়তে হল??
ইসুয়া অনেক চেষ্টা করে নিজের জামার জিপটা লাগালো।
তারপর একটা don’t care ভাব নিয়ে ভার্সিটির পথে পা রাখে।নিশুয়া,
নিজের পরিধানকৃত জামা আর নিজের কপাল কে বসুন্ধরা type গালি দিতে দিতে ভার্সিটিতে ঢুকে সে। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে, ভার্সিটির প্রথম দিন আর দেরি করা ঠিক হবেনা।
এটা ভেবেই ইসুয়া পা রাখে সামনে।
নীল জামা আর সাদা প্লাজু-ওড়না পড়া ইসুয়া কে আজ সত্যি ই খুব অসাধারণ লাগছে।
ইসুয়ার মুচকি হাসিতে ও দুই গালের টোল গুলো স্পষ্ট।
কপালের কালো টিপে এক সমুদ্র মায়া জড়িয়ে দিয়েছে চেহারা টা তে।
হঠাৎ করে পাশ থেকে বলে উঠলো,”hey ….. new”
ইসুয়া যেদিক থেকে কথাটা আসে সেদিকে তাকায়।
তিনটা ছেলে আর দুটো মেয়ে।
ছেলে গুলোর একজন ইসুয়ার দিকে আঙুল দিয়ে ইশারায় তাদের কাছে যেতে বলে।
ইসুয়া কপাল কুঁচকে সে দিকে এগোয়।
তারপর কোনো দ্বিধা না করেই বলে,,,
ইসুয়া– জ্বি আমাকে বলছেন?।
ছেলে টি– এখানে কি আর কেউ আছে?
ইসুয়া– জ্বি বলুন।
ছেলে টি– আমি যদি তোমাকে এই ভরা মাঠের সামনে kiss করি , তবে তোমার রিয়েকশ কেমন হবে?
ইসুয়ার চোখ দুটো যেন কোটর থেকে বেরিয়ে এসে ভার্সিটির মাঠে চরকির মত ঘুরবে,”What?”
পাশ থেকে অন্য একটি ছেলে, “জিজ্ঞেস করা হয়েছে, kiss করা হয় নি।
তোমার অনুভূতি কি হবে বল?”
ইসুয়া ছেলে গুলোর পাশে বসে থাকা মেয়ে দুটো কে খেয়াল করলো,
মেয়ে দুটো যেন তাদের ছেলে friend দের মজা মশকরাতে ভারী আনন্দ পাচ্ছে।
মেয়ে গুলোর মধ্যে একজন প্রথম ছেলে টা কে বললো ,
“আহ্ শুভ।বেচারি আজ প্রথম ভার্সিটিতে এসেছে।
কিছু বুঝতে পারছে না। তুই যদি একটু practically বুঝিয়ে দিতি সুবিধা হত।”
কথাটা বলার সাথে সাথে একটা হাঁসির রোল পড়ে।ইসুয়ার একটা অভ্যাস আছে, সেটা হল তাকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনার ছোটখাটো বিষয় গুলো অবধি সে খুব ভালো করে খেয়াল করে থাকে।
যেমন এই মুহূর্তে তাকে নিয়ে prank করা gang টা তে সদস্য সংখ্যা 5… কিন্তু দুটো ছেলে আর দুটো মেয়ে তাকে নিয়ে হাসাহাসি করলে ও gang এ থাকা তৃতীয় ছেলেটি সেই কখন থেকে ফোন টিপছে। বন্ধুদের সাথে তাল ও দিচ্ছে না, আবার এমন করতে নিষেধ ও করছে না। ছেলে টি ফোনে game খেলতে ব্যস্ত। তার চোখ দুটো এখন ই সামনে ইসুয়ার দিকে যায় ই নি।
শুভ — তুই একেবারে ঠিক বলছিস তমা,তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে।
পাশ থেকে অন্য মেয়েটি বললো ,”চল চল ।আজ live হবে।”
শুভ — guy’s ready??
তমা মেয়েটি মোবাইলে ব্যস্ত থাকা ছেলেটির কাঁধে হাত রেখে বললো,”এই রবিন,চল না।
সারাক্ষণ ফোনে কি করিস?”
