গোধূলীর আলোয় । পর্ব -৩৪
“আগে বুঝলে কি করতে?”
“আপনাকে আমার কাছে আসতে দিতাম না।কি বিশ্রি গন্ধ,ইয়াক!”
“আমি আসতে চাইলে কি আর তুমি বাঁধা দিতে পারো? না পারবা?আমি এক হাতে ধরলেই তুমি নড়তে পারবানা।”
“এহ,কইছে আপনারে।আমারও শক্তি অনেক আছে।আমি হলাম মহিলা শক্তিমান।”
“তাই না,তো এই পুরুষ শক্তিমানের সাথে একটু যুদ্ধ করো,দেখি তোমার কত শক্তি।”
আয়মান মিথিলাকে জাপটে ধরলো।মিথিলা বিছানার এক পাশে বসে বালিশে হেলানা দিয়ে পড়ছিলো,আয়মান পাশে শুয়ে ছিলো!এত কাছে থাকার কারণে আয়মান সহজেই মিথিলাকে ধরে ফেললো।
“এত শক্ত করে ধরলে কিভাবে পারবো?”
“সেইটা তুমি জানো,মহিলা শক্তিমান তুমি তো ছাড়াও আমার থেকে নিজেকে।”
আয়মান শক্ত করে মিথিলাকে ধরে
রেখেছে,যার কারণে মিথিলা নড়তেও পারছেনা।অনেক শক্তি ব্যয় করেও পারলোনা মিথিলা নিজেকে ছাড়াতে আয়মানের কাছ থেকে।
“ইয়ে,সকালে খাইনি ,সেই রাতে কখন খাইছিলাম,সেগুলো সব হজম, কখন হজম হয়ে গেছে তাহলে পারবো কি করে বলেন।শরীরে এক ফোঁটাও শক্ত নাই এখন।”
“খিদে পাইছে তোমার?”
“কেনো?”
“খাওয়াবো তোমাকে!”
“নাস্তা বানানো এখনো শেষ হয়নি।”
“আমি অন্য নাস্তা খাওয়াবো,খুব ভিটামিন!”
মিথিলা চোখ ছোট ছোট করে আয়মানের দিকে তাকালো।আয়মান চোখ টিপনি দিতেই মিথিলা দুই হাতে ওর ঠোঁট চেপে ধরলো।চাপা হাতের ভিতর থেকেই বললো,
“একদম না,সারারাতে অনেক খাইছি,সিগারেটের গন্ধে আমার পেট অনেক ভরা,আর নিতে চাইনা।”
“সিগারেটের গন্ধ এখন আর নাই সোনা। এখন যা পাবা তা শুধু সুগন্ধ!”
“না আমি চাইনা!আপনি সারারাত অনেক অত্যাচার করেছেন এখন ছাড়েন আমি একটু পড়ি।”
“ছাড়বো তার আগে তোমার থেকে একটু উষ্ম ছোঁয়া নিবো।”
“না।”
মিথিলা কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো।আয়মান ছেড়ে দিলো মিথিলাকে।মিথিলা ছাড়া পেয়ে আগে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিলো।ঠিক হয়ে বসতে যাবে তখনি আয়মান হঠাৎ আক্রমণ করলো মিথিলাকে।আয়মানের এমন হঠাৎ আক্রমণে মিথিলা প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেলো এরপর তার ত্যানা হয়ে যাওয়া ঠোঁটটা আরো কিভাবে ত্যানা করছে আয়মান সেটাই অনুভব করতে শুরু করলো।
“গন্ধ আছে সিগারেটের?”
মিথিলা কিছু বললোনা।
“গন্ধ নাই,যা আছে সুগন্ধ।এখন পড়তে বসো।আমি সায়নের বাসায় যাবো।কাল থেকে ওর জ্বর।দেখে আসি।রাতে ওর ভাই ফোন করেছিলো।”
আয়মান নামলো বিছানা থেকে।মিথিলা বললো,
“আমি আজ হোস্টেলে যাবো।আম্মাকে বলেছি।”
আয়মান ভ্রু কুচকে তাকালো মিথিলার দিকে।
“আপারাও আজ চলে যাবে,ওদের সাথেই বের হবো।আপনাকে রাখতে যেতে হবে না।”
“আমি তোমাকে পারমিশন দিয়েছি যাওয়ার জন্য?”
