গল্পঃ ঘাড়টেরা । লেখাঃ আরিয়ান রহমান
জীবনে প্রথমবার ছ্যাকা খাওয়ার পর বিয়ের করার কোন ইচ্ছা আমার ছিলো না।কিন্তু মা-বাবার কথার ওপর আর না করতে পারি নি।
আজ আমার বিয়ে।আমি আমার ঘরের সামনে দাড়িয়ে আছি।একটু ঘরে প্রবেশ করলাম।আমাকে
প্রবেশ করা দেখে স্নিগ্ধা(আমার বউ) একটু নড়ে চড়ে বসলো।
একটু পর এসে আমাকে সালাম করলো।ছবিতে ওকে দেখেছিলাম খুব সুন্দর।এখন বাস্তবে আরো বেশি সুন্দর লাগছে।যতই সুন্দর হোক আমি ওকে বউ হিসেবে মানবো না।তখন আমি বললাম:
আমিঃ-আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই?
স্নিগ্ধাঃ-জ্বি বলুন(নরম সুরে)
আমিঃ-আমি বিয়ে করতে চাইনি, আমাকে জোর করে তোমার সাথে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্নিগ্ধাঃ-জানতাম এমনটায় বলবে।জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে ভালো এখন তাহলে চুপচাপ শুয়ে পড়ো।(কিছুটা রাগি কন্ঠে)
আমিঃ-তুমি বিছানায় শোও।আমি সোফাতে ঘুমাবো।
স্নিগ্ধাঃ-সোফাতে ঘুমাবে মানে?বিছানায় এসো।(রাগি কন্ঠে বলছে এবার)
আমিঃ-বললাম তো আমি সোফাতে ঘুমাবো।তুমি শুয়ে পড়ো।
স্নিগ্ধাঃ-মা ঠিকই বলেছিলো আপনার ঘাড়ের রগ ট্যারা আছে।এখন সেটা বুঝতে পারছি।শেষ পর্যন্ত ঘাড়টেরার কপালে জুটলাম।
আমিঃ-ওই আমি ঘাড়টেরা কি বলল তোমাকে?আমার কম্বল দাও আমি ঘুমাবো খুব ঘুম পাচ্ছে আমার।
স্নিগ্ধাঃ-সোফাতেই যখন ঘুমাবে তখন কোন কম্বল দেওয়া যাবে না।
আমিঃ-ঠিক আছে দরকার নাই।
আমিও ঘাড়টেরা কম নয়।বন্ধুরা সবাই আমায় ঘাড়টেরা নামে চিনে।কম্বল না দিলো দরকার নাই।ঘুমাতে হয়তো একটু কষ্ট হবে তবে ব্যাপার না সহ্য করে নিবো।
আমি আরিয়ান।বাবা-মার একমাত্র ছেলে।পড়াশোনা শেষ করে একটা জব করছি আর তখনই মা বিয়ে দিয়ে দিলো।
সকালে ঘুম থেকে উঠার পর দেখলাম আমার গায়ে কম্বল দেওয়া।তখন স্নিগ্ধা আমায় বলল:
স্নিগ্ধাঃ-রাতে ঠান্ডায় কাপছিলেন তাই কম্বল উড়ে দিলাম।যতই হোক আমার স্বামী বলে কথা তার কস্ট তো আর সহ্য করতে পারি না।
আমিঃ-ও করুণা দেখায়ছো?
স্নিগ্ধাঃ-ধ্যাত করুনা দেখাবো কেন।সবসময় খালি টেরা কথা বলো।উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও।
উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করলাম। দুপুরে রুমে বসে আছি।স্নিগ্ধা বাথরুমে গোসল করছে।একটু পরে আমাকে ডাকলো:
স্নিগ্ধাঃ-এই যে শুনছো?
আমিঃ-কি।
স্নিগ্ধাঃ-আমায় একটু শাড়ি পড়িয়ে দিবে,আমি তো পড়তে জানি না।
আমিঃ-আমি ওসব পারবো না।
স্নিগ্ধাঃ-প্লিজ দাও না একটু পড়িয়ে।
আমিঃ-বললাম তো পারবো না,তবু বিরক্ত করো কেন?(রাগ হয়ে বললাম)
স্নিগ্ধাঃঠিক আছে দিতে হবে না।(অভিমানের কন্ঠে)
একটু পর ও বাথরুম থেকে বের হয়ে এলো।গোলাপি পাড়ের সাদা শাড়ীতে স্নিগ্ধাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।আমার তাকিয়ে থাকা দেখে বলল:
স্নিগ্ধাঃ-ওরকম করে তাকিয়ে আছো কেন?