ছেলেটির যেন সে দিকে ভ্রুক্ষেপ ই নেই। ফোনে চোখ রেখে ই বললো,”তোরা যা।
আমি এসবে নাই। আমাকে খেলতে দে।”
শুভ একবার তমা আর রবিনের দিকে তাকিয়ে আবার ইসুয়ার দিকে তাকালো।
শুভ– So , miss আপনি কি তৈরি?
ইসুয়া কি বলবে বা করবে বুঝতে পারছিলো না।
হঠাৎ সবাই কে অবাক করে দিয়ে ইসুয়া রবিন নামের ছেলেটার হাত ধরলো।
রবিন ফোন থেকে চোখ উঠিয়ে ততক্ষণে খেয়াল করেছে।
কিন্তু নিজেকে ধাতস্থ করার আগেই ইসুয়া রবিনের হাত ধরে টেনে মাঝমাঠে নিয়ে আসে।
শুভ , তমা আর বাকি দুজন ও পিছু নেয় তাদের।
রবিনের চোখ গুলো অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইসুয়ার দিকে।
রবিনের এক হাত ইসুয়া ধরেছে আর অন্য হাতে ফোন।
শুভ– এই মেয়ে এই।কি করছো এসব?
তমা — ওর হাত ছাড়ো বলছি।
ইসুয়া কিছু না বলে একটা Deep kiss করে বসলো রবিনের ডান গালে।
রবিনের মুখ টা হা হয়ে যায়। মাঠভর্তি ছেলে মেয়ে। চার বন্ধু পাশে দাঁড়িয়ে।
অচেনা অজানা একটা মেয়ে গালে চুমু দিল।
রবিনের চোখ গুলো টকটকে লাল বর্ণ ধারণ করে।
ইসুয়া রবিন কে ছেড়ে তমা আর শুভর সামনে গিয়ে বলে,
“এখন আপনাদের বন্ধুর অনুভূতি + রিয়েকশ কেমন তা details এ জেনে নিবেন।
বন্ধু মানুষ,
বলতে লজ্জা পাবে না। নির্দ্বিধায় বলে দিবে।
আমার যতটুকু অস্বস্তি হতো বলতে,সেটা ওনার
একেবারেই হবে না।
so … বন্ধুর কাছে জেনে নিবেন। আর পারলে আমাকেও জানিয়ে ধন্য করবেন।”
তারপর ইসুয়া দুই আঙ্গুল নেড়ে bye বলে প্রস্থান করলো।
মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে রবিন।
তমা, শুভ,নয়ন আর তুলি একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে আছে।
রবিনের ফর্সা গাল গুলো লাল হয়ে আছে।
ডান গালে ইসুয়ার ঠোঁটের dark lipstick এর দাগ এখনো রয়ে গেছে।
শুভ আর নয়ন এগিয়ে গিয়ে রবিনের কাঁধে হাত রাখতে নেয়।
রবিন বজ্র কন্ঠে বলে উঠে, “ধরবি না আমাকে।
তোদের জন্য সব হয়েছে।
শুধু তোদের জন্য মেয়ে টা আমাকে এভাবে ভরা ভার্সিটিতে লজ্জা দিলো।
আমি তোদের সাথে কোনো কথা বলতে চাই না।”
আপাতত রবিন কে একা ছেড়ে দেয় বন্ধুরা।
কারণ, কিছুক্ষণ পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
এখন সামলাতে গেলে হিতে বিপরীত হবে।
কথাগুলো বলেই রবিন ক্যান্টিনের দিকে পা বাড়াল।
রবিন খুব রেগে আছে।
হ্যাঁ, বন্ধু রা এভাবে রেগিং করলেও রবিন কখনো এসব করতে পছন্দ করেনা।
দূরে দূরে ই থাকে এসব থেকে। কিন্তু আজকের এই শক টা সে নিতে পারছে না।
কী করে নতুন একটা মেয়ে তাকে এভাবে কিস করতে পারে ?