মিথিলা মাথা নিচু করে নিলো।
“আমার কাছে থাকতে তোমার ভালোলাগেনা,আমার স্পর্শও তোমার ভালোলাগেনা আমি বুঝি।তাইতো সবসময় দূরে যাওয়ার বাহানা খুঁজো।”
“এখানে বাহানার কি দেখলেন? সামনে আমার পরীক্ষা,পড়তে হবেনা!তাই যেতে চাচ্ছি”
“যাওয়ার গুষ্টি কিলায়।”
“রাগ করিয়েননা।”
“আমার রাগের ধার ধারবা তুমি?পরীক্ষা,ভালো কথা!এখান থেকেই পড়াশোনা করো।”
“কিছু দিনেরই তো ব্যাপার।”
“না,ব্যাপার না।আমি আর কয়দিন পর বগুরা চলে যাবো।তখন তো ইচ্ছা করলেও তোমার কাছে আসতে পারবোনা,আমি যতদিন আছি ততদিন থাকো।”
মিথিলা ভাবনায় পরে গেলো।কি করবে এখন সে,এই পাগলকে বোঝানোও তার সাদ্ধি না।
আয়মান ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো,জামা-কাপড় পাল্টে রেডি হয়ে পকেটে ম্যানিব্যাগ ঢুকাতে ঢুকাতে বললো,
“আমি দুপুরের মধ্যেই চলে আসবো।নাস্তা করে নিও।”
সায়নদের বাসায় সায়নের পাঁচ বন্ধু তাকে ঘিরে বসে আছে।জ্বরটা এখনো আছে সায়নের শরীরে।তবে আগের থেকে একটু কম।আয়মান বললো,
“কিভাবে জ্বর বাঁধালি?ভিজেছিলি নাকি?”
“একটু!”
“জানিস বৃষ্টিতে ভিজলেই তোর জ্বর আসে তারপরো ভিজতে গেছিস।”
“ইচ্ছা করছিলো।”
“রাখ তোর ইচ্ছা,শালা!”
ইসতিয়াক বললো,
“থাক আয়মান,বেচারাকে বকিসনা।এমনিতেই জ্বরে কাহিল।”
“সেই সাথে আমাদেরও কাহিল করবে।ওর জ্বর সম্পর্কে জানিসনা?”
“জানিতো কিন্তু যা হওয়ার হয়ে গেছে।”
সায়নের মা সবার জন্য নাস্তা নিয়ে সায়নের রুমে আসলো।আয়মান সায়নের মাকে বললো,
“আন্টি,আপনার ছেলের বিয়ে দিয়ে দেন!দুই দিন পর পর জ্বরে ভুগবে আর আমাদের খাটাবে।বিয়ে দিলে ওর বউ ওর সেবা করবে।”
সায়নের মা মুচকি হাসলো,বললো,
“মেয়ে দেখো,আমি আর তোমার আঙ্কেল
রাজিই আছি।”
“হুম,দেখা শুরু করতে হবে।”
মিথিলা তার ভেজা চুলগুলো বেডের ধারে মেলিয়ে শুয়ে আছে।নামাজ পড়ে দুপুরের খাবারও খাওয়া হয়ে গেছে এরমধ্যে আয়মান এসে পৌঁছায়নি বাসায়।ফোনেও পাওয়া যাচ্ছেনা তাকে।মিথিলা শুয়ে শুয়ে আয়মানের কথা ভাবতে ভাবতেই নিজের অজান্তে কখন ঘুমিয়ে পড়লো।
আয়মান রুমে এসে দেখে মিথিলা ঘুমাচ্ছে।দরজা লক করে মিথিলার কাছে এসে কিছুক্ষণ মিথিলার ঘুমন্ত মুখটাকে দেখলো আয়মান বসে বসে।এরপর ওয়াশরুমে গেলো শাওয়ার নিতে।সায়নের মা না খেয়ে আসতে দেয়নি তাই খেয়ে আসতে হলো তবে বিকাল বা সন্ধ্যার পরে আবার যাবে ওরা সায়নের কাছে।
শাওয়ার নিয়ে ঘরে আসলো আয়মান।বরাবরের মতো টাওয়াল পড়েই।খালি শরীরের।ওয়াশরুমের দরজার শব্দে কখন মিথিলার ঘুম ভেঙে গেছে আয়মান খেয়াল করেনি।মিথিলা বালিশে মুখ গুজে চুপি চুপি সে টাওয়াল পড়া আয়মানকে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।সরাসরি তো আর তাকাতে পারেনা।লজ্জ্বা লাগে তাই আজ চুপিচুপি মন ভরে দেখছে মিথিলা তার ‘কানা বর’কে।এখন আয়মানের চোখে চশমা নাই।খালি গাঁয়ে বুক,পিঠ সবখানে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে।চুল থেকে পানি গড়াচ্ছে চিপ বেয়ে।মিথিলা মুগ্ধ হয়ে দেখছে।ভিতরে ভিতরে লজ্জ্বাও লাগছে।কোন ছেলেকে সে বেহায়ার মত,লুচ্চামার্কা চোখে দেখে যাচ্ছে লুকিয়ে এটা ঠিক না এটাই ভাবছে মিথিলা,পরক্ষণে ভাবছে,মনে মনে বলছে,
“নিজের বরই তো,অন্যের বরের দিকেতো আর তাকাচ্ছিনা!দেখলে সমস্যা নাই।”
আয়মান একটা থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট পরে টাওয়ালটা বারান্দার দড়িতে মেলে দিয়ে আসলো।বিছানায় এসে ধপ করে শুয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।একটু ঘুমানো দরকার এই ভেবে।
বিকালবেলা আয়না,আজমিরা আর অহনা বের হচ্ছে ওদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।মিথিলার শ্বাশুড়ি মিথিলার কাছে আসলো।ওদের রুমে এসে দেখলো মিথিলা সোফার ওপরে চুপচাপ বসে আছে আর আয়মান ঘুমাচ্ছে।
“এমা আয়মান নামাজ পড়বেনা,এখনো ঘুমাচ্ছে।”আয়মানের মা আয়মানকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে বললো।
মিথিলা বললো,
“নামাজ পড়তে উঠেছিলো,নামাজ শেষ করে একটু আগেই আবার শুয়েছে।”
“তুমি বসে আছো কেনো?হোস্টেলে যাবা বললা গতকাল!”