আমিঃ-কই তাকিয়ে আছি।
স্নিগ্ধাঃ-আর কথা ঘুরাতে হবে না।খেতে চলো,মা অপেক্ষা করছে।
আমিঃ-আমি কথা ঘুরালাম কই?
স্নিগ্ধাঃ-এই তুমি এতটা টেরা কেন? চল তাড়াতাড়ি।
আর কথা বাড়ালাম না।মা-বাবা দুইজনে টেবিলে বসে আছে।আমরাও গিয়ে বসলাম।মা স্নিগ্ধা কে বলল:
মাঃ-স্নিগ্ধা তুই তো দেখছি খুব সুন্দর শাড়ী পড়তে পারিস।
স্নিগ্ধাঃ-আমি পড়িনি তো মা আপনার ছেলে আমাকে পড়িয়ে দিয়েছে।(লজ্জামাখা স্বরে)
এমন সময় গলায় খাবার আটকে গেলো।তখন বাবা পানি এগিয়ে দিলো।তারপর বললাম:
আমিঃ-একদম মিথ্যা কথা মা আমি ওকে পড়িযে দিই নি।
মাঃ-দিলিই যেন তাতে কি হইছে।
বাবাঃ-আমি ভাবতাম আমার ছেলেটা বুঝি ছোট রয়ে গেলো।কিন্তু এখন দেখছি আমার ছেলেটাও বড় হয়ে গেছে।(বলেই হেসে উঠলো)
কিছু বললাম না আমি।স্নিগ্ধা লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছে।মা বলল:
মাঃ-বিকেলে স্নিগ্ধাকে ঘুরতে নিয়ে যাবি কিন্তু?
আমিঃ-পারবো না আমি।
মাঃ-কি বললি(রাগি গলায়)
আমিঃ-আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ে যাবো।
আমার এমন ভাব দেখে স্নিগ্ধা মুচকি মুচকি হাসছে।বিকেলবেলা ঘুরতে বের হলাম।দুইজনে রিকশা করে যাচ্ছি।বার বার খালি আমার দিকে চেপে আসছিলো।তাই দেখে আমি বললাম:
আমিঃ-এদিকে এতো চেপে আসছো কেন?
স্নিগ্ধাঃ-কেন চেপে বসলে কোন সমস্যা।
আমিঃ-আমার অস্বস্তি লাগে।
স্নিগ্ধাঃ-ঢং।প্রেমিক প্রেমিকারা রিকশায় একজন আরেকজনের কাধে মাথা রেখে যায় আর তুমি একদম আলাদা টাইপের।
আমিঃ-আমি এরকমই।
দুইজনে সেদিন পুরো বিকেলবেলা ঘুরে বেড়ালাম বেশ ভালোই লাগলো
মাস পাঁচেক পরের কথা,,,,,,,,
আমরা দুইজনে এখনো ঠিক প্রথম দিনের মতো থাকি।মাঝে মধ্যে একটু-আধটু ঝগড়া হয়।এভাবেই চলছে দিনগুলো।
আজ প্রচন্ড মাথা ব্যথা নিয়ে অফিস থেকে ফিরলাম।মাথা ব্যথা হলে আমার সবকিছুতে কেমন জানি বিরক্ত লাগে।রুমে এসে বিছানায় বসলাম।তখন স্নিগ্ধা এসে বলল:
স্নিগ্ধাঃ-কি ব্যাপার শরির খারাপ লাগছে নাকি?
আমিঃ-মাথা ব্যথা করছে।
স্নিগ্ধাঃ-ও আজ সারাদিন কোন মেয়ের সাথে লুতুপুতু করছো যে মাথা ব্যথা করছে।
আমিঃ-একদম বাজে কথা বলবে না,তুমি জানোই আমি কেমন।
স্নিগ্ধাঃ-জানি তুমি ঘাড়টেরা,ছ্যাঁকাখোর।কলেজ লাইফে ছ্যাঁকা খাইছিলে আর সেজন্য মনে হয় আমার সাথে মিশো না।তাই না?
