স্বপ্নপূরণ । পর্ব - ০৫
বাবা ও আমাকে যখন বিয়ে করবে না ,তাহলে এত কথা বলে কোন লাভ নেই ওর সাথে।
ও হচ্ছে বড়লোকের সন্তান আর আমরা কই গরিব? ওদের সাথে কি আমাদের মানায় বল?
(অনেক কষ্টের প্রিয়া তার বাবাকে এগুলো বলতেছে, আর চোখের পানি দুই হাত দিয়ে মুছতেছে)
রফিক সাহেব প্রিয়ার কথা শুনে চুপ হয়ে যায়। উনি কি বলবে আর কথা বলার ভাষা খুজে পাচ্ছিল না।
তিনিও বুঝতে পেরেছেন যে তার মেয়ের অনেক কষ্ট হচ্ছে। তবুও কিছু করার নাই রফিক সাহেবের।
অন্যদিকে ঈমান কোন কথা না বলে ,সোজা প্রিয়াদের বাসা থেকে চলে যায।
প্রিয়া বা রফিক সাহেব কেউ ঈমানকে আটকায়নি। কারণ তারা বুঝে গেছেন যে ,
এ ছেলের সঙ্গে কথা বলে কোন লাভ নেই। যে ছেলে নিজের সন্তানকে টাকা দিয়ে মারতে
চাই সে কখনো একজন আদর্শ পিতা হতে পারে না। কোন মতেই এই ছেলের
সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে দেওয়া যাবে না।
বাবা মেয়ে দুজনে চুপ করে বসে আছে। কারো মুখে কোন কথা নেই।
রহিমা বেগম রান্নাঘর থেকে এসে বলে যে ,প্রিয়া ছেলেটা কই গেল?
রহিমা বেগমের প্রশ্ন শুনে প্রিয়া কোন উত্তর দেওয়ার ইচ্ছে করতেছে না তার।
সেজন্য চুপ করে রয়েছে।
কি হলো প্রিয়া চুপ করে আছিস কেন আমি তোকে প্রশ্ন করেছি তুই উত্তর না দিয়ে চুপ করে আছিস?
প্রিয়ার চুপ থাকা দেখে রফিক সাহেব বলেন,
চলে গেছে!
চলে গেছে মানে ,না খেয়ে আর আমাদের প্রিয়াকে কবে বিয়ে করবে এটা কি বলেছে?
বিয়ে করার কথা শুনে প্রিয়া এবং রফিক সাহেব মুখোমুখি একবার তাকিয়ে আবার মাথা
নিচু করে চুপ করে থাকেন।
কি হলো বিয়ের কথা শুনে বাবা মেয়ে চুপ হয়ে গেলে যে?
তোমার মেয়েকে ওই ছেলে বিয়ে করবে না। আর বলে গিয়েছে প্রিয়ার বাচ্চা নষ্ট করার জন্য
আমাদের নাকি 10 লাখ টাকা দেবে।
এটা বলেছে ওর এত টাকার দেমাক। তুমি কি বলেছ?
আমি বলেছি যে আমরা 15 লাখ টাকা দেব প্রিয়াকে বিয়ে করতে হবে। কিন্তু ও রাজী হয়না।
তাহলে সহজে ছেলেটাকে কে যাইতে দিলে কেনো ।
আমাদের মেয়ের ক্ষতি করে আবার আমাদের টাকার লোভ দেখায়।
তুমি ওকে ধরে রাখলে না ওই ছেলেকে আমার পুলিশে দিতাম।
মানহানির মামলা দিতাম তাহলে সে শিক্ষা পেত।
পুলিশে দেওয়ার কথা বলতেছ তুমি ওরা হচ্ছে বড় লোক মানুষ তাই ওদের সাথে পেরে উঠব
না আমরা। আর এখনকার আইন তো টাকার উপর চলে। টাকা যার আছে দুনিয়ায় তার হাতে।
তাহলে এখন আমার মেয়েটার কী হবে আমরা সমাজে মুখ দেখাব কিভাবে?
