Breaking News

গল্পঃউজানপুর। শেষ-পর্ব


তাসফিয়া দৌড়ে সিহাবের কাছে এগিয়ে গেলো তখন সে খেয়াল করলো ওদের সামনে সেই ভয়ংকর লোক গুলো দাড়িয়ে আছে।আর এগিয়ে আসছে,,,,তাসফিয়া ভাবছে এবার হয়তো আমাদের আর বাঁচার কোন পথ নেই।এমন সময় সেই লোক হঠাৎ থেমে গেলো।তাসফিয়া বুঝতে পারলো ওর পিছনে কেউ একজন দাড়িয়ে আছে।তাসফিয়া ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো ওর পিছনে বয়স্ক এক লোক একটা লাঠি হাতে দাড়িয়ে আছে।আর ওর সামনে থাকা সেই প্রেতাত্মা গুলো অদৃশ্য হয়ে গেলো।তখন সেই বয়স্ক লোকটি এসে বলল
-কারা তোমরা?
তখন তাসফিয়া সব ঘটনা বলল।তখন সেই লোকটি বলল
-তোমরা চিন্তা করো না আমার সাথে এসো।আগে এই ছেলের সুস্থ হতে হবে।তারপর আমি তোমাদের বাসায় পৌছে দিবো।আর এই প্রেতাত্মা গুলো আমার কাছে আসতে পারবে না।
তাসফিয়া ভাবছে এ আবার কোন অশরীরী নয়তো।কিন্তু দেখে তো মানুষের মতোই মনে হচ্ছে।তাসফিয়া কিছু আর ভাবলো না।সেই লোক আর তাসফিয়া মিলে সিহাবকে ধরে ওই ভ্যানে তুলল যেখানে ওরা আগে উঠেছিলো।সিহাবকে ভ্যানে শুয়ে দিয়ে তাসফিয়া উঠে বসলো।আর ওই লোকটি ভ্যান চালিয়ে যাচ্ছিলো।ওরা যেতে যেতে একটা একটা বিশাল বড় বাড়ি দেখতে পেলো।তখন সেই লোক বলল এটা নাকি এখানকার জমিদার বাড়ি।
তারপর তার অনেকদুর যাওয়ার পর একটা কুঠুরির সামনে নামলো,।
তারপর সিহাবকে ধরে সেই বাড়ির ভিতর একটা ঘরে নিয়ে গেলো।তারপর সিহাবকে শুয়ে দিয়ে ওই লোক ওর মুখে হালকা পানির ছিটে দিলো,,,আর তখন সিহাবের জ্ঞান ফিরে এলো।তখন সিহাব তাসফিয়াকে বলল
-এটা আমরা কোথায় এলাম এখন?
-চিন্তা করবেন না ইনি আমাদের বাচিয়েছেন।আর এটা উনারই বাড়ি।
-ও আচ্ছা।
তখন সেই লোকটি বলল।
-তোমরা তো অনেকক্ষন ধরে হয়তো খাওনি।আমি তোমাদের খাবার ব্যবস্থা করছি।
এই বলে লোকটি বেরিয়ে গেলো।তাসফিয়া সিহাবকে বলল
-আপনার ওপর প্রেতাত্মা ভর করছিলো,,আপনি আমায় মারতে চাইছিলেন তাই আমি আপনার মাথায় মারছিলাম,,,আপনি আমায় মাফ করে দিন আমার জন্য আপনার কষ্ট পেতে হলো।
-আরে না ঠিক আছে,,আমি কিছু মনে করি নি।
এমন সময় সেই লোক একটা প্লেটে করে ভাত তরকারি নিয়ে এসে তাসফিয়া কে দিলো।আর বলল
-তোমরা দুইজনেই খেয়ে নাও।
তাসফিয়া তখন নিজেই সিহাবকে তুলে খাইয়ে দিতে শুরু করলো।আর নিজেও একটু খেলো।সিহাব সেই লোকটিকে বলল
-আচ্ছা এই গ্রামটা এরকম ভুতুড়ে হলো কিভাবে?