আমিঃ-এসব কথা এখন রাখ।একটু শান্তিতে থাকতে দাও ভালো লাগছে না।
স্নিগ্ধাঃ-সারাদিন অন্যে মেয়ের সাথে থাকলে আমাকে ভালো তো লাগবেই না।
আর থাকতে পারলাম না কষে একটা থাপ্পড় মারলাম।তখন স্নিগ্ধার চোখে পানি দেখতে পেলাম।ও উঠে চলে গেলো।আমি বিছানায় শুয়ে আছি চোখে একটু একটু ঘুমের ভাব।
তখন মনে হলো কেউ একজন আমার মাথা তার কোলের ওপর রাখলো।তারপর আস্তে আস্তে মাথা টিপে দিতে লাগলো।আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।মাঝে রাতে যখন ঘুম ভাঙলো। দেখলাম স্নিগ্ধা আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে।
ডিম লাইটের আলোয় ওর তিন আঙ্গুলের স্পষ্ট দাগ দেখতে পেলাম।দাগটা দেখার পর আমার অনেক খারাপ লাগলো।
তখন আলতো করে ওর কপালে একটা চুমু দিলাম।তখনই ও চোখ খুলল আর বলল:
স্নিগ্ধাঃ-কি মিস্টার ঘাড়টেরা,আজ সূর্য্য কোন দিকে উঠলো।
আমিঃ-জানি না তো।সরি আসলে তোমাকে ওভাবে মারা উচিত হয়নি।আমার মাথা ব্যথা উঠলে কিছু সহ্য করতে পারি না।
স্নিগ্ধাঃ-আচ্ছা ঠিক আছে।সরি।
আমিঃ-তুমি সরি বলছো কেন?
স্নিগ্ধাঃ-আমার এরকম কথাটা বলা ঠিক হয়নি।আর বলাতে এক হিসেবে ভালোই হয়েছে তোমার এতটা কাছে আসতে পেরেছি।
আমিঃ-ও আচ্ছা।
(আর কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনই ওর ঠোট দিয়ে আমার ঠোট চেপে ধরলো। তারপর বাকিটা ইতিহাস)
মাস খানেক পরে,,,,
শুক্রবারের দিন নামাজ পড়ে এসে খেয়ে দেয়ে ঘুমালাম।ঘুম থেকে উঠে বাইরে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি।তখন স্নিগ্ধার দিকে তাকালাম।দেখলাম আজ ওকে আগের থেকে অনেকটা সুন্দর আর খুশি খুশি লাগছে।ব্যাপারটা বুঝলাম না।আমায় বলল:
স্নিগ্ধাঃ-কোথাও কি বের হবে?
আমিঃ-জ্বি ম্যাম কিছু বলবে?
স্নিগ্ধাঃ-আমার না খুব আচার খেতে ইচ্ছে করছে।বাড়ি ফেরার সময় একটু আনবে।এসময় কমবেশি সব মেয়ে পছন্দ করে।
আমিঃ-আচার শেখার জিনিস খাওয়ার জিনিস না।
স্নিগ্ধাঃ-ধ্যাত। সিরিয়াসলি বলছি একটু আনবে।
আমিঃ-আচ্ছা। আনবো।
বের হতে যাবো তখন আবার পিছন ফিরে স্নিগ্ধাকে বললাম:
আমিঃ-এসময় বলতে বুঝলাম না তো?
স্নিগ্ধাঃ-তুমি আমার খেয়ালই রাখো না বুঝবে কি করে(আমার কাছে এগিয়ে এসে বলল)
আমিঃ-আরে কি হয়েছে বলবে নাকি?
স্নিগ্ধাঃ-আসলে আমি
তোমার বাবুর আম্মু হতে চলেছি।(বলে আমায় জড়িয়ে ধরলো)
আমিঃ-সত্যি বলছো।
আমি স্নিগ্ধাকে কোলে তুলে নিলাম।
তারপর একটু পরে বিছানায় ওকে শুয়ে দিয়ে কপালে একটা চুমু দিলাম।তারপর বললাম:-
আমিঃ-আজ থেকে তোমার বিছানা থেকে নামা বন্ধ।
স্নিগ্ধাঃ-তাহলে আমার কাজ কে করে দিবে?
আমিঃ-কেন আমি করে দিবো।
স্নিগ্ধাঃ-ঘাড়টেরার ঢং।
আমিঃ-এই একদম আর ঘাড়টেরা বলবে না কিন্তু।
স্নিগ্ধাঃ-ঠিক আছে বাবা আর বলবো না।এখন যা বললাম তাই
করো।
আমিঃ-আচ্ছা যাচ্ছি।
যাই এখন আমার বউয়ের জন্য আচার নিয়ে আসি।
(কাল্পনিক গল্প)
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com