কি আর হবে প্রিয়ার পেটের বাচ্চাটা নষ্ট করতে হবে আর সবকিছু আমাদের ধামাচাপা দিতে হবে?
সমাজের মানুষদের কোন কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না। তাহলে কোন সমস্যা হবেনা আর।
বাবা আমি আমার বাচ্চাকে কখনো নষ্ট করব না।
যদি মা-বাবা তোমাদের কোন সমস্যা হয় আমার সন্তানকে নিয়ে তাহলে
আমি বাড়ি থেকে চলে যাব বহুদূরে তবু আমার সন্তানকে নষ্ট করব না।
ওর বাবা নেই তো কি হয়েছে আমি একাই মানুষ করব আমার সন্তানকে?
মারে তুই যে কথা বলতেছিস সেটা খুবই কঠিন কাজ। এভাবে তোকে সমাজের মানুষ
বাঁচতে দেবে না। বাস্তবতা অত সোজা না ।তাই তো তোর বাবা যেটা বলতেছে ওটাই কর।
বাচ্চাটা নষ্ট করলে তোর ও ভালো আমাদেরও ভালো। সমাজে চলতে কোনো বাধা আসবে না।
না মা, আমি কখনো আমার বাচ্চাকে নষ্ট করব না।
এরকম করিস না মা আমাদের সম্মানের কথা একটু ভাব। এমনিতেই যা করেছিস তাতে
তো তোর বাবা অনেক কষ্ট পেয়েছে। আর কষ্ট পেলে দিস না তোর বাবাকে।
তোর বাবাকে যদি কষ্ট আর দিতে না চাস তাহলে তোর বাচ্চাটা এখন নষ্ট কর।
তোকে তো আবার নতুন করে বিয়ে দিতে হবে। যদি কেউ শোনে যে তোর পেটে বাচ্চা
আছে তাহলে কেউ তো তোকে বিয়ে করবে না।
মা আমি আর কোন বিয়ে করতে চাই না। আমি শুধু এটা জানি যে আমার বাচ্চাকে আমি নষ্ট করব না।
কি ব্যাপার তুমি চুপ করে মেয়ের কথা শুনতেছ কেন কোন কিছু তো বলো তুমি?
বাচ্চাটা নষ্ট না করলে আমাদের অনেক ক্ষতি হবে।
আমি আবার কি বলবো তোমার মেয়েতো আর অবুঝ না ও ওর নিজের ভালো নিজে
বুঝতে শিখেছে তাই কোনটা ভুল আর কোনটা সঠিকভ ও নিজেই ভালো বুঝবে।
তাহলে তুমি কি বলতে চাচ্ছ ,ও একটা জারজ সন্তান জন্ম দেখ যার থাকবে না কোনো পিতৃ পরিচয়?
মা আমার বাচ্চার কোন পিতৃপরিচয় লাগবে না আমি ওর মা এবং বাবা দুটোই হব।
রহিমা বেগম তার মেয়ের সঙ্গে কথায় না পেরে সোজা কান্না করতে করতে রুমের ভিতরে চলে যায় অন্যদিকে তার সাথে সাথে তার বাবা রুমে চলে যায় মুখ কালো করে।
প্রিয়া সেখানে একাই চুপ করে বসে কান্না করতেছে। কি করবে না করবে?