তখন সেই লোকটি বলতে শুরু করলো
-সে অনেক কাহিনি।এই গ্রামের জমিদার উজান চৌধুরীর নামে এ গ্রামের নামকরণ করা হয় উজানপুর।এ গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই ছিলো অশিক্ষিত আর সবাই কৃষিকাজ করতো।আর জমিদার উজান আর ওর মতোই কিছু বিত্তশালীরা সেই কৃষকদের জমির ওপর টাকা ধার দিতো।আর বছর শেষে যে টাকা ধার দিতো তার অর্ধেক টাকা সেই টাকার সাথে যোগ করে পরিশোধ করতে হতো।যদি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হতো তাহলে তার সমস্ত জমিজমা কেড়ে নিয়ে তাকে মেরে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হতো।আর কেউ দিতে না চাইলে সেখানেই তাকে মেরে ফেলতো।
তাসফিয়া বলল
-সুদের টাকার জন্য মানুষ মারতো?
তখন লোকটি বলল
-হুম।আর এভাবে একদিন আরেক পরিবারের ওপর নির্যাতন চালায়।সেই পরিবার টাকা নিয়েছিলো তার ছেলেকে পড়াশোনা করানোর জন্য।কিন্তু যথা সময় সেই টাকা পরিশোধ করতে না পারায় ওরা ওই ছেলের পরিবারকে মেরে ফেলে।আর যে ছেলের পড়াশোনার জন্য টাকা নিয়েছিলো তার নাম অর্ণব।তারপর অর্ণব গ্রামে ফিরে আসে পড়াশোনা শেষ করে।সে তখন একজন সায়েন্টিস্ট হয়েছিলো।কিন্তু গ্রামে আসার পর যখন এসব জানতে পারে তখন সে পুরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে প্রতিশোধের জন্য।আর তখন সে গ্রামের ভালো মানুষদের সরিয়ে গ্রামের ভিতর এমন এক পদার্থ ছড়িয়ে দেয় যার ফলে সমস্ত মানুষদের একটা রোগ দেখা যায়।আর কয়দিন পর সেই সমস্ত মানুষের মাংস শরীর থেকে খুলে পড়তে শুরু করে আর তীব্র যন্ত্রনায় ওদের মৃত্যু হয়।আর তারপর থেকে ওই লোকদের আত্মা এখানে ঘুরে বেড়ায়।অনেক মানুষ এখানে ঘুরতে কিন্তু অনেকে ভয়ে পালিয়ে যায় আবার অনেকে বাচে না।
তখন সিহাব বলল
-এর সমাধান কি এই প্রেতাত্মা গুলোর মুক্তির উপায় কি?
তখন সেই লোকটি বলল
-এদের মুক্তির উপায় একটায় আর তা হলো যে এদের মেরেছে তার মৃত্যু।তার মৃত্যুর পরেই হয়তো ওরা মুক্তি পাবে।
তখন তাসফিয়া বলল
-আচ্ছা আপনার ওরা কোন ক্ষতি করে নি কেন?