“ইয়ে আম্মা,আপনার ছেলে রাজি হচ্ছেনা।এখানেই থাকতে বলছে।”মাথা নিচু করে বললো মিথিলা।
“ওর কথাতেই নাকি,পড়ার ক্ষতি হচ্ছে আমিতো দেখতে পাচ্ছি আর তোমার আম্মা কি ভাববে!ওই আয়মান উঠ।কত ঘুমাস দিনের বেলা।”
আয়মান মুখটাকে কেমন করে চোখ বন্ধ করেই বললো,
“আরেকটু ঘুমাবো,যাও তো আম্মা।”
“ঘুমাবি যখন ঘুমা,মিথিলা হোস্টেলে যাচ্ছে ওকে যাওয়ার অনুমতি দে।”
মিথিলার হোস্টেলে যাওয়ার কথা শুনে আয়মানের ঘুম পালালো,চোখ মেলে সাথে সাথেই উঠে আধশোয়া হলো।চোখ এক হাতে ডলে বললো,
“এখানে থাক,হোস্টেলে যাওয়ার দরকার নাই।”
“অবশ্যয় দরকার আছে,সামনে ওর পরীক্ষা,এখানে থাকলে বিভিন্ন ঝামেলায় ওর পড়াশোনায় হচ্ছেনা।বৌমা,রেডি হয়ে নাও।”
মিথিলা আয়মানের দিকে তাকালো।আয়মানের মুখটা মুহূর্তেই রাগে থমথম করছে মিথিলা বুঝতে পারলো আয়মানের চেহারা দেখেই।আয়মানের মা বললো,
“কি হলো,যাও রেডি হয়ে নাও।”
মিথিলা রেডি হতে যেতেই আয়মান এক হাতে বিছানার চাদর খামচে ধরলো।আয়মানের মা বললো,
“ওর মা বলেছিলো পরীক্ষার পর আমাদের বাড়িতে তার মেয়েকে একেবারে পাঠাবে,এখন যদি রেখে দিই ওর মা অন্য কিছু ভাববে।মন খারাপ করবে।রাগ করিসনা।”
আয়মান কিছু বললোনা।চুপচাপ বসে আছে সে।এই বাড়িতে কেউ তাকে এক পয়সার দাম দেয়না।আয়মান আবার শুয়ে পড়লো।
মিথিলা ওর ননদদের সাথে বের হয়ে গেছে।আয়মানের জন্য খারাপ লাগছে কিন্তু উপায় নাই।পরীক্ষার এই কটা দিন তাকে কষ্ট করতে হবেই।অনুর জন্যও খারাপ লাগছে মিথিলার।মেয়েটা একা একা থাকে সারাদিন রুমের মধ্যে।আয়মান,ওর মা-বাবা কেউ এখনো অনুর সাথে কথা বলছেনা।অনু একা একা আরো ঝিমিয়ে যাবে।
অনেকদিন পর হোস্টেলে এসে কেমন লাগছে মিথিলার।বুকের ভিতরটাও ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।কিছুই ভালোলাগছেনা তার।এসেই শুয়ে পড়েছে মিথিলা তার বেডে।ফোনের শব্দ পেয়ে ফোনটা নিয়ে দেখলো নিলয় ফোন করেছে।
চলবে,ইন শা আল্লাহ।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com