কিন্তু এটা ভেবে নিয়েছে যে ওর বাচ্চাকে ও নিজে জন্মদিবে এবং লালন পালন করবে, একা পিতৃপরিচয় হীন।
দেখতে দেখতে প্রায় আরো 6 মাস পার হয়ে যায়। প্রিয়া সেদিনের পর থেকে ঈমানের কোনো খোঁজ পায়নি।
পাবে বা কিভাবে কোন ভাবে যোগাযোগ করতে পারিনি ঈমানের সঙ্গে। ওর ফোন নাম্বার ,
ফেসবুক আইডি সবকিছু বন্ধ। প্রিয়া অনেক খুঁজেছে কিন্তু পাইনি।
প্রিয়ার এখন আর বেশি হাঁটাচলা করতে পারে না কারণ ওর প্রায় ডেলিভারি ডেট চলে এসেছে।
প্রিয়া অনেক বাধা বিপত্তি সহ্য করে এতোদিন টিকে রয়েছে।
প্রিয়ার মা-বাবা আর কিছু বলে না তাকে তারা মেনে নিয়েছে।
রহিমা বেগম প্রিয়ার সবকিছু দেখাশোনা করে এবং বিভিন্ন কাজে হেল্প করে।
প্রিয়া সব সময় তার রুমের মধ্যেই থাকে।
হঠাৎ করে একদিন প্রিয়ার ডেলিভারির ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। তখন শুধু বাসায় রহিমা বেগম ছিলেন।
অনেক কষ্টে প্রিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যান। রহিমা বেগম তার মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে
আসার সময় স্বামীকে ফোন দিয়ে প্রিয়ার ব্যাপারে বলে দেন। প্রিয়াকে হাসপাতালে আনার সঙ্গে
ডাক্তার তাকে ওটির ভিতরে নিয়ে যান। রহিমা বেগম ওটির বাইরে অপেক্ষা করতেছেন।
অন্যদিকে রফিক সাহেব মেয়েকে হাসপাতলে আনার কথা শুনে অফিস থেকে অনেক
তাড়াহুড়া করে হাসপাতালে আসেন। এসে দেখে তার স্ত্রী রহিমা বেগম দাঁড়িয়ে আছে,
তার স্ত্রীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রফিক সাহেব বলেন,
প্রিয়ার কি খবর?
এখনো কোনো খবর পায়নি ডাক্তারা প্রিয়াকে ভেতরে নিয়ে গেছে।
ও প্রিয়াকে ভিতরে নিয়ে যাওয়া কতক্ষণ হচ্ছে?
এইতো প্রায় 20 মিনিট হচ্ছে।
ও।
রহিমা বেগম এবং রফিক সাহেব দুইজনে ওটির সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতেছেন কখন ডাক্তার বাইর হবেন।
দেখতে দেখতে প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেল এখনো কোনো খবর পাওয়া গেল না।
রফিক সাহেবের টেনশন হচ্ছে এটা ভেবে যে উনার মেয়ের সমস্যা হোল নাকি আবার ।
হঠাৎ করে একটা ডাক্তার ওটির দরজা খুলে বাইরে আসলেন।
রফিক সাহেব এবং রহিমা বেগম ডাক্তারকে দেখে দৌড়ে ডাক্তারের কাছে আসেন ।
এসে ডাক্তারকে বলেন,
ডাক্তার আমার মেয়ে কেমন আছে?
কংগ্রেস আপনার নাতনি হয়েছে। আপনার মেয়েও অনেক ভালো আছে।
আলহামদুলিল্লাহ ,আচ্ছা ডাক্তার সাহেব আমি কি আমার মেয়ের সঙ্গে এখন দেখা করতে পারি?
সরি এখন আপনার মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারবে না কারণ আপনাদের
মেয়েকে একটু পরে বেডে শিফট করানো হবে তখন দেখা করিয়েন ।
এই কথা বলে ডাক্তার চলে যান। আরেকটু পরে একটা নার্স কোলে করে একটা বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে আসেন।
নার্সটা এসে সোজা রহিমা বেগমের কাছে গিয়ে রহিমা বেগমের হাতে বাচ্চাটাকে তুলে দিয়ে বলেন,
এই নেন আপনার মেয়ের বাচ্চা।
তারপর বাচ্চাটাকে রহিমা বেগম কোলে নিয়ে দেখে ঠিক পরীর মত হয়েছে তার নাতনি।
রহিমা বেগম তার নাতনিকে দেখে অনেক খুশি হয়েছেন কারণ দেখতে অনেক মিষ্টি হয়েছে।
দেখে মন জুড়ে গেছে রহিমা বেগমের। রহিমা বেগম তার নাতনির কপালে মিষ্টি করে
একটা চুমু দিয়ে বলে যে দেখো আমাদের মেয়ে সন্তান কত মিষ্টি দেখতে ঠিক ওর মার মত হয়েছে।
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com