-আমার কাছে এমন কিছু আছে যার কারনে ওরা আমার কাছে আসতে পারে নি।
-তাহলে সেই অর্নব এখনো বেঁচে আছে।
-হুম আর সেই অর্নব হলাম আমিই।
সিহাব তাসফিয়া দুইজনেই আশ্চর্য হয়ে গেলো।তখন অর্নব বলল
-তোমরা আর বেশি দেরি করো না এই বাড়ির পিছনের রাস্তা দিয়ে চলে যাও।এই রাস্তা একেবারে মেইন রোডে চলে গেছে।আজকে আমি এদের শেষ করবো নাহলে তোমাদের মতো আরো অনেক নির্দোষ কে মেরে ফেলবে।
ওরা আর কিছু না ভেবে যাওয়ার জন্য বের হলো।তাসফিয়া আর সিহাব অর্নবকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে পড়লো।কুঠুরির পিছনে ছোট মাটির রাস্তা সেটা দিয়ে ওরা তাড়াতাড়ি যেতে শুরু করলো।হঠাৎ খেয়াল করলো ওদের পিছে সেই ভয়ংকর লোক গুলো আসছে।তখন সিহাব তাসফিয়ার হাত ধরে প্রানপণে দৌড়াতে শুরু করলো।
আর এদিকে অর্নব সেই পদার্থ বের করে হালকা মুচকি হাসলো।ওর চোখ জলে ভরে উঠলো।আর কিছুদিন ওর মা-বাবাকে সময় দিলে অর্নব টাকা পরিশোধ করে ওর পরিবারকে নিয়ে শহরে গিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতো।কিন্তু এদের মতো মানুষদের কারনে এখনো মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছে।অর্নব ওই পদার্থ নিজে খেয়ে ফেললো সেটা খুব বেশি হওয়ায় ওর শরীরে তাড়াতাড়ি কাজ করতে শুরু করেছে।অর্নবের শরীরের মাংস খুলে পড়তে শুরু করলো।আর এক তীব্র যন্ত্রনায় ওর মৃত্যু হলো
আর তাসফিয়া আর সিহাব খেয়াল করলো একে একে সমস্ত প্রেতাত্মা গুলো অদৃশ্য হতে শুরু করলো।তাসফিয়া বলল
-তাহলে অর্নব ওর কাজ করে দিয়েছে।
-হুম।
এমন সময় ওদের কানে গাড়ির আওয়াজ আসলো।তখন আর দেরি না করে সেই মেইন রোডে চলে গেলো।তারপর স্টেশনে গেলো দুইজন।ঠিক যে স্টেশনে নেমেছিলো সেখান থেকেই আবার ট্রেনে উঠলো।
ট্রেন ছেড়ে দিলো।দুইজন একই সিটে পাশাপাশি বসে আছে।তাসফিয়া সিহাবকে বলল
-ধন্যবাদ আপনাকে,,,আমাকে প্রতিটা মূহুর্তে সাহায্যে করার জন্য।
-আপনাকেও ধন্যবাদ আমায় বাচানোর জন্য।
-আমাদের কি এটাই শেষ দেখা বা শেষ জার্নি?
-হতেও পারে আবার নাও হতে পারে।যেহেতু আমরা একই শহরে বাস করি সেহেতু আবার দেখা হতে পারে।
-হুম।।
তারপর দুইজনে নিশ্চুপ থাকলো।তাসফিয়া জানালা দিয়ে বাইরের অন্ধকার দৃশ্য গুলো দেখছে।সিহাবের প্রতি ও বেশ দূর্বল হয়ে পড়েছে,,,সিহাবও কি তাই হয়েছে ওর মতো।হয়তো বা না।দুইজনে ট্রেন থেকে নামলো একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকলো।তখন সিহাব ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল
-এবার সারাজীবনের জন্য আমার সাথে জার্নির জন্য প্রস্তুত হোন।
তাসফিয়া প্রথমে বুঝতে পারলো না তারপর যখন বুঝলো তখন সিহাবের দিকে তাকিয়ে ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।তাসফিয়া জানে যে ওর মতো ছেলে কখনো স্পষ্ট ভাবে কিছু বলবে না আকার ইঙ্গিতে সব বুঝিয়েই যা দিবে যা করার নিজেকে করতে হবে।দুইজনের পরিচয়টা হয়তো অল্প দিনের কিন্তু একে অপরের মায়ায় পড়ে গেছে দুইজনেই।সব গল্পের শেষ থাকলে সেই গল্পের শেষ থেকে আবার নতুন গল্পের সূচনা হয়।
(সমাপ্ত)

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com