সেটা মাথায় আসছে না রবিনের।
ভার্সিটিতে রবিনের একটা আলাদা public figures আছে।
সে স্মার্ট, পড়াশোনায় টপার,
ভার্সিটির সকল কাজে সহায়তা করায় ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ
তাকে সামনে ছাত্রনেতা হওয়ার অনুরোধ অবধি করেছেন।
আর আজ সেই আলাদা reputation এ মেয়ে টা জল ঢেলে দিলো।
রবিন মনে মনে মেয়ে টা কে দেখে নিবে ভাবে।
রবিনকে ভার্সিটির মেয়ে রা কখনো সামনে এসে propose করা তো দূরে থাক,
একটু কথা বলার সাহস দেখায়নি কোনো প্রয়োজন ছাড়া আর
আজ সেখানে রবিন কে পুরো ভার্সিটি দুবার করে ঘুরে ঘুরে দেখছে।
ইসুয়া ভার্সিটির অফিস কক্ষে দাঁড়িয়ে আছে।
ভার্সিটির প্রধান সাইদ রহমান ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে,
“আপনি ইসুয়া তালুকদার?”
ইসুয়া– জ্বি।
কিছু টা কপাল ভাঁজ করে পাশে ভার্সিটির কর্তৃপক্ষের প্রধাণ আফজালের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
“আজকাল চেহারা দেখে বয়স নির্ধারণ করা যায় না, বুঝলেন আফজাল সাহেব।”
আফজাল– তা যা বলছো সাইদ।
তবে আমার ইসুয়া মামণির চেহারায় সেই আগের বাচ্চা বাচ্চা ভাব টা এখনো রয়ে গেছে।
ইসুয়া আফজাল সাহেবের দিকে তাকিয়ে, “আমাকে এখনো বাচ্চা লাগে তোমার কাছে?
its not fear uncle.”
আফজাল সাহেব আর সাইদ রহমান হা হা করে হেসে উঠলেন।
তার পর আফজাল সাহেব ইসুয়ার মাথায় হাত রেখে, “বাচ্চা ই রয়ে গেলি এখনো।”
ইসুয়া তার ক্লাসের খোঁজ নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ে।
ক্লাস রুমে বসে স্টুডেন্ট রা গোলমাল করছিলো।
ক্লাস টাইম আরো 5 মিনিট আগে শুরু হয়েছে, কিন্তু টিচার আসার নাম নেই।
কেউ কাগজ ছোঁড়াছুড়ি করছে,কেউ আয়না দেখে লিপস্টিক দিচ্ছে।
কেউ হঠাৎ দেখে বলবে না যে এটা একটা ভার্সিটি।
সবার হৈ হোল্লোড় থামে পিয়ন রহমত চাচার আওয়াজে।
তন্মধ্যে ইসুয়া কে নিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করে ভার্সিটির English লেকচারার আকাশ চৌধুরী।
আকাশ কে সকল স্টুডেন্ট একবার দাঁড়িয়ে good morning বলে উঠে।
আকাশ সবাই কে বসতে বলে।
আকাশ– Guy’s, আজ থেকে আমার ক্লাস টাইম change করা হয়েছে।
তোমাদের first class নিবেন তোমাদের বাংলা অধ্যাপিকা Miss ইসুয়া তালুকদার।
ক্লাসের সকলের মাথায় বাঁশ পড়লো।
এই অল্প বয়সী মেয়ে টা তাদের অধ্যাপিকা?কিভাবে সম্ভব?
কারো যেন বিশ্বাস ই হচ্ছে না।
তার মধ্যে last বেঞ্চের
চার জোড়া চোখ দিয়ে বিস্ময় ঠিকরে পরছে।
শুভ মাথায় হাত দিয়ে বলেই ফেললো “শেষ পর্যন্ত বাংলা অধ্যাপিকা কে রেগিং করলাম?”
রবিন সবসময়ই বেশি করে ফেলিস।লিমিট ক্রস করিস তোরা।
নে এবার ক্লাসে ঠেলা সামলা।
তুলি এখনো হা করে ,”আরে ভাই!
এই বেডিরে কেউ দেখলে কইবো হেতি টিচার?
আমরা ভাবছিলাম।First year এর কোনো new student….”
রবিন এইবার ভালো করে তাদের ক্লাসে অবস্থানরত ইসুয়া কে পরখ করতে লাগলো।
সত্যি ই চেহারাতে বয়সের কোনো চাপ নেই।
কি নিষ্পাপ আর স্নিগ্ধ চাহনি।
হঠাৎ সেই kiss এর কথা মনে পড়ে রবিনের।
চেহারায় কাঠিন্যতা দেখা দেয়।
পাশ থেকে নয়ন বলে উঠে, “আমাদের তো এবার বাংলা ব্যাকরণ এর নিয়ম নীতি দিয়ে গুলে খাবে।